Breaking News

স্যার যখন স্বামী সিজন-২ | পার্ট-০৬ | লিখা-জান্নাতুল ফেরদৌস জুলিয়া

“এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?”
“………”
“এইরকম লুকে
আপ…প..প….”বাকিটা কথা বেচারি আর বলতে পারলো না।কথাটা যেন ওর গলায় আটকে
রইল।আহাদের ওই সময়কার রাগি চেহেরা, আর চোখ দুটি দেখলে তখন যে কেউ ভয় পাবে
কারণ ওকে দেখতে এতই ভয়ংকর লাগছিল যে দেখবে সেই ভাববে এই বুঝি ওকে খুন করে
ফেলবে।
তমা ভয়ে তাড়াতাড়ি করে চোখ দুটি বন্ধ করে ফেলল।
আহাদ তমার শ্যামলা মায়াভরা মুখটার দিকে তাকিয়ে বাকি গালটায় আরো জোরে কামড় বসাল।
“উফ্ফ……”
“এবার বলো পারবো না।কি হল বল?”
তমার বন্ধ চোখ দুটি থেকে নেমে আসা অশ্রু ওর গাল দুটি ভিজিয়ে দেওয়ার আগেই
আহাদ ওর ঠোট দিয়ে অশ্রুগুলো চুষে নেয়।তমার গাল দুটি ধরে বলল,,,
“এখন থেকে তোমাকে সবসময় টাইট দিয়ে আটকিয়ে রাখতে হবে।আগে দিপার বিয়েটা হয়ে যাক এরপর তোমার ব্যবস্থা আমি নিজে করব।”
আহাদের এইরকম অদ্ভূত কথার মানে তমা বুঝতে পারলো না।চোখ দুটি তাড়াতাড়ি খুলে
ওর চোখের দিকে তাকিয়ে এই অদ্ভূত কথার মানে খোঁজার বৃথা চেষ্টা করতে লাগল।
.
.
আহাদ ওয়ারড্রব থেকে একটা সাদা রংয়ের গাউন বের করে তমাকে দিল।
“নাও তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও।একটু পর মার্কেটে যাব।”
……
“কি হল?যাও…….”
আহাদের গলার কঠিন আওয়াজ শুনেইই তমা তাড়াতাড়ি গাউনটা নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল।
কিছুক্ষণ পর,,,,
তমার মায়াবী মুখটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর আহাদের রাগটা হঠাৎ করে
আবার উঠে যায়।তড়িঘড়ি করে তমার ঘরে ঢুকে পড়ে। তমা শুধু আহাদের এই
পাগলামিগুলো মুখ বুঝে সহ্য করে যাচ্ছে।কতটা পাগল হলে একটা মানুষ এভাবে
আরেকজনকে মানুসিকভাবে অত্যাচার করতে পারে।সে কিছু বলতেও পারছে না কিছু
করতেও পারছে না।কারণ আহাদ তমার উপরে রাগ দেখালে তার মা,আর আহাদের পরিবার
কেন জানি কিছু না বলে, চুপচাপ থাকে।আর আহাদের সামনে ও যতই রাগ দেখানোর নাটক
দেখাক না কেন ও যে আহাদকে ভিতরে ভিতরে কতটা ভয় পায় সেটা শুধুই ও জানে। ওর
লাইফে যদি সবচেয়ে ভয়ের কিছু থাকে তাহলে তা হল আহাদ।কারণ ওর কারণে যদি একবার
আহাদের রাগ উঠে যায় তাহলে ও যে কি থেকে কি করে ফেলতে পারে সে আন্দাজ তমার
ভালোভাবে জানা আছে।সব রাগ তমার উপর দিয়ে ঝাড়বে তাও আবার তমার হাত আর গাল
কামড়িয়ে।যেটা ওর কাছে সবচেয়ে ভয়ানক লাগে।তাছাড়া কালো চেহেরায় চরম রাগটা যখন
আহাদের মুখে ফুটে উঠে তখন ওকে খুব ভয়ংকর লাগে।তাই মুখ বুঝে ওর অত্যাচার
সহ্য করতে হয়।
শুধুমাত্র এই ব্যাটার কারণে ও রাজশাহী গিয়ে পড়াশোনা
করতে চেয়েছিল কারণ সে ২৪টা ঘন্টা গোয়েন্দার মতন তমার খোঁজখবর নিতে থাকে
যেটা ওর কাছে অসহ্যের মতন লাগত।কিন্তু রাজশাহী থেকে এখানে আসার কারণে ওকে
আবারো আহাদের অত্যাচারগুলো সহ্য করা লাগছে।তমা আদৌও জানে না আহাদের এই
পাগলামো থেকে ও কবে মুক্তি পাবে।
.
.
আহাদ তমার রুম থেকে
বেরিয়েই সোজা তমার সামনে এসে দাঁড়ালো।তমা তাড়াতাড়ি করে ওর গাল দুইটা দুই
হাত দিয়ে ঢেকে রাখলো। এই বুঝি ওর অবুঝ গালে আহাদ আবারো কামড়িয়ে দিল সেই ভয়ে
।কিন্তু না,আহাদ সেটা না করে একটা কাটা দিয়ে ওর চুলগুলো বেঁধে দিল।
“চুল ছেড়ে আর বাইরে যাবে না কেমন?”
মাথা নাড়িয়ে ও আহাদের কথায় সম্মতি জানালো।
আহাদ ওর গাল থেকে হাত দুটি সরিয়েই বলল,”এইতো গুড গার্ল।আর শোন তোমার ভালোর
জন্যই আমি তোমাকে এত বকি বুঝতে পারছ?যতদিন বেঁচে আছি ততদিন তোমার সব
দায়িত্ব আমার।বিপদের কোন আঁচও তোমার শরীরে আমি লাগতে দিবো না।আর হ্যা আমি
এতোও খারাপ না যে তোমার স্বাধীনতা কেড়ে নিবো।বিকালে ছাদে ঘুরবে ভালো কথা
কিন্তু একা না।নিপাকে সাথে নিয়ে যাবে।”
আবারো মাথা নাড়িয়ে তমা আহাদের কথায় ওর সম্মতি জানায়।
আহাদের কথা শুনে তমার পুরানো কথাগুলো আবার মনে পড়ল।”যতদিন বেঁচে আছি তোমার
সব দায়িত্ব আমার। বিপদের কোন আঁচও তোমার শরীরে লাগতে দিবো না।” …….ঠিক
এরকম কথা ওকেও একদিন তানভীর বলেছিল!কিন্তু…….
“তমা এত কি ভাবছ?”
“কিছু না,”
“আচ্ছা চল তাহলে,, নাহলে বাসায় আসতে আসতে অনেক রাত হয়ে যাবে।মেয়ে মানুষ
নিয়ে এত রাত পর্যন্ত বাইরে থাকাটা অনেক বিপদজনক। তাই তাড়াতাড়ি রওনা দিতে
হবে।”
“হুম, আমি তা ভালোভাবেই জানি।চলুন।”
.
.
“আন্টি আসি তাহলে,,”
“হুম যা,, আহাদ বেশি রাত করিস না।বুঝিসই তো সবি।”
“হুম আন্টি তাড়াতাড়ি চলে আসবো। চিন্তা কর না।”
মুখে হাসি এনে,,”সাবধানে যা তাহলে,,”
“তমা গাড়িতে না,,আমরা রিক্সায় করে যাব।”
“কেন?”
“গাড়িতে এতজনের জায়গা হবে না।মা,দিপা,নিপা আর কাজিনরা গাড়িতে উঠেছে। ওরাও মার্কেটে যাচ্ছে।তাই আমরা দুইজন রিক্সা করে যাব।”
আহাদের কথাটা শুনেই তমার রাগ উঠলেও তা ওকে বুঝতে দিল না।ও এখন বেশ ভালোই
বুঝতে পারছে আহাদের এইধরণের চালাকি করার কারণটা কি?মেয়ে মানুষ দেখলেই মাথা
ঠিক থাকে না।শুধু বাহানা খুঁজে সুযোগ নেওয়ার,ঢলাঢলি করার।হয়ত পুরুষ জাতিটাই
এমন……
রিক্সায় ও খুব সাবধানতার সাথে বসল।যাতে আহাদের গায়ের সাথে ওর গা না লাগে।
“আরে এত দূরে বসছ কেন?পড়ে যাবা তো?”
“সেটা আপনার না দেখলেও চলবে।”
“তোমাকে আমি নিজের দায়িত্ব মনে করে এখানে নিয়ে আসছি।এইভাবে বসলে এখন
নিশ্চিত একটা এক্সিডেন্ট হবে।তারপর মেডিকেলে তোমাকে নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে
হবে।মার্কেটে যেতে গিয়ে যদি এখন তোমাকে নিয়ে মেডিকেলে দৌড়াতে হয় তাহলে
মার্কেট করাটায় আজকে হবে না।কোন সিন ক্রিয়েট না করে আরেকটু কাছে এসে বস।”
তমা তখনো চুপ করে নিজের জায়গায় বসে ছিল।
ওর মাথায় তখনো শুধু একটা কথায় ঘুরছিল…..সব পুরুষই এক।
তমাকে এরকম নিশ্চুপভাবে বসে থাকতে দেখে আহাদ তমার কোমড়টা ধরে ওর কাছে নিয়ে
আসলো।আহাদ এইরকমটা করবে ও ভাবতেও পারে নি। তমা তখন ঘৃণাভরা চোখে আহাদের
দিকে তাকালো। আর আহাদ ও এমন ভান করে অন্যদিকে তাকাল যেন ও কিছুই জানে না।
.
.
অলরেডি আহাদের পরিবার থেকে যারা এসেছিল তাদের মার্কেট করা হয়ে গেছে।কিন্তু
তমা আর আহাদের আরো কিছু কিনার বাকি ছিল।তাই আহাদ ওর মাকে কল করে জানিয়ে
দিলো যে,,ওদের আসতে একটু দেরি হবে।সবাইকে টেনশন করতে নিষেধ করে দিল।
এরপর ওরা মার্কেট করা শেষ করে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল অনেক দেরি হয়ে
গেছে।বাসায় যেতে যেতে দেরি হয়ে যাবে তাই রেস্টুরেন্ট থেকে আগে খেয়ে
নিল।এরপর যে গাড়ি করে ওরা আসছিল তা পথের মধ্যে হঠাৎ নষ্ট হয়ে গেল।রাস্তায়
অনেক গাড়ি-ঘোড়া থাকলেও সেখানে যাত্রী থাকার কারণে কোন খালি গাড়ি তারা
পাচ্ছিল না।তাই বাধ্য হয়েই ওরা হাঁটা ধরল।
বাসায় যাওয়ার জন্য ওরা
রাস্তার গলি ধরে হাঁটছিল।সেখানটা প্রায় অন্ধকার।এরকম অন্ধকার নির্জন জায়গায়
হাঁটতে গিয়ে তমা বেশ ভয় পেল।এই বুঝি কিছু একটা অঘটন ঘটে গেল।তমার চেহেরার
এক্সপ্রেশন দেখে আহাদ বুঝতে পারল,,এইরকম নির্জন অন্ধকার রাস্তায় হাঁটতে ও
খুব ভয় পাচ্ছে।তাই ওকে স্বাভাবিক করার জন্য আহাদ বলল,,
“কি ব্যাপার তমা ভয় পাচ্ছ?”
“না,….কাঁপা গলায়।”
“ভয় নেই।আমি আছি।হাত ধর আমার। তাহলে আর ভয় লাগবে না।”
“না, আমি ঠিকাছি।”
.
.
রাস্তায় কিছু বখাটে ছেলে হঠাৎ ওদের সামনে পড়ল।ওরা রাতের অন্ধকারের রাস্তায়
মদ আর জুয়া খেলায় ব্যস্ত।তমাকে দেখে ওদের কয়েকজন শিস বাজানো শুরু করল।এরপর
বেশ জোরে জোরে খাঁটি বাংলা গান ধরল।
বখাটে ছেলেদের এইরকম ব্যবহার দেখেই তমা ভয়ে আহাদের হাত খুব জোরে খামচে ধরল।
“তমা তাড়াতাড়ি হাঁট।”
আহাদের কথামতো তমা আহাদের হাত শক্ত করে ধরে হাঁটা শুরু করল।
তমা আর আহাদের জোরে হাঁটা দেখেই ওরা যেন খুব মজা পেল।তাড়াতাড়ি করে ওরা তমা আর আহাদের সামনে এসে দাঁড়ালো।
“কি ব্যাপার,, এই মা* নিয়ে কোথায় যাওয়া হচ্ছে?”
“সাবধানে কথা বলুন।”
“ওরে দেখ দেখ,, ব্যাটার কি রাগ?এই অন্ধকার নির্জন জায়গায় এসে এত সুন্দর
একটা মা* নিয়ে অপকর্ম করতে আসে আবার রাগও দেখায়।ওই এই ব্যাটারে আগে ধর
তারপর ওই মাইয়াটার খবর নিতাছি।রাতবিরাতে হাত ধরাধরি করে রাস্তায় ফষ্টিনষ্টি
করতে আসে তাতে দোষ নাই আর আমরা কিছুই কইলেই দোষ।এখনোতো কিছুই করি নাই এরপর
তোর সামনেই যখন এরে নিয়ে…….”
কথাটা আহাদ আর শেষ করতে দিল না।কারণ ততক্ষণে আহাদের মাথায় রক্ত উঠে গেছে।ও রাগে হাত মুঠো করে এদের দলের লিডারের মুখে একটা ঘুষি দিল।
“আমার বউকে নিয়ে উল্টাপাল্টা কথা বলস।আমার বউকে নিয়ে আমি যা খুশি করব তাতে
তোদের কি?রাস্তাঘাটে মেয়ে দেখলেই তোদের মাথা খারাপ হয়ে যায় না?আজকে তোকে
মেরেই ফেলবো।”
ততক্ষণে আহাদের হাত আরো দুইজন ধরে ফেলেছে।এতজনের সাথে মারামারিতে আহাদ পেরে উঠল না।ওদের হাত থেকে প্রচুর মার খেতে লাগল।
এত নোংরা কথা আর আহাদকে এত মার খেতে দেখে তমা প্রায় চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে
কাঁদতে লাগলো। কি করবে না করবে কিছুই বুঝতে পারছিল না।প্রথম প্রথম যখন এই
বখাটে ছেলেগুলো ওদের রাস্তা আটকায় তখন ও ধরেই নিয়েছিল আজকে হয়ত ওকে এই
বখাটেরা ছিঁড়ে খাবে।হয়ত আহাদ এদের ভয়ে তমাকে ফেলে চলে যাবে।আর এরা তখন
তমাকে দিয়ে ওদের শরীরের ক্ষুধা মেটাবে। এই কথা ভেবে ও নিজেকে নিয়ে প্রথমে
কাঁদতে লাগলেও পরে ওকে অবাক করে দিয়ে যখন আহাদ ওর পাশে দাঁড়ালো, তমার জন্য
দলের লিডারের সাথে মারামারি করতে লাগলো তখন ও পাগলের মতন চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে
আহাদের জন্য কান্না করতে লাগলো।

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com