Breaking News

গল্পঃ ভাবির অহংকারী বোন । পর্ব - ১৩



আব্বুঃ হ্যাঁ আসলাম। একটু আগেইএসেছি কিন্তু দেখলাম তুই রুমে নাই..

আমিঃ ও কিছু বলবে..
আব্বুঃ হ্যাঁ..এই যে নে তোর ফোন।
আমিঃ এখন ফোন লাগবে না, যেটা আছে ওটা দিয়েই হবে।
আব্বুঃ এটা তোরই ফোন, তুই চলে যাওয়ার পর যত্ন করে তুলে রেখেছিলাম। এই যে দেখ আগের মতই আছে কালকে চার্জ দিয়ে রেখেছিলাম।
আমিঃ আচ্ছা রেখে যাও..
আব্বুঃ আচ্ছা চল একসাথে নাস্তা করি..
আব্বুর সাথে নিচে এসে খাবারটা খেয়ে সোফাতে বসলাম
আমিঃ ভাবি একটু এদিকে আসবে..
ভাবিঃ হ্যাঁ বল..
আমিঃ বসো এখানে..
ভাবিঃ একটু কাজ আছে তাড়াতাড়ি বল।
আমিঃ তোমার বোন সাদিয়ার জন্য মিথিলা আজ বাসায় আসতে পারছে না।
ভাবিঃ কেন..?
আমিঃ মিথিলা সাদিয়ার আসল কথা তোমাদের কে বলেছিল তাই সাদিয়া মিথিলাকে অনেক কিছু করার চেষ্টা করেছে।
ভাবিঃ সাদিয়া করেছে..?
আমিঃ সাদিয়া নিজে করেনি, লোক দিয়ে করিয়েছে আর মিথিলার আব্বু ভয় পেয়ে ওকে ঢাকা রেখে আসে।
ভাবিঃ মিথিলার আব্বু আমাকে বলতে পারতো একবার।
আমিঃ উনি কোন ঝামেলা করতে চাইনি আর মিথিলা উনার একমাত্র মেয়ে তাই কোন ঝুঁকি নিতে চাইনি। তুমি তোমার বোনকে বলে দিবে যাতে মিথিলার সাথে কোন প্রকার ঝামেলা না করে।
ভাবিঃ আমি আব্বুর সাথে কথা বলব এই বিষয়ে..
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে...
আমি আমার রুমে চলে আসলাম। এসেই ফোনটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম একটা মুচকি হাসি দিয়ে ফোনটা অন করলাম। কিছুক্ষণ ফোনটা ঘাঁটাঘাঁটি করে রাহাতকে ফোন দিয়ে বললাম টাকা নিয়ে যেতে। এমনিতেই অনেক কিছুই করেছে আমার জন্য টাকাটা দিয়ে বাসায় এসে আব্বুর কাছে গিয়ে বললাম....
আমিঃ আব্বু আমাকে ঢাকায় যেতে হবে।
আব্বুঃ ঢাকায় যেতে হবে কেন..?
আমিঃ আমার সবকিছুই ওখানে পড়ে আছে, ওগুলো আনতে হবে আর তুমি কাকুকে বলে ওখান থেকে আবার TC আনার ব্যবস্থা করো।পরীক্ষার আগে এখন IC দেবে নাকি সেটাই ভাবছি।
আব্বুঃ সেটা তোকে ভাবতে হবে না, আমি যেভাবেই হোক আনার ব্যবস্থা করব। আমি তোর কাকুকে বলবো...
আমিঃ সময় খুবই কম যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে আর আমি কালকে ঢাকা যেতে চাচ্ছি..
আব্বুঃ কালকে..?
আমিঃ হ্যাঁ গিয়ে চলে আসব...
আব্বুঃ আচ্ছা আমি ব্যবস্থা করে দিচ্ছি...
ছাদে এলাম আজ কত দিন পর আবার আমাদের ছাদে আসলাম।
যাই হোক সেদিনের দিনটা কোনরকম পার করে পরের দিন সকালে আবার ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
আজ একটু সময় বেশি লাগলো জ্যাম থাকার কারণে।
দীর্ঘ জার্নির পর আবার গন্তব্যে পৌছালাম..
মারুফ ভাইদের বাসায় আসতেই আমার উপর শুরু হয়ে গেল পুরুষ নির্যাতন। মারিয়া আর মিথিলা মিলে বেদম ক্যালানি দিল। কোনমতে ছাড়া পেয়ে দৌড়ে রুমে চলে আসি। দেখি রুমটা ঠিকঠাকই আছে আগেই বলে রেখেছিলাম যে আমি এসে বেশি দিন থাকবো না।
ওখান থেকে আমার যাবতীয় সব জিনিস গুলো গুছিয়ে নিলাম আর মিথিলাও ওর যা যা ছিল সব গুছিয়ে নিল।
কারণ মিথিলাও আমার সাথে যাবে সব কিছুই গোজ গাজ করে একটু ছাদে এলাম..
ফোনটা ঘাঁটাঘাঁটি করতে হঠাৎ একটা গাড়ি আসার আওয়াজ পেলাম।
ছাদের কিনারে থেকে নিচে তাকিয়ে দেখি একটা মেয়ে।
মেয়েটা গাড়ি থেকে নিচে নামতে দেখে আমার মাথা ঘুরে গেল...
ও এখানে কিভাবে আসলো আর কি করতে আসলো....
আমি যে এখানে আছি সেটা জানলো কিভাবে..?
আমি ছাদে আর এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে দৌড়ে আমার রুমে চলে গেলাম। এক লাফে বিছানার উপর উঠে অন্য পাশে শুয়ে রইলাম ওইদিকে মেয়েটা দরজার সামনে এসে কলিংবেল দিচ্ছে আন্টি গিয়ে দরজা খুলে দিল
মেয়েঃ আচ্ছালামুয়ালাইকুম আন্টি..সাকিব আছে..?
আন্টিঃ হ্যাঁ আছে, কিন্তু তোমাকে তো ঠিক চিনতে পারলাম না।
মেয়েঃ আমি শাকিবের........
আন্টিঃ ও ভিতরে আসো
মেয়েঃ শাকিব কোথায়..?
আন্টিঃ রুমে আছে হয়তো।
মেয়েঃ রুম কোনটা..?
আন্টিঃ উপরের ডানের রুমটা..
মেয়েঃ ও আচ্ছা আচ্ছা, তাহলে ওর সাথে দেখা করে আসি...
আন্টিঃ হ্যাঁ যাও রুমে আছে হয়তো দেখো..
মেয়েটা আমার রুমে এসে আস্তে করে উঁকি দিয়ে দেখলো। আমাকে চিনতে পারেনি তাই আবার নিচে আন্টির কাছে গেল।
মেয়েঃ আন্টি সাকিবকে দেখতে পেলাম না।
আন্টিঃ রুমেই তো ছিল..
মেয়েঃ আমি তো দেখলাম অন্য একটা ছেলে শুয়ে আছে। কিন্তু সাকিবকে দেখতে পেলাম না কোথাও।
আন্টিঃ আরে ওটাই তো শাকিব..
মেয়েঃ সত্যি..?
আন্টিঃ হ্যাঁ তুমি গিয়ে ওকে ডাক দাও
মেয়েটা আবার সিঁড়ি বেয়ে উপরে এল।
ভয়ে ভয়ে আমার রুমে এলো। কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না।
আমিও বুঝতে পেরেছি যে রুমে ঢুকে গেছে। তবুও অন্য পাশ হয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছি।
মেয়েটা আস্তে আস্তে বিছানার একপাশে একটা হাত রেখে আমার মুখটা দেখার চেষ্টা করছে।
আমার কাছে আসতেই জোরে একটা চিল্লানি দিয়ে উঠলাম...
মেয়েটাও এক চিৎকার দিয়ে লাফিয়ে উঠে দূরে সরে গেল..
আমিঃ কি রে শাকচুন্নি.. হাহাহা
মেয়েঃ তুই শাকিব..?
আমিঃ না আমি অন্য কেউ..( মেয়েটা আর অন্য কেউ না আমার চাচাতো বোন মারিয়া)
মারিয়াঃ আমিতো তোকে চিনতেই পারিনি।
আমিঃ কেন আমি কি ভূত হয়ে গিয়েছি..?
মারিয়াঃ একদম পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিস।
আমিঃ তুই এখানে আসলি কিভাবে..?
মারিয়াঃ গাড়িতে করে..
আমিঃ আমি সেটা বলতে চাইনি, বলছি আমি যে এখানে আছি সেটা তুই জানলি কিভাবে..?
মারিয়াঃ তোর আব্বু বলেছে..
আমিঃ তুই চিনলি কিভাবে..?
মারিয়াঃ আমি এতদিন ধরে ঢাকায় থেকে কি করলাম তাহলে..? ঢাকার সব কিছুই চিনি আমি।
আমিঃ ভালো..
মিথিলাঃ আমি কি আসতে পারি..?( দরজার কাছ থেকে বলল)
আমিঃ আয় ভিতরে আয়..
মিথিলাঃ এইটা কে..?
আমিঃ মারিয়া...
মিথিলাঃ মারিয়া তো রুমে কিন্তু এটাকে...?
আমিঃ আরে ওর নাম ও মারিয়া আমার চাচাতো বোন।
মিথিলাঃ হাই আমি মিথিলা...
মারিয়াঃ আমি মারিয়া..
ওদের সাথে কথা বলতে বলতে ফোনটা বেজে উঠল আব্বু ফোন দিয়েছে
আমিঃ হ্যা আব্বু ভালো..
আব্বুঃ যাবার পর ফোনও দিলি না..
আমিঃ এসে সবকিছু গোছাতে শুরু করেছিলাম তাই সময় পাইনাই।
আব্বুঃ বাসায় কবে আসবি আর মারিয়া গেছে তোর ওখানে..?
আমিঃ মারিয়া এসেছে আর কাল অথবা পরশু দিন চলে আসব।
আব্বুঃ আচ্ছা সাবধানে আসিস। আর তোর চাচ্চুকে বলে দিয়েছি তোর কলেজ থেকে টিসি এনে দেবে।
আমিঃ ও আচ্ছা আর তুই কি তোর মারিয়াদের ওখানে যাবিনা..?
আমিঃ এখন ওদের বাসায় কিভাবে যাব..?
আব্বুঃ একটু ঘুরে আয় ভালো হবে।
আমিঃ আচ্ছা যদি সময় পাই তাহলে যাব..
মরিয়াঃ চাচ্চু আমি শাকিবকে এখনই আমাদের বাসায় নিয়ে যাব।( আমার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে বলল)
আব্বুঃ সাকিব কি বলে..?
মারিয়াঃ ওকে কিছুই বলা লাগবেনা। ও না গেলে ওর কান ধরে টেনে নিয়ে যাব।
আব্বুঃ আচ্ছা ঝগড়াঝাঁটি করিস না নিয়ে যাস...
মারিয়া ফোনটা কেটে দিলো।
মারিয়াঃ তোর সবকিছু গোছানো শেষ....?
আমিঃ হ্যাঁ মারিয়া তাহলে সবকিছু নিয়ে চল এখন।
আমিঃ কোথায়....?
মারিয়াঃ আমাদের বাসায়...
আমিঃ এখন কিভাবে যাবো..?
মরিয়াঃ আমি কোন তাল বাহানা শুনতে এখানে আসিনি তুই আমার সাথে যাবি এটাই ফাইনাল।
আমিঃ আমি আজকে কেবল আসলাম আর আজকেই চলে যাব..?
মরিয়াঃ আজকে এসেছিস তো কি হয়েছে..?
আমিঃ আমার অনেক খারাপ লাগছে আর মাথা ব্যথা করছে।
মারিয়াঃ তো আমাদের বাসায় গিয়ে রেস্ট নিবি..
আমিঃ যেতেই হবে..?
মারিয়াঃ হ্যাঁ হবে..
আমিঃ আচ্ছা যাব...
মরিয়াঃ আমি জানতাম তুই যাবি নিজে থেকে কথাটা বলতে লজ্জা পাচ্ছিলি তাই একটু ঘুরিয়ে পেচিয়ে বললি...
বলেই মারিয়া আর মিথিলা অট্টহাসিতে মেতে উঠল। এই কথার উপর আমার আর কিছু বলার নেই। শুধু আবালের মত দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া।
আমার অপমানটাই নষ্ট করে দিয়েছে..
আন্টিঃ কি নিয়ে এতো হাসাহাসি হচ্ছে এখানে..?
মারিয়াঃ আরে আন্টি আসুন..
আন্টিঃ এতো হাসাহাসি করছ..
মারিয়াঃ হাসাহাসি করা শরীরের পক্ষে ভাল। না হলে মানুষ বাঁচতে পারে না কি..?
আন্টিঃ হ্যাঁ ঠিক বলেছ আচ্ছা সবাই চলো টেবিলে খাবার দিয়েছি।
মারিয়াঃ না আন্টি আমি এখন খাব না একেবারে রাতে বাসায় গিয়ে খাব।
আন্টিঃ আজকে যাওয়া হচ্ছেনা।
মারিয়াঃ না আন্টি আজকে চলে যেতেই হবে আব্বুর গাড়ি নিয়ে এসেছি। আর তাছাড়াও আমার কলেজ আছে কাল সকালেই।
আন্টিঃ খুব ভোরে উঠে চলে যেও।
মারিয়াঃ না আন্টি আমাকে আজকেই চলে যেতে হবে।
আন্টিঃ এটা কিভাবে হয়, আজ চলে যাবে..?
মারিয়াঃ আমি শুধু সাকিবকে নেওয়ার জন্য এসেছি নাহলে আসতামনা।
আন্টিঃ শাকিব যাবে..?
মারিয়াঃ হ্যাঁ ওকে নিয়ে যেতে বলেছে আব্বু। আর ও যে এতদিন ধরে ঢাকাতে আছে সেটা আমাদেরকে একবার জানাও নি।
আন্টিঃ তাহলে খাবার টাতো খেয়ে যাবে।
মারিয়াঃ না আন্টি আমি খাব না, ওরা খেলে খেয়ে আসুক।
আমিঃ চল আমাদের সাথে..
মারিয়াঃ আমি মাত্রই বাসা থেকে খেয়ে বের হয়েছি।
আমিঃ আরে চলতো অল্প করে খেয়ে নিস..
মারিয়া কে জোর করে নিয়ে গেলাম। আন্টি মারিয়া ২ কে ডাক দিল, মানে মারুফ ভাইয়ের বোন। সবাই একসাথে বসে খাবার খেয়ে নিলাম খাবার শেষ করে আমি উঠে...
আমিঃ কিরে তুই বললি যে বাসা থেকে খেয়ে আসছিস আর খাবি না.. তাহলে এতগুলো খাচ্ছিস কিভাবে..?
আমি জানতাম তুই খাবি কিন্তু নিজের মুখ দিয়ে বলতে লজ্জা পাচ্ছিলি তাই এতো তালবাহানা করলি।( আমি কারো পাওনা বাকি রাখিনা তাই মারিয়ার থেকে প্রতিশোধ নিয়ে নিলাম)
আমার কথা শুনে মারিয়া বেকুব বনে গেল। স্ট্যাচুর মত আমার দিকে তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছে আমাকে গিলে খাবে।
ব্যাপারটা বুঝতে পেরে কথাটা ঠেলে অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিচ্ছি...
আমিঃ মিথিলা তাহলে তুইও চল আমাদের সাথে..
মিথিলাঃ না আমি যাবো না তুই যা আর বাসায় যাওয়ার দিন আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাস।.....
.
চলবে...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com