Breaking News

গল্পঃ ভাঙ্গা হৃদয় । পর্ব ০৫


চাচার এরুপ কন্ঠ স্বর গুলো যখন আমার কান নামক বিশেষ এক যন্ত্র দিয়ে শুনছিলাম তখন আমার বেশ
একটা শ্বাস রুদ্ধ হয়েছিলো।ধুমরে-মুচরে যাওয়া ভাঙা  হৃদয়ে যেন আরও তীব্র আকারে কষ্টের দহন গুলো
ধীরে ধীরে বেড়েই যাচ্ছিলো। সারা রাত স্তব্ধ,স্থির হয়ে বসে ছিলাম।যা আমার জন্য ছিলো অতি যন্ত্রণা দ্বায়ক
তিমির রাত্রি। যে রাত এতো সহজে কাটিবার নয়। শীতের সকাল,ভোরে ভোরে রওয়ানা দিয়েছি নিজের
গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে। অফিসের বসকে ফোন করে সেই কখনই জানিয়ে দিয়েছি।শান্তনা প্রকাশ করে,ছুটি
দিয়েছেন আমায়,বহুদিনের জন্য।অতএব বেশ কয়েক ঘন্টা অতিক্রম হওয়ার পর অবশেষে গ্রামে পৌছিলাম
আমি।অতঃপর চাচার বাড়ির পথে গমন শুরু করলাম কারণ চাচা ফোন দিয়ে আগেই আমাকে বলেছিলেন
বাবা-মা উভয়েরই লাশ তাদের বাড়িতে রয়েছে। যতই নিজের অনাবরত কাপতে থাকা পা দু’টি সামনের
দিকে এগোচ্ছি ততই নিজেকে সামলানো বেশ একটা কষ্ট-সাধ্য ব্যাপারই হয়ে উঠছে আমার নিকট।বহু দিন
পর চাচার বাড়ির সম্মুখে এসে উপস্থিত হলাম।
.
সারা বাড়ি জুড়েই কোলাহল,চিৎকার,চেঁচামেচি, কান্না! কত শত লোকের ভীড়া-ভীড়ি!
বিপদের সময় যে সব নিকট বর্তী আত্মীয়-স্বজনদের কখনো খুঁজেও পাওয়া যেতো না তারাও আজ উপস্থিত হয়ে কান্নায় জর্জড়িত।কতই না অদ্ভুত সব ব্যাপার-স্যাপার চোখের দৃষ্টির সন্নিকটে!
অতঃপর সবাইকে উপেক্ষা করে বাবা-মায়ের লাশের সম্মুখে এসেই শতশত ব্যথার অমানবিক আঘাতে হাঁটু
দু’টি ভাজ করে সঙ্গে সঙ্গেই বসে পড়লাম আমি। চাচা বললেন,
-বাবা তোর লাশ দু’টো দেখা হয়তো ঠিক হবে না!আমি নিশ্চিত তুই সইতে পারবি না।বাসার ভেতরে যা!
উত্তরে নিজেকে সবার সম্মুখে শক্ত-পোক্ত হিসেবে চিহ্নিত করে বেশ একটা গম্ভীর কণ্ঠে আমি বললান,
-নাহ চাচা!যেমনই হোক যতই কষ্ট হোক আমি দেখবো আর তো পারবো না চাচা, নিজের বাবা-মাকে চোখের
নয়নে দেখতে। হবে না আর বাবার এক হাত মুষ্টি বদ্ধ ভাবে ধরে,সোনালী সকালে হাঁটাহাটি,পথা চলা।হয়তো
আর বলতেও পারবোনা কখনো, মা গো তুমি সত্যিই আমার নিকট সেরা। কেউ আর মিষ্টি করে ডাকবে না
শাহরিয়ার। বলবে না কেউ সুমধুর কন্ঠ স্বরে, আজ তোর জন্য রেঁধেছি মন পছন্দ মোতাবেক সব ধরনের
রান্না!রাগ করে রুমে বসে না থেকে খেতে আয় বাবা।  পারছি না আর আমি ব্যথা মুক্ত হতে! নিজেকে আর
ক্ষণে ক্ষণে কষ্ট-যন্ত্রণার নিকট বিলীন হতে আটকাতে। চাচার হাত দু’টো বেশ শক্ত করে ধরে অশ্রুসিক্ত নয়নে
খানিকটা চিৎকার করেই আমি বললাম, কাফনের মুখ দু’টো খুলে দেও চাচা! দেখতে চাই শেষ দেখা নিজের
জন্মদাতা-জন্মদাত্রী পিতা, মাতাকে। যার পরে অনন্ত কালের জন্য পারবো না আর তাদের দেখতে এই রঙ
বেরঙের ভূবণে। একমাত্র পরকাল ছাড়া!
.
অতঃপর চাচা কৌশলে, চোখের ইশারা অবলম্বন করলেন । কাফনের মুখ দুটো উন্মুক্ত করা হলো।
মুহূর্তেই ডুকরে কেঁদে উঠলাম আমি, বাবা-মায়ের এরূপ পুড়ে যাওয়া বিবর্ষ মুখচ্ছবি গুলো দেখে।না
জানি কতই যন্ত্রণা-বেদনার আর্তনাদে মারা গিয়েছেন তারা। ভাবলেই শরীর শিউরে ওঠে, ছমছম করে,খুব
কষ্ট হয়।যন্ত্রণাও হয় বটে!মাঝে মধ্যে ইচ্ছে হয় মৃত্যুকে চিৎকার করে ডাকতে, বলতে, আমি আর এরুপ যন্ত্রণায়, ব্যথায়, আঘাতে চাইনা বাঁচতে! আমি চাই কোনো এক বাঁশ তলায় মাটির আয়ত্তে নিরিবিলি
সুয়ে থাকতে!খুব করে চাই আমি এ রঙ বেরঙের ভূবণ ত্যাগ করে সব জ্বালা যন্ত্রণা থেকে সর্বকালের জন্য
মুক্ত হয়ে অনত্র ভূবণে পারি জমাতে।অতএব মাগরিব এর বেশ খানিক আগেই মা-বাবার দাফন-কাফনের
কাজ সম্পন্ন করা হলো। আজ দু’দিন হলো চাচাদের বাসায় রয়েছি।সার্বক্ষণিক ভাবেই তারা আমায় শান্তনা
দেওয়ার যথেষ্ট চেষ্টা করছেন। রাত এখন বেশ একটা গভীরই বটে। আনুমানিক সময় ২.১১ হবে। চুপিচুপি
বেড়িয়ে পড়লাম,এতো রাতে নিজের সেই পুড়ে যাওয়া ভিটা-মাটির উদ্দেশ্যে। চারিদিক কুয়াশা আচ্ছন্ন!ঘুট-
ঘুটে অন্ধকার। ঠান্ডা লাগছে বেশ। শুন-সান মাটির রাস্তা, আসে-পাশে গাছ-গাছালীতে ভরপুর! অবশেষে
উপস্থিত হলাম পুড়ে যাওয়া নিজ বাড়ির নিকটে। গুটি গুটি পায়ে কচি বাঁশের ছোট্ট বেড়া’টি ঢেঙিয়ে
পাশের বাড়ির জানালার নিকট এসে দাঁড়ালাম আমি। “ভেতরে,
.
অবৈধ পাপিষ্ঠে লিপ্ত তারা!কি অবাক করাই না কান্ড তাদের! এ সমাজ কাদের দিয়েছে উচ্চ সম্মান! যারা
রাতের ঘুট ঘুটে আধাঁরে করে সব অন্যায়, পাপিষ্ঠ, নিষিদ্ধ কাজ! খানিক সময় পর ঠিক ঠাক হয়ে উঠে
দাঁড়িয়ে গ্রামের মধ্য বয়স্ক চেয়ারম্যান বলল, -তোমার স্বামী বড়ই অদ্ভুত! এতো সুন্দরী স্ত্রী রেখে
কেউ দীর্ঘ সময় এভাবে প্রবাসে থাকে? যাই হোক আজ তাহলে আসি রৌহিকা! কাল না হয় আবার আসবো সবার চোখকে অনায়াসে ধুলোয় অন্ধ করে দিয়ে। কথা গুলো বলার পরপরই তিনি রৌহিকা ভাবীর ঘর
থেকে চুপি-চুপি বেড়িয়ে, এই কুয়াশা আচ্ছন্ন, ঘুট-ঘুটে অন্ধকারে,বাশঁ তলার ছোট্ট পথ অতিক্রম করে চলে
গেলেন। খারাপ লাগছে বেশ একটা প্রবাসে থাকা রৌহিকা ভাবীর স্বামীর জন্য। নিজের কাপড় ঠিক
করাতে বেশ একটা বিভোরই ছিলেন রৌহিকা ভাবী। হয়তো ভুলে গিয়েছেন দরজা এখনো খোলাই বটে!
অতঃপর বেশ একটা সময় লাগেনি আমার রৌহিকা ভাবীর মুখ চেপে, হাত পা সব বেঁধে ফেলতে। ঘড়ি
ছিলো হাতে, জাস্ট চার মিনিট, সাত সেকেন্ড সময় লেগেছে আমার। করুণ অবস্থায় চোখের সম্মুখে পড়ে
রয়েছেন তিনি। চোখ বড় বড় করে দেখছেন আমায়! বাঁধা মুখে চিৎকারও পারছেন না করতে তিনি!
অতএব খানিকটা টেনে হিঁচড়েই রৌহিকা ভাবীকে সেই পুকুরের সম্মুখে এনে উপস্থিত করলাম,
যেই গভীর পুকুরের পানিতে তলিয়ে আমার দেড় বছরের সন্তান মারা গিয়েছিলো। যার পর থেকেই আমার জীবনের
সমস্ত গল্পের মোর ঘুরে ধীরে ধীরে অবনতির দিকে এগোয়! পরিশেষে খানিকটা পৈশাচিক হাসি দিয়েই
হাত, পা, মুখ বাঁধা অবস্থাতেই রৌহিকা ভাবীকে এই গভীর পুকুরের ঠান্ডা পানিতে নির্দ্বিধায় ফেলে দিলাম
আমি। যার পনেরো সেকেন্ড পর আমি চাচার বাড়ির পথে গমন আরম্ভ করি।বেশ একটা তৃপ্তিই পাচ্ছি মনে।
অবশেষে গন্তব্যে পৌঁছে, এক প্রকার চুপি-চুপিই চাচার বাড়িতে প্রবেশ করে রুমে এসে,নির্ঘুমে অপেক্ষার প্রহর
গুলো গুনছি একের পর। কখন সকাল হবে আর শুনে তৃপ্তি সহকারে হাঁসবো আমি, রৌহিকা ভাবীর মৃত্যু
সংবাদে। আজ আমি খুব একটা খুশিই বটে, নিজের দেড় বছরের নিষ্পাপ সন্তানের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিয়ে।
হ্যাঁ স্বয়ং এই রৌহিকা ভাবীই সেদিন আমার ফুলের মতো নিষ্পাপ, সন্তান কে কৌশলে পুকুরের পানিতে
ফেলে দিয়ে ছিলো যার ফল সরূপ অমানবিক নিষ্ঠুর কষ্ট যন্ত্রণায় পানিতে ডুবে আমার সন্তানের মৃত্যু ঘটে।
মূলত, রৌহিকা ভাবীর কোনো সন্তান ছিলো না অর্থাৎ তিনি বন্ধ্যা! কখনো গর্ভপাত করতে পারবেন না, আজীবনই
তাকে সন্তান হীন কাটাতে হবে।যেদিন আমার ছেলে একটু-আকটু হাটঁতে শিখে ছিলো তখন থেকেই আমি
বেশ একটা খেয়াল করতাম, খানিকটা হিংস্র চোখের দৃষ্টিতেই রোহিকা ভাবী আমার প্রক্তন স্ত্রী সন্তানের
দিকে তাকিয়ে থাকতো। আমাদের সুখ যেন তিনি সয্যই করতে পারতেন না।তখন উপলব্ধি বলতে কিছুই
করতে পারিনি, মনে মনে রৌহিকা ভাবীর পরিকল্পনা ভাবনা কতই না নিম্ন স্তরের, জঘন্য। পরের দিন সকাল সাড়ে এগারো ঘটিকার সময় রৌহিকা ভাবীর মৃত দেহ পুকুরের পানিতে ভাসমান থাকা অবস্থায় উদ্ধার করা
হয় অবশ্য তার দজ্জাল শাশুড়ীই প্রথম দেখে ছিলেন।
.
মুহূর্তেই রৌহিকা ভাবীর মৃত্যু নিয়ে সারা গ্রামে হৈচৈ কোলাহলের সৃষ্টি হয়।যার ঠিক তেত্রিশ মিনিট পর
পুলিশ এসে তদন্ত করে স্বয়ং রৌহিকা ভাবীর রুম থেকেই চেয়ারম্যানের সাথে অবৈধ সম্পর্কের ভিডিও
উদ্ধার করেন তারা।অবশ্য সেদিন রাতে ইচ্ছে কৃত ভাবে আমিই ভিডিওটা রেখেছিলাম।অতঃপর গ্রামের চেয়ারম্যান কে গ্রেফতার করা হয়।পুলিশের দাবী তিনিই রৌহিকা ভাবীকে হত্যা করেছেন।আজ পাঁচ
দিন অতিক্রম হলো।বাবা-মায়ের কবরের নিকট থেকে,খানিকটা হেঁসেই চাচার বাড়িতে চলে আসলাম।
অতএব সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ঢাকায় চলে আসার পরের দিনই বিষাক্ত সাপের দংশনে চাচা-চাচি
উভয়েরই মৃত্যু ঘটে।সংবাদ কানে পৌছানো মাত্রই বেশ খানিক মুচকি হেঁসেই চাচাতো ভাই সোহেল কে
বললাম, -আমি আসতো পারবো না!
.
চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com