Breaking News

গল্পঃ ভাবির অহংকারী বোন । পর্ব - ১১



আমি আর মিথিলা দুজনই উঠে দাঁড়িয়ে গেলাম ভয় লাগছে খুব। এতো রাতে মারুফ ভাই এখানে..

আমিঃ ভাইয়া আপনি...? আমরা..
মারুফ ভাইঃ থাক আর বলতে হবে না.....
আমিঃ ভাইয়া আমরা বসে গল্প করছিলাম শুধু..
মারুফঃ আরে তোরা এতো ভয় পাচ্ছিস কেনো..?
আমিঃ বিশ্বাস কর..
মানুফঃ বুঝলাম না, আমি কি তোদের কিছু বলেছি..? তাহলে ভয় পাচ্ছিস কেনো..? আমি জানি তুই এমন কেমোন কাজ করবি না যাতে কারো অসম্মান হয়...
( আমি আর মিথিলা মাথা নিচু করে আছি..)
মারুফঃ রুম থেকে বাইরে বেরিয়ে দেখি মিথিলাম রুম খোলা। আর এদিকে ছাদের গেট টাও খোলা। তাই এসে দেখি তোরা। তবে ভালোই হয়েছে। তোর জীবন সম্পর্কে সবটা জানতে পারলাম।
আমিঃ হুমম..
মারুফঃ তোর বাসায় যেতে ইচ্ছা করে না..?
আমিঃ করে, তবে এটা সম্ভব না...
মারুফঃ নিজের নিজের বাড়িতে যাবি এখানে ভোট অসম্ভবের কি আছে।
আমি এখন হয়তো সবাই আমার উপর রেগে আছে
মারুফ আচ্ছা এখন রুমে যাও অনেক রাত হলো
মারুফ ভাইয়ের কথা মত সবাই যার যার রুমে চলে এলাম।
আজ নিজের পরিবারের কথা খুব বেশি মনে পড়ছে। মনে পরছে ফেলে আসা দিনগুলো কিন্তু কিছু করার নাই, পরিস্থিতির শিকার।
সেদিনকার মত অনেক কষ্টে ঘুমালাম পরের দিন ভোরে সাগরের ফোন পেয়ে উঠে গেলাম।
এত সকালে সাগরের ফোন পেয়েই কেমন একটা খটকা লাগলো,,,
রিসিভ করতেই শুনি আব্বু নাকি আজ রাতে স্টক করেছে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে আর বারবার আমার কথা বলছে। সাগর ও বলল একবার বাসায় যেতে।
কোনো কিছু না ভেবেই সাগরকে বলে দিলাম আমি আসছি...
রুমের বাইরে গিয়ে দেখি আন্টি উঠে পড়েছে আন্টিকে সব খুলে বললাম। আন্টিও দ্রুত কয়েকটা পরোটা বানিয়ে দিলো সেগুলো খেয়ে রওনা দিলাম। আসার সময় শুধু মারুফ ভাইকে ডেকে তুলে বলে এসেছি আর কাউকে কিছু বলতে পারিনি ঘুমাচ্ছিল...
বাসা থেকে ফারুক ভাই কাউন্টারে ফোন করে টিকিটের ব্যবস্থা করে দেয় যার কারণে খুব সহজেই বাসার দিকে রওনা দিতে পারি।
সময় যেন কিছুতেই যেতে চাচ্ছেনা। হার্টবিট বেড়ে চলেছে...
অবশেষে 5 ঘন্টা জার্নির পর পৌঁছে গেলাম নিজের জেলা রাজবাড়ীতে।
সাগর কে ফোন দিয়ে হসপিটাল এর ঠিকানা টা নিয়ে একটা রিকশা করে চলে আসলাম।
হসপিটালের সামনে এসে দেখি সাগর বাইরে দাঁড়িয়ে আছে...
আমি সাগরের কাছে গিয়ে ডাক দেই।
সাগর আমার দিকে বাঁকা হয়ে তাকাচ্ছে হয়তো চিনতে পারছে না।
ওর কাছে গিয়ে গায়ে ধাক্কা দিয়েই কথা বললাম....
আমিঃ কি রে কথা বলছি শুনতে পাচ্ছিস না..? আব্বু কোথায়..?
সাগরঃ ( কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে) তুই শাকিব..?
আমিঃ হ্যাঁ কেন চিনতে পারছিস না...
সাগরঃ আমি তো বুঝতেই পারিনি তুই শাকিব। আয় ভিতরে আয়...
সাগরের সাথে ভিতরে চলে এলাম দেখি ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে। অনেকদিন পর ভাইয়াকে দেখলাম।
সাগরঃ ভাইয়া শাকিব এসেছে...
ভাইয়াঃ (আমার দিকে শুধু তাকিয়ে আছে হয়তো চিনতে কষ্ট হচ্ছে...)
আমিঃ আব্বু কোথায়..?
ভাইয়াঃ তুই আসছিস.. আয় ভিতরে আয়।
ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি চোখে পানি টলমল করছে
তারপর ভাইয়ার সাথে ভিতরে ঢুকলাম। দেখি আব্বুকে বেডে শুইয়ে রেখেছে আর পাশে আম্মু, ভাবি, ভাবির আব্বু-আম্মু আর রাহাত বসে আছে।
আমি ভাইয়া কে জিজ্ঞেস করলাম.....
আমিঃ কি হয়েছিল আব্বুর..?
ভাইয়াঃ রাতে হঠাৎ করেই স্ট্রোক করে, সেটা জানার সাথেই তখনই হসপিটালে নিয়ে আসি আর সাগরকে ফোন দেই। একা একা এতটা সামলাতে পারতাম না। এখানে আনার পর ডাক্তার দেখে বলেছে অতিরিক্ত চিন্তা আর সময়মতো খাওয়া-দাওয়া না করার জন্য এরকম টা হয়েছে। যখন জ্ঞান ফিরে তখন সর্বপ্রথম তোর কথাই বলেছিল। আমরা তো কেউই তোর খোঁজ জানিনা... (ভাইয়ার চোখে পানি টলমল করছে)
এতক্ষণে সবার নজর আমার দিকে পড়েছে আম্মু আমাকে দেখেই দাঁড়িয়ে পরল সাথে ভাবি ভাবির আব্বু-আম্মু সবাই... আম্মুর চোখ দিয়ে পানি ঝরছে
দৌড়ে কাছে এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল। আমিও নিজেকে আর সামলাতে পারলাম না কান্না করে দিলাম।
আম্মুঃ কোথায় ছিলি এতদিন..? আমাদের কথা কি তোর একটুও মনে পড়েনি..? তোর চিন্তা করতে করতে তোর আব্বুর এই অবস্থা...
ভাবীর দিকে চোখ পড়তেই দেখি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। শুধু ভাবি না সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
আমি গিয়ে আব্বুর পাশে একটা চেয়ার টেনে বসলাম...
আব্বুর দিকে তাকাতেই বুক ফেটে কান্না চলে আসছে। কতটা পাল্টে গিয়েছে চেহারা..
ভাইয়া বলল ঘুমের ওষুধ দিয়েছে এখন ঘুমাচ্ছে।
নার্স এসে সবাইকে ধমক দিয়ে বাইরে বের করে দিল রোগীর কাছে কান্নাকাটি করা যাবে না।
নার্স এসে বলার পরই ভাবি আম্মুকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেলো, সাথে ভাবির আব্বু-আম্মু।
ভাবি যাওয়ার সময় বারবার করুন দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাচ্ছিল...
আব্বুর একটা হাত নিয়ে আমার দু হাতের মুঠোন মধ্যে নিলাম। কিছুক্ষণ আব্বুর দিকে তাকিয়ে থাকতেই চোখ দিয়ে দুফোঁটা পানি ঝরে পড়ল।
আব্বুর হাতটা আমার মাথার উপর রেখে পুরনো দিনের কথাগুলো ভাবছি..
একটু পর দেখি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
তাকিয়ে দেখি আব্বু তাকিয়ে আছে আর চোখ দিয়ে পানি পরছে..
আব্বুঃ কোথায় ছিলি এতদিন, আমাদের কথা কি তোর একদমই মনে পড়েনি?
আমিঃ( চুপ করে শুধু চোখের পানি ফেলছি..)
আব্বুঃ কি হল কথা বলছিস না কেন..? এখনো রেগে আছিস আমার উপর..?
আমিঃ আমি একদমই রাগ করিনি, তুমি হয়তো পরিস্থিতির কারনে এরকমটা করেছিলে।
আব্বুঃ তোর সাথে সেদিন ওভাবে কথা বলার পর আমার নিজের ভেতরেই কি চলছিল সেটা শুধু আমি জানি আর আল্লাহ জানেন।
আমিঃ এখন ওসব থাক। কেমন লাগছে এখন...
আব্বুঃ এখন অনেকটাই ভালো লাগছে। একটা কথা বল...
আমিঃ কি..?
আব্বুঃ আবার চলে যাবি নাতো..?
আমিঃ না, আর কোথাও যাবো না।
আব্বুঃ মনে থাকবে তো...
আমিঃ হ্যাঁ...
আমি আর কথা বাড়ালাম না আর যেহেতু আব্বুর এই অবস্থা এখন যাওয়াটাও ঠিক হবে না। আর আব্বুর মন রক্ষার্থে বলতেই হল আর যাবো না তবে যাওয়ার ইচ্ছা হচ্ছে না।
আমিঃ তুমি শুয়ে একটু রেস্ট নাও আমি আছি এখানে...
আব্বুঃ আর রেস্ট নিতে হবে না...
আব্বু ভাইয়া কে ডেকে ডাক্তারের সাথে কথা বলতে বলল, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাসায় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে বলল।
ভাইয়া আর না করল না, চলে গেল ডাক্তারের সাথে কথা বলতে..
আব্বুঃ কোথায় ছিলি এতদিন..?
আমিঃ সেসব বাসায় গিয়ে বলব এখন চুপ করে শুয়ে থাকো...
সাগরঃ ভাই একটু এদিকে আসবেন...
আমিঃ ( উঠে সাগরের কাছে এলাম) হ্যাঁ বল...
সাগরঃ একটা কথা বলবেন..?
আমিঃ না....
সাগরঃ কেন..?
আমিঃ ওই শালা আপনি করে কার সাথে কথা বলছিস..?
সাগরঃ আমার বিশ্বাস হচ্ছে না যে আপনি সাকিব, তাই আরকি...
রাহাতঃ আমারো বিশ্বাস হচ্ছে না।
আমিঃ ফাজলামো করা বাদ দে..
সাগরঃ একদমই ফাজলামো করছি না। আপনি....
আমিঃ ধুর..... আবার আপনি..?
সাগরঃ কি আর করব, তুই করে বলতে এখন কেমন যেন বেঁধে যাচ্ছে..
আমিঃ কেন আমি কি এলিয়েন হয়ে গিয়েছি..?
সাগরঃ না মানে একদম বদলে গিয়েছিস আগের শাকিব আর এখনকার শাকিব পুরোটাই আলাদা।
আমিঃ হয়েছে আর বলতে হবে না..
রাহাতঃ তা এখন কোথায় যাবি..?
আমিঃ কোথায় আর যাবো, বাসায় যাব..
রাহাতঃ আবার ঢাকায় যাবি..?
আমিঃ ওখানেই তো সবকিছু আছে..
সাগরঃ নিয়ে আয় তোর যা যা আছে..
আমিঃ এখন কিভাবে কি করব আব্বুকেতো বলে দিলাম আর যাবো না..
সাগরঃ দেখ মারুফ ভাইয়ের সাথে কথা বলে..
আমিঃ হ্যাঁ আগে বাসায় যাই তারপর দেখি..
ভাইয়া ডাক্তারের সাথে কথা বলে বাসায় আসার ব্যবস্থা করে নিল। আর ডাক্তার বলেছে রোগীকে বাসায় নিয়ে রেস্টে রাখতে আর কোন টেনশন যাতে না করে।
সেই কথা মতোই বিকালের দিকে আব্বুকে নিয়ে বাসায় চলে এলাম।
এখনো ভাবির আব্বু আম্মুর সাথে কথা বলা হয়নি সাগর আর রাহাত ওদের বাসায় চলে গেলো। অনেক বলার পরও আসলো না।
বাসায় এসে আব্বুকে রুমে দিয়ে নিজের সেই পুরনো রুমটায় এলাম।
সবকিছু আগের মতোই আছে একদম সাজানো-গোছানো।
মনেই হচ্ছে না যে এখানে এতদিন কেউ থাকে নি..
যাই হোক..
ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বাইরে এসে দেখি ভাবী বসে আছে...
ভাবিঃ কেমন আছিস..?
আমিঃ ভালো..
ভাবিঃ তুই কি এখনো রেগে আছিস..?
আমিঃ না...
ভাবীঃ আমি বুঝতে পারিনি সাদিয়া এরকম কিছু করবে।
আমিঃ আমি এখন ওসব নিয়ে আর কথা বলতে চাচ্ছি না।
ভাবিঃ অনেক বদলে গিয়েছিস...
আমিঃ বদলাইনি তবে পরিস্থিতির সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছি।
ভাবিঃ তোর কথা বলার ধরন গুলো চেঞ্জ হয়ে গিয়েছে.....
.
চলবে...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com