Breaking News

মন নিয়ে কাছাকাছি | পর্ব - ২৩



ওদেরকে এমনভাবে চেঁচাতে দেখে ইভান বলল,

"সমস্যা নাই। নিয়ে দিচ্ছি তোদের।"
মীরা দু'পাশে মাথা নাড়াতে নাড়াতে অসম্মতি জানালো। বলল,
"নিয়ে দেওয়া কথা না ভাইয়া। তোমরা এসব জিনিস কোনদিন কেনো না। সঠিক দাম জানো না। তাই বলে কি আমার সামনে আমার ভাইদের থেকে ডাকাতি করবে! অসম্ভব।"
মাহিমাও বলল,
"দুইটা স্কার্ফ আটশো টাকা! দিনেদুপুরে ডাকাতি পেয়েছেন নাকি?"
দোকানী লোকটা বলল,
"তাহলে আপনারাই বলেন কত দিবেন।"
মাহিমা একটু ভেবে বল,
"দেড়শো করে তিনশো। তার বেশি এক টাকাও না। দিলে দিবেন। না দিলে চলে যাব।"
আবির বিস্ময়ে রসগোল্লার মতো বড় বড় চোখে বোনের দিকে তাকাচ্ছে। এটা তার নিজের বোন! এখন ত মানুষের সামনে বোন পরিচয় দিতেও লজ্জা লাগছে। কোথায় আটশো আর কোথায় তিনশো! আবির মুখ লুকিয়ে ফেলে অন্য দিকে ঘুরে দাঁড়াল। জায়িনের চোখাচোখি হয়ে গেলে বোকা হাসি দিল। চোখ, মুখের ভঙ্গিমা করে বোঝালো, এটা তার বোন না। এটা কার বোন! নিশ্চয় হাসপাতালে চেঞ্জ হয়ে গিয়েছিল। জায়িন হেসে ফেলল। মুবিন হাঁ করে মাহিমাকে দেখছে। মীরাও মাহিমার সাথে সুর মিলিয়ে বলল,
"হ্যাঁ। এই স্কার্ফের দাম খুব বেশি হলে দেড়শোই হবে। এর বেশি হবে না।"
"না, আপু। এত কমে হবে না।"

মীরা বলল,
"এত কম কই? আপনার কি মনে হয় আমরা এই প্রথম স্কার্ফ কিনছি? তাই দাম জানি না। শুনুন এমন স্কার্ফ দিয়ে আমার ওয়ারড্রব ভরা। বিশ্বাস না হলে চলুন দেখাই।"
মাহিমা মীরার দিকে তাকিয়ে চোখে কিছু ইশারা করে বলল,
"আমরা যদি দেড়শো টাকা করে এমন স্কার্ফ এনে দিতে পারি তখন কিন্তু ফ্রি-তে দিতে হবে। আমাদের কলেজের পাশের দোকানেই এমন স্কার্ফ কত দেখেছি।"
ইভান ওদের কথাবার্তা শুনে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। ইভা মুখ টিপে হাসছে। মেয়েগুলো কী ভীষণ বিচ্ছু!
"আপু আর একটু বাড়িয়ে দিলে হয় না? ভাইয়া আপনি কিছু বলুন।"
মাহিমা জবাব দিল,
"ভাইয়া কী বলবে? ভাইয়া কি বুঝে নাকি? আমার ভাইয়েরা এত সহজসরল ওদেরকে আপনারা যা বলবেন তা-ই মেনে নিবে।"

"তাহলে আপু সত্যিই এই দামে দেওয়া যাচ্ছে না।"
মীরা মাহিমার হাতে মৃদু চাপ দিল। তারপর বলল,
"ঠিক আছে। দুশো করে চারশো। দুটাতে পঞ্চাশ করে একশো টাকা বাড়িয়েছি। আর এক টাকাও বাড়াব না। দিলে প্যাক করুন। নয়তো ভাইয়া চলো। অন্য দোকান দেখি।"
মীরা মাহিমা ইভানের হাত ধরে ওকে টেনে নিয়ে চলে যাচ্ছে। মনে মনে এক দুই গুনছে। মাহিমা ফিসফিস করে বলল,
"এখনই ডাকবে। দেখে নিও।"
মাহিমার কথা সত্যি হলো। লোকটা সত্যিই পেছন থেকে ডাকলো।
"আচ্ছা আপু, নিয়ে যান। রাগ করবেন না।"
মীরা, মাহিমা বিজয়ের হাসি হাসল। আবির, ইভান, মুবিন তিনজনই বাকরুদ্ধ। আটশো টাকার জিনিস চারশো টাকায় দিয়ে দিচ্ছে! তাদের কাছে তো আটশোও কম মনে হয়েছিল। ছেলেদের থেকে এভাবেই ডাকাতি করে তাহলে! ওরা ফিরে গেল। ইভান টাকা দিল। মীরা মাহিমা দুই ব্যাগ দু'জন হাতে নিয়ে মুখ চাওয়াচাওয়ি করে হাসলো। আসার সময় দোকানী ইভানকে বলল,
"ভাইয়া এর পর থেকে কিছু নিতে এলে ওদের নিয়ে আসবেন না প্লিজ। এক টাকাও লাভ করতে দিল না।"
ইভান হাসলো। আবিরের বিশ্বাসই হচ্ছে না। সে বারবার দোকানী লোকটাকে গালি দিচ্ছে।
"তোরা না থাকলে শালা আমাদের সাথে সত্যিই আজ ডাকাতি করত। আমি তো আটশো দিয়েই নিয়ে নিতাম।"
মুবিন এতক্ষণে মুখ খুললো।
"আমি কল্পনাও করিনি লোকটা এত কমে দিয়ে দিবে।"
মীরা বলল,

"কম না মুবিন ভাই। এগুলোর দাম এতই। বড় দোকানে আছে বলে দাম বেড়ে গেছে। ছোট দোকান থেকে নিলে এর কমেও নেওযা যাবে। জিনিস একই কিন্তু।"
"হুম। সেটাই তো দেখছি।"
আবির বলল,
"তোরা এত দরদাম করা কীভাবে শিখেছিস?"
মাহিমা গৌরবের সাথে বলল,
"মেয়েদের এসব শিখতে হয় না ভাইয়া। মেয়েরা এসব গুণ জন্ম থেকেই নিয়ে আসে।"
"আজকের পর থেকে আমার সব জামাকাপড় তোরা কিনবি। আমি টাকা দিয়ে দিব। তোরা আমার জন্য নিয়ে আসবি। বাকি যত বাঁচবে তার থেকে অর্ধেক তোদের। পারবি না?"
মীরা মাহিমা একসাথে বলল,
"অবশ্যই।"
ইভা হাসতে হাসতে বলল,
"তোমরা ভাইবোনরা কি সমসময় এরকম ছিলে? মানে ছোট থেকেই এমন।"
আবির ইভার দিকে তাকিয়ে সুন্দর করে হেসে বলল,
"অবাক হচ্ছেন ভাবী? শবে তো শুরু। আমাদের সাথে থাকুন বেশি না এক মাসেই আপনাকেও আমাদের মতো বানিয়ে ফেলব।"

ইভান এদিক ওদিক খুঁজতে খুঁজতে বলল,
"তনি, প্রিয়া ওরা আবার কোথায় গেল?"
"আমি খুঁজে আনছি।"
বলেই মীরা ছুটে কোথাও চলে গেল। ইভান পেছন থেকে ডাকলো।
"পরে আবার তোকে কে খুঁজতে যাবে।"
"আমি খুঁজে আনছি ভাইয়া।"
মাহিমাও কারো কথা না শুনে চলে গেল। এদের কাণ্ড দেখে ইভান নিরাশ হয়ে বলল,
"ওদেরকে নিয়ে কোথাও বেরিয়ে সহিসালামত বাড়ি ফিরিয়ে নেওয়া পৃথিবীর কঠিনতম কাজগুলোর মধ্যে একটা।"
জায়িন পকেট থেকে ফোন বের করে ইভার কাছে এসে বলল,
"আমি একটু আসছি।"
জায়িন ফোন কানে নিয়ে ওদিকে চলে গেল। এখানে কি ওরা দাঁড়িয়ে থাকবে? আবির বলল,
"ভাবী আপনার তো কেনাকাটা শেষ হয়নি। চলুন দেখি আপনিও কেমন দামাদামি করতে পারেন।"
মুবিন বলল,
"আপু পানি খাবে?"
"খাওয়ালে সওয়াবের কাজ হতো।"
"আচ্ছা আমি নিয়ে আসছি।"

তনি আপুরা কোথায় গেছে? পুরো মল জুড়ে দুই চক্কর লাগিয়ে ফেলেছে। তবুও ওদের দেখা পাচ্ছে না। মীরা এই দোকান, ওই দোকান খুঁজতে খুঁজতে এগোচ্ছিল। একটা ছেলে হাতে সেল্ফি স্টিক ধরে পেছন দিকে হাঁটতে হাঁটতে আসছে। মীরা আগে খেয়াল করেনি। একটুর জন্য ছেলেটা এসে ওর সাথে ধাক্কা খেতো। কিন্তু তার আগেই কেউ মীরার হাত ধরে টেনে নিল। মীরা তাকিয়ে দেখল জায়িন ভাই। ছেলেটা জায়িনের সাথে ধাক্কা খেয়ে সরি টরি বলে একাকার করে ফেললো। জায়িন রাগলো না। শান্ত অথচ কেমন ধমক মেশানো গলায় ছেলেটাকে বলল,
"শপিংমলে ব্লগ করার জায়গা? ব্লগ করার জন্য পার্ক, রেস্টুরেন্টে আরও অনেক জায়গা আছে।"
ছেলেটা কাচুমাচু মুখে বলল,
"সরি ভাইয়া। আমি আপুকে দেখিনি। সরি আপু। ভাইয়াকে বলুন না আমাকে যেন ক্ষমা করে দেন।"
ছেলেটাকে এত করে ক্ষমা চাইতে দেখে মীরার মন গলে গেল। সে হেসে বলল,
"সমস্যা নেই ভাইয়া। ভুল মানুষেরই হয়।"
"তারপরও সরি আপু। ভাইয়া আপনার অনেক কেয়ার করে। তাই হয়তো রেগে গেছেন।"
মীরা মুখ মুচড়ে মনে মনে বলল, কেয়ার না কচু করেন। মানুষকে ধমকে উনি মজা পান। জায়িন কঠিন চোখে ছেলেটার দিকে তাকালে সে এখান থেকে কেটে পড়লো। ছেলেটা চলে গেলে জায়িনও চলে যেতে নিল। মীরা ওর পিছু নিয়ে বলল,
"আপনি সবাইকে এমন ধমকান কেন? ছেলেটা আপনাকে কতটা ভয় পেয়েছে জানেন। বেচারা সরি বলতে বলতেই...

" ওই ছেলের জন্য খুব মায়া হচ্ছে!"
"হবে না? ওই ছেলের জায়গায় যে কেউ থাকলেও হতো। কীভাবে সরি বলছিল। আপনি সবসময় এমন গম্ভীর থাকেন বলেই আপনাকে বয়সের থেকেও বেশি বুড়া লাগে। আপনি তো আবির ভাইয়ার সমান হবেন। কিন্তু আপনাকে আমার বাবার বয়সী লাগে। কেন জানেন?"
জায়িন থেমে গিয়ে কঠিন চোখে মীরার দিকে তাকাল। মীরা কিছুটা ভয় পেলো। কিন্তু সেটা প্রকাশ করলো না। এই লোককে ভয় পাওয়ার কী আছে? ইনি কি তার গার্জিয়ান? টিচার? নাকি বড় ভাই? এলাকার বড় ভাই। মুখে মুখে ভাই ডাকে শুধু। উনাকে ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই।
"শুনুন জায়িন ভাই, আপনি তো ডাক্তারি পড়ছেন। তাহলে নিশ্চয় এই কথাটা জানার কথা। হাসলে মানুষের মন ভালো থাকো। শরীর স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। আপনিও এখন থেকে হাসার চেষ্টা করবেন। স্বাভাবিক মানুষের মতো হাসতে না পারলেও অস্বাভাবিক মানুষের মতো সারাবছর মুখটাকে বাংলার পেঁচার মতো করে রাখবেন না। আমি কত হাসি দেখেন। সেজন্য কি আবার বাবার সম্পত্তি কমে গেছে? কমেনি, না? আপনি হাসলেও আপনার বাবার সম্পত্তি কমে যাবে না। বরং হাসলে আপনাকে সুন্দর দেখাবে। মানুষ অযথাই আপনাকে ভয় পাবে না।"
শপিং শেষে বের হয়ে প্রিয়া জোরাজুরি শুরু করলো সে ফুচকা খাবে। তনিরও মত আছে দেখে আবির উৎসাহ নিয়ে বলল,
"শুধু তুমি একা খাবে না। আমরা সবাই খাবো।"
মীরা মাহিমা একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করে মুখ বাঁকাল। ওদের মুখ বাঁকানো জায়িন, মুবিন দু'জনেরই নজরে পড়ল। রাস্তার পাশেই ফুচকা স্টল। ইভা আপুও দলটার সাথে ভিড়ে যাওয়ায় মুবিন জায়িন চলে যেতে পারছে না। তারপরও জায়িন চলে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু আবির যেতে দিল না।
"দূর শালা! কয়দিন পর বিয়াই হবি এখন তোর ভাব দেখার সময় আছে নাকি।"
তনি, প্রিয়া ঝাল দিয়ে ফুচকা খাবে। ইভার ঝাল পছন্দ না। আবির সবার পছন্দ জেনে সবার জন্য এক প্লেট করে ফুচকা দিতে বললে মীরা নাক উঁচিয়ে বলল,
"আমি ফুচকা খাই না।"
মাহিমা মুখ বাঁকিয়ে বলল,
"আমিও না।"

চলবে...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com