Breaking News

জ্যামিতিক ভালোবাসা | পর্ব -১৩

সোহান হাসতে হাসতে থাম তোরা থাম, তোদের চিৎকার শুনে ভুত প্রেত সব ভয়ে পালিয়েছে।
জুহি:- তুমি এতো পঁচা কেন?
সোহান:- আমি আবার কি করলাম? কারেন্ট চলে গেছে এটা কি আমার দোষ?
জুহি:- এতো ভয়ংকর গল্প কেন বলতে হবে?
সোহান:- ভুতের গল্পতো ভয়ংকর হবেই।
— কথা বলতে বলতে ফুপু মোমবাতি নিয়ে রুমে আসলো।
ফুপু:- কিরে এতো চিৎকার করছিস কেন তোরা?
জুহি:- মা জানো না ভাইয়া কি ভয়ংকর ভুতের গল্প বলছে, তার উপর কারেন্ট চলে গেলো তাইতো ভয়ে চিৎকার করে উঠছি।
ফুপু:- পাগল মেয়ে কোথাকার। কারেন্ট আসলে সকলে খেতে আছিস।
— বলে ফুপু রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
ইকরা:- হয়েছে তোমাকে আর ভুতের গল্প বলতে হবে না, এবার চুপ করে বসে থাকো।
— সবাই টুকটাক কথা বলতে বলতে প্রায় ত্রিশ মিনিট পর কারেন্ট আসলে সকলে মিলে রাতের খাবার খাওয়ার জন্য উঠে পরলো। সবাই মিলে গোল হয়ে যেয়ে খাবার খেতে বসলো। এক সাথে রাতের খাবার খেয়ে যার যার রুমে চলে আসলো।
সোহান নিজের রুমের ব্যালকনিতে আর মিলু ইকরা তাদের রুমের ব্যালকনিতে গভীর রাত পর্যন্ত বসে সময় পার করে এক সময় বিছানায় যেয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে পরলো। গভীর রাতে ঝুম বৃষ্টি শুরু হলে সোহানের ঠাণ্ডায় ঘুম ভেঙে যায় এদিকে কারেন্টও নাই। কি করবে বুঝতে পারছে না। কোথাও কাঁথা বা কম্বল আছে কিনা বুঝে উঠতে পারছে না। এতো রাতে কাউকে ডাক দিবে কিনা বুঝতেও পারছে না। ফোনটা হাতে নিয়ে ইকরার নাম্বারে কল দিলো। প্রথম বার রিং বেজে কেটে গেলো। সোহান আরেক বার কল দেবার পর ইকরা ফোন রিসিভ করলো।
সোহান:- সরি তোর ঘুম ভাঙিয়ে দিলাম।
ইকরা:- ঘুম নিয়েই কি হয়েছে বলো?
সোহান:- নাম মানে রুমের কোথাও কাঁথা বা কম্বল আছে কিনা বলতে পারিস?
ইকরা:- ঐ ঘরে মনে হয় নাই, তুমি আমার রুমের দরজার সামনে আসো আমি বের করে দিচ্ছি নিয়ে যাও।
— ফোন কেটে দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে ফোনের টর্চ জ্বালিয়ে আলমারি খুলে ইকরা একটা কম্বল বের করলো ততক্ষণে সোহান দরজার সামনে চলে এসেছে। টোকা দিতেই ইকরা যেয়ে দরজা খুলে কম্বলটা এগিয়ে দিলো সোহানের দিকে। সোহান কম্বল হাতে নিতে নিতে তোকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আর সরিও এতো রাতে জাগিয়ে তোলার জন্য।
ইকরা:- ওসব কিছু লাগবে না যাও যেয়ে ঘুমিয়ে পরো।
সোহান:- হ্যাঁ তুইও ঘুমিয়ে পর শুভ রাত্রী
— সোহান কম্বল নিয়ে চলে যেতেই ইকরা দরজা বন্ধ করে আবার যেয়ে শুয়ে পরলো। সোহানও রুমে যেয়ে কম্বল গায়ে জড়িয়ে আরামে শুয়ে পরলো।
— পরদিন সকালে সকলে আবার এক সাথে হলো নাস্তার টেবিলে। নাস্তা খেতে খেতে রাসেল বললো আজ কি তোরা ঘুরতে বের হবি?
জুহি:- কেন তোমার কি কোন কাজ আছে নাকি?
রাসেল:- না আমার কোন কাজ নেই, তোরা ঘুরতে গেলে আমি নিয়ে বের হবো।
জুহি:- ইকরার দিকে তাকিয়ে আপু কি বলো যাবে তোমরা?
ইকরা:- হুম অবশ্যই যাবো। ঘুরতে যাবো এটা বলতে হয়?
রাসেল:- ঠিক আছে তাহলে সকলে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে। বড় মামার দিকে তাকিয়ে মামা তোমরাও চলো খুব মজা হবে।
সোহানের বাবা:- নারে বাবা তোরাই যা আমরা বাড়িতেই রেস্ট করি।
রাসেল:- বেশতো তাহলে তোমরা রেস্ট করো।
— বলতে বলতে টেবিল থেকে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে তোরা তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আয়। বলেই নিজের রুমের দিকে হাঁটা শুরু করলো। বাকিরাও খেয়ে তাড়াতাড়ি উঠে নিজেদের রুমের দিকে হাঁটা শুরু করলো। রুমের দিকে যেতে যেতে ইকরা সোহানকে বললো কি পরে বের হবো?
সোহান:- তোর ইচ্ছে যা মনে চায় পরে বের হো।
ইকরা:- কি হলো এমন করে বলছো কেন?
সোহান:- আরে কেমন করে বলছি, আচ্ছা শোন কালতো শাড়ি পরেছিলি, আজ অন্য জামা পরলেই হবে। আর আকাশের অবস্থাও ভালো না এই রোদ এই বৃষ্টি। তাই শাড়ি না পরাটাই ভালো, আর এতো মানুষের সাথে তুই অন্য জামায় পরে নিস।
ইকরা:- আচ্ছা আচ্ছা হয়েছেতো, বুঝতে পেরেছি এভাবে বলতে হবে না। অন্য জামাই পরবো। বলে ইকরা হেসে দিলো। সোহান মুগ্ধ হয়ে চেয়ে রইলো ইকরার দিকে। দু’জন নিজেদের রুমে চলে আসলো।
— দু’জনই এসে ফ্রেস হতে চলে গেলো, ফ্রেস হয়ে বের হয়ে সোহান আকাশি রঙের একটা শার্ট বের করলো সেই সাথে জিন্স প্যান্ট পরলো। এদিকে ইকরা, কালো একপা থ্রীপিস বের করলো যা কার চুপির কাজ করা ছিলো। গায়ে জড়িয়ে আয়নার সামনে দাঁড়াতেই মিলু বলেলে উঠলো, আপু তোকে খুব সুন্দর লাগছে ঠিক যেন আসমানের পরী জমিনে নেমে আসছে।
ইকরা:- চুপ কর কি সব বলছিস এসব?
মিলু:- আমি ঠিকই বলছি ইস আমি যদি ছেলে হতাম না তোমার প্রেমে পরে যেতাম।
ইকরা:- হাসতে হাসতে মাইর চিনিস আম্মুরে বলমু তুই বেশী পেকে গেছিস।
মিলু:- আমি কি ভয় পাই ভাবছো আমিও আম্মুরে বলে দিবো তোমার আর সোহান ভাইয়ার কথা।
ইকরা:- কিছুটা চমকে প্রশ্ন করলো কি বলবি আমার আর সোহান ভাইয়ার কথা?
মিলু:- আমি বুঝি বুঝি সব কিছুই বুঝি তোমাদের দু’জনের মাঝে কি চলতাছে।
— মিলুর এমন কথায় ইকরা মিনিট খানেক একদম স্তব্দ হয়ে বসে ছিলো ড্রেসিং টেবিলটার সামনে তারপর নিজেকে স্বাভাবিক করে মিলুর কান টেনে ধরে খুব বেশী বেড়ে গেছিস সারা দিন ফেসবুক আর মেসেঞ্জার নিয়ে পরে থাকিস আর এসব শিখেছিস?
মিলু:- আপু ছাড়ো ব্যথা পাচ্ছি, আর সোহান ভাইয়্ খুব ভালো ছেলে তোমার জায়গায় থাকলে আমিও সোহান ভাইয়াকে ভালোবেসে ফেলতাম।
— ইকরা মিলুর কানের উপর থেকে হাত সরিয়ে নিলো, ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা ফুটিয়ে মিলুর দিকে তাকিয়ে বললো তুই না আমার লক্ষী বোন আমার কাছে প্রমিজ কর তুই এই সব কথা কাউকে বলবি না।
মিলু:- বলবো না বললেতো এতোদিনে বলেই দিতাম। আর আমি এতোটাও বোকা না যে নিজের বোনের ক্ষতি করবো।
— কথাটা বলেই মিলু ইকরাকে জড়িয়ে ধরলো। তারপর ফিসফিস করে কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো আপু অংকে কিন্তু তুমি সত্যিই পাঁকা। মিলুর মুখে এমন কথা শুনে কিছুটা লজ্জা পেলেও দু’বোন এক সাথে হেসে উঠলো। ইকরা মিলুর কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে চল বের হো এখন। নয়তো দেরী হয়ে যাবে।
মিলু:- হ্যাঁ হ্যাঁ চলো,
— দুই বোন এক সাথে রুম থেকে বের হলো, এমন সময় সোহানও রুম থেকে বের হলো। দু’জনের চোখেচোখ পরতেই একে অপরের দিকে চেয়ে রইলো। দু’জনের অবস্থা দেখে মিলু খকখক করে উঠলো, মৃদু হাসি দিয়ে সোহান চোখ নামিয়ে নিলো। ইকরা লজ্জায় চোখ সরিয়ে নিলো।
মিলু:- কি দু’জন দাঁড়িয়ে রইবে নাকি সামনের দিকেও যাবে। নাকি একজন আরেক জনকে বলবে তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে?
সোহান:- মিলুর কান টেনে ধরে বেশী পণ্ডিত হয়ে গেছিস তাই না।
ইকরা:- সোহানের হাত টেনে ধরে এই কি করছো ছেড়ে দাও ওকে।
— সোহান মিলুকে ছেড়ে দিতেই দূর থেকে জুহি বলতে বলতে এগিয়ে আসলো কই তোমরা রেডি হলে,
কাছে এসে ভাইয়া তোমাদের জন্য বাড়ির বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে।
ইকরা:- হ্যাঁ চল,
— সকলে মিলে হাঁটা শুরু করলো বাড়ির বাহিরে বের হতেই দেখতে পেলো রাসেল অটো দাঁড় করিয়ে রাখছে। সবাইকে দেখে যাক তাহলে তোরা এলি অবশেষে। আমিতো ভাবছিলাম তোদের রেডি হতে হতেই বেলা শেষ হবে।
সোহান:- মেয়েদের সাজতে একটু সময়তো লাগবেআ ভাইয়া এটাই স্বাভাবিক।
রাসেল:- এতো সাজুগুজু করতেই কেন হবে?
সোহান:- সাজুগুজুতেই নারীরা সুন্দর, আর একটু পরিপাটি না সাজলে মেয়েদের ভালোও লাগে না।
রাসেল:- নে হয়েছে এখন তাড়াতাড়ি উঠে বস যেতে অনেকটা সময় লাগবে।
— আর কোন কথা না বাড়িয়ে সকলে অটোতে উঠে বসলো। অটোর সামনে বসলো রাসেল আর পেছনে ওরা চারজন। অটো চলতে শুরু করতেই জুহি গুনগুন করে গান গাইতে শুরু করলো।
মিলু:- এই আপু তুমি গুনগুন করে কি বলছো? কবিতা নাকি গান?
জুহি:- কিছু না আবোল তাবোল মনে যা আছে তাই বলছি।
মিলু:- ওহ আচ্ছা। সোহানের দিকে তাকিয়ে ভাইয়া একটা কবিতা বলো না শুনি।
এতো সুন্দর পরিবেশ আর তোমার কবিতা শুনবো না এটা কি হয়।
সোহান:- আরে কি বলিস আমি এখন ওসব পারবো না।
রাসেল:- এই তুই কি সত্যি সত্যি কবিতা পারিস নাকি? বলনা আমিও শুনি তোর কবিতা।
ইকরা:- পারে মানে খুব সুন্দর করে বলতে পারে।
রাসেল:- আরে বল বল লজ্জা পাচ্ছিস কেন মেয়েদের মত।
— রাসেলের সাথে সাথে সকলে বলতে শুরু করলো। সোহান বললো আচ্ছা বলছি। বলেই ইকরার দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করলো।
” অচেনা পথ, অচেনা রাস্তা,
চিরচেনা তুমি আর আমি।
চলছি একই সাথে পাশাপাশি
খুব করে ইচ্ছে থাকার পরেও ছুঁয়ে দিতে পারছি না তোমাকে।
তুমি যে আমার না বলা কবিতা।
তুমি যে আমার না গাওয়া গান।
তুমি ছিলে তুমি থাকবে চিরদিন আমারি হৃদয়ের গহিনে।
কেউ দেখবে না কেউ জানবে না
শুধু অনুভবে বুঝে নিও তুমি।
কতটা ভালোবাসি আমি”
চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com