Breaking News

গল্প: পরিণতি । পর্ব - ০৩

সবাই সব কিছু জানার পরে সিদ্ধান্ত হলো ভাবীর পরিবার আর আমার শ্বশুর বাড়ির পরিবার সবাই এক জায়গায় বসবে.. সবাই কে ডাকা হলো। সবাই বসলো তাতে সিদ্ধান্ত হলো, আমি যতোদিন বাপের বাড়িতে থাকবো ততোদিন ভাবি তার বাপের বাড়িতে থাকবে।।

ভাবিকে তার মা বাবা নিয়ে গেলো, এবং আমার কাছে ক্ষমা চাইলো।। আর একটা কথা, ভাইয়া সবার সামনে বার বার বলছিলো সে ভাবিকে ডিভোর্স দিবে। যতোটাকা কাবিন ছিলো তাই দিয়ে।
কিন্তু তার মা বাবা হাতে পায়ে ধরে আরেকটা সুযোগ চাচ্ছিলো!! বর ও আমার কাছে অনেক কান্নাকাটি করে, পায়ে ধরে ক্ষমা চাইলো। জিবনে আর কোনো দিন এমন হবে না।

আগের মতো সব ঠিক হলেও মন থেকে কোনো কিছুই মেনে নিতে পারছিলাম না!! তারপরেও কিছু করার ছিলো না, যেহেতু আমি গ্রামের মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে আরো বাবা নেই।
আমাদের পজিশনের মেয়েদের অনেক কিছু মেনে নিয়ে বেচে থাকতে হয়!! আমাদের পরিবার থেকে, পারিপার্শ্বিক পরিবেশ থেকে শিখানো হয় ছেলেরা অনেক কিছু করতে পারে। তারা ইচ্ছা করলেই বউ বাচ্চা রেখে, অন্য মেয়েদের সাথে ফিজিক্যাল রিলেশনে যেতে পারে।
আর এই সব কিছু মেনে নিয়েই আমাদের মতো পরিবারের মেয়েদের সংসার নামক জেলখানায় বন্ধি হয়ে থাকতে হয়!! হ্যা এটাই নিয়ম,, আমিও তার ব্যাতিক্রম নয়… তাই আমাকেও তার সব কিছু মেনে নিয়ে সংসার করতে হয়েছিলো!!
অনেক বাধাবিপত্তি পেরিয়ে আমার প্রেগন্যান্সি টাইম নয় মাসে পা দিলো, হঠাৎ একদিন প্রচুর হাত পা ফুলে গেলো। আর আমি খুব মোটা হয়ে গেছিলাম, ২৩/২৫ কেজি ওয়েট বেরে গিয়েছিলো!!
নয় মাস ১৮দিনের দিন, হাত পা মুখ ফুলে ডাবল হয়ে যায়!! প্রেশার বেড়ে, শ্বাসকষ্ট শুরু হয়, তখন সবাই মিলে হসপিটালে নেয়। ডঃ সব চেকাপ করে, সিজারের কথা বলে,, অতিরিক্ত প্রেশার বাড়ায় সিজার করতেও পারছিলো না।

দুইদিন হসপিটালে থাকার পরে, অবশেষে তিনদিনের দিন আমার সিজার হয়!! সেদিন ছিলো আমার লাইফের সব থেকে খুশির দিন!! শুক্রবার ছিলো সেদিন,তাই ভাবছিলাম তখন হাসবেন্ড পাশেই থাকবে কিন্তু সারাদিনে তাকে দেখতে পাইনি!!
সিজার হয় বিকেল ৩টার দিকে। রাতে আমাকে বেডে দেওয়া হয়। কন্যা সন্তানের মা হলাম!! মেয়ের মুখ দেখে সব কস্ট ভুলে যাই, ভুলে যাই এতো মাস ধরে এতো কস্ট করেছি সেই দিনগুলো।
মনে হচ্ছে সুখের দিন ধরা দিয়েছে!!
হসপিটালে আসার পরে প্রথম দিন বর ছিলো, তারপর আর তার মুখ দেখার সৌভাগ্য হয়নি… তার বাড়ির সবাই ছিলো, শুধু তার অভাব টা থেকে গেছিলো বুকের এক পাশে!!
মা বাবা হওয়া যে এতো সহজ নয়, সেটা তাকে বুজানোর জন্য আমি আগে থেকেই বলেছি আমার ডেলিভারি টাইমে আমি সব সময় তাকে পাশে চাই। সেও কথা দিয়েছিলো পাশে থাকবে, বাট সে তার কথা রাখতে পারেনি।

অনেক রাত হয়ে যায়, দরজা খোলার আওয়াজ পেলেই আমি ঘুরে তাকাই। এই বুজি সে আসলো,, এই বুজি আমার মেয়েকে এসে কোলে নিয়ে আদর করলো!!
না আমার ধারণা শুধু ভুল!!
রাত প্রায় ১২টা (সঠিক না, কারন তখন ফোন ছিলো না আমার কাছে টাইম দেখার জন্য) মায়ের ফোনে কল আসলো।
বড় ভাইয়া ফোন দিয়েছে, মা কথা বলতে বলতে বাহিরে যায়। আর রুমে আসেনা, মা কে ডাকার জন্য শ্বাশুড়ি যায়, সেও আর আসেনা!!
কি আজব!! যে যায়, সে একেবারে যায় ফিরে না।।
প্রায় ৩০মিনিট পরে তারা আসে, দুজনের চোখেই পানি!!
মহিলা মানুষ তো, কিছু একটা লুকোতে চাচ্ছে কিন্তু লুকাতে পারছে না!! মা বলে তোর ভাইয়া রওয়ানা দিয়েছে, সকালের ভিতরেই চলে আসবে!!

সকাল বেলা ভাইয়া আসে, ছোট ভাই আসে.. মেয়েকে খুব আদর করে, মেয়েকে কোলে নিয়ে বড় ভাই কেদে দেয়!! জোড়ে জোড়ে কাদছে আর বলতেছে, আমার ছোট মা এটা, আমি বেচে থাকতে আমার ছোট মা কে কোনো দিন কস্ট পেতে দিবো না। আমার হাত ধরে বলে তোকে সুখ দিতে পারিনি, তার জন্য আমাকে ক্ষমা করিস!! মাফ করিস বোন!!
ভাইয়ের কান্না দেখে সবাই কাদে, আমিও কাদি… বার বার বলি কি হইছে ভাইয়া আমাকে বলেন। আপনি আমাদের জন্য যা করেছেন তা কোনো ভাই করতে পারবে না।
এভাবে সারাদিন যায়, আমি শুধু একজনকে খুজি। তার জন্য ছটফট করি, তবুও তাকে দেখতে পাচ্ছিনা!! তখন মা কে বলি মা আপনার জামাই আসলো না কেনো? তাকে ফোন দিয়ে আসতে বলেন।
শ্বাশুড়ি বলে মেয়ে হইছে সে জন্য মনে হয় রাগ করেছে, বাসায় গেলে মেয়ের মুখ দেখলে দেখবা সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি বলি আমার মেয়ে হবে তা তো আগেও জানতো, তখন তো খুশি ছিলো।
আমার ভাই চিৎকার করে উঠে, বলে আর একবার তুই ওই জানোয়ারের নাম মুখে নিবি না!! তোকে আর জানোয়ারের কাছে দিবো না।

শ্বাশুড়ি কে বলে, আপনি চলে যান!! আপনার বাড়ি থেকে যেনো আর কেউ না আসে… আমার বোন আর আপনাদের বাড়ি যাবে না।। কোনো সম্পর্ক নাই আর আপনাদের সাথে!!
আমি অবাক হয়ে যাই,কি আশ্চর্য!! ভাইয়া হঠাৎ রিয়েক্ট কেনো করতেছে? ভাইয়া তো এমন ব্যবহার কারো সাথে করে না, এখন কেনো এমন করতেছে!!
অবশেষে দুইদিন পরে আমি আমার মেয়ের বাবার খবর পাই!!
আমার ডেলিভারির দিন থেকে আমার বর, আর ভাবিকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না!! তার মানে সবাই বুজতে পারছেন??
হ্যা আমাকে মৃত্যুর পথে ঠেলে দিয়ে, তারা নতুন জীবনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছেন। একটা বার চিন্তা করেনি বাচ্চাটার কথা? একটা বার মেয়েটার মুখ দেখে যেতে পারতো!! মুখটা দেখলে ঠিক যেতে পারতো না, মেয়েটা তো ওর ই রক্তের!! ঠিক কোথাও একটা টান পড়তো!!

আমি পাগলের মতো হয়ে যাই, মাত্র দুইদিন হলো এতো বড় অপারেশন থেকে উঠলাম।তার আগেই এতো বড় পেইন কিভাবে মেনে নিবো??
এতো নাম ডাক, পরিবার, সন্মান, কারো কথা ভাবলো না!! শুনেছি মানুষ যখন পাপ করে, তখন তার হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে যায়। তার বেলাতেও তাই হয়েছে?? আর দশ জনের মতো তো তার জীবন নয়, সে একজন স্কুল শিক্ষক।
আর শিক্ষক মানে দশটা জীবন গড়ার কারিগর সে।।আর দশটা ছেলে মেয়ের আইডল সে, বাট সে এ ভাবে এইসব করবে এটা ছিলো আমার কল্পনার বাহিরে।
এইসব কিছু ভাবতে ভাবতে, আবার প্রেশার বেড়ে যায়। অসুস্থ হয়ে যাই আমি।
হস্পিটালে নিয়ে অক্সিজেন দেওয়া হয় আমাকে!!.....
চলবে....

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com