Breaking News

তারে ভালোবাসি বলে । পর্ব-২২



অয়ন ফোনটা পিক করতেই কলটা কেটে গেলো। অয়ন একটু অবাক হলো। ঈশা তো কখনও মুখের উপর কল কাট করে না। তবে আজ কেনো? অয়ন মৃদু হেসে বলল
— পাগলিটার অভিমান অত্যন্ত প্রখর। তবে ক্ষেত্র বিশেষে আমাকে কাছে তা প্রজয্য নয়।
অয়ন ফোনটা পকেটে রেখে মুচকি হাসলো। অতঃপর কিছু সময় ধরে অয়ন নিজের কাজ গুছিয়ে নিচ্ছে। অনু এসে মুখ ভারি করে জ্বিগাসা করলো অয়নকে
— আমি তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ রেখেছি আর তুমি একটি বারের জন্যও জানতে চাওনি সারপ্রাইজটা কি?
অয়ন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো অতঃপর অনুর দিকে দৃষ্টিপাত করে বলল
— হুম বলো কি সেটা?
অনু মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বলল
— বলবো না।
অয়ন শান্ত গলায় বলল

— অ্যাস ইউওর উইস।
— তোমার কোনো ইচ্ছে নেই শোনার?
— তুমিই তো বললে বলবে না। আমি কি করবো?
— আচ্ছা শোনো, আমি তোমার মাথা থেকে একটা ঝামেলা কমিয়ে দিয়েছি। ঈশার গল্প শেষ। ওকে এমন জায়গায় পাঠিয়ে দিয়েছি যে ওর আর আমাদের মাঝে আসার কোনো সুযোগ নেই। কয়েক মুহূর্ত পর অয়ন আর অনু সারা জীবনের জন্য এক হয়ে যাবে। ঈশার গল্প দ্যা ইন্ড।
অনুর কথা শুনে অয়ন চোখ বড় বড় করে ফেলল। এসব কি বলছে অনু? ঈশা শেষ মানে! অয়নের ভয় হচ্ছে। হুম প্রচন্ড ভয়। প্রিয়জন হারানোর ভয় অয়নের চোখে মুখে স্পষ্ট। অয়ন বসা থেকে আচমকাই উঠে দাঁড়ালো। অনুকে উদ্দেশ্য করে কাঁপা গলায় বলল
— কি বলছো তুমি? ঈশা শেষ মানে?
অয়নকে বিচলিত দেখে অনু অবাক হলো। অনু বিষ্ময় কন্ঠে বলল
— একি অয়ন! তোমাকে এতো ব্যাকূল লাগছে কেনো? আমি তো তোমার খুশির জন্য এসব করেছি। ভেবেছি ঈশা সারা জীবনের মতো আমাদের মাঝ থেকে চলে গেলে তুমি খুশি হবে। আমরা হ্যাপি একটা লাইফ লিড করবো। কিন্তু তোমার চোখ মুখ এমন দেখাচ্ছে কেনো?
অয়নের চোখ জোড়া দিয়ে এখন রক্ত বেরিয়ে যাবে মনে হচ্ছে। প্রচন্ড রাগের কারনে অয়নের চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা নোনা জল গড়িয়ে পড়লো। অয়নের চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। অনু অয়নকে উদ্দেশ্য করে আবারও বলতে লাগলো
— অয়ন ঠিক আছো তুমি? আমি কি কোনো ভূল করেছি? ঈশাকে শেষ…..
কথাটা শেষ করতে পারলো না অনু। তার আগেই অয়ন অনুর গলা চেপে ধরে। অনু চোখ বড় বড় করে আছে। অয়ন অনুর মুখের কাছে নিজের মুখ নিয়ে বলল
— কি করেছিস আমার ঈশার? কোথায় আছে ঈশা? আন্সার মি অনু। প্লিজ অনু কথা বল
অনু অনেকটা কষ্ট করে অয়নকে ছন্দহীন কন্ঠে বলল
— অয়ন আমার লাগছে। আমি বলছি ছাড়ো আমায়!
অয়ন অনুকে ধাক্কা দিয়ে ছেড়ে দিলো। অনু গলা ধরে কাশি দিতে লাগলো। অনু ফ্লোরে পরে আছে গলা ধরে। অয়ন একটু থেমে অনুর কাছে হাঁটু গেড়ে বসলো। অয়ন অনুর ছলছল চোখের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
— এখন বাঁচতে দিলাম‌। ততক্ষন বেঁচে থাকবি যতক্ষন ঈশা আমার কাছে আছে। যদি ইশারা কিছু হয় তবে আমি তোকে খুন করে ফেলবো। সাথে নিজেও খুন হয়ে যাবো। ঈশা ছাড়া আমি মূল্যহীন।
অয়নের প্রতিটি কথা অনুকে অবাক করে দিলো। এইসব কি বলছে অয়ন? তবে আজ সকাল থেকে যা হচ্ছিল তা কি শুধু মাত্র নাটক? অভিনয় ছিলো সবটা? অনুকে নিশ্চুপ দেখে অয়ন কর্কশ গলায় বলে উঠলো
— কি ভাবছিস তুই? কাল রাতে ঈশাকে আমি ভূল বুঝেছি। সকাল থেকে তোর সাথে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলেছি। এসব সত্যি? নিজেকে খুব চালাক ভাবিস তুই। তাই না? আসলে তোর মতো বোকা পৃথিবীতে আর একটাও নেই। আমি তোর সব চাল অনেক আগেই বুঝতে পেরেছি। শুধু বিশ্বাস করতে পারিনি যে তুই বন্ধু হয়ে আমার পিছনে ছোরা মারবি। আরে আমি তো তোকে বিশ্বাস করেছিলাম। রাস্তা থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে তোকে হসপিটালে ভর্তি করে তোর জীবন বাঁচিয়েছি। দিয়েছি আপন জনদের পরিবারের একজন হয়ে ওঠার অধিকার। আর তুই কি করলি? সুযোগ পেয়ে আমার বিশ্বাস নিয়ে খেলা করলি। বাহ রে বাহ অসাধারণ মানবতা তোর। প্রপার্টির জন্য এই সব নোংরামি করেছিস তুই! নে সব তোকে দিয়ে দিলাম। আমাকে শুধু ঈশাকে দিয়ে দে। আর কিছু লাগবে না আমার।
কথাটা শেষ করতেই অয়ন মাথায় হাত রেখে ধপাস করে বসে পরলো। এক সেকেন্ডের মধ্যেই অয়নকে শূন্যতা সম্পূর্ণ রূপে গ্রাস করে নিয়েছে। অয়নের করার মতো কিছু নেই। অবাধ্য চোখ জোড়া বেয়ে পরছে কষ্টের নোনা জল। অনু প্রপার্টির কাগজ গুলো ছিরে ফেলে অয়নের কাছে এসে বলল
— অয়ন আমি ভূল করেছি। এখনও দেরি হয়ে যায় নি। ঈশাকে তুমি পেতে পারো।
অয়ন অনুর দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে বলল
— কোথায় আছে ঈশা?
অনু একটু থেমে কর্কশ গলায় উত্তর দিলো
— আমার আর দিব্বর প্লান মতো ঈশাকে ইন্ডিয়া পাঠিয়ে দেয়া হবে। সেখান থেকে ঈশাকের রিসিভ করবে দিব্ব। প্লান মতো দিব্ব এতোক্ষনে ইন্ডিয়া চলে গেছে। আর ঈশা এখন কন্টিনারে আছে।
অনুর কথা গুলো শুনে অয়নের মাথায় রক্ত উঠে গেলো। তবে এখন অনুকে কিছু করা যাবে না। আগে ঈশাকে বাঁচাতে হবে। অয়ন দ্রুত অফিস থেকে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায়। এখনি বন্দরে মেতে হবে। অয়ন যতটা সম্ভব দ্রুত গাড়ি চালাচ্ছে। এক মিনিট লেট মানে সব শেষ। ঈশার মুখটা বার বার ভেসে আচ্ছে অয়নের চোখে। ঈশা কে কেনো তার কাছে রাখলো সে? দূরে কোথাও পাঠিয়ে দিলেই তো আর কিছু হতো না। ঈশা ঠিক থাকতো। কিন্তু একটা ভূল অয়নকে আজ শেষ পরিণতির দিকে ডাকটে। মনের মধ্যে নানা ধরনের চিন্তা এসে ভর করছে তার। এই বুঝি তার প্রিয়জনকে সারা জীবনের জন্য হারাতে হলো তার!
অয়ন কিছু ভাবতে পারছে না। অয়নের পাশে অনু বসে আছে। অনুর চোখে বেয়ে পানি পরছে।
না এটা কোনো ছলনার চোখের জল নয়। এটা আত্নগ্লানীর চোখের জল।
এটা ব্যর্থতার চোখের জল নয়। এটা ভূল বুঝতে পারার চোখের জল।
অনু অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল অয়ন আমায় তুমি ক্ষমা করে দাও।
তোমাকে নিজের করে পাবার নেশায় আমি এসব করেছি।
দিব্ব চাইতো ঈশা কে। আর আমি চাইতাম তোমায়।
আমাদের প্রপার্টির প্রয়োজন নেই। আর আমার বাবা মা খুন হয়নি।
আমি তোমার কাছে থাকার জন্য এই মিথ্যেটা বলেছি। আমি সোহেল চৌধুরীর মেয়ে অনু।
আমি এখানে এসেছি শুধু তোমার জন্য। বিশ্বাস করো আমায় আমি তোমাকে চেয়েছি শুধু।
অয়ন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
.
জোর করে, নোংরা খেলা খেলে, আমাকে কষ্ট দিয়ে তুমি আমাকে চেয়েছো?
ভালোবাসার মানে কি এসব? ঈশাকে দেখো। আমার জন্য নিজের জীবন দিতে পারে।
আমার ভালোর জন্য নিজের ভালো থাকা পরিত্যাগ করতে পারে।
কিন্তু তুমি? তুমি শুধু মাত্র নিজের ভালো থাকা খুঁজতে পারো।
তুমি সেই মানুষ যে না কাউকে ভালোবাসতে পারে আর না কাউকে ভালো রাখতে পারে।
এতো কিছু করেও কি লাভ হলো তোমার? ঈশাকে আমার মন থেকে মুছে দিতে পেরেছো?
বরং তুমি নিজেই আমাদের মাঝে ঘৃণ্য ব্যক্তি হয়ে এখনও বেঁচে আছো।
এটাকে ভালোবাসা বলে না অনু। জেদ বলে। যা তুমি করেছো। তোমাকে আর কি বলবো আমি?
একজন নারী হয়ে তুমি একটা নারীর কষ্ট বুঝলে না। তাকে আর আমি কি বোঝাবো?
অয়ন আর কোনো কথা বলল না। অনু কাঁদছে। এখন কেঁদে কি লাভ?
যা করার তা তো সে করেই ফেলেছে।
এখন শুধু অপেক্ষা অয়ন কখন পৌঁছাবে তার ভালোবাসার মানুষটির কাছে।
মুক্ত করে আনবে তার সেই প্রিয়জনকে। যাকে ছাড়া অয়ন অপূর্ণ।
* ঈশাকে সেন্সলেস অবস্থায় কন্টেনারের বন্ধ করা হলো। কিছু সময়ের মধ্যে জাহাজ রোগ হবে। ঈশা নিজেও জানে না তার গন্তব্য কোথায়? কোথায় যাচ্ছে সে? নিঃশব্দে পরে আছে ঈশা কন্টেনারের ভিতর। একে একে সব কন্টেনার গুলো জাহাজে তোলা হলো। অয়ন এখনও পথে আছে। কোনো ভাবেই দ্রুত আসা যাচ্ছে না। বিপদের সময় রাস্তা বড় হয় আর সময় হয়ে আসে ছোট। অয়নের ক্ষেত্রেও বিপরীত হলো না। কিছু দূর অয়নের গাড়ি এগোতেই বিকট শব্দ হলো। অয়নের গাড়ির সামনে একটা ট্রাক চাকা পামচার করে বসে আছে। অয়ন গাড়িটা ঘুরিয়ে অন্য দিক দিয়ে যাবে এমন সময়…….
.
চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com