তোর শহরে প্রেম । পর্ব - ১১

অনু সামনের দিকে তাকিয়ে বলে, প্লিজ আমার ওড়নাটা ছাড়ুন। কিছু বলার থাকলে এমনিতেই বলতে পারেন! এভাবে অস্যভতা করতে হবেনা।
এই যে মিস অনাহিতা সামনের দিকে ঘুরে দেখুন।
অনু ওড়না হাত দিয়ে চেপে রেখে সামনের দিকে ঘুরে দাঁড়ালো।
কিছু বলবে তার আগেই দেখে তানিমের ঘড়ির সাথে ওড়না আটকে আছে।
ওড়না ছাড়িয়ে নিয়ে বলে, এমন গড়ি কেন পড়তে হবে, যেটাতে মেয়েদের ওড়না আটকে যায়!
তানিমও বলে ফেললো, এমন ওড়না কেনো পরতে হবে যা ছেলেদের ঘড়িতে আটকে যাবে!
- তাই বলে কি ওড়না পরবো না।
- তাই বলে কি ঘড়ি পরবো না।
- ইশ, আমি তো ভুলেই গিয়েছি আপনিকে?
আমি কে মানে!
-আপনি হলেন,নিমপাতার ভাই করলা পাতা।
নিমপাতার ভাইয়ের মুখ থেকে করলা পাতার মতোই কথা বের হবে।
আর আমি আসা করছিলাম স্টবেরির মতো কথা! বলেই অনু চলে গেলে।
তানিম বসে বসে ভাবছে কি বলে গেলো নিমপাতা, করলা পাতা।
মানে কি এসবের? নিজেও উঠে পরলো।
এখন এই নিমপাতা আর করলা পাতার চিন্তায় মগ্ন তানিম।

মাহি ক্লাস শেষ করে নোট করেছে লাইব্রেরিতে বসে বসে ।
এখন বের হচ্ছে ভার্সিটি থেকে। জেনি আর বর্ষা এসে বলে হায় ওয়েটার তোমার সঙ্গী কোথায়?
আজকে জোড়া ছাড়া আসলে?

মাহি কোন কথা না বলে চলে যেতে চাইলে বর্ষা পথ আগলে দাঁড়িয়ে বলে,
আমরা সিনিয়র অতএব আমাদের কথার উত্তর নাদিয়ে যেতে পারবেনা। বেবি!
অসুস্থ তাই আসতে পারেনি।

মাহি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।
জেনি তাকে বলেছে ভার্সিটির মাঠে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে।
চোখ থেকে টুপটুপ করে অশ্রু ঝড়ে পরছে মাহির। আস্তে আস্তে কানের কাছে হাত নিতেই।
কেউ একজন এসে বলে, এসব কি করছো!
আপনার ফ্রেন্ডরাই তো বললো।

আবির বললো, তুমি চলে যাও আমি দেখে নিচ্ছি ওদের।
মাহি চলে যাবে তার আগে আবির নিজের পকেট থেকে টিস্যু বের করে দিয়ে বলে,
তোমাদের মেয়েদের কাঁদতে সময় লাগেনা তাইনা! মানে যখন তখন ফেঁস ফেঁস করে কেঁদে দাও।
এই নাও টিস্যু চোখ মুছে নাও।
মাহি টিস্যু নিয়ে চলে গেলো, পাশ থেকে ইয়ামিন বললো, যখনি পরেছে নজর আমি তো হয়েগেছি তোর!

বর্ষা আর জেনি চলে গেলো।
রাখতো তোর ফাউল কথা এসব কিছুই না। আমি যাস্ট অন্যায়টা হতে দিলাম না।
এখন এসব বলে কোন লাভ হবেনা মাম্মা আমি বুঝে গেছি। মাহি তোমার মন নিয়ে ফুরুত।
মন যখন নিয়ে গেছে যা এবার ফেরত এনে-দে
ইয়ামিন বলতে লাগলো, মনটা কাড়িয়া গেলো সে চলিয়া দয়া মায়া তার নাই।
দেখলি তো দয়ামায়া নাই। আর দয়ামায়াহীন মেয়ে দিয়ে কি করবো?
ইয়ামিন আর আবির দু'জনেই হেসে ফেললো,
ইয়ামিন বলল,তবে যাই বলিস অনু মেয়েটা দেখতে আর কিছু বলার
আগে কেউ ইয়ামিনের গলা চে*পে ধরে বলে,অনু না ভাবি বল।
আবির বললো, তোর মনে কি চলছে বলতো! তুই কি সিরিয়াসলি ওই মেয়েকে বিয়ে করবি!
তোদের কি কোন সন্দেহ আছে!
হুম আছো পুরোই সন্দেহ আছে।

আমি যদি বিয়েটা না করি তবে হেরে যাবো।
সামান্য বাজি জেতার জন্য বিয়ে করবি?
বিষয়টা সমান্য না এতে আমার সম্মান জড়িয়ে আছে।
শোন এসব কথা আমাকে বোঝাতে আসবি না। তোর মনে কি চলছে সেটা বল।
হৃদিতা যাওয়ার পর কোন মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকাসনি। সেখানে একে ডিরেক্ট বিয়ে করতে চাইছিস
হৃদিতার নাম শুনেই সামনের দেয়ালে জোড়ে ঘুসি দিয়ে বলে, আই হেট দিস নেইম।
তুই ভালো করে জানিস তবুও কেনো!বলেই আবিরের কলার ধরলো।
ইয়ামিন কলার ছাড়িয়ে বলে, প্লিজ মাথা ঠান্ডা কর!
মাথা ঠান্ডা মাই ফুট বলেই চলে গেলো।
আবির আর ইয়ামিনও পিছু পিছু গেলো।

একটা ভিডিও দেখে অট্টহাসছে হৃদিতা। হাতের মোবাইলটা টেবিলে রেখে বলে,
গেম তো মাত্র শুরু হয়েছে তন্ময় হাসান। এখনি এই অবস্থা।
তোমার জন্য তো আরো সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে।
তুমি বাজি জেতার জন্য যাকে বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে যাচ্ছ।
তোমার ভাই তার প্রেমে হাবুডুবু খাবে। বলে,আবারও জোড়ে জোড়ে হাসতে লাগলো।
প্রতিশোধ কাকে বলে সেটা আমি তোমাকে দেখাবো তন্ময় হসান শেখ।
আলমারি থেকে টাকা বের করে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটার দিকে ছুড়ে দিয়ে বলে,
আমি প্রতি মূহুর্তের খবর চাই!
আর হ্যাঁ কোন ভাবেই যেনো ওই মেয়েটার প্রতি তন্ময় হাসানের প্রেম না জাগে সেই ব্যবস্থা করবে।
টাকা যা লাগে আমি দেবো। লোকটি চলে গেলো।
হৃদিতা চেয়ারে বসে টেবিল থেকে একটা ছবি হাতে নিয়ে বলে,
ভেবেছিলাম তোমার সাথে ব্রেকআপ করলেই তুমি শেষ। কিন্তু তুমি উল্টো আরো জেদি হয়ে গেলে।
সমস্যা নেই ডিয়ার এক্স জান। এবার কি হয় সেটা দেখো।

অনু বাসায় এসে মেহরুবাকে রেখে। নিজের রুমে যেয়ে রান্না করলো
তারপর গোসল করতে যাবে এমন সময় তার ঘর থেকে মোবাইলের রিংটোনের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।
অনু একটু ভয় পেলে কারণ রুমে মোবাইল আসবে কোথা থেকে। মোবাইল তো নেই।
ভয়ে ভয়ে খুঁজতে লাগলো। ঘরে তেমন কোন ফার্নিচার নেই।
ফার্নিচার বলতে মিফতার দেওয়া একটা খাট, টেবিল আর দুটো চেয়ার।
টেবিলের ড্রয়ার থেকে আওয়াজটা আসছে।
অনু টেবিলের ড্রয়ার খুলে পুরো শকট একটা স্মার্ট ফোন তাতে জ্বলজ্বল করছে
লাইফ লাইন লিখে সেভ করা একটা নাম্বার। বাজতে বাজতে বন্ধ হয়ে গেলো।
অনু হাতে নিলো মোবাইলটা। সাথে সাথে আবার বেজে উঠলো।
সেই একি নামে সেভ করা নাম্বার থেকে কল এসেছে। অনু রিসিভ করে কানে ধরতেই।
ওপাশ থেকে মিষ্টি কন্ঠে কেউ বললো, আমি জানি জানেমান তুমি এখন ভয় পাচ্ছ।
ভাবছো মোবাইলটা কোথা থেকে আসলো। তোমার হার্ট এখন দ্রুত বিট করছে।
আরে সুইটি এটা আমি তোমার হবু বর। অথবা তোমার নতুন ফ্রেন্ড।
অনু বোকার মতো শুধু কথা শুনছে।
ওপাশ থেকে আবার বলল,আহারে বোকারানী এটা আমি তোমার সুইট,
কিউট হুব হ্যাসবেন্ড আর বর্তমানে তোমার গোলাপ-কাঁটার ফ্রেন্ড আর সর্ট করে হিতাময়।

অনু ফোনটা কেটে দিলো। এখনো হার্টের ধুকপুক শব্দ শোনা যাচ্ছে।
কি সাংঘাতিক মানুষ আমার রুমে কখন আসলো আর ফোনটাই বা কখন রেখে গেলো।
চিন্তার মধ্যে টুং করে একটা মেসেজ টোন বেজে উঠলো।
এতো চিন্তা করে নিজের মাথা নষ্ট করার কি খুব দরকার!
তারচেয়ে আমার কথা চিন্তা করো তাহলে প্রেমটা তাড়াতাড়ি হবে
আর প্রেম হলে বিয়েটাও হয়ে যায় আরকি! অনু মেসেজ পরে মনে মনে বলছে অসভ্য।
না শুধু অসভ্য নয় পিএইচডি প্রাপ্ত অসভ্য। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে ওয়াল পেপারে তন্ময়ের পিক।
বেবি পিংক কালারের শার্ট আর সাদা কোর্ট সাথে সাদা কালারের প্যান্ট।
একটা সিলভার কালারের ঘড়ি হাতে। কিছু সময় তাকিয়ে থেকে বলে,
এতো সুন্দর হওয়ার কি খুব দরকার ছিলো,মিস্টার অভদ্র।
আপনি সুন্দর কম হলে ভদ্র হতেন। মোবাইল রেখে শাওয়ার নিতে ওয়াশরুমে ডুকলো অনু।

জনপ্রিয় পোষ্ট সমূহঃ
তন্ময় একটা মেসেজ টাইপ করে বাঁকা হেসে মোবাইলটা পকেটে রেখে দেয়।
এতোক্ষনে সব রাগ বরফের মতো গলে গেছে।
আবির একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিলো তন্ময় আবিরের কাঁধে হাত রেখে বলে,
জানিস তো ওই নামটা আমি যাস্ট সহ্য করতে পারিনা।
আবির তন্ময়কে জড়িয়ে ধরে বলল,আমি মোটেও মন খারাপ করিনি সো যাস্ট চিল।

রায়হান হাত বাড়িয়ে কাগজের টুকরোটা হাতে তুলে নিলো,
সেখানে গোটাগোটা অক্ষরে লেখা আপনাকে আমার প্রয়োজন ভিষণ ভাবে প্রয়োজন।
যদি আপনার হৃদয়ে একটু জায়গা দিতে পারেন তবে তিনদিন পরে এই নাম্বারে কল করবেন।
রায়হান কাগজটা ফেলে দিলো।
কিছুক্ষণ সেদিকে তকিয়ে থেকে আবার কাগজটা তুলে নিয়ে পকেটে রেখে দিলো।
বিষন্ন মনে আকাশের পানে তাকিয়ে থেকে মনে মনে বলল,
আমার মতো হতদরিদ্র মানুষের যে স্বপ্ন দেখাও পাপ!

চলবে...
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url