ভালোবাসি প্রিয় । পর্ব - ০৭
গত পর্বে ছিলো ......নাফিসা তার বান্ধবী দিনার বিয়ের ব্যবস্থা করে দেয়। এদিকে মেহেদীর আচার আচরণ খুব ভিন্ন দেখা যাচ্ছে,,নাফিসার ব্যাগে একটা প্যাকেট দিয়ে চলে যায়।তারপর.....
রাতে নাফিসা মেহেদীর দেওয়া প্যাকেট খুলে দেখলো স্টোন বসানো এক জোড়া চুড়ি। চুড়ি জোড়া হাতে পড়ে দেখলো একদম পারফেক্ট সাইজ! মানিয়েছে বেশ তাই আর খুললো না। পড়া শেষ করে ডিনার করে আবার রুমে এসে দেখলো তার ফোনে অচেনা নম্বর থেকে কল এসেছে দুইটা। লাইটটা অফ করে খাটে শুতেই আবার ফোনটা বেজে উঠলো। রিসিভ করতেই পুরুষ কন্ঠ বলে উঠলো,
- কি করছো?
- হ্যালো, কে বলছেন?
- চিনতে পারোনি। কয়েক সেকেন্ড ভাবলে হয়তো চিনে ফেলবে...
নাফিসা এবার কন্ঠ শুনেই বুঝে গেছে এটা মেহেদী।
- এতো রাতে কল করেছেন কেন?
- চিনতে পেরেছো তাহলে?
- হুম।
- এতো রাত কোথায়! মাত্র ১০টা বাজে। এখনই ঘুমিয়ে পড়েছো নাকি!
- ফোন নম্বর কোথায় পেলেন?
- তুমি তো অনেক বুদ্ধিমতী তাহলে বো-*কার মতো প্রশ্ন করো কেন? ফোন নম্বর পাওয়া কি খুব কঠিন ব্যাপার! ভার্সিটির স্টুডেন্ট আইডেন্টিটিতে আছে, পলাশ স্যার এর কাছে আছে, তোমার ফ্রেন্ডের কাছে আছে।
- আমার ফ্রেন্ড আপনাকে দিবেনা সেটা খুব ভালো ভাবেই জানি।
- তা ছাড়াও আরও অনেক অপশন আছে।
- ওকে ফাইন। কল করেছেন কি জন্য, সেটা বলুন।
- একটু একটু প্রেমালাপ করার জন্য।
- আমার মনে এতো প্রেমালাপ নেই।
- এতো লাগবে না, একটু একটু হলেই হবে।
- একটুও নেই। ঘুমাবো আমি, কল কা-টুন।
- আরে ঘুমাবেই তো। এতো তাড়া কিসের। দিনার সাথে থেকেও কি কিছু শিখতে পারো নি! ওরা কথা বলে সারারাত কাটিয়ে দেয়। এখন ফোন দিলেও দেখবে ওয়েটিং এ আছে।
- ভালো হয়েছে। আমার এতোকিছু শিখার প্রয়োজন নেই। গুড নাইট।
নাফিসা কল কে-টে দিলে মেহেদী মেসেজ করলো, " তোমার বলা গুড নাইট আমার জন্য লাভ নাইট হয়ে গেছে। "
নাফিসা হেসে বললো, পুরাই পা-*গল একটা!
সকালে দিনা জানালো সে আজ ভার্সিটি আসবে না। নাফিসার ও যেতে ইচ্ছে করছে না। অন্যদিকে গানের প্রাক্টিস আছে। কিছুক্ষণ ভেবে সিদ্ধান্ত নিলো আজ যাবে না। একদিন প্রাক্টিস মিস হলে কিছু হবে না। মাহেদী ভার্সিটি এসে নাফিসাকে না দেখতে পেয়ে কল করলো নাফিসার ফোনে,
- বলুন
- বাহ, আমার জন্যই ওয়েট করছিলে নাকি!
- খেয়ে দেয়ে আমার কাজ নেই আর!
- কি কাজ আছে শুনি।
- এতো কিছু শুনতে হবে না।
- ভার্সিটি আসোনি কেন?
- ইচ্ছে হয়নি, তাই।
- দিনা তো আজ আবিদের সাথে বেড়াতে যাবে। তোমারো যেতে ইচ্ছে করছে নাকি আমার সাথে?
- না।
- প্রাক্টিস এ আসবা না?
- না।
- আমারও থাকতে ইচ্ছে করছে না। চলেই যাবো ভাবছি।
- ভাবতে থাকুন।
নাফিসা আর কিছু বলার সুযোগ দিলো না মেহেদীকে। এগারোটার দিকে শুরু হলো বৃষ্টি! নাফিসা মনে মনে খুশি হলো, আজ না গিয়ে ভালোই করেছে। বাসায় থেকে মামাতো বোন অহনার সাথে বৃষ্টিতে ভিজবে। যেই অহনাকে ডাকতে যাবে তখনই আবার মেহেদীর ফোন!
- আবার কি?
- ঝরছে বৃষ্টি, ইচ্ছে হচ্ছে ভিজতে তোমার সাথে। আসোনা একটু আমার কাছে।
- আহ! নিসংকোচ আবদার!
- ভালোবাসার আবদারে সংকোচ থাকবে কেন! সত্যিই খুব ইচ্ছে করছে ভিজতে।
- ভিজো একা একা। না করেছে কে!
- জানেমন! তুমি তো মেঘের সাথে আমার জান ও ফুটো করে দিলে!
- হিহিহিহি......
-আরেকবার বলো না তুমি করে...
- পারবো না।
- বলো না...
- আচ্ছা বলবো না। হিহিহি.....
- প্লিজ....
- ফোন রাখো এখন। বৃষ্টিতে ভিজবো।
- সত্যি! আমিও ভিজবো।
- জ্বরে না ভুগছিলে! আবার বৃষ্টি!
- জানি তো আমি। তুমি মুখে না করলেই কি! মনে মনে ঠিকই আমার খেয়াল রাখো..
- এতো ঠেকা পড়েনি আমার, কারো খেয়াল রাখার। দিনা বলেছিলো তাই জানতে পেরেছি। ফোন রাখো এবার। এতো কথা বললে বৃষ্টি শেষ হয়ে যাবে। আর ভিজতে পারবো না।
- ভিজতে হবে না। তুমিও অসুস্থ হয়ে পড়বে।
- না। ভিজবো।
নাফিসা কল কে-টে অহনাকে নিয়ে ছাদে চলে গেলো। তবে বেশিক্ষণ ভিজতে পারেনি।
বৃষ্টি অল্প সময়ের জন্য ছিলো! মনটা খারাপ করে আবার ফ্ল্যাট এ ফিরে এলো।
.
ছুটির দিন হওয়ায় গতকালের মতো আজও বাসায় কা-টাতে হলো।
মেহেদী দিনে তিন চারবার করে কল করে।
নাফিসাও টুকটাক কথা বলে কে-টে দেয়।
পরের দিন ভার্সিটি এলে ক্যানটিনের পাশে মেহেদীর সাথে দেখা হলো।
চুড়ি জোড়া পড়নে দেখে মেহেদী নাফিসার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো, নাফিসাও প্রতুত্তরে হাসলো।
নাফিসা এগিয়ে বারান্দা দিয়ে হাটতে থাকলে মেহেদী বন্ধুদের মাঝ থেকে কে-টে পড়ে, আর নাফিসার কাছে আসে বারান্দায়। নাফিসা কোন কিছু না বলে নিজের মতো হাটতে লাগলো। মেহেদী মলিন সুরে বললো,
- হাতটা একটু ধরি?
- কেন?
- একটু...
নাফিসার কোন জবাব না পেয়ে মেহেদী তার একটা হাত ধরে হাটতে লাগলো।
- চুড়ির মাপ জানা ছিলো না। আইডিয়া করে কিনেছি। সংশয়ে ছিলাম তোমার হাতে হবে কিনা! মানিয়েছে বেশ।
- হয়েছে দেখা। ছাড়ো এবার।
- সমস্যা কি! কেউ দেখছে না তো আমাদের!
এমনি ক্লাস থেকে দিনা বারান্দায় এলো। আর মেহেদীকে নাফিসার হাত ধরে হাটতে দেখে ফেললো। মেহেদী দ্রুত হাত ছেড়ে কাশির ভান ধরে দ্রুত গতিতে হেটে চলে যাচ্ছিলো। দিনা হাসতে হাসতে বললো,
- গায়ক আর গায়িকার প্রেম তো ভালোই জমেছে। পারফেক্ট জুটি! ভাইয়া আমি কিন্তু কিছু দেখিনি।
- দূর, রঙ টাইমে শুধু তোমার এন্ট্রি!
- হিহিহি....
মেহেদী চলে গেলো সেখান থেকে। দিনা নাফিসার সাথে মিটিমিটি হেসে ক্লাসে প্রবেশ করলো।
- ভালোই তো ডুবে ডুবে জল খাচ্ছেন!
- সরি, আমি গ্লাসে জল খাই।
- হিহিহি.... তা তো দেখলাম ই! নাফিসা! চুড়ি তোর হাতে!
- চুড়ি কি ছেলেরা পড়ে নাকি!
- না, কিন্তু সবসময় ঘড়ি! আর আজ হঠাৎ চুড়ি!
- ইচ্ছে হলো, তাই...
- ভাইয়ার দেওয়া গিফট?
- হুম।
- বাবাহ! আর কি কি গিফট দিয়েছে রে?
- আবিদ ভাইয়ার কাছে কি গিয়ে বলবো,যে দিনা পড়াশোনা ছেড়ে অন্যের প্রেমের সন্ধান করে ভার্সিটি এসে!
- হুহ! নিজের সময় সেয়ানা, আমি বলতে গেলে দোষ!
- হুম, তুই দোস্ত।
- গতদিনের নোট দে...
- আমিও আসিনি।
- ভালোই তো হয়েছে এবার। এখন পাবো কই?
- সমস্যা নেই, এটার পরেই তো গেভ ক্লাস। কারো কাছ থেকে নিয়ে নিবো।
গেভ ক্লাসে এক মেয়ের কাছ থেকে নোট নিয়ে লাইব্রেরির দিকে যাচ্ছিলো নাফিসা আর দিনা। বারান্দায় মেহেদীর সাথে দেখা হলো। মেহেদী ফুল প্যান্ট ফোল্ড করে কোয়ার্টার বানিয়ে নিয়েছে, হাতে ফুটবল। খেলতে নামবে বুঝাই যাচ্ছে। নাফিসা একটু কড়া কন্ঠে বললো,
- প্রতিদিনই ফুটবল খেলতে হয়?
- একটু না খেললে যে ভালো লাগে না! খেলবে নাকি তুমি?
- না, আমার এতো খেলার নেশা নেই।
- চলো না খেলতে। তুমি আমি একদিকে, আর বাকি সবাই একদিকে। দেখবে, আমরা দুজনই জয়ী হবো। জানোই তো, আমাদের ভালোবাসার জোর বেশি।
নাফিসা ভেংচি কেটে লাইব্রেরির দিকে চলে গেলো, দিনাও খিলখিল করে হাসতে হাসতে নাফিসার পিছু পিছু চলে গেলো।
এভাবে একটু আধটু দুষ্টুমি, একটু একটু প্রেম, ঝ-*গড়া, খুনশুটির মাধ্যমে কে-টে গেলো
আরো ৬দিন। দিনার গায়েহলুদ আজ।
মামাতো বোন অহনাকে সাথে নিয়ে সন্ধ্যায় একেবারে সেজেগুজে দিনার বাসায় উপস্থিত হয়েছে নাফিসা। দুদিন আগে আসার কথা ছিলো এ নিয়ে দিনার একটু রাগারাগি। নাফিসা কৌশলে দিনাকে মানিয়ে নিলো। আবিদের বাসা থেকে হলুদের লগনে এসেছে আবিদের বাসার মানুষ।
সাথে মেহেদী, রিসাদসহ আবিদের অন্যান্য বন্ধুরা। নাফিসাকে দেখে মেহেদী হ্যাং!
হলুদের শাড়ি পড়েছে সাথে ফুলের গহনা। খুবই সুন্দর দেখাচ্ছে নাফিসাকে।
বরপক্ষ চলে আসায় দিনার কাছ থেকে সরে এলো নাফিসা।
এমন সময় অহনা এসে বললো, ওয়াশরুমে যাবে।
তাই নিচে নামার জন্য সিড়ির কাছে আসতেই মেহেদীকে দেখতে পেল নাফিসা।
মেহেদী জিন্সের সাথে লাল পাঞ্জাবি পড়েছে। মেহেদীর সাথে দেখা হতেই মুচকি হাসলো নাফিসা।
- কোথায় যাও?
- নিচে যাবো একটু।
দিনার রুমে এলো নাফিসা অহনাকে নিয়ে।
- আপু, আমার লেট হবে একটু।
- যা, আমি এখানেই আছি।
নাফিসার ফোন বাজতেই নাফিসা বারান্দায় চলে গেলো। আর অহনা ওয়াশরুমে। ফোনে কথা বলা শেষ হলে নাফিসা ঘুরে তাকাতেই দেখলো মেহেদী বারান্দায় এসেছে। নাফিসা একটু চমকে উঠলো। মেহেদী তার কাছে আসতে আসতে গানের সুর ধরে বললো,
- যদি বউ সাজো গো, আরো সুন্দর লাগিবে গো...
নাফিসা জানালার গ্রিলের সাথে একদম মিশে আছে। আর মেহেদী তার কাছে এসে দুপাশে দুহাতে গ্রিলে ধরে দাড়িয়ে বললো,
- আমি সাদা পাঞ্জাবি পড়লে মনে হতো আজ তোমার আর আমার গায়েহলুদ। কাল লাল শাড়ি পড়ে বউ সাজবে কি?
নাফিসা মুচকি হেসে জবাব দিলো,
- না। সরো প্লিজ। অহনা আছে এখানে। দেখলে প্রব্লেম হবে।
- অহনা কে?
- আমার মামাতো বোন।
- ওহ! একবার জড়িয়ে ধরো, চলে যাবো।
- কিহ!
- জ্বি...
- প্লিজ যাও।
- উহুম..
নাফিসা চট করে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে জড়িয়ে ধরে আবার ছেড়ে দিলো।
কিন্তু মেহেদী আগের ন্যায় দাড়িয়ে আছে।
- হয়েছে তো এবার। যাও...
- জড়িয়ে ধরলে কখন! আমি তো কিছুই টেরই পেলাম না। আবার ধরো...
নাফিসা এবার আবার জড়িয়ে ধরলো।
নাফিসা জড়িয়ে ধরার একটু পর গ্রিল থেকে হাত সরিয়ে মেহেদীও নাফিসাকে ধরলো।
তারপর ছেড়ে দিতে গেলে মেহেদীর পাঞ্জাবির বোতামে নাফিসার গলার মালা আটকে গেল।
দুজনেই চেষ্টা করছে, কিন্তু পারছে না ছুটাতে।
- দেখি ছাড়ো তুমি। এমন প্যাঁচ লাগলো কিভাবে!
- আমি কি জানি! আমার মালা ছিড়লে খবর আছে তোমার।
তাড়াতাড়ি করো, অহনা চলে আসবে।
- হচ্ছে না।
- দাতে কে-টে ফেলো।
মেহেদী নাফিসার দিকে একটু ঝুকে দাতে মালার বাড়ন্ত সুতা কে-টে ফেললো। তারপর দ্রুত সেখান থেকে বেরিয়ে এলো। নাফিসা আরো কিছুক্ষণ দাড়িয়ে, অহনাকে সাথে নিয়ে ছাদে এলো।
চলবে....
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com