Breaking News

গল্প: পরিণতি । পর্ব - ০২

বাহিরে গিয়ে দেখি, পুকুরঘাটে কথা বলার সাউন্ড আসতেছে। কাছে গেলাম শব্দ নাই। হয়তো ফোনে কথা বলতেছিলো, বাট আমাকে দেখে ফোন কেটে দিছে। সেদিনের মতো সব গেলো, আমিও মান সন্মানের ভয়ে মুখ খুললাম না!! কত বোকা ছিলাম! নিজের কথা চিন্তা না করে অন্যের মান সন্মানের কথা চিন্তা করেছি।

চিন্তা করেছি ভাবিকে ভাইয়া মেরে ফেলবে। মানুষ খারাপ ভাববে। ছেলে মানুষের হয়তো এমন কিছু করার অধিকার আছে, তাই করেছে। সব ঠিক হয়ে যাবে। দিন যতো যায়, তাদের লিলাখেলা ততোই সবার নজরে আসতেছে, বাট কেউ তেমন ভাবে মুখ ফুটে বলছে না।
এর মাঝে ভাবি বাপের বাড়ি যাবে, তো মা বলছে আমার ছোট ভাই তাকে দিয়ে আসবে। বাট ভাবি কিছুতেই মানছেন না, তিনি একাই যাবেন।
আর আমাদের গ্রামের নিয়ম বউয়েরা বাপের বাড়ি একা যায় না। শ্বশুর বাড়ি বা বাপের বাড়ি থেকে কেউ নিয়ে যায়। বরাবর ছোট ভাই নিয়ে যেতো, বাট ওকে নিলো না সাথে। এদিকে সারাদিন বরের কোন খোজ নাই, ফোন দিলাম বলে মিটিং আছে রাত হবে বাসায় যেতে।

আমার মন মানছে না, ঠিক বুজতে পেরেছি ভাবির সাথেই আছেন তিনি!! ছোট ভাইকে স্কুলে পাঠালাম সন্ধ্যার একটু আগে। যেহেতু স্কুল আমাদের বাড়ির কাছেই।
ভাই এসে বললো আপু আজ নাকি দুলাভাই স্কুলে যায়নি, ছুটি নিয়েছে!! মাথায় আকাশ ভেংগে পড়লো! প্রেগন্যান্সির টাইমে এত্তো পেইন আর নিতে পারছিলাম না।
দিন দিন প্রেশার বাড়ছে, শ্বাসকষ্ট হচ্ছে!! ভাবলাম আজ একটু ধরা দিতেই হবে।। তারা হয়তো ভাবছেন তাদের লীলাখেলা কেউ জানেনা।
রাত ৯টা।
কারো কোনো খবর নাই!! বাড়ির পাশের এক প্রতিবেশি।আমাদের দুসম্পর্ককের দুলাভাই হয়। তিনি বাড়িতে এসে বলতেছে আমার মায়ের কাছে, কাকিমা সাথীর জামাই কে নিয়ে কি ব্যাটার বউ শহরে গেলো নাকি?
আমার মা বয়স্ক, গ্রামের সহজ সরল মানুষ!
সে বলে না না তুমি যেনো কাকে দেখেছো।। বউমা একা একাই বাড়িতে গেছে।
আমার আর বোঝার বাকি রইলো না।
আমার ছোট ভাইটা আমাকে জরিয়ে ধরে বলে দিদি(ও আমাকে দিদি বলে ডাকে ছোট থেকেই) একটা কথা বলবো??
আমি বললাম,
বল!
বললে বকা দিবা নাতো?
আমি বললাম,
কিছুই করবো না তুই বল…
ভাই বললো,
দুলাভাই আর ভাবি যেনো কেমন কেমন করে, আমার ভাল্লাগে না। দুলাভাই শুধু ভাবির দিকে তাকাইয়া থাকে। আরো অনেক কিছু।
কস্টে আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে, তার মানে আমার ভাইটাও বুজতে পেরেছে তাদের আচার আচরন। ওর চোখ থেকে পানি পড়ছে আর বলছে, দিদি তূমি কস্ট পেলে খুব কান্না আসে আমার। তুমি এখন আর ভালোবাসোনা আমাকে, তুমি সারাদিন আমার সাথে
কথাও বলোনা। আমার পড়া ধরোনা!! এই গুলা আমার ভাল্লাগে না।

বাবা মারা যাওয়ার পর আমি আমার ছোট ভাইয়ের সব থেকে প্রিয় ছিলাম। ওকে খাইয়ে দেয়া, পড়িয়ে দেয়া সব আমিই করেছি।। অথচ এখন এই মানষিক প্রেশারে ওর সাথে কথা বলা পর্যন্ত আমি অফ করেছি!! নিজের কাছে তখন নিজেকে খারাপ লাগলো।। কার জন্য আমি আমার আপন জনদের কস্ট দিচ্ছি!!
ভাইকে বুজালাম, আমি অসুস্থ তাই এমন করছি। আবার সব ঠিক হয়ে যাবে। আর দুলাভাই ভাবিকে নিয়ে এমন বলতে নেই, তাদের সম্পর্ক ইয়ারকি, মশকারি করার। তাই তারা এমন ভাবে কথা বলে, তাকায়।
আর কিছুই না।
রাত ১টায় তিনি বাসায় আসলেন, দেখেই মনে হয় চুরি করে এসেছে। মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। মা উঠে ভাত দিলো, ভাত খেলেন না। তিনি নাকি খেয়ে আসছেন কোন স্টুডেন্ট এর বাসা থেকে।
আমিও খাটের উপর বসে আছি, আমাকে বার বার লাইট অফ করে ঘুমানোর জন্য বলতেছে। বাট আমি আজ ঘুমাবো না, তাকে কিছু বলবো তাই সুযোগ খুজছি।
তার একটা গুন ছিলো, এই পর্যন্ত যাই করেছে আমার সাথে কখনো খারাপ ব্যবহার করেনি। হয়তো আমি করিনি তাই সেও করেনি।

আমি তার ফোনটা হাতে নিলাম, আর বললাম কোন স্টুডেন্ট এর বাসায় খাইছেন তাকে কল দেন তো (আপনি করে বলতাম, অনেক সিনিয়র ছিলো তাই)
আমার কথা শুনেই যেনো তার মাথা ঘুরে গেলো! বলতেছে,
এতো রাতে ফোন দেয়া ঠিক হবেনা। সকালে দিও, সে হয়তো ভেবেছে আমি ঠান্ডা মানুষ, এইসব নিয়ে আর কথা বলবো না।।
আমি আর কথা না বলে শুয়ে পড়লাম, কাদছি শুয়ে শুয়ে!! কাদতে কাদতে হেচকি উঠে গেলো, তিনি বললেন কি হইছে এভাবে কাদছো ক্যানো? শরীর খারাপ কিনা বার বার জিজ্ঞেস করতেছে।
আমি প্রচন্ড পরিমানে কাদছি আর বলছি, আমার ভাইদের মান সন্মান আপনি খাইয়েন না। আমার কিছু হলে আমার ভাইয়েরা শেষ হয়ে যাবে, সে তো অবাক!

বার বার জিজ্ঞেস করছে কি হইছে বলো, খুলে বলো আমাকে, তখন বললাম, আমি শুধু একটা কথাই বলতে চাই। আপনার মনে যদি কিছু থেকে থাকে সেটা ধুয়েমুছে পরিস্কার করুন। আল্লাহ এটা সহ্য করবে না, এতিমের উপর অত্যাচার আল্লাহ মেনে নিবে না। আপনার পায়ে পড়ি, আপনি আমার পরিবারের শান্তি কেড়ে নিয়েন না। এভাবে কাদছি আর বলেই যাচ্ছি।। কি বলবো, কিভাবে সব বলবো তখনো বুজে উঠতে পারিনি!!
পরের দিন সকালে শ্বাশুড়ি, ভাশুরের ছেলেমেয়েরা আমাকে দেখতে আসলো। অনেক কিছু নিয়ে আসলো।। তারা সবাই আমাকে খুব ভালোবাসতো, বর ও খুবই ভালো ব্যবহার করতেছে, বিকালে সবাই বসে আছি।
এর মাঝে ভাবি বারবার ওর ফোনে কল দিচ্ছে। আমি হাত থেকে ফোন টা নিয়ে রিসিভ করে রেখে দিলাম!!
ভাবি ভাইয়া ভাইয়া করেই যাচ্ছে, অনেকক্ষন পরে আমি হ্যালো বললাম উনি কেটে দিলো।। বর আর সেদিন বাহিরেও যায়নি। আর কথাও হয়তো বলেনি। ভাবি রাত ৯টার দিকে আবারো কল দিলো। উনি রিসিভ করলো না।
আমি শ্বাশুড়ি কে বললাম আপনার সাথে আমি বাড়িতে চলে যাবো, ওই খানেই ডেলিভারি করাবো।
শ্বাশুড়ি তো খুশি, কিন্তু আমার মা তো কিছুতেই যেতে দিবে না এই অবস্থায়।

বর হয়তো বুজতে পেরেছে আমি তার কুকির্তী বুজতে পেরেছি, তাই সে সেদিন রাত থেকেই স্বাভাবিক আচরণ করছে, বাহিরে থাকেনা। সকাল সকাল বাসায় চলে আসে। আমাকেও অনেক কেয়ার করে, হয়তো আমি তাকে বুজাতে সক্ষম হয়েছিলাম।।
আমিও ভেবেছিলাম সবার মান সন্মান ঠিক রেখে এর একটা ফয়সালা হোক, ঠিক তাই হয়েছে এটাই ভেবেছি!!
১০দিনের মতো ভালোই কাটলো, এর মাজে ভাবি আমার ফোনে কল দিয়ে বলতেছে ছোট ভাইকে পাঠানোর জন্য। খুব রাগী কন্ঠে কথা বলতেছে!!
আমিও বললাম একা যখন যেতে পারছেন একাই আসেন, আবার ওর কেনো যেতে হবে। ও মা!! সকাল হতে না হতেই উনি হাজির!! রাগী রাগী মুডে আমার বরের দিকে তাকাচ্ছে, বুঝতে পারলাম এতো দিন হয়তো কথা বলেনি তাই রাগ দেখাচ্ছে!!
বর ভাবিকে পাত্তা দিচ্ছেনা এবার! এখন আর চোখাচোখি করছে না, স্কুল থেকে এসেই আমার রুমে ঢুকছে আর বের হয় না। এদিকে ভাবি তো জ্বলে পুড়ে একাকার।।
একদিন বিকেলে আমরা শুয়ে আছি, ভাবিও আসলো। এসে বলতেছে সাথী কিচ্ছু ভালো লাগছে না। হয়তো বেশীদিন বাচবো না!! আমি শুনে হেসে দিলাম, বল্লাম আপনার শরীরে কিছু হয়নি। আপনার মনের রোগ হইছে। ভাইয়াকে আসতে বলেন,

ও মা!! উনি বলে তোমার ভাইয়া কি সব অসুখ সারাতে পারবে???
আমি যেনো কিছু বুজেও না বুজে আছি! বর উনার কথাই শুনছে না, তিনি একমনে ফোন টিপেই যাচ্ছে!!
এভাবে বেশ কিছুদিন ভালোই চলতে লাগলো।আমি প্রতিমাসে ডঃ চেকাপে যেতাম। আমার ছোট ভাই নিয়ে যেতো। আর শহরে হসপিটালের কাছে আমার ছোট ননদের বাড়ি, তাই ওই ছোট আপু সাথে থেকে ডঃ দেখিয়ে দিত।।
আমাদের বাড়ি একদম গ্রামে, শহরে যেতে প্রায় ৩ঘন্টার মতো লাগতো।। সেদিন ডঃ এর অনেক গুলো ও’টি ছিলো, সব গুলো সিরিয়াস রোগী। আমাকে দেখতে দেখতে রাত ৯টা বেজে যায়।
তাই ননদ বললো,
আজ আমার বাসায় থেকে যাও, কাল বাড়িতে যাবে। আর এতো রাতে গাড়িও পাবে না।। আমার মন সায় দিচ্ছিল না,, কেনো জানি ছটফট করতে ছিলো বাড়িতে যাওয়ার জন্য।। কিন্তু কোনো উপায় তো নাই, তাই থেকেই গেলাম!

সারারাত এক ফোটাও ঘুম হলো না,, ভোর রাতে বড় ভাইয়া কল দিছে। ফোনের রিং শুনেই কেমন যেনো কলিজার পানি শুকিয়ে গেলো, কেনো জানি মনে হচ্ছে বিপদের সংকেত।
ভাইয়া খুব নরম নরম কথা বলতেছে, বললো তুই সকাল সকাল বাসায় যা!
আমিও আজ বাড়িতে যেতে পারি। আমি বার বার বললাম, ভাইয়া বাড়িতে সমস্যা কোনো?
আমাকে বলেন তাহলে, ভাইয়া আর কিছুই বললো না, আমি অসুস্থ হয়তো কিছু ধরা দেয়নি!!
আমরা ছোট দুই ভাই বোন ছিলাম বড় ভাইয়ের একটা অংশ!! নিজে হাজার কস্ট করেও আমাদের কখনো কস্টে রাখেনি।
বর কে কল দিলাম, সে রিসিভ করেই বলতেছে তুমি আমাদের বাড়ি নামো। এখন থেকে আমরা আমাদের বাড়িতেই থাকবো।। আমার বুঝতে কিছু বাকি রইলো না, যে বাড়িতে কোনো অঘটন ঘটেছে।।
সকাল সকালই চলে আসলাম, বর স্কুলে, বাড়ির সব কিছুই স্বাভাবিক।

ভাই পরের দিন বাড়িতে আসলো!! ভাবির সাথে কথা বলছে না, মন ও ভালো নেই। মন মরা হয়েই আছে, আমি বার বার জানতে চাইলাম কিছুই বলেনা। পরে পাশের বাড়ির সেই দুলাভাই এসে ভাইকে ডেকে নিয়ে গেলো। পাশের বাড়ি বলতে আমাদের বাড়ি আর দুলাভাইদের বাড়ির মাঝখানে একটা পুকুর। আমাদের গ্রামের বাড়ির সবাই ওই পুকুর দিয়েই কাজ করে, আর সবার টয়লেট ছিলো বাহিরে।
রাতে ভাই আর ভাবি তুমুলঝগড়া!! কেউ কারো সাথে থাকবে না ইত্যাদি ইত্যাদি!!
-মা ভাইকে চড় মারলো, বকাবকি করে থামালো ভাবি তো চিল্লাপাল্লা করে এলাকার মানুষ একাকার করে ফেলছে!! আমি এর মাঝে কিছুই জানি না, কিছুই বুজতে পারছি না।। কি কাহিনী!!
মা ওই দুলাভাইয়ের কাছে জানতে চাইছে, কি হইছে। কি বলছো তুমি, আমার ছেলে কেনো এমন করে…?
দুলাভাইয়ের কথা শুনে তো আমি শকড!!

সে নাকি পরশু রাতে ভাবিকে আর আমার বরকে হাতেনাতে ধরেছে পুকুরঘাট থেকে পুকুরে সিড়ি বাধানো ছিলো, সেখানে সবাই বসতো আর রাতে ওইখানে বসেই বর কথা বলতো।। পরে নাকি ভাবি ওই দুলাভাই এর পায়ে ধরেছে, কাউকে না বলার জন্য।। দুলাভাই তখনি আমার ভাইকে সব ফোন করে বলে দেয়।
এগুলো শুনে আমি চুপচাপ বসে পড়ি, সবাই আমাকে দেখছে। আমাকে নিয়ে ভয় পাচ্ছে, আমার যদি কিছু হয়। কিন্তু এই কুকর্ম তো সবার আগে আমার চোখেই পড়ে।
গ্রামের সবাই আমাকে খুব ভালোবাসতো!খুব নরম ছিলাম। আর খুব মিশুক ছিলাম, দুলাভাইয়ের বউ ওই আপুর বেবি হওয়ার আগে আমি উনার সব কাজ করে দিতাম। সেই থেকে উনারা আমাকে বোনের মতোই দেখতো।
দুলাভাই আরো বলে সেদিন শহরের একটা হোটেল (আবাসিক) থেকে বের হতে দেখছে ওদের দুইজন কে......
চলবে....?

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com