Breaking News

তারে ভালোবাসি বলে । পর্ব-২১



অয়ন গাড়িতে বসতেই ঈশার কল চলে এলো। অয়ন কলটা পিক করতেই ভিশন অভিমানী কন্ঠে ঈশা বলল
— মানুষ এতোটা ইরিসপ্সেবল কি করে হয়? কেউ যে তার ফোনের অপেক্ষায় থাকে সেটা কি কেউ বুঝতে পারে না?
অয়ন মৃদু হেসে বলল
— উহু আমার জন্য কেউ অপেক্ষা করতে পারে সেটা আগে জানতাম না।
— কিহহহহহহ? আচ্ছা ঠিক আছে রাখছি ভালো থাকবেন।
— এই শোনো ঈশা! কোথায় যাচ্ছো?
— জানি না কোথায় যাচ্ছি। তবে আপনার সাথে আর কোনো কথা নাই আমার।
— ওমা তাই নাকি? আমার সাথে কথা বলতেও হবে না। আপনি ফোনের সাথে কথা বলুন। আমি শুনছি না আপনার কথা।
অয়নের কথা শুনে ঈশার অভিমান রাগে রূপান্তরিত হলো। ঈশা রাগে গজগজ করতে করতে বলল
— মজা করো তুমি? হুম। আমার সাথে মজা করা হচ্ছে! এতো সেলফিস একটা লোক। অফিসে পৌঁছে একটা কল করা যেতো না? আপনি কি জানেন না আপনার জন্য আমার চিন্তা হয়?
— সরি গো আসলে একটু কাজের চাপ ছিলো তাই কল করা হয়নি। রাগ করে না প্লিজ।
— আচ্ছা ঠিক আছে। দুপুরের খাবার খেয়েছো?
— না। একটু পরে খাবো।
— ওকে। খেয়ে আমাকে কল করো।
— আচ্ছা। শোনো তুমিও খেয়ে নিও।
— ঠিক আছে।
অয়ন কলটা কেটে দিয়ে গাড়ি স্টার্ট করলো। অয়ন চলেছে এক অজানা উদ্দেশ্য।‌ অনুর সব সত্যি অয়নকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। কিছু সময় চলার পর অয়নের গাড়ি পোঁছে যায় তার নির্দিষ্ট গন্তব্যে। অয়ন গাড়ি থেকে নামতেই দেখতে পেলো রাজ দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে। অয়নকে দেখতে পেয়ে রাজ দৌড়ে ছুটে আসে অয়নের কাছে। রাজ অয়নকে বিষন্ন কন্ঠে বলল
— অয়ন অনু কিছু আঁচ করতে পারেনি তো?
— উহু। পারেনি।
.
— যাক তা হলে ঠিক আছে। ঈশা কোথায়?
— ঈশা বাড়িতে আছে।
– ওয়াট? কার বাড়িতে?
— আমার বাড়িতে।
— অয়ন তুই এই ভূল কি করে করতে পারলি? অনু যদি বাড়িতে যায়। ঈশাকে দেখতে পায় তবে যদি কোনো ঝামেলা করে। তখন কি করবি?
— হাহাহাহা, অনুকে এমন ভাবে মোটিভেট করেছি যে ঈশাকে দেখার পরেও ওর কিছু করতে ইচ্ছে হবে না। বাই দ্যা ওয়েহ, দিব্ব কোথায়?
— আছে ভিতরে।
— চল তা হলে।
অয়নকে সাথে নিয়ে রাজ গোডাউনে প্রবেশ করে। গোডাউনে আসতেই অয়ন দেখতে পেলো দিব্বর হাত পা বাঁধা। শরীরে মারের দাগ স্পষ্ট। অয়ন রাজকে ঈশা করে বলল ওর হাত পা খুলে দিতে। রাজ অয়নের কথা মতো দিব্বকে মুক্ত করে দিলো। অয়ন দিব্বর মুখ বরাবর পা এর উপর পা তুলে একটা চেয়ারে বসলো। দিব্ব মুক্তি পেতেই মুখ তুলে দেখলো অয়ন বসে আছে তার সামনে। অয়নকে দেখতে পেয়ে দিব্ব এক অদ্ভুত হাসি দিলো। অয়ন দিব্বকে বাঁকে হেসে প্রশ্ন করলো
— মরার আগেও এতো‌ হাসি কেনো তোর? তোর মতো একটা বজ্জাত আমি আর দুটো দেখিনি।
অয়নকে কথাটা তাচ্ছিল্যের‌ হাসি দিয়ে উড়িয়ে দিলো দিব্ব। দিব্বর এই রাক্ষুসে হাসিটা অয়নের ভিশন অপছন্দের। দিব্ব অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল
— মরার ইচ্ছে আমার নাই। আমি তো এখন হাসছি কিন্তু তুই! তুই একটু পরে কাঁদার সময় পাবি না। তুই আমাকে কম কষ্ট দিস নাই। আমি সব হিসেব করে রেখেছি। সুদ সহ ফেরত দিবো তোকে। অয়ন চৌধুরী ইউ আর ফিনিস্ড।
অয়ন উচ্চ স্বরে হাসে ফেলল দিব্বর কথা শুনে। অয়ন ধুম করে দিব্বর চুল গুলো নিজের মুষ্টি বদ্ধ করে নেয়। দিব্বর উদ্দেশ্যে ফিসফিস করে বলে
.
— তোদের নোংরা প্লান সম্পর্কে আমি কিছুটা অবগত আছি। সম্পূর্ণ জানার পর দেখা যাবে কে শেষ হয় আর কার শুরু হয়। যদি বেঁচে থাকতে চাস তো সবটা বলে দে আমায়। আর যদি না বলিস তো!……
অয়নকে বাকিটা বলতে দিলো না দিব্ব। দিব্ব চিৎকার করে বলতে লাগলো
— কি করবি তুই? মেরে ফেলবি আমায়? হুম ডু ইট। মেরে ফেল আমায়। এতে করে তোর মঙ্গল। যদি আমি বেঁচে থাকি তবে তুই বাঁচবি না অয়ন। তাই বলছি মেরে আমায়।
দিব্বর প্রতি অতিরিক্ত ঘৃণা আসছে অয়নের। এই নোংরা পশুটাকে মেরে ফেলা সহজ তবে ওকে মেরে নিজের হাত নোংরা করা চলবে না। অয়ন মুচকি হেসে নিজের রাগ কমানোর বৃথা চেষ্টা করছে। অয়ন একটু থেমে বলল
— তুই না বললেও আমি সবটা জেনে ফেলবো‌। ডোন্ট ওয়ারি। অনু নিজের ইচ্ছে আমাকে সবটা বলে দিবে। কিন্তু এখন তোর কি অবস্থা হবে সেটা তুই কল্পনাও করতে পারছিস না।
— যা ইচ্ছে করে নে তুই।
* অয়ন দিব্বকে কি করবে বুঝতে পারছে না। অয়ন কোমর থেকে বেল্টা খুলে হাতে পেঁচিয়ে নিলো। রাগে গজগজ করতে করতে অয়ন দিব্বর দিকে এগিয়ে গেলো। রাজ এসে অয়নকে পিছন থেকে জাপটে ধরলো। অয়নকে উদ্দেশ্য করে রাজ বলল
— প্লিজ অয়ন ওর কাছে যাস না। ও মরে যাবে ভাই।
অয়ন রাগি কন্ঠে বলল
— মরে যাক। ওকে আমার সহ্য হয় না। ছাড় আমায় প্লিজ।
— অয়ন তুই এখন যা। মাথা ঠান্ডা হলে আসিস। আমরা দেখছি এখানটা
অয়নকে অনেক কষ্ট করে বুঝিয়ে পাঠিয়ে দেয়া হলো। অয়ন রাগে গজগজ করতে করতে অফিসে চলে আসে।
— আমাকে তুই করে বলে একটা রাস্কেল। আমার থেকে সত্যি লুকায় ও। সত্যি তো জানবোই আমি। আর আমার বিশ্বাস নিয়ে খেলের শাস্তি পেতে হবে সবাই কে। অভিনয় শুধু তোমারা করতে পারো না। আমিও কোনো অংশে কম যাই না।
.
আপন মনে কথা গুলো বলল অয়ন। চেম্বারে আসতেই অয়ন দেখতে পেলো অনু চেম্বারে বসে ফাইল গুলো দেখে নিচ্ছে। অয়নের উপস্থিতি অনুর মনে শান্তির ছায়া এনে দিলো। অনু অয়নকে দিকে তাকিয়ে রইলো কিছু সময়। অনুর দিকে দৃষ্টিপাত করে অয়ন কর্কশ গলায় বলল
— এভাবে কি দেখছো?
— তেমন কিছু না। চোখের তৃষ্ণা মেটাচ্ছি আর কি।
— ওহহহহ। তাই না!
— হুম গো তাই। কোথায় ছিলো তুমি? জানো আমি একা একা করেছি সব কাজ।
— হুম জানি। তুমি সব কাজ একা একা করতে পছন্দ করো।
— একদমই না। আমি একা কখনও কোনো কাজ করিনি। সর্বদা কেউ না কেউ আমাকে সাহায্য করেছে। যেমন তুমি।
অনুর চোখের দিকে তাকালো অয়ন। অনুর চোখে স্পষ্ট তার মনের মধ্যে চলা অনুভূতি। অয়ন বাঁকা হেঁসে বলল
— অনেক ক্ষেত্রে শুধু আমি না। অন্য কেউও তোমার প্রয়োজন হয়ে পরে।
অনু একটু চমকে যায়। অয়ন কার কথা বলছে। অনু কাঁপা কাঁপা গলায় বলতে লাগলো
— কার সাহায্যের কথা বলছো?
অয়ন আবারও রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে
— তেমন কেউ না। আমি তোমার শাড়ি পরিয়ে দেয়ার কথা বলছি।
— ওহহহ, হ্যাঁ মাসি কিন্তু খুব ভালো করে শাড়ি পরাতে পারে।
— হুম।
.
— আচ্ছা অয়ন বাদ দাও এসব কথা। তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ অপেক্ষা করেছে। যা শুনে তুমি আমাকে বুকে জরিয়ে ধরবে। গালে চুমু খেতে চাইবে! আর বলবে অনু আমি তোমাকে ভালোবাসি তোমাকে নিজের করে চাই।
— ওয়াট? কি সব পাগলের মতো উল্টা পাল্টা বকছো?
— হিহিহি, আমি পাগল না পাগলি তাও তোমার।
* অয়ন একটু অপ্রস্তুত হয়ে বলল
— আমার পাগলি তুমি নও।
অয়নের কথাতে অনু একটু থমকে যায়। অয়ন পরক্ষনে চিন্তা করে হায় আল্লাহ এটা কি বললাম? নিজের হাতে নিজের খেলা শেষ করে দিলাম!
অয়ন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বলল
— তুমি কি আমার পাগলি? তুমি তো আমার বিশেষ কেউ। অনেক কাছের মানুষ।
অয়নের কথায় অনু খুশিতে গদগদ হয়ে বলল
— তাই গো?
অয়ন লাজুক হাসি দিয়ে বলল
— বোর্ড মিটিং এরেঞ্জ করো এখনি। আমার ইম্পটেন্ট কথা আছে।
— কি কথা?
— কেউ একজন আমার অবর্তমানে আমাকে পিছন থেকে ছুরি মেরেছে। এই অফিসের সব কাগজ পত্র, গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট, ফাইল, সব কিছু কপি করে নিয়েছে। তাই মিটিং ডেকে সব ক্যান্সেল করে। নতুন করে‌ সব শুরু করতে হবে।
.
অয়নের কথাতে অনু ঠিক বুঝতে পারলো তার কাজ অয়নের চোখে পরেছে। অনু নিরব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অয়ন অনুর কাঁধের উপর দুহাত রেখে একটু শান্ত গলায় বলল
— তোমার টেনশন করতে হবে না। একটা বার যদি জানতে পারি কে এই কাজ করেছে। তাকে আমি নিজের হাতে খুন করবো। তুমি চাপ নিও না। প্লিজ
অনু অয়নের হাত সরিয়ে দিয়ে বলল
— মিটিং লাগবে না। অয়ন আমি কপি করেছিলাম। তবে বিশ্বাস করো আমার কোনো খারাপ উদ্দেশ্য ছিলো না। আমি এমনিতেই দেখতে চেয়েছিলাম এই আর কি।
অয়ন নম্ন কন্ঠে অনু কে বলল
— এটা কি করলে নটি গার্ল। আমাকে বলা উচিত ছিলো না বলো। তুমি তো জানোই আমার কোমরে সব সময় একটা পিস্তল থাকে। যেটা সব সময় কারো পরম স্পর্শ চায়। আমি কত আশা করে বসে আছি কারো উপর নিজের বুলেটের ও নিশানার প্রক্টিস করবো। তুমি তা হতে দিলে না।
অনু ছলছল চোখে বললো
— তা হলে করে ফেলো আমার উপর। তোমার জন্য জীবন নিতে যেমন পারি ঠিক তেমন দিতেও পারি। আমার ভয় নেই।
.
অয়ন বাঁকা হেঁসে বলল
— আহহহহ ধূর পাগলি তোমার কিছু হতে দিতে আমি কি পারি? তুমি তো আমার বুকে থাকো। তুমি ছাড়া আমি কি করে থাকবো হুম।
অনু কিছু বলল না। অয়নকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো সে। অয়নের চরম বিরক্ত লাগছে অনুর স্পর্শ। তবে কিছু করার নেই তার। এই নাটকটা না করলে সব সত্যি জানা হবে না তার।
* অনু পরম আবেশে অয়নকে জরিয়ে রেখেছে নিজের বুকের পাঁজরে। এমন সময় হঠাৎ করে অয়নের ফোনটা বেজে উঠলো। অয়ন অনুকে সরিয়ে দিয়ে বলল
— যাস্ট টু মিনিট প্লিজ।
অনু কিছু বলল না। অয়ন ফোনটা হাতে নিয়ে কেবিনের দিকে চলে যায়। ঈশা কল করেছে। এই সময় ঈশা কেনো কল করলো? অয়ন ফোনটা পিক করতেই…
.
চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com