Breaking News

মন নিয়ে কাছাকাছি | পর্ব - ২৮



জায়িনের পরনে সাদা পাঞ্জাবি। বাম হাতে সবসময়ের মতো একটা ঘড়ি। খুব সিম্পল লুক। তবুও দূর থেকে জায়িনকে গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মাহিমা গদগদ গলায় মীরাকে বলল,

"জায়িন ভাই কি দিনদিন আরও হ্যান্ডসাম হচ্ছে রে মীরা? লোকটা মনে হয় এলাকার সবগুলো মেয়েকে পাগল করে তবেই শান্ত হবে।"

মীরার চোখও জায়িনের উপর পড়েছে। কিন্তু মাহিমাকে জায়িন ভাইয়ের উপর দুই নাম্বারি নজর দিতে দেখে পিঠে দুম করে কিল বসালো।
"যাকে তাকে দেখেই গলে যাস না। হতে পারে ভবিষ্যতে গিয়ে সম্পর্ক উল্টেপাল্টে গেছে।"
মাহিমা বিরক্ত চোখে মীরার দিকে দেখল। চুল নষ্ট হয়েছে কিনা দেখতে দেখতে বলল,
"দুনিয়ার কাউকে নিয়ে তোর সমস্যা নেই? জায়িন ভাইয়ের কথা এলেই তোর বদহজম শুরু হয়। কেন রে?"
"না জেনে ভবিষ্যত ভাসুরের উপর নজর দিচ্ছিস। বদহজম হবে না তো কী করবে? ওদিকে ছোট ভাই তার উপর লাড্ডু হয়ে আছে। এদিকে সে বড় ভাইয়ের উপর হারাম দৃষ্টিতে দেখছে।"
"কী বিড়বিড় করছিস? ইদানীং খুব বেশি বিড়বিড় করিস।"
"তুই জায়িন ভাইকে মাথা থেকে বের করে চোখ মেলে আশেপাশে দেখ। তোকে দেওয়ার জন্য কত মজনু হৃদয় খুলে হাতে নিয়ে বসে আছে।"

মাহিমা জবাব দেওয়ার সুযোগ পেলো না। তনি ওদের ধাক্কা দিয়ে জায়িনের দিকে এগিয়ে গেল।
"ওহ-হো হিরো! আজ আমার ছোপা রুস্তম নিজের ফর্মে বেরিয়ে এসেছে। আগুন লাগছিস বেটা।"
জায়িন হাসলো। তনির দিকে তাকিয়ে চোখ বাঁকিয়ে বলল,
"বাংলায় আগুন বললি তাতে কিন্তু অপরাধ হবে না। কিন্তু আমি তোকে হট বললেই তোর বয়ফ্রেন্ড আমাকে মারতে আসবে।"
"মোটেও না। হট একটা মেয়েকে হট না বললেই বরং অপরাধ হবে।"
তনির সাথে ফ্লার্ট করে অন্তত কেউ পারবে না। জায়িন তো তার বন্ধু। অচেনা একটা ছেলের সাথেও তনি এরকম ভাবেই কথা বলবে।
"তোর বয়ফ্রেন্ড এরকম সুন্দরী একটা গার্লফ্রেন্ড রেখে কোন মেয়ের পেছনে ঘুরছে?"
"ঘুরুক, মরুক যা খুশি করুক। ওর কপালে আমি ছাড়া আর কেউ নেই।"
ইভা জায়িনের সামনে এসে দু'হাতে লেহেঙ্গা মেলে ধরে বলল,
"আমাকে কেমন লাগছে?"
জায়িন বোনকে দেখে মৃদু হেসে জানাল,
"ইভান ভাই হার্ট অ্যাটাক করবে।"
"যাহ!" ইভা লজ্জা পেলো। জায়িনও এমন মজা করবে আশা করেনি। আবির এখনও পৌঁছায়নি। ইভা তনিকে জিজ্ঞেস করল,

"তোমরা আমাদের সাথে যাবে? আবিরের আসতে কতক্ষণ?"
"জানি না। একঘন্টা আগে বলেছে রাস্তায় আছে। তার রাস্তা এখনও শেষ হচ্ছে না।"
জায়িন আবিরকে কল করল। আবির ত্রিশ মিনিট ধরে জ্যামে আটকা পড়ে বসে আছে। আরও ত্রিশ মিনিটেও জ্যাম ছুটবে কি-না সন্দেহ। তাই ওদেরকে জায়িনের সাথে চলে যেতে বলল।
"এক গাড়িতে সবার জায়গা হবে?"
জায়িন দেখল ইভা আপুকে নিয়ে পাঁচ জন। পাঁচজন যাওয়া যাবে জানালে আবির বলল,
"তাহলে তুই ওদেরকে নিয়ে কমিউনিটি সেন্টারে পৌঁছা। আমি পেছনে আসছি।"
"হুম।"
তনি সামনে জায়িনের পাশে বসেছে। বাকিরা ঠেলাঠেলি করে পেছনে উঠেছে। মাহিমা হিল জুতা দিয়ে মীরার পায়ে পাড়া দিলে মীরা চিৎকার করে উঠে মাহিমাকে মারতে লাগলো।
"আল্লাহ! মোটির বাচ্চা আমাকে মেরে ফেলল। হাতির বাচ্চা চোখে দেখিস না। আমার পা পিষে ফেলেছিস। উফ, আল্লাহ।"

মাহিমা দেখে পাড়া দেয়নি। তবুও অপরাধী হয়ে বলতে লাগল,
"সরি সরি। সরি রে। আমি দেখিনি সত্যি।"
"তোর সরি দিয়ে আমি আচার দিব খবিশ! তোর সরি তুই নিজের কাছে রাখ।"
"সরি বলছি তবুও মানছিস না। এখন কিন্তু আরেকটা পাড়া দিব।"
"আর আমি তোকে লা'থি দিয়ে গাড়ি থেকে বের করে দিব।"
"গাড়ি তোর? তুই আমাকে বের করার কে?"
মুহূর্তে এদের ঝগড়া লেগে যাওয়া দেখে জায়িন হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল। সামান্য একটা ব্যাপারে এরকম ঝগড়া! তা-ও এরা নিজেদের বেস্ট ফ্রেন্ড দাবী করে! তনি এদের ক্যাঁচক্যাঁচানিতে অসহ্য হয়ে বলল,
"তোরা চুপ না করলে দু'টাকেই গাড়ি থেকে বের করে দিব। ফেলে চলে গেলে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ঝগড়া করিস।"
একেতো মীরা পায়ে ব্যথা পেয়েছে। তনি আপু উল্টো তাকেই বকছে। মীরা অভিমানী গলায় বলল,
"ফেলে চলে যাও। আমি হেঁটে যাব। না যেতে পারলে এখানেই বসে থাকব।"

মীরাকে মন খারাপ করতে দেখে মাহিমা নিজের ভুল বুঝতে পারল। এমনকি তনি আপু মীরাকে কেন বকেছে এজন্য তনিকে বলতে লাগল,
"মীরাকে রেখে গেলে আমিও তোমাদের সাথে যাব না। চল মীরা আমরা গাড়ি থেকে নেমে যাই।"
তনি কপাল চাপড়াল। যার জন্য করলো চুরি সে-ই বলে চোর! তনির অবস্থা কিছুটা এরকম। ওদের ঝগড়া থামানোর জন্যই দুইটাকে ধমক দিয়েছিল।
"তোদের ঝগড়ার মাঝে কথা বলে জীবনের সবথেকে বড় ভুলটা করে ফেলেছি বোন। আমাকে ক্ষমা কর। তবুও গাড়ি থেকে নেমে যাস না। আজ ইভান ভাইয়ের বিয়ে। মনে আছে তো?"
মীরা মাহিমা ঝগড়া করেও মিলে গেছে। মাঝখানে তনি ভিলেন হয়েছে। ইভা এদের কাণ্ড দেখে হাসলো। গাড়িতে বসে পুরোটা পথ মীরা মাহিমা সেল্ফি তুলে গেছে। সাথে ওদের ননস্টপ বকবকানি। জায়িন ড্রাইভ করতে করতে আড়চোখে বার কয়েক রিয়ারভিউ মিররে তাকিয়েছে। খুব অল্প সময়ের জন্য দেখে সামনের রাস্তায় দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে।
....
মুবিন মাহিমাকে দেখে স্থান, কাল, পরিস্থিতি ভুলে হাঁ করে দেখতেই থাকলো। মাহিমা গাধী মীরাকে ঠেলা দিয়ে বলল,

"দেখ দেখ! কীরকম হ্যাংলার মতো তাকিয়ে আছে।"
মীরা এই গাধার গাধামিতে বিরক্ত হয়ে বলল,
"হ্যাংলা, গাধা, ঘোড়া, পাঠা যা খুশি ডাক। তোর অধিকার আছে।"
"ডাকবোই তো। দুলাভাই বলে কথা!"
এই গাধীটা কি এখনও কিছু বুঝতে পারছে না? মুবিন ভাইয়ের হাবভাব বুঝেছে। কিন্তু সেটা যে মীরার জন্য না এটা বুঝতে এত সময় লাগছে কেন? এমনিতে তো ক বলার আগে কলকাতা বুঝে যায়। শুধু মুবিন ভাইয়ের মনটাই বুঝছে না।
"কিরে কোথায় ডুবে গেলি?"
"গভীর ভাবনায়।"
"অত ভাবতে হবে না। ভাবাভাবি সাইডে রেখে প্রপোজ করলে ফট করে হ্যাঁ বলে দিবি।"
"মুবিন ভাইকে তোর কেমন লাগে?"
"ভালোই। কিউট। জায়িন ভাইয়ের মতো এতটাও হ্যান্ডসাম না হলেও চলে।"
মীরা রেগে বলল,
"এখানে জায়িন ভাই কোত্থেকে এলো? কথা তো হচ্ছে মুবিন ভাইকে নিয়ে।"
মাহিমা মীরার রাগের অন্য মানে ধরে নিয়ে বলল,
"আচ্ছা বাবা মুবিন ভাইও হ্যান্ডসাম। চেহারা সুরত লম্বা চওড়া পড়াশোনা সবদিক দিয়েই পারফেক্ট।"
"এমন পারফেক্ট একটা ছেলে প্রপোজ করলে তুই রাজি হবি?"
মাহিমা ভাবছে মুবিন ভাই প্রপোজ করলে মীরা এক্সেপ্ট করবে কি-না সেটা জানতে চাচ্ছে। তাই মাহিমা কিচ্ছু না ভেবে বলে বসল,
"অবশ্যই। কেন করব না? কী কমতি আছে মুবিন ভাইয়ের মাঝে? আজকাল এমন ছেলে পাওয়া যায়?"
মীরা ঠোঁট বাঁকিয়ে রহস্যময় হাসলো।
"কথাটা মনে রাখিস। ভুলে গেলে খবর আছে।"

জায়িন মেয়েদের ভীড়টার মাঝে একজনকে খুঁজছে। অনেকক্ষণ ধরে দেখছে না। কোথায় গেল? কয়েকজন গেস্টকে অ্যাটেন্ড করতে তাকে যেতে হয়েছিল। নইলে চোখে চোখেই রেখেছিল। এখন এসে খুঁজে পাচ্ছে না।
"কাকে খুঁজছিস রে?"
তনির কথায় জায়িন চোখ বন্ধ করে ছোট্ট করে দম ফেলল। তনিটার ভুল জায়গায় ভুল মুহূর্তে টপকে পড়ার অভ্যাসটা এখনও পাল্টালো না। জায়িন ঘুরে তাকাল। তনি কৌতূহলে চিকচিক করা চোখে জায়িনের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
"কোন মেয়েকে দেখছিলি, না? হ্যাঁ। মেয়েকেই দেখছিলি। কোন মেয়েটা রে? আশেপাশে এত সুন্দর সুন্দর মেয়েরা ঘুরছে। এক আধটা তো পছন্দ হয়ে যাওয়ারই কথা। কোন মেয়েটা আমাকে দেখা না। শুধু কি চোখে চোখেই মন দেওয়া নেওয়া করে বসে আছিস? নাকি কথাও এগিয়েছিস? তুই না পারলে আমাকে বল। আমি মামলা সেট করে দিব।"
জায়িন তনির কথার কোন গুরুত্বই দিল না। বরং তনিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে চলে যেতে নিলে তনি পথ আটকে দাঁড়াল।
"চোরের মতো পালিয়ে যাচ্ছিস কেন চোর? বল কোন মেয়েকে দেখছিলি?"
তনি ঠোঁট কামড়ে সরু চোখে জায়িনের দিকে তাকাল। জায়িনও এমন মজা করতে শিখে গেছে দেখে হাসল। জায়িনের পেটে চিমটি কেটে বলল,
"আমার কোনো বোনকে দেখলে আমি এক্ষুনি তোদের দুইটাকে ধরে বিয়ে দিয়ে দিতাম।"
জায়িন মনে মনে হাসলো। তনি নাছোড়বান্দা। তাগাদা দিতেই লাগল,
"মেয়েটা কে বল না। এমন করছিস কেন? আমাকে বন্ধু মনে করিস না?"
"তনি প্লিজ জ্বালাস না। কোন মেয়েকে দেখব?"
"মেয়ে না দেখলে মহিলাদের দেখছিলি লু'চ্চা?"
জায়িন তনির দিকে ঝুঁকে এসে গলা খাদে নামিয়ে বলল,
"কাকে দেখছিলাম শুনবি?"
তনিও কৌতূহলী হয়ে আরও ঝুঁকে এসে। নিচু গলায় বলল,
"হুম। বল বল।"
"মাইন্ড করবি না বল।"
"মাইন্ড করব কেন? আমার মতো ফ্রি মাইন্ডের মেয়ে তুই আরেকটা খুঁজে পাবি!"
"ঠিক আছে, শোন তাহলে।"
"হুম। বল।"
"বলছি।"
"বল।"
"তোর বোনকে।"
তনি কটমট করে জায়িনের দিকে তাকিয়ে ফুঁসতে লাগল। জায়িন হেসে ফেলল। তনি রেগেমেগে জায়িনের চুল এলোমেলো করে দিয়ে বলল,
"মর শালা। তোর কপালে মেয়ে নাই। সিঙ্গেলই মরবি তুই।"
তনি চলে গেলে জায়িন গম্ভীর হলো। সে সত্যিই বলেছে। কিন্তু তনি মরে গেলেও তার কথা বিশ্বাস করবে না। আবির, তনির এই বিশ্বাসটাই জায়িনের পায়ে শেকল হয়েছে। তার উপর এত বিশ্বাস কেন? এই বিশ্বাস ভাঙলে ওরা কি জায়িনকে ক্ষমা করবে?

চলবে....

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com