Breaking News

তারে ভালোবাসি বলে । পর্ব-১১



কেবিনে যেতেই ঈশা দেখতে পেলো অয়নের মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো আছে।
নিঃশ্বাস পরছে ধির গতিতে। পাল্সরেট নগন্য। ঈশা অনেক কষ্টে অয়নের পাশে গিয়ে বসলো।
চোখ থেকে ঝরছে জল। প্রিয়জনের এমন অবস্থা দেখবে! কখনও হয়তো কল্পনা করেনি সে।
ঈশা অয়নের হাতের উপর নিজের হাত রেখে মুঠোয় বন্দি করে। ঈশা অয়নকে উদ্দেশ্য করে
কাঁন্না ভেজা কন্ঠে বলছে
— অয়ন এমন কেনো হয়? যখনি আমরা একে অপরের কাছে চলে আসি ঠিক তখনি আমাদের দূরত্ব তৈরি হয়ে যায়। কেনো অয়ন? তুমি কি সত্যিই আমার ভাগ্যে নেই? আমি কি কখনও তোমাকে নিজের করে পাবো না?
প্লিজ অয়ন একটি বার কিছু বলো। দেখো না পাগলিটা কাঁদছে।
চোখের জল মুছিয়ে দিবে না তুমি? মাথায় হাত বুলিয়ে বলবে না ভালোবাসি তোমায়?
প্লিজ অয়ন একটি বার বলো। প্লিজ।
ঈশা অয়নের বুকের উপর মাথাটা রাখলো। শুনতে লাগলো ধির গতির হৃদয়ের স্পন্দন।
হঠাৎ করে ঈশার পিছন থেকে কেউ একজন বিদ্রুপ করে বলতে লাগলো তাকে
— বাহ বাহ ঈশা বাহ! চমৎকার অভিয়ন করতে পারো তুমি।
ঈশা হতবাক হয়ে অয়নের বুকের উপর থেকে মাথাটা তুলে তাকালো পিছন ফিরে।
অনু কথা গুলো বলছে। ঈশা বিষ্ময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
— মানে?
.
অনু ঠোঁট বাঁকিয়ে বললো
— মানেটা কি বুঝতে পারছো না? নাকি এখনও সবার সামনে একি নাটক করবে?
সত্যিটা সবাই জেনে গেছে।
ঈশার বোধগম্য হলো না অনুর কথা। ঈশা প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে অনুকে বলল
— কোন সত্যি? কি বলছো তুমি? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
অনু ঈশার কথার কোনো জবাব দিলো না। বরং ঈশার হাত ধরে টেনে তুললো বসা থেকে।
ঈশা কিছু বুঝে ওঠার আগেই অনু সজোরে ঈশার গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।
অনু সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো
— ঠাসসসসসস, ন্যকামি হচ্ছে? এতো বড় একটা এক্সিডেন্ট করিয়ে এখন ইনোসেন্ট সাজা হচ্ছে!
বাজে মেয়ে একটা।
ঈশা গালে হাত দিয়ে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অনুর দিকে।
কি হচ্ছে তা ঈশার বোধগম্য হচ্ছে না। অনু একটু থেমে আবার বলতে লাগলো
— আংকেল আমি আপনাদের আগেই বলেছি এই মেয়েটার থেকে সাবধান হতে।
তখন যদি আমার কথা আপনারা শুনতেন তবে অয়নের এমন অবস্থা হতো না।
এই মেয়ে প্রতিশোধ নিতে করিয়েছে এই এক্সিডেন্ট।
অনুর কথা শুনে মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো ঈশার।
.
— প্রতিশোধ মানে? কোন প্রতিশোধের কথা বলছো তুমি? আর এই এক্সিডেন্ট আমি করিয়েছি মানে?
বিষ্ময় কন্ঠে বলল ঈশা। অনু অয়নের পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলল
— সত্যিটা হলো অয়ন ঈশাকে সরাসরি বলে দিয়েছে ঈশা যেনো তাকে আর বিরক্ত না করে।
অয়ন চায় না কোনো নিচু চরিত্রের মানুষ ওর জীবনে থাকুক।
দিব্ব আর ঈশার অবৈধ সম্পর্ক সম্পর্কে অয়ন জেনে গেছে।
ঈশাকে সরাসরি প্রত্যক্ষান করায় ঈশার প্রচন্ড রাগ হয়।
এতোটাই রাগ হয় যে ঈশার ইগো হার্ট হয়। ঈশা অয়নকে আজ ডেকে ছিলো মিট করতে।
কারন ঈশা চেয়েছে অয়নের প্রপার্টি।
আর প্রপার্টির জন্য অয়নকে কনভেন্স করাটা ভিশন জরুরি। অয়ন যেতে চায়নি।
কিন্তু ঈশা ছলে বলে কৌশলে অয়নকে বাধ‌্য করে ঈশারা সাথে দেখা করতে যেতে।
অয়ন অফিস থেকে বেরিয়ে চলে যায় ঈশার বলা স্থানে।
ঈশা আগে থেকেই প্লান করে রেখেছিলো অয়ন যদি তার কথা না শোনে তা হলে কি করতে হবে।
অয়ন আইসক্রিম শপে যায় এবং অয়নের সাথে ঈশার কথা কাটাকাটি হয়।
ঝগড়া হয়ে যায় দুজনের মধ্যে। এতোটাই ঝগড়া হয় যে ঈশা নিজেকে সামলাতে পারে না।
অয়ন ঈশার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে নিজের গাড়ির দিকে চলে যায় আর ঈশা এই সুযোগে বলে দেয় ট্রাক ড্রাইভারকে কি কি করতে হবে। অয়ন গাড়িতে বসতেই এক্সিডেন্ট হয়ে যায়।
এখন নিজেকে বাঁচানোর জন্য ঈশা ইনোসেন্ট হয়ে এতো ক্ষন পর্যন্ত আপনাদের বোকা বানিয়েছে।
এই মেয়ের সরল চেহারায় আপনারা বরাবর বোকা হয়ে ওকে বিশ্বাস করেছেন। এই মেয়েকে তো পুলিশে দেয়া উচিৎ।
অনুর কথা শেষ হতেই সবাই ঈশার দিকে কৌতুহলি দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।
ঈশা তো পুরো থ হয়ে গেলো কথা গুলো শুনে। বাকরুদ্ধ হয়ে পাথরের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে ঈশা। অয়নের বাবা অনুকে উদ্দেশ্য করে বলল
— এসব কি বলছো তুমি? ঈশাকে আমরা সেই অনেক বছর আগে থেকে চিনি।
আর ঈশা এতোটা যঘন্য কাজ করতে পারে না। ঈশা অয়নের কোনো ক্ষতি হতে দিতে পারে না‌।
ও অয়নকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে।
অনু বাঁকা হেঁসে জবাব দিলো
.
— এটাই তো। এই মেয়ে আপনাদের চোখে ধুলো দিচ্ছে। বিলাসবহুল চলার জন্য মানুষ যা ইচ্ছে তাই করতে পারে। আমার কথা বিশ্বাস না হওয়াটা স্বাভাবিক। তবে একটি বার নিজেদের প্রশ্ন করে দেখুন এক্সিডেন্ট টা শুধু মাত্র অয়নের কেনো হলো? ঈশার বিন্দুমাত্র কোনো ক্ষতি হলো না কেনো? আর তার থেকেও বড় সত্যি হলো সিসি ক্যামেরার ফুটেজ। যাতে স্পষ্ট যে অয়ন একা গাড়ি দিকে যাচ্ছে এবং গাড়িতে একা বসেছে। তারপর এক্সিডেন্ট। আংকেল আমি সত্যিটা বলেছি। বিশ্বাস করা আর না করা আপনাদের ব্যাপার। এখনও সময় আছে সবটা ঠিক করার। যাকে তাকে বিশ্বাস করে নিজের ক্ষতি করিয়েন না।
অনুর তর্ক যুক্তি এক মিনিটের মধ্যে উপস্থিত সকলের চিন্তা ধারা বদলে দিলো। পরিস্থিতি বাধ্য করলো অনুর সব কথা বিশ্বাস করতে। অনু এতোটাই যুক্তিযুক্ত তর্ক করেছে যে অনুর কথা বিশ্বাস করা ছাড়া দ্বিতীয় কোনো উপায় কারো কাছে রইলো না। অয়নের মা গম্ভীর কন্ঠে বলল
— ঈশা সত্যিই কি আমরা তোমাকে চিনতে ভূল করেছি? এতোটা নিচে তুমি নামতে পারলে? একটি বারের জন্য ও মনে হয়নি তোমার তুমি যা যা করছো তা ভূল?
— আন্টি সত্যি বলছি আমি কিছুই বুঝতে পারছি না অনু এসব কি বলছে? আমি আর অয়ন তো…
ঈশাকে সবটা বলতে দিলো না অনু। তার আগেই অনু বলে উঠলো
— উফফফফ সত্যি আমি বুঝতে পারছি না আপনারা কেনো এই রাস্তার মেয়েটাকে এখনও এখানে থাকতে এলাউ করছেন? আর কেনোই বা ওর কথা গুলো শুনছেন? সব সত্যি আপনাদের সামনে তারপরও কেনো?
অনুকে থামিয়ে দিলো অয়নের বাবা। অয়নের বাবার‌ কাছে এখন ভিশন বিরক্ত লাগছে অনুর কথা গুলো। ঈশাকে যে উনি নিজের মেয়ের থেকেও বেশি স্নেহ করেন। তা সবাই জানে। আজ পর্যন্ত ঈশাকে মা ছাড়া কথা বলেননি উনি। অয়নের বাবা একটু মলিন কন্ঠে বলল
.
— ঈশা মা তুমি এখান থেকে চলে যাও। অয়নের জ্ঞান ফিরুক। আমি আর কোনো ড্রামা এখানে হোক তা চাচ্ছি না।
অয়নের বাবার কথা শেষ না হতেই অনুর উচ্চস্বরে বলে উঠলো
— একি করছেন আংকেল? এই মেয়েটাকে এভাবেই যেতে দিবেন? ওকে পুলিশে দিয়ে দিন। ওর জন্য আজ আপনার ছেলের এই অবস্থা। ওকে এর শাস্তি পেতে হবে। ওকে এভাবে যেতে….
অয়নের বাবা অনুর দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
— অনু চুপ করো তুমি। কে কি করেছে আর কে কি করতে পারে তা আমার বোঝা আছে। আমার ছেলেটা মৃত্যুর মুখে। দয়া করে এখানে থেকে তোমরা যাও সবাই।
* অয়নের বাবার কথা শুনে সবাই কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। ঈশা কাঁদছে অনুর আঘাতে নয়। ঈশা কাঁদছে তাকে দেয়া মিথ্যে অপবাদের আঘাতে। ঈশা অয়নের মা এর উদ্দেশ্যে বলল
— আন্টি বিশ্বাস করুন আমি এই সবের কিছুই জানি না। আমি প্রতিশোধ নিতে এমনটা করবো তা কখনো কল্পনাও করি নাই। আন্টি
.
* অয়নের মা ঈশাকে হাত দিয়ে ইশারা করলো চলে যেতে। এক্ষেত্রে অয়নের মা এর কোনো দোষ নেই। কারন মা এমনি হয়। যখন সন্তানের কিছু হয় তখন বিশ্বাস অবিশ্বাস বলে কিছুই থাকে না তাদের কাছে। সন্তান তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এর থেকে কোনো কিছুই গুরুত্বপূর্ণ নয়। ঈশা মুখ চেপে ধরে বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে। অনু বাঁকা হাসছে। অনুর প্লান কাজ করেছে। অনু এটাই চেয়েছে ঈশা সবার চোখের বালি হয়ে যাক। তাই হয়েছে। অনু ঈশারা চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আনমনে বলছে
— ঈশা অয়ন চৌধুরী। ইশশশ কি সুন্দর নাম। সাথে অয়নের টাইটেল ও আছে। কাকের ময়ূর হবার শখ। যত্তসব। হয়েছে তো শখ পূরণ? এক ধাক্কায় সরিয়ে দিলাম তোকে। আগেই সাবধান করেছি তোকে। শুনিস নাই। এখন ভোগ কর। অয়ন আমার আর আমি ওকে না পেলে কাউকে পেতেও দিবো না।
.
হৃদয়ের দহন নিয়ে ঈশা বাড়ি ফেরে। পরনের কাপড়ে লেগে আছে রক্ত। এসবের কারন নাকি ঈশা নিজেই। সবাই সেটা বিশ্বাস করেছে। আচ্ছা কেউ কি এটা দেখতে পেলো না আমার হৃদয়ের সত্যি অনুভূতি গুলো? অয়নের ক্ষতি হোক এটা কখনো কি করে আমি চাইতে পারি? যে মানুষটাকে পাগলের মতো ভালোবাসি। যার এতোটুকু আঘাত আমি সহ্য করতে পারি না। তাকে কিনা আমি মেরে ফেলতে যাবো? হায়রে মানুষ। অনুর নির্ভূল অভিনয়ের কাছে হেরে গেলো আমার প্রতি এতো বছরের বিশ্বাস।
অনুর বলা প্রতিটা কথা তার কানে বেজে চলেছে অবিরত। ঈশাকে আনমনে বসে থাকতে দেখে তার ছোট বোন তাকে বলল
— আপু ফ্রেশ হয়ে আয়। এভাবে বসে থাকিস না।
ঈশা কান্না ভেজা কন্ঠে বলল
— আচ্ছা তোদের কি বিশ্বাস হয় আমি অয়নের ক্ষতি করতে পারি?
— আপু তুই এসব কথা ভাবিস না। অয়ন ভাইয়ার জন্য দোয়া কর। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা তা অয়ন ভাইয়া জানে। আমার কথা মিলিয়ে নিস। অয়ন ভাইয়া তোকে করা প্রতিটা অপমানের হিসেব নিবে।
— না রে আমি চাই না অয়ন আমার জন্য কিছু করুক। আমি চাই বিধাতা যেনো আমার আয়ূ নিয়ে ওকে ভালো করে দেয়।
.
ঈশা ফ্রেশ হয়ে নিলো। জামা চেঞ্জ করে ঈশা নিজের রুমে এসে বসলো।
ভাবছে অয়নের খোঁজ কি করে নিবে সে? ঐ হাসপাতালে তো আর যাওয়া যাবে না।
অন্য কাউকে দিয়ে খবর ঠিক নেওয়া গেলেও। প্রিয়জনকে দেখার তৃষ্ণা কি করে মিটাবে সে?
কি করে অয়নকে না দেখে থাকবে? একটা ব্যবস্থা করতে হবে।
কাছ থেকে না হয় একটু দূর থেকেই না হয় অয়নকে দেখবো।
সত্যিই কারের ভালোবাসা হয়তো গুলোকে বলে। প্রিয়জনকে দেখার তৃষ্ণা। প্রিয়জনের খোঁজ নেয়া।
দূরে থেকেও প্রিয়জনের ভালো চাওয়া। প্রিয়জনের জন্য হৃদয়ে অনুভুতি জন্মানো।
আচ্ছা এসব কে কি ভালোবাসা বলে? হয়তো এগুলোই ভালোবাসা।
— ঠাসসসসসস, ঠাসসসসসস, ব্লাডি রাসকেল। একটা কাজ তোদের দ্বারা ঠিক ঠাক হয় না।
তোদের সাথে ড্রিল হয়েছে ঈশাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়া।
আমি হাজার বার বলেছি অয়নের যেনো বিন্দুমাত্র ক্ষতি না হয়।
আর তোরা কি করলি? ব্লাডি ফুল।
আমার অয়নের যদি কিছু হয় তবে তোদের যে কি অবস্থা করবো তা আমি নিজেও জানি না।
.
— ম্যাডাম আসলে আমরা ঈশাকে মার্চে চেয়েছি। অয়ন স্যার নিজেই গাড়িতে এসে বসেছে। আমরা সেটা লক্ষ করিনি। তাই ভূল বসতো
পুরো কথা বলতে দিলো না ম্যাডাম অনু। অনু একটু শান্ত গলায় বলল
— হয়েছে হয়েছে। এখন তোরা গা ঢাকা দে। আমি এই দিকটা ম্যানেজ করছি। আর হ্যাঁ ভূল করেও এই দিকে আসবি না তোরা। অনেক দূরে কোথাও চলে যা।
— ম্যাডাম টাকা…
— এই নে টাকা। তারাতাড়ি যা। আমাকে হাসপাতালে যেতে হবে।
* অনু টাকা দিয়ে হাসপাতালে চলে আসে। হাসপাতালে আসতেই অনু ভিশন অবাক হয়ে যায়। অনু হাসপাতালে এসে দেখতে পেলো…..
.
চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com