Breaking News

ভালোবাসি প্রিয় । পর্ব - ০২



পরের দিন ভার্সিটির বারান্দা দিয়ে যাওয়ার সময় গানের সুর শুনতে পেলো মেহেদী। জানালা দিয়ে ভেতরে তাকিয়ে দেখলো নাফিসা গান গাইছে। ক্লাসে স্যার ও আছে। তারমানে স্যার বলেছে গান গাইতে। দ্রুত পায়ে হেটে সে সামনের দিকে চলে গেলো। কেন জানি সবচেয়ে বেশি অসহ্য লাগে এই গলাটা। ক্লাসে এসে দুটো ক্লাস করার পর বন্ধুদের নিয়ে মাঠে ফুটবল খেলতে নেমে গেলো মেহেদী।

ক্লাস শেষ করে নাফিসা একা একা মাঠের সাইড দিয়ে গেইটের দিকে আসছিলো। মেহেদী তাকে দেখতে পেয়ে বল আস্তে আস্তে এগিয়ে নাফিসার দিকে খুব জোরে একটা লাথি দিলো। বল গিয়ে নাফিসার পায়ে লাগলো। ব্যাথা পেয়ে নাফিসা "ও-*ফ!" শব্দ করে উঠলো। বন্ধুরা সব মাঠে দাঁড়িয়ে রইলো। মেহেদী শ-*য়তা-*নি হাসি দিয়ে বল নেয়ার জন্য নাফিসার কাছে এলো।

- ইস! খুব ব্যাথা লেগেছে না! আমারো লেগেছিলো কাল।
কিন্তু দেখো, আজ আমি একদম সুস্থ। আল্লাহ যা করে সব ভালোর জন্যই করে। হাহাহা.....

নাফিসা হাটার জন্য পা ফেলতেই পায়ে খুব ব্যাথা অনুভব করলো।
মেহেদী উপহাসস্বরূপ আবার বলতে লাগলো,
- হাটতে পারবে তো! লু-*লা হয়ে যাওনি তো আবার! অবশ্য লু-*লা হলেও সমস্যা নেই,
গান গাইতে পারবে। আঘাত তো আর গলায় লাগেনি!
মেহেদী হাহাহোহো করে হাসতে হাসতে বল নিয়ে মাঠে ফিরে এলো।
নাফিসার কাছে এবার পানির মতো পরিষ্কার,
নাফিসা গান গাইছে বলে মেহেদী তার সাথে এমন শত্রুতা শুরু করেছে!
সে ও এর শেষ দেখে নিবে। গান এতোদিন তার শখ থাকলেও এখন তা নেশা ও পেশায় পরিনত করবে!

পরের দিন গ্যাপ ক্লাসে নাফিসা লাইব্রেরিতে বসে বই পড়ছিলো। হঠাৎ কেউ বললো,
- তোমার সাথে বসতে পারি?
নাফিসা মাথা তুলে তাকিয়ে দেখলো একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
মেয়েটিকে সে দেখেছে তাদের ক্লাসে। স্যার যখন প্রশ্ন করছিলো,
মেয়েটি অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সাথে গুছিয়ে প্রশ্নের জবাব দিয়েছিলো।
এখন মেয়েটির চেহারায় অন্যরকম একটা ভাব দেখলো।
তার কেন জানি মনে হচ্ছে মেয়েটি তার সাথে বন্ধুত্ব করতে এসেছে।
মেয়েটি কোন উত্তর না পেয়ে আবার একই প্রশ্ন করলো।
- তোমার সাথে এখানে বসতে পারি?

- কেন?
- কেন আবার! এমনি..
- এমনি হলে বসতে পারবে না। যদি ফ্রেন্ড হতে চাও তাহলে বসতে পারো।
মেয়েটি অবাক হয়ে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে মুখে হাসি নিয়ে দ্রুত বসে পড়লো নাফিসার কাছে।
নাফিসা বইয়ের দিকে তাকাতেই মেয়েটি বললো,
- এখন তোমার সাথে একটু কথা বললে কি তুমি খুব বিরক্ত হবে?
নাফিসা বই বন্ধ করে তাকালো মেয়েটির দিকে। এবার সে নিজেই প্রশ্ন করা শুরু করলো,
- নাম কি তোমার?

- দিলশাত দিনা।
- খুব সুন্দর নাম। আমার নাম নূর নাফিসা। বাসা কোথায় তোমার?
- গাজীপুর। কিন্তু এখন পরিবারসহ মোহাম্মদপুর থাকি।
- আমিও মোহাম্মদপুর। ভাইবোন কতজন তোমার?
- আমরা এক ভাই এক বোন।
- আর আমি একা। উইথয়াউট ভাইবোন। হিহিহি.... পড়াশোনা করতে ভালো লাগে তোমার?
- হুম, ভালো লাগে বলেই তো ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়া!
- আমার এতোটা ভালো লাগে না, তাও ভর্তি হয়েছি। তোমার প্রিয় শখ কি?
- ছবি আকা।

- আমার প্রিয় শখ ভ্রমণ করা আর গান গাওয়া। তবে মাঝে মাঝে ছবিও আকি। প্রিয় রঙ?
- আকাশী।
- আমার গাঢ় নীল। খেলতে জানো?
- কি খেলা?
- যেমন ধরো, ক্রিকেট, ফুটবল, ব্যাডমিন্টন...
- ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন খেলতে জানি। কিন্তু ফুটবল না...
- আমি মোটামুটি সব ধরনের খেলা খেলতে জানি।
এবার তুমি আমাকে কোন প্রশ্ন করতে চাইলে করতে পারো।

দিনা অবাক হয়ে ভাবতে থাকলো, এই মেয়েকে এই কয়দিনে দেখে বুঝেছি মেয়েটি চুপচাপ থাকে।
এখন তো দেখছি আমার চেয়েও বেশি স্ট্রং!
এতোক্ষণ উত্তর দিতে দিতে মনে হচ্ছিল চাকরির ইন্টারভিউ দিচ্ছিলাম!
দিনার ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে নাফিসা বললো,
- মনে মনে বললে আমি শুনবো কিভাবে! জোরে বলো না... এতো কি ভাবছো?
দিনা হেসে জবাব দিলো,

- ভাবছি আমি আর তোমাকে কি প্রশ্ন করবো! প্রশ্ন করার আগেই তো সব উত্তর দিয়ে দিয়েছো!
- হিহিহিহি..... যাইহোক, চট করেই ফ্রেন্ড হওয়া যায় না।
ধীরে ধীরে কথাবার্তা, মেলামেশার মাধ্যমেই ফ্রেন্ডশিপ তৈরি হয়।

- নাফিসা তুমি যতো সুন্দর করে গান গাইতে পারো,
তার চেয়েও কয়েকগুন বেশি সুন্দর করে কথা বলতে পারো।
সবাই তোমার গান শুনে মুগ্ধ, আমি এখন তোমার কথা শুনে মুগ্ধ।
- উহুম, আমি সুন্দর করে কথা বলতে পারি না।
তুমি আমার কথাগুলো সুন্দরভাবে শুনেছো, তাই বলছো আমার কথা সুন্দর।

- হিহিহি.... তুমি সুন্দরভাবে না বললে আমি শুনবো কিভাবে!
ভিন্ন ধরনের মানুষ তুমি! নিজের প্রশংসা শুনতে চাচ্ছো না। তবুও বলবো তুমি বক্তা হিসেবে খুব সুন্দর।
- উহুম! সুন্দর না সুন্দরী!
- অহ হ্যাঁ! বক্তা হিসেবে খুব সুন্দরী! হিহিহিহি.....
- আমি বক্তা হিসেবে সুন্দরী হলে তুমি শ্রোতা হিসেবেও খুব সুন্দরী। চলো এবার ক্লাসে যাওয়া যাক....
- হুম, চলো।

ক্লাস শেষে দিনার সাথে নাফিসা গেইটের দিকে আসছিলো। দেখলো কৃষ্ণচূড়া বাগানের দিকটায় ছোট খাটো একটা ভীড়। বিষয়টা বুঝার জন্য নাফিসা দিনাসহিত, একটু কাছে যেতেই গানের গলা শুনতে পেলো। সামনে গিয়ে দেখলো মেহেদী গিটার বাজিয়ে গান গাইছে। আবার চলে আসার জন্য পা বাড়াতেই কারো আওয়াজ শুনতে পেলো,

- ও সুন্দরী, চলে যাচ্ছো কেন? গান শুনবে না? নাকি হিংসে হয় অন্যকে গান গাইতে দেখলে?
নাফিসা পেছনে তাকিয়ে দেখলো গান থামিয়ে মেহেদী নিজেই কথাটা বলেছে। এতোগুলা মানুষের সামনে এভাবে বলাতে নাফিসা একটু ইতস্তত বোধ করলো! এবার মেহেদীর উক্তির প্রতুত্তরে নাফিসা জবাব দিলো,
- হিংসে করাটা আপনার অভ্যাস হতে পারে, কিন্তু আমার মধ্যে এর অনুপস্থিতি বিদ্যমান ছিলো। যাইহোক, চলে যাচ্ছিলাম কারণ আমি শুধু দেখতে এসেছিলাম এখানে এতো ভীড় কেন! কিন্তু এখন আপনার গান না শুনে যাবো না। শুনান আপনার গান....

নাফিসার কথায় মেহেদী হেসে আবার গান গাইতে শুরু করলো। গান গাওয়ার পুরোটা সময় নাফিসা এখানে দাড়িয়ে ছিলো। গান শেষ হতেই নাফিসা পার্স থেকে ৫০টাকার নোট বের করে মেহেদীর কাছে দিলো। মেহেদী চোখ বড় বড় করে নাফিসার দিকে তাকালো! নাফিসা এভাবে তাকাতে দেখে বললো,
- কি এতে খুশি হননি? আরো লাগবে? আপাতত এটা রাখুন, নেক্সট টাইম যখন শুনবো তখন না হয় বকশিস বাড়িয়ে দিবো।

মেহেদী রেগে বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে গেলো সাথে তার বন্ধুরাও। বাকিলোক হা করে তাকিয়ে আছে শুধু তাদের দিকে! তারাও স্পষ্ট বুঝতে পারছে এভাবে মেহেদীকে অপমান করা হচ্ছে!
- হোয়াট রা*-বিশ! তোমার সাহস কি করে হয় আমাকে এভাবে অপমান করার!
- অপমান কোথায় করলাম! গান শুনালেন তার বিনিময়ে বকশিস দিলাম।
- আমি কি বকশিস নেয়ার জন্য গান গেয়েছি! তোমা....

আরো কিছু কথা বলতে চাচ্ছিলো মেহেদী। কিন্তু প্রিন্সিপালের গাড়ি গেইটের দিকে আসতে দেখে চুপ থাকলো। প্রিন্সিপাল গন্ডগোল দেখলে আরো বড় সমস্যা হয়ে যাবে। আর যাইহোক, এতোবছরে শিক্ষকদের মনে যে জায়গা করে নিয়েছে তা হারাতে চায় না সে। এই সুযোগে নাফিসা সেখান থেকে কেটে পড়লো। গাড়ি গেইটের বাইরে বেরিয়ে পড়তেই মেহেদীর মেজাজ চরম পর্যায়ে খারাপ হয়ে গেলো। মেয়েটা বারবার তাকে অপমান করে চলে যায়! টাকাটা পায়ের কাছেই পড়ে ছিলো মেহেদী রেগে সেটা পা দিয়ে ধুলোর সাথে পিষে ফেললো!

গাড়ি বের হওয়ার আগেই নাফিসা দিনাকে সাথে নিয়ে বের হয়ে রিকশায় উঠে পড়লো।
- নাফিসা, এই কাজটা তোমার মোটেও ঠিক হয়নি। এতে ভাইয়ার অপমান হয়েছে।
- তোমার ভাইয়া হয় নাকি?
- না, আমাদের সিনিয়র। তাই...
- তুমি কি সেটা বুঝতে পেরেছো, আমি গান গাইতে পারি তাই সে আমার প্রতি হিংসে করে?
- হিংসে! হিংসে কেন করবে?
- তা তো আমিও জানিনা। কিন্তু আমাকে তিরস্কারস্বরূপ সে তখন আমাকে সেখান থেকে চলে আসতে বাধা দিয়েছিলো।

- হুম, এটা আমিও বুঝতে পেরেছি। কিন্তু এই ভাইয়াটা খুব ভালো।
শিক্ষকরা সহ ভার্সিটির সবার কাছেই খুব ভালো।
কথাবার্তা, চালচলন, আচার-আচরণ সব দিক থেকেই ভালো।
- এতোকিছু জানো কিভাবে তুমি? আমি যতদিন আছি এখানে, তুমিও তো ততদিন। তাহলে?
- আমার কাজিনের কাছে আগেই শুনেছি এই ভাইয়ার কথা।
- অহ, আচ্ছা।
কেউ আর কোন কথা বললো না। নাফিসা মনে মনে বলে নিলো, কতো যে ভালো এই ভাইয়া তা তিন চার দিনেই আমার জানা হয়ে গেছে। আমার সাথে লড়তে আসলে আমি কি চুপচাপ বসে থাকবো নাকি!

চলবে...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com