Breaking News

মন নিয়ে কাছাকাছি | পর্ব - ২২

বিয়ের যেহেতু আর বেশিদিন বাকি নেই তাই এখনই শপিং সেরে ফেলা উচিত। বড় ফুপুও চলে এসেছে। মীরা মাহিমা আজই শপিংয়ে যাবার জন্য বায়না ধরেছে। ওরা শপিংয়ে যাচ্ছে শুনে বড়মা বলল,

"তোরা যাচ্ছিস তাহলে ইভাকেও সাথে নিয়ে যা। বিয়ের শাড়ি ও নিজেই পছন্দ করে নিবে। কেনাকাটার ঝামেলা এক বারেই চুকিয়ে ফেল।"
এটা তো আরও ভালো প্রস্তাব। বিয়ের শাড়ি ইভার আপুর সাথে ওরা সবাই পছন্দ করে কিনবে।
বড়মা ইভাদের বাড়িতে কল করে জানিয়ে দিল, ছেলেমেয়েরা আজ কেনাকাটা করতে যাচ্ছে।
ইভাও যেন ওদের সাথে যায়।
বাড়িতে প্রথম বিয়ে। সবাই প্রচুর কেনাকাটা করবে।
তাই বেরুবার জন্য সকাল সকাল সবাই রেডি হয়ে গেল। নইলে পরে ফিরতে রাত হবে।
সবাই বেরিয়ে গেলেও মীরা এখনও আসছে না দেখে আবির ডাকলো।
"মীরাবাঈ তোমাকে ফেলেই কিন্তু চলে যাব। তখন ঘরে বসে অনলাইনে শপিং কোরো।"
"আসছি আবির ভাই। এক মিনিট।"
মীরা কানের দুল পরতে পরতে দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে নামছে। ওদের কাছে এসে কানের দুল পরা শেষ করে জিজ্ঞেস করল,

"মাহি আসেনি?"
"অলরেডি শপিংমলে গিয়ে বসে আছে। তুই আরও দেরি কর।"
"সরি সরি। তাড়াতাড়ি চলো।"
গাড়িতে বসে প্রিয়া ইভানকে জিজ্ঞেস করল,
"ভাবীকে ওদের বাড়ি থেকে পিক করবে না ইভান ভাই?"
"তার দরকার হবে না। ও মাহির সাথে অনেক আগেই চলে গেছে।"
মাহি ইভা আপুর সাথে গেছে শুনে মীরা মুখ কালো করে বলল,
"কইতরিটা অনেক খারাপ। স্বার্থপর একটা।"
তনি মীরাকে ক্ষেপাতে বলল,
"দেখ এটাই বোন+বান্ধবী! তোকে রেখে একা একা চলে গেল। আমার বান্ধবী জীবনেও আমাকে রেখে যেত না।"
মীরাও তনি আপুর উসকানি না বুঝে রেগে বলল,
"ওটা আমার বান্ধবী না। আমার শত্রু।"
মীরার কথা শুনে সবাই হাসছে। এদিকে মীরার রাগ আরও বাড়ছে। আবির তনির সাথে খোঁচাখুঁচি করছে। প্রিয়া জানালা দিয়ে মাথা বের করে চোখ বুঝে রেখেছে। বাতাসে ওর চুল উড়ছে। ইভান স্বপ্নে ডুবে আছে। নিজের বিয়ের শপিংয়ে যাচ্ছে ভেবে কেমন অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে।
দশ মিনিটের মধ্যে ওরা শপিংমলে চলে এলো। সবাই হুড়োহুড়ি করে গাড়ি থেকে নামছে। ইভান সাবধান করলো। মীরা লাফ দিয়ে গাড়ি থেকে নেমেই মাহিমাকে দেখতে পেলো। মাহিমা ওদের কাছে এগিয়ে এলো। কাছে এসে দাঁড়াতেই মীরা ওকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে পিঠে এক কিল বসিয়ে দিয়ে বলতে লাগল,
"হারামির বাচ্চা আমাকে ফেলে চলে এসেছিস! তুই বান্ধবী নামে কলঙ্ক। আজ থেকে তুই আমার বোনও না। সব সম্পর্ক শেষ।"

ইভা দূর থেকে দাঁড়িয়ে মীরাকে ডাকলো। মীরা ওদিকে তাকিয়ে ইভা আপুর সাথে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটাকে দেখে চুপসে গেল। সে খেয়ালই করেনি জায়িন ভাই আর মুবিন ভাইও এসেছে। ওরা কাছেই দাঁড়িয়ে আছে। আবির জায়িনকে দেখে হৈচৈ জুড়ে দিল।
"আরে আরে, কাকে দেখছি আমি! কে এসেছে এইটা? কীভাবে এলি রে তুই? আগে জানলে আমি ফুল বিছিয়ে তোকে স্বাগত জানানোর ব্যবস্থা করতাম।"
জায়িন আবিরের ধরা হাতে চাপ বাড়াতে বাড়াতে নিচু গলায় বলল,
"গার্লফ্রেন্ড সাথে আছে বলে ওভার অ্যাক্টিং করছিস শালা! সবাইকে জানিয়ে দিব?"
আবির চোখ পাকিয়ে তাকালো। ওদেরকে ফিসফাস করতে দেখে ইভা বলল,
"জায়িন তো আসতেই চাচ্ছিল না। ওর নাকি কিছু কিনতে হবে না। সব আছে। আমি জোর করে নিয়ে এসেছি। মুবিনই ভালো। ওকে আমার জীবনেও জোর করতে হয় না।"
আবির বলল,
"আরে ভাবী বুঝো না। ডাক্তার মানুষ ভাবসাবই বেশি। এখন কী আর ও আমাদের পাত্তা দিবে!"
"তাই! এখন কিন্তু তোর আর তনির রিলেশন বাড়িতে জানাতেই হবে। ইভান ভাইয়ের পরেই তো তোদের পালা।"

"চুপ কর শালা। সবাইকে তো জানিয়েই দিচ্ছিস।"
"তোর ভাইয়ের শালা হচ্ছি। তুই তো মামার সম্পদের উপর নজর দিয়ে রেখেছিস।"
"আমার অনেকগুলো বোন আছে। আমি তোর শালা হবো। তবুও চুপ কর বাপ। এখন জানালে প্রবলেম হবে।"
ওদের গোপন আলোচনা শেষ হয়েছে। ইভান এতক্ষণ ইভার সাথে কথা বলছিল। জায়িনকে দেখে বলল,
"কেমন আছেন ডাক্তার সাহেব?"
জায়িন মৃদু হেসে বলল,
"আলহামদুলিল্লাহ দুলাভাই।"
এই লোকও রসিকতা করতে পারে! মীরা আড়চোখে জায়িনকে দেখল। দেখো দেখো, হাসছেও আবার! ওরে হাসছিস যে এজন্য জরিমানা হবে না তোর? গোমড়ামুখে পেঁচা। ইভান মুবিনের সাথেও দুষ্টুমি করছে।
"মাস্টার সাহেবের মাথা এখনও ঠিক আছে? আপনার ছাত্রী কিন্তু আমাদের মাথা খারাপ করে ফেলে। এই প্রথম আপনিই কীভাবে টিকে গেলেন বুঝতে পারলাম না।"
এখন এসব কথা বলার কোন দরকার আছে? ইভান ভাইও না! অসহ্য। আবির ওদেরকে তাড়া দিয়ে ভেতরে নিয়ে চলে এলো।
"গল্প করার সময় জীবনে অনেক পাবে। কিন্তু তার জন্য দেখতে হবে আজ জীবন নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারো কি-না। যে বাহিনীর সাথে এসেছো! একটা দিনে ওদের কিছুই হবে না।
.
দুই ঘন্টা ধরে ঘুরে পুরো মলে ত্রিশ চক্করের বেশি লাগিয়ে মাত্র দু'জনের কাপড় কেনা হলো। সেটাও বিয়েতে পরার জামা না। এমনিতেই পছন্দ হয়েছে তাই নিয়েছে। এভাবে সারাদিন ঘুরলেও কারো কোন ড্রেসই পছন্দ হবে না। তাই ইভান এক দোকানে গিয়ে সবার জন্য হলুদের কাপড় বের করতে বলল। নাক উঁচু বোন গুলোকে বলে দিল,
" হলুদের জন্য যার যে শাড়ি পছন্দ এখান থেকেই নিতে হবে। আর একটা দোকানও ঘোরা যাবে না।"
ওরা নিজেরা যেটা নিচ্ছে এটা পছন্দ হচ্ছে না। কিন্তু অন্যেরটা ঠিকই পছন্দ হচ্ছে। যেমন মীরা যে শাড়ি নিতে চাচ্ছে এটা তার ভালো লাগছে না। কিন্তু মাহিমার ঠিকই ভালো লাগছে। আবার মাহিমার ক্ষেত্রেও সেইম। আবির ওদের এই কাণ্ড দেখে দু'জনের হাত থেকে শাড়ি দু'টো নিয়ে মীরারটা মাহিমাকে আর মাহিমারটা মীরাকে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
"নিজেরটা ভালো লাগছে না। ওরটা লাগছে তাহলে অদলবদল করে নে। এই সহজ কথাটা মাথায় ঢুকছে না?"
মীরা মাহিমা মুখ কালো করে আবিরের দিকে তাকাল। পরক্ষণেই নিজেদের আগের শাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে বলল,
"না, আমারটাই ঠিক আছে। আমি এটাই নিব।"
আবির জায়িনের দিকে তাকিয়ে বলল,
"দেখলি, মাইয়া জাতি কী চায় এটা ওরা নিজেরাই জানে না। আবার আশা রাখে আমরা ওদের মন বুঝমু! কেন ভাই? পুরুষগো এত ঠেকা কিসের!"

হলুদ আর বিয়ের দিনের কেনাকাটা শেষ। তবে এখনও আরও বাকি আছে। রিসিপশন, মেহেদি আরও যে যে দিন বাকি আছে। আবার মামা মামী, বাড়িতে যে ছোট দু'জন সদস্য আছে তাদের জন্যও কিনতে হবে। বলতে গেলে এখনও সবই বাকি। সকালে বেরিয়েছিল। এখন দুপুর গড়াচ্ছে। ক্ষিদেয় সবার পেট চুঁচুঁ করছে। পেট শান্তি করে তারপর এসে বাকি কেনাকাটা করা যাবে। ওরা বেরুতেই যাচ্ছিল তখন খেয়াল হলো মীরা মাহিমা সাথে নেই। কোথায় গেল ওরা? একটু খোঁজাখুঁজি করে দু'জনকে অন্য একটা দোকানে পাওয়া গেল।
না বলে চলে আসায় তনি ওদের ধমকাচ্ছে।
"গাধা গুলা না বলে চলে এসেছিস কেন? তোদের না পেয়ে জান যাচ্ছিল। বলে আসতে পারলি না?"
ইভান বলল,
"আচ্ছা থাক। বুঝতে পারেনি। আর এমন করিস না কেমন?"
মীরার পার্পল কালারের একটা স্কার্ফ পছন্দ হয়েছে। সে অনেকক্ষণ ধরে এমনই একটা স্কার্ফ খুঁজছিল। অবশেষে পেয়েও গেল। কাঙ্ক্ষিত জিনিসটা চোখের সামনে দেখে মীরা তনির বকাও গায়ে মাখলো না। সে বলে উঠল,
"ইভান ভাই আমাকে পার্পল কালারের ওই স্কার্ফটা কিনে দাও।"
"কোনটা? ওইটা?"
"হ্যাঁ।"
আবির মাঝখানে ফোঁড়ন কেটে বলল,
"পার্পল রানী! এই তোর বেশির ভাগ জামাকাপড়ই তো এই কালার। নতুন কোন কালারকে সুযোগ দে। এইটার চক্করে বাকিদের বঞ্চিত করে পাপ কামাই করছিস কিন্তু।"
মীরা মুখ মোচড়াল। ইভান দোকানদারকে স্কার্ফটা দিতে বলল। মাহিমাও মীরার সাথে জোড়া ধরে বলল,
"আমিও এমন নেব।"
"বলতে লেট করে ফেললি যে! তোর অপেক্ষাতেই ছিলাম।
আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম তোরা দুইটা যে যমজ।"
ওরা শপিংমলে আছে নাকি বাসার ড্রয়িংরুমে আছে তা কে বলবে!
একটু আসছি বলে তনি, প্রিয়া দল ছাড়া হয়ে অন্যদিকে ঘুরে দেখছে।
ইভা এই চার ভাইবোনের খুনসুটি দেখছে। মুবিন, জায়িনকেও বাধ্য হয়ে থাকতে হচ্ছে।
জায়িন ইভাকে বলেছিল,
"আমি একটু আসি। তোমাদের শেষ হলে আমাকে কল করো।"
কিন্তু ইভা ওকে নড়তে দিল না। বড় বোনের অধিকারের অপব্যবহার করে বলল,
"চুপচাপ আমার পেছন পেছন ঘুরবি। আমার ব্যাগ ক্যারি করবি। ওদেরকে দেখ, কী সুন্দর বোনদের পছন্দের জিনিস কিনতে দশ দোকান ঘুরছে। ধৈর্য নিয়ে পছন্দ করে দিচ্ছে। একটুও বিরক্ত হচ্ছে না। নিজের বন্ধুকে দেখে শেখ কিছু।"
দোকানী দুইটা স্কার্ফের দাম চারশো করে আটশো টাকা চেয়েছে। ইভান মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করতে গেলে মীরা মাহিমা চোখ বড় বড় করে সমস্বরে প্রায় চেঁচিয়ে বলল,
"কিহ! দুইটা স্কার্ফের দাম আটশো টাকা!"

চলবে....

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com