Breaking News

কবর ও কবর আজাব



ইতিপূর্বে মৃত্যু এবং পর্দার আড়ালের জগতে দুটি স্তর বদলী হয়ে গেল। কিরামান

কাতেবীনদের থেকে মালাকুল মউতের দায়িত্ব গ্রহণ, তারপর মালাকুল মউত, বা
মুত্যুর ফেরেশতাদের কাছ থেকে, মুনকার নাকীর ফেরেশতাদের দায়িত্ব গ্রহণ।
উল্লেখিত দু'টি স্তরবদলী মানব দেহের আধ্যাত্মিক অংশের। উল্লেখিত সময়ের
মধ্যে অর্থাৎ মৃত্যু হতে পর্দার আড়ালের জগতে মানব দেহের শারীরিক অংশেরও
দুটি স্তরবদলী হয়ে যাচ্ছে। প্রথম মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত মানুষের অবস্থান ছিল পৃথিবীর
উপরি ভাগে। মৃত্যুর সাথে সাথে স্তর বদলী হয়ে এখন তার অবস্থান হবে
পৃথিবীর নিম্ন ভাগে অর্থাৎ মাটির নিচে। এখন তাকে মাটির উপরে রাখা বে-
আইনী বা বিধান বহির্ভুত। শুধুমাত্র পদ্ধতিগত ভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে যতটুকু
দেরী হয় ততটুকু সময়ই তাকে পৃথিবীর উপরি ভাগে রাখা বৈধ। তার চেয়ে বেশী
সময় পৃথিবীর বুকে তাকে রাখা অবৈধ।

দ্বিতীয় স্তরবদলী হচ্ছে, মাটির নিচে তাকে রাখার পর তার দেহটা মাটি, পানি,
আগুন ও বাতাস, এ চারটি পদার্থের মধ্যে বিলীন হয়ে যাবে। কোন কোন ক্ষেত্রে
যদি বিলীন না হয় তা হবে ব্যতিক্রম। মানুষকে মাটির নিচে রাখার জন্য যে গতটি
করা হয়, আরবী ভাষায় ঐ গর্ভটিকে কবর বলা হয় এবং মৃত্যু থেকে পুনরুত্থান
পর্যন্ত সময়কে আলামে বরযখ বা পর্দার আড়ালের জগত বলা হয় এবং ঐ পদার
আড়ালের জগতে মানুষ যে শাস্তি ভোগ করে তাকে কবর আজাব বলা হয়। সূরা
মুমিনুনের ১০০ আয়াতে বলা হয়েছে-

وین ور آبهم برزخوالى يوم يبعثون

এবং তাদের পিছনে রয়েছে পুনঃরুত্থানের দিবস পর্যন্ত পর্দার আড়ালের জগৎ"।
এই পর্দার আড়ালের জগতের শাস্তিকে হাদিসের ভাষায় বলা হয়েছে আজাবুল
কবর। আজাবুল বরযখ বলা হয়নি। আজাবুল বরযখ বললে সাধারণ মানুষের
জন্য বিষয়টি বোঝা একটু কষ্টকর হত। কিন্তু আজাবুল কবর বা কবর আজাৰ
বললে বিষয়টা সর্বস্তরের লোকদের খুব সহজেই বুঝে আসে, তাই মনে হয় রাসূল
(স.) পর্দার আড়ালের জগতের শান্তিকে আজাবুল বরজখ না বলে আজাবুল কবর
বলেছেন । অন্য একটি কারণ হচ্ছে, রাসূল (স.) আরব ভূমিতে যে জাতিগুলিকে
দাওয়াত দিয়েছেন, তারা ছিল প্রধানত মুশরিক, ইয়াহুদী ও খৃষ্টান। 

এরা সবাই তাদের মৃতকে কবর দিত, মুশরিকরাও তাদের মৃত দেহগুলিকে পোড়াত না বরং
কবর দিত। তাই কবর ছাড়া ঐ অঞ্চলে অন্তেষ্টিক্রিয়ার অন্য কোন ব্যবস্থা ছিল না
তাই পর্দার আড়ালের জগতের শান্তিটাকে তৎকালীন মানুষকে বুঝাবার জন্য
আজাবুল কবর শব্দটাই যথোপযোগী ছিল। কিন্তু বর্তমানে ইসলাম সমগ্র পৃথিবী
ব্যাপী ছড়িয়ে পরেছে। এখন যদি পর্দার আড়ালের জগতের শাস্তিকে শুধু
আজাবুল কবর শব্দ দ্বারা বুঝানোর চেষ্টা করা হয় তবে ভারতবর্ষের মুশরিকরা
কবর আজাব থেকে বাদ পরে যাবে। 


কেননা তাদের কবরই নাই। কাজেই কবর না থাকলে কবর আজাব কি করে সম্ভব হবে? 
কাজেই হাদীসের ভাষাটি হচ্ছে অঞ্চল ভিত্তিক। যে অঞ্চলে কবর ছাড়া অন্য কিছুর অস্তিত্ব ছিল না, আর
কুরআনের ভাষাটি হচ্ছে আন্তর্জাতিক। যদি আজাবুল বরযখ বলা হয়, তা হলে
পৃথিবীর কোন অঞ্চলে কোন বিধর্মী শাস্তির অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে বাদ পরবে না।
অন্যদিকে কুরআন ও হাদিসের শব্দের মধ্যে কোন বিরোধ সৃষ্টি হয়নি। কেননা
হাদিসের শব্দটি আঞ্চলিক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে এবং কুরআনের শব্দটি
আন্তর্জাতিক অর্থে ব্যবহৃতই রয়েছে। উল্লেখিত আলোচনার মাধ্যমে পাঠকবৃন্দ
আশা করি বোঝতে সক্ষম হয়েছেন যে, আজাবুল কবর অর্থ কি? এক কথায়।
আজাবুল কবর অর্থ হচ্ছে মৃত্যু হতে পুনরূত্থান পর্যন্ত সময়ের মধ্যের শান্তি।

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com