Breaking News

বৌ এর ভালোবাসা । পর্ব -০৫



আইডিয়া, প্রোপজ করবো ।
হে বৌ কে প্রোপজ করবো,
বৌ এর ভালোবাসা পাওয়ার
জন্য প্রোপজ করবো ।
আগামী মাসে মৌ র জন্ম দিন।
ঐ দিনই আমি আমার বৌ কে প্রোপজ করবো ।
এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ি।
ঘুম থেকে উঠে যা দেখলাম তাতে
আমি অবাক হয়ে গেলাম।
মৌ এর কান্ড দেখে আমার স্টক করার মতো অবস্থা ।
.
দেখলাম মৌ আমাকে জড়িয়ে ধরে পাপ্পি দিচ্ছে।
ভালো করে লক্ষ্য করে দেখি ওর
কাপড় কিছুটা এলোমেলো ।
হায় হায় মেয়েটা ঘুমের মধ্যে উল্টো পাল্টা
কিছু করেনি তো।
( আরে আপনার যা ভাবছেন তা না)
আমার জেগে উঠা দেখে মৌ কিছুটা
লজ্জা পেয়ে তারাতারি করে ঘরের
বাহিরে চলে গেলো।
আমিও একটু আগে কি হয়েছে তা
ভাবতে ভাবতে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম ।
সেখানে গিয়ে খেলাম আরেক ধাক্কা ।
আয়নায় নিজের চেহারা মিলাতে পারছি না ।
সারা মুখ লিপস্টিকে লাল হয়ে আছে ।
আমার আর বুঝতে বাকি নেই মৌ এতক্ষণ
এই কাজ করলো।
যাইহোক ফ্রেশ হয়ে বাহিরে এসে দেখি মৌ ।
তাই আমি জিজ্ঞেস করলাম ।
আমি:- কিছু বলবে।
মৌ:- না
( হয়তো কিছু বলতে চেয়ে ছিল, অজানা কোন কারণে বলতে পারলো না ।
যা আমি ওর চোখ দেখে বুঝতে পারি )
আমি:- আচ্ছা মৌ তুমি রেডি হয়ে নাও
আজকে আমারা ঘুরতে যাব।
.
মৌ:- আপনি কি করে বুঝলেন যে আজ
আমার ঘুরতে যেতে মন চাচ্ছে ।
আমি:- আমি কি করে তোমার মনের কথা
বুঝবে আমি কি মনোবিজ্ঞান নাকি ।
আমার যেতে মন চাচ্ছে তাই তোমাকেও
বললাম ।
মৌ:- ওহ্ ( মন খারাপ করে)
হয় তো এই উত্তর আশা করে নি।
তারপর আমি মৌ এর পছন্দের
কেনা পাঞ্জাবি পড়ে নিচে এসে মৌ র জন্য wait করতে থাকি।
অনেকক্ষণ বসে আছি কিন্তু মহা রানির
আসার কোন নাম নেই ।মেনে হয় আঁটা
ময়দা মাখতে ব্যস্ত ।
মেয়েদের নিয়ে এই একটা সমস্যা কোথাও
যাওয়ার আগে ময়দা মাখতে পাক্কা
আড়াই ঘন্টা সময় লাগবেই ।
আর বসে থাকতে না পারে উপরে চলে
গেলাম মৌ কে ডাকতে ।
ভিতরে ঢুকে তো আমি অবাক ।
মৌ আমার দেওয়া কালো শাড়ি পরেছে ।
কালো শাড়িতে মৌ কে অপরূপ সুন্দর লাগছে ।
মনে হচ্ছে স্বর্গের কোন পরী দাড়িয়ে আছে
আমার সামনে ।
আমি কোন কবি হলে মৌ এর এই
সৌন্দর্যের বর্ণনায় একটা কবিতা
লিখতাম মৌ কে নিয়ে ।
কালো শাড়ি,ঠোঁটে হাল্কা খয়েরি লিপস্টিক,
খোঁপায় বেলী ফুলের মালা,
এক কথায় রুপশী বধূ ।
তারপরও কি যেন একটা কমতি
লাগছে, কি হতে পারে, কি কি ?
ভাবনার বিচ্ছেদ ঘটিয়ে মৌ এর ভাক।
মৌ:- এই যে কি বির বির করছেন ।
কখন থেকে ডাকছি ।
আমি:- ইয়েস পেয়ে গেছি,
মৌ:- কি পেয়ে গেছেন ।
একা একা কার সাথে কথা
বলছেন কখন থেকে ।
আমি মৌ এর কোন কথার উত্তর না
দিয়ে চলে গেলাম আয়নার সামনে ।
আয়না থেকে একটা কালো টিপ নিয়ে
মৌ এর সামনে এসে মৌ কে টিপ পড়িয়ে দেই।
.
মৌ আমার কান্ড দেখে অবাক চোখে
তাকিয়ে রইলো । আমি কি করছি মৌ
এখনো বুঝে উঠতে পারছে না ।
তাই মৌ কে বললাম
আমি:- কি হয়েছে ওমন হা করে
তাকিয়ে আছো কেন ।
মৌ:- আপনাকে দেখছি আর আপনার কান্ড দেখছি ।
আমি:- আমাকে দেখে লাভ নেই ।
আমি একজন বহুরূপী মানুষ ।
এই মেঘ,এই বৃষ্টি এই ঝড়, এই রোদ এই ভালো, এই মন্দ
কোন কূল পাবে না ।
মৌ:- আমি শেষ রূপ দেখতে চাই।
একদম শেষের যায় পড়ে কোন রূপ নেই ।
আমি:- একদিন আমিই তোমাকে দেখিব।
এতো উতলা হবার দরকার নেই ।
এখন চলো দেরী হয়ে যাচ্ছে ।
মৌ:- হুম চলেন
তারপর আমি মৌ কে নিয়ে ঘুরতে বের হই ,
একটা রিকশা নিয়ে । শহরের কোলাহল
ছেড়ে অনেকটা দূরে চলে আসি কোন
নিরিবিলি নদীর তীরে ।
পরিবেশ টা খুব সুন্দর দুজনে
খালি পায়ে ভেজা বালিতে হাঁটছি ।
হঠাৎ মৌ বলে উঠলো
মৌ:- আমি কি আপনার হাতটা ধরে হাঁটতে পাড়ি ।
আমি কিছু না বলে ওর দিকে হাতটা বাড়িয়ে দিলাম ।
মৌ মুচকি হাসছে হাতটা খুব শক্ত করে ধরল ।
দুজনে হাঁটছি কারো মুখে কোন কথা নেই ।
হঠাৎ নীরবতা ভেঙে মৌ বললো ।
.
মৌ:- আচ্ছা আমারা কেও কথা বলছি না কেন ।চুপচাপ বোবার মতো হেঁটেই চলছি।
আমি:- কি কথা বলবো চুপ থাকতেই ভালো লাগছে ।
মৌ:- আমার লাগছে না,এরকম বোবা র মতো থাকতে ।
আমি:- আচ্ছা তাহলে তুমিই বলো ।।
মৌ:- আমি, আমি কি বলবো ।
আমি:- তোমার জীবনের কথা, ছোট বেলা, বেড়ে ওঠার কথা, স্কুল, কলেজের জীবন ।
মৌ:- আমার ছোট বেলা বলতে, আমি বড় হয়েছি গ্রামে ।আমার এক বান্ধবী ছিলো মিতু নামে ।
দুই বান্ধবী মিলে সারা গ্রাম ঘুরেছি ।কারো গাছের আমি,আবার কারো গাছের পেয়ারা এরকম করে
সারা গ্রাম ঝালিয়ে খেতাম। প্রতিদিন বিচার আসা,মার বকা খাওয়া আমার রুটিন হয়ে গেছে ।
কিন্তু বাবা ছিল আমার দলের লোক।শত অপরাধের পরো আমার পক্ষে ।
এভাবেই কেটে যায় শৈশব।
আমি:- ওহ্ ।আর কোন ইতিহাস নেই ।
মৌ:- কি ইতিহাস (চোখ বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে)
আমি:- ওই তো ইতিহাস আর কি।
মৌ:- কীসের ইতিহাস সেটা তো বলবেন ।
আমি:- ওই প্রেমের ইতিহাস আর কী।
মৌ:- ওহ্ ।না এরকম কোন ইতিহাস নেই ।
(বাহ্ আমার মৌ এর মতো মেয়ে হাজারে একটাও পাওয়া যাবে না ।
এখন single মেয়ে পাওয়া মানে আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়া)
আমি:- ওহ্ ভালো ।
.
তারপর নানান কথা বলেতে বলতে সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে তাই মৌ কে বললাম
আমি:- মৌ চলো সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে বাসায় যেতে হবে ।
মৌ:- আরেক টু থাকি না ।
তারপর আরো ঘুরতে ঘুরতে রাত হয়ে গেল ।
তাই মৌ কে নিয়ে বাসার দিকে রওনা দিলাম
আমি:- চল রিকশায় যাই।
মৌ:- না হেঁটে হেঁটে যাব ।
রাতের বেলা হাঁটতে ভালো লাগে ।
আমি আর কিছু না বলে গল্প করতে করতে
হাঁটা শুরু করলাম ।বাসায় ফিরলাম
রাত আটটা নাগাদ ।
বাসায় ফিরে রাতের খাবার খেয়ে ,
আমি ছাদে গিয়ে একটা সিগারেট
খেয়ে আবার রুমে চলে আসি ।
এসে দেখি মৌ নেই, হয় তো ব্যালকনিতে।
ব্যালকনিতে যেয়ে দেখি মৌ আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে ।
আমি:- মৌ ঘুমোবে না ।
মৌ:- না, আপনিও বসুন না।আজকে আকাশটা
অনেক সুন্দর লাগছে ।
তারপর আমি মৌ এর পাশে বসতে বসতে ।
আমি:- বসতে পারি যদি তুমি একটা গান শোনাও ।
মৌ:- কিন্তু আমি তো গান পারি না ।
আমি:- পারিনা বললে তো হবে না,
একটা বলতেই হবে ।
মৌ:- আচ্ছা তাহলে কবিতা শুনাই।
আমি:- ওকে বলো।
.
তারপর মৌ তার মিষ্টি কন্ঠে বলতে লাগল ।
প্রিয়া-রূপ ধারে এতদিনে এলে আমার কবিতা তুমি,
আঁখির পলকে মরুভূমি যেন হয়ে গেল বনভূমি !
জুড়াল গো তার শতজনমের রৌদ্র–দগ্ধ–কায়া—-
এতদিনে পেল তার স্নানের স্নিগ্ধ মেঘের ছায়া !
চেয়ে দেখো প্রিয়া, তোমার পরশ পেয়ে
গোলাম দ্রাক্ষা–কুজ্ঞে মরুর বক্ষ গেছে ছেয়ে !
গভীর নিশীথে,হে মোর মানসী-আমার কল্প-লোকে
কবিতা রূপে চুপে চুপে তুমি বিরহ-করুণ চোখে
চাহিয়া থাকিতে মোর মুখপানে,আসিয়া হিয়ার মাঝে
বলিতে যেন গো—-হে মোর বিরহী,কোথায় বেদনা বাজে??
আমি ভাবিতাম,আকাশের চাঁদ বুঝি এলো নেমে
মোর বেদনায় বুকে বুক রাখি কাঁদিতে গভীর প্রেমে!
তবু চাঁদ মুখ-পানেচেয়ে আজ চমকিয়া উঠি আমি ,
আমি চিনিয়াছি ,সে চাঁদ এসেছে প্রিয়া-রূপ ধরে নামি!
আমি তো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি ।
এতো সুন্দর করে কেও কবিতা আবৃত্তি করতে
পারে তা মৌ এর কাছে না শুনলে জানতাম না ।
কি সুমধুর কন্ঠ ।কবিতার সুর এখনো আমার কানে বাজছে ।
মৌ :- কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন ।
আমি:- ভাবছি ,কি দিয়ে তোমার আবৃত্তির প্রশংসা করবো।
মৌ:- এতো প্রশংসা করতে হবে না ।
অনেক রাত হয়েছে এখন চলেন ঘুমোব ।
আমি:- এখনি না ,আর একটা শোনাও প্লিজ।
মৌ:- আজকে আর না, অন্য দিন শুনাবো ।
আজকে অনেক ঘুম পাচ্ছে ।
আমি:- সত্যি অন্য দিন শুনাবে তো।
মৌ:- তিন সত্যি, এখন চলুন তো ।
আমি:- ঠিক আছে চলেন কবি সাহেবা।
তারপর দুজনেই ঘুমিয়ে পড়লাম 🛌
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি মৌ মিট মিট করে হাসছে ।
আমি কিছু বলার আগেই ফ্রেশ হতে চলে গেল।হাসির কারণ টা বুঝলাম না ।
বসে বসে ভাবছি তখন মৌ এসে চিন্তিত দেখে বললো ।
.
মৌ:- কি ভাবছেন এভাবে ।
আমি:- ভাবছি কালকে গল্প দিতে পারিনি
আমার পাঠক/পাঠিকারা আমার উপর খেপে আছে ।
মৌ:- ওরা জানে কালকে আপনার মন ভালো
ছিল না ।আপনার পাঠক/পাঠিকারা অনেক
ভালো ।এই পর্ব টা একটু বড় করে দিলেই হবে , বুঝছেন ।
আমি:- আমিত বুঝলাম কিন্তু পাঠক/পাঠিকারা কি বুঝবে ।
মৌ:- বুঝবে বুঝবে ওরা আপনার মতো পিচ্চি না।
আমি:- কিহ্ আমি পিচ্চি ।
মৌ:- হুম পিচ্চি নয়তো কী?
আমি:- কি পিচ্চিমি করছি আমি ।
মৌ:- বলছি কালকে রাতে আপনার লুঙ্গি কই ছিল ।
আমি:- হা হা মৌ তুমি কত বোকা, আমিত শোয়ার সময় লুঙ্গি পড়িইইইই( একি দেখছি আমি কালকে রাতে তো লুঙ্গি পরেই শুয়ে ছিলাম । শেষে কিনা একটা মেয়ের কাছে মানসম্মান হারালাম ।)
মৌ:- কি মিস্টার,রাতে তো শোয়ার সময় লুঙ্গি পড়েননি তাই না ।(মুচকি হেসে বলল মৌ)
আমি:- মজা নিচ্ছ ।
মৌ:- যা সত্যি তাই বলছি ।
.
আমি:- দিন একদিন আমারও আসবে ।সেদিন আমিও শোধ তুলব।
মৌ :- দেখা যাবে ।এখন যান ফ্রেশ হয়ে আসেন ।
তারপর আমি ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি মৌ খাবার নিয়ে রুমে এসেছে ।
তাই দুজনেই খাওয়া দাওয়া শেষ করলাম ।
শেষে মৌ কে বললাম ।
আমি:- মৌ আজকে আমাকে একটু অফিসে যেতে হবে ।
মৌ:- মা কি বলে ছিল আপনার মনে নেই ।
আমি:- কিন্তু খুব ইমার্জেন্সি ।
মৌ:- আমি কিছু জানি না, মার কাছে ফোন করে
তারপর বলছি ।
আমি:- মাকে বলতে হবে না ।আমি দুপুরে চলে আসবো।
মৌ:- সত্যি বলছেন তো ।
আমি:- হুম সত্যি বলছি ।
মৌ:- ঠিক আছে, দুপুরে বাসায় এসে খাবেন।
আমি:- ওকে
তারপর রেডি হয়ে । মৌ কে বিদায় জানিয়ে চলে আসি অফিসে ।
অফিসে এসে পড়লাম আরেক বিপদে ।
ওদের কান্ড দেখে আমার মাটির নিচে ঢুকে যেতে
ইচ্ছে করছিল ।
.
চলবে…..

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com