Breaking News

স্বামী | পর্ব -০৪

এদিকে তিথি সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছে তার শাশুরির জন্য, দুপুরে খাওয়াও হয়নি তার। কারণ রিদয় যে গভির ঘুমে মগ্ন।
অপেক্ষা করতে করতে সোফায় এলিয়ে পরে তিথি
গাড়ির হর্ন এর আওয়াজ এ তার খেয়াল হয় তার শাশুরি এসেছে।
সে দৌড়ে নিচে গেলো, হ্যা তার শাশুরি এসেছে,
চোখে তার বিরক্তির ছাপ, হয়তো সারা দিন অফিস এর কাজ শেষ করে এখন ক্লান্ত হয়ে গেছে।
তিথি এক গ্লাস সরবত তার শাশুরির কাছে দিলো।
তিথিকে দেখে মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো।
ওমা তুমি এসব আনতে গেলে কেন।
বাড়িতে কাজের লোক বহু আছে। (তিথির থুতনিতে হাত রেখে)
মা আপনাকে আমার কিছু জিজ্ঞাস করার ছিলো,( একটু এদিক উদিক চেয়ে তিথি)
রিদয় এর মা তিথির হাপ ভাব দেখে বুঝতে পারছে। কিছু বলতে চায় তিথি।
রিদয় এর মা এবার দির্ঘনিশ্বাস নিয়ে বললো এসো। বলেই খাটে বসে তিথি কেও পাশে বসিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে।
বলো মা কি বলতে চাও??
.
আসলে মা এই কাগজ গুলো কিসের?
আর এই ছবি আর ডাক্তার এর কাগজ??( তিথি চোখ গুলো স্থির করে।)
ওহ এ গুলো হল রিদয় এর সার্টিফিকেট। ও তার ডিগ্রির খুব ভালো এবং ও ছিলো ইউনিভার্সিটির টপার। বলেই কাগজ এ হাত বুলিয়ে কাদঁছে রিদয় এর মা।
তিথি কোন কথা না বলে আবার প্রশ্ন ছুরে মারে রিদয় এর মায়ের দিকে।
আর এই ছবি গুলো কার মেয়েটা কে??( তিথি)
রিদয়ের মা এবার একটু ঘাবরিয়ে যায়।
তিথি আশ্বাস দিয়ে বলে ভয় নেই মা আমি এখন আপনার ছেলের বৌ আছি আর থাকবো আপনি নির্ভয়ে বলুন।
তিথির এমন জবাবে রিদয় এর মা একটু শান্ত হয়ে বলতে লাগলো।
এর নাম হিয়া রিদয় এর সাথেই পড়াশুনা করতো।
রিদয় ও হিয়া একে অপরকে পছন্দ করত। আমি তা জানতে পেরে মানা করে দেই । কারন আমি যে তোর মায়ের কাছে ওয়াদা বদ্ধ ছিলাম।
.
কিন্তু মানতে নারাজ সে হিয়াকেই বিয়ে করবে বলে ঠিক করলো।
পরিক্ষার পর তারা পালিয়ে বিয়ে করার প্লেন ও করে। কিন্তু,,( বলতে গিয়ে আবার আটকে যায় রিদয় এর মা)
কিন্তু কি মা বলুন আমি না জানলে সব কিছু রিদয় কে ঠিক করবো কিভাবে।(তিথি)
রিদয় এর মা আবার বলতে শুরু করে। পরিক্ষার পর তারা সব প্লেন করে বিয়ের। তারা আবার ডিসিশন নিলো রেজাল্ট টা হাতে পেলেই তারা বিয়ে করবে।
কিছু দিন এভাবেই চলছিলো পরে আমি সব জেনে ফেলি।
তবুও রিদয়কে কিছু বলিনি কারণ যদি সিয়াম এর মতো ও চলে যায় তাহলে আমি কি নিয়ে বাঁচবো বলো।
রেজাল্ট এর পর তারা বিয়ে করার জন্য রৌনা দিলো। আমিও এবার মত দিলাম কি করবো মায়ের মন তো তাই।
গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরলো রিদয় , কিছু দূর যাওয়ার পর রিদয়ের গাড়ি একসিডেন্ট করে। আমরা খবর পেয়ে হাসপাতালের দিকে ছুটি, রিদয় পায়ে অনেক আঘাত পেয়েছিলো, হিয়া কান্না করছে আমরা যাওয়ার পর সেও এসেছিলো,
.
ডাক্তার এসে রিদয় এর অবস্থার কথা জানালো।
হয়তো রিদয় আর কোন দিন হাটা চলা করতে পারবেনা।
রিদয় কে আমরা কেও কিছু জানাই নি হিয়াও জানায়নি রিদয়কে আমরা বাড়ি নিয়ে চলে আসি,
৩ মাস হয়ে গেলো সে দারাতেও পারছিলো না,
হিয়াও ধিরে ধিরে আসা কমিয়ে দিয়েছে, কয় দিন পর এসে রিদয় কে বললো সে লন্ডন যাচ্ছে। এক মাসের জন্য তার বাবার সাথে। তাই রিদয়ও হাসি মুখে বিদায় দিয়েছিলো। এত কিছুর পরও আমার ছেলে ভেঙ্গে পরেনি। কারণ সে জানতো তার ভালোবাসা হিয়া তার সাথে আছে।
কিন্তু ৩ মাস হয়ে গেলো হিয়ার কোন খোজ নেই।ফোন বন্ধ বাড়িতে মস্ত বড় তালা। রিদয় পাগল হয়ে গিয়েছিলো, হিয়ার জন্য।
.
কিন্তু তাকে খুজতে ও পারছিলো না। বহু মেহনত করছিলো রিদয় নিজের পায়ে দারানোর জন্য।
বহু দিন পর সে হাটা চলা করতে সক্ষম হয়।
তবু লোক লাগিয়েছে হিয়াকে খুজতে থাকে। কিন্তু পায়নি।
সে নিজের ইচ্ছায় অফিস এর সব কাজ নিজের হাতে নিয়ে ছিলো।
রোজ অফিস করতো আর বাকি সময় হিয়াকে খুজতো।
একদিন খবর পেলো হিয়া নাকি বিয়ে করে তার স্বামিকে নিয়ে লন্ডন এ সেটেল হয়ে গেছে।
রিদয় বিশ্বাস করেনি তাই নিজে লন্ডন যায়। ও সেখান থেকে তিন দিন পর ফিরেছিলো। তার মুখে কোন কথা ছিলো না। সে কথাই বলা বন্ধ করে দিয়েছিলো। আস্তে আস্তে অফিস এ যাওয়া বন্ধ করে দেয়। জিনিস পএ ভাঙ্গা মদ খাওয়া সব শুরু করে দিয়েছিলো। তার পর ধিরে ধিরে সে এমন পাগলামু শুরু করে দেয় মেডিকেল রিপোর্ট নরমাল থাকলেও তার মাঝে মধ্যে কি হয়ে যায় জানিনা। আর এমন করে।
আর লন্ডন এ কি হয়েছিলো তা আজও অজানাই রয়েছে।
রিদয় এর মা কান্না করছে সাথে তিথিও।
.
এমন মানুষ টাকে ভুল ভাবছিলাম। নাহহ উনাকে আমার সুস্থ করে তুলতেই হবে। যে করেই হোক।
আমার সব টুকু ভালোবাসা দিয়ে উনাকে সুস্থ করে তুলবো আর নিজেকে উনার কাছে উৎসর্গ করে দিবো।
ভেবেই তিথি রিদয় এর মায়ের মাথায় হাত দিয়ে রুম থেকো বেরিয়ে গেলো।
রুমে গিয়ে দেখে রিদয় তার শার্ট ছিরে ফেলেছে বিছানা এলোমেলো করে ফেলেছে।
তিথি দৌড়ে গিয়ে রিদয় এর হাত ধরে তাকে থামাতে চায়। রিদয় তিথি কে ধাক্কা দিয়ে বলে কে আপনি? এখান থেকে বেরিয়ে জান চিৎকার করে।রিদয় এর চিৎকার এ পুরো বাড়ি স্তব্দ।
তিথি হাল না ছেরে রিদয় কে জরিয়ে ধরে বলে আমি আপনার ভালো বৌ আপনি আমার স্বামি।এসব কি করছেন শান্ত হন প্লিজ। রিদয় তখন ও শান্ত নয়। তাই তিথি রিদয় এর গালে হাত দিয়ে খাটে বসায় রিদয় কে।
আর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে আপনিতো গুড বয় তাহলে এমন করছেন কেন?(তিথি)
গুড বয়রা তো এমন করে না।এমন করলে আপনার আর আদর করব না।
রিদয় এবার কিছুটা শান্ত হয়ে বলে। ভালো বৌ আমি গুড বয় আমি আর দূষ্টুমি করবো না। বলেই তিথির কোলে শুয়ে মুখ লোকায়।
.
তিথি এই মানুষটাকে বুঝতেই পারছেনা। কারন একেক সময় একেক রকমের আচরন উনার।
কাল একবার উনার ডাক্তার এর কাছে নিয়ে যেতেই হবে আমায়।
চলবে….

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com