Breaking News

কবিতা-অভাগী মা



কবিতা- “অভাগী মা”
“এতদিন গেছে আজও,
মায়ের জন্য কাঁদি।
কারণ-আমার মা যে ছিল,
অনেক অভাগী।
বাবা যেদিন মারা গেলেন,
আমি হলাম এতিম।
সেদিন থেকেই দুঃখ দিয়েছে,
মায়ের কপালে লেখা।
মা বলতো-বাবা নাকি,
তারার ভিড়ে আছে।
লেখাপড়া করি যদি,
নেমে আসবে কাছে।
তারায় তারায় বাবা খুঁজি,
তারার ছড়াছড়ি।
আমার মায়ের অভাগী বলার,
প্রথম হাতে খড়ি।
পাড়া পড়শী বলল এসে,
এই বয়সেই বেচারী।
একা একা এত পথ,
কেমনে দেবে পাড়ি?
ভালো একটা ছেলে দেখে,
বিয়ে করো আবার।
মা বলল-ওসব শুনলে,
ঘেন্না লাগে আমার।
একা কেন? খোকা আছে তো,
বিয়ে কি দরকার বলো?
ওটা ছিল আমার মায়ের,
মিথ্যে কথার ছল।
রাত্রি জেগে সেলাই মেশিন,
চোখের কোণে কালি।
নতুন জামায় ঘর ভরে যায়,
মায়ের জামায় তালি।
ঢুলু ঢুলু ঘুমের চোখে,
সুচ ফুটে মায়ের হাতে।
আমি বলি শোও তো এবার,
‌কী কাজ অত রাতে?
মা বলতো-ঘুম আসে না,
শুয়ে কী লাভ বলো?
ওটা ছিল আমার মায়ের,
অভাগীর অভিনয়।
স্কুল থেকে নিতে আসা,
গাড়ী ঘোড়ার চাপে।
আমার জন্য দাঁড়ানো মা,
কড়া রোদের তাপে।
ঘামে মায়ের দম ফেটে যায়,
দু-চোখ ভরা ঝিম।
ভ্যানিটি ব্যাগ খুলে আমায় দিত,
ক্যাডবেরি আর আইসক্রিম।
এর দিকে বাড়িয়ে বলতাম,
‌‌ একটা নাও-মা,
মলিন হেসে মা বলত,
খাও তো বাবা খাও।
আমার আবার গলা ব্যথা,
ঠান্ডা খাওয়া মানা।
ওটা ছিল আমার মায়ের,
নিঠুর অভাগী পানা।
বড় হয়ে চাকুরী নিয়ে,
বড় শহরে আছি।
টুকটুকে বউ ঘরে আমার,
বউকে ভালবাসি।
নিত্য এলাকায় বাসা নিয়ে,
সাজিয়ে নিলাম মনের মত অত্যাধুনিক করে।
মা তখনো মফস্বলে কুশিয়ারার ঢালে,
লোডশেডিং এর অন্ধকারে সন্ধ্যা বাতি জ্বালে।
ছলনাময়ী বাতি,
ঢাকা শহর আলোয় ঝলমল।
মাকে বলি গাঁ থেকে এবার,
ঢাকায় চলো তো।
মা বলল-এই ভালো,
খোলা মেলা হাওয়া।
কেন আবার তোদের ওই,
ভিড়ের মধ্যে যাওয়া।
বদ্ধ ঘরে থাকলে আমার,
হাঁপানি ভাব হয়।
ওটা ছিল আমার মায়ের,
অভাগীর অভিনয়।
তারপর আমি আবারও,
বড় স্টেজ এর অধিবাসী।
বিশ্ব সাইকলজি বিশেষজ্ঞ,
সুনাম রাশি রাশি।
দায়িত্বশীল পদে আমার,
কাজের অন্ত নাই।
মায়ের খবর নিব এমন,
সময় কম পায়।
মা বিছানায় একলা পড়া,
খবর এল শেষে।
এমন অসুখ হলো যার,
চিকিৎসা নেই দেশে।
উড়ে গেলাম মায়ের কাছে,
অনেক দূরের পথ।
পায়ে পড়ে বলি মাকে,
এবার ফিরাও মত।
একা একা গাঁয়ে পড়ে,
কী সুখ তোমার বলো?
আমার সঙ্গে এবার তুমি,
কানাডায় চলো।
এসব অসুখ কানাডায়,
কোনো ব্যাপার নয়।
সাত দিনের চিকিৎসাতেই,
সমুল নিরাময়।
কষ্টে হাসি মুখে এনে,
বলল আমার মা।
প্লেনে আমার চড়া বারণ,
তুমি কি জানো না?
আমার কিছু হয়নি তেমন,
ভাবছো অযথা।
এটাই ছিল আমার মায়ের,
শেষ অভাগীর কথা।
ক’দিন পরেই মারা গেল,
নিঠুর অভাগী।
অভাগী মায়ের জন্য,
আজও আমি কাঁদি।

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com