Breaking News

প্রেয়সী | পার্ট: ৬ | লেখিকা: সুলতানা তমা

চারদিকে অন্ধকার নেমে এসেছে, গাড়ি এসে থামলো অর্পিদের বাড়ির সামনে। অর্পি এখনো আমার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমুচ্ছে, ডাকবো কিনা ভাবছি তখনি দুর্জয় এসে গাড়ির গ্লাসে টোকা দিলো। গ্লাস নামিয়ে দিতেই দুর্জয় অর্পির ঘুমন্ত মুখের দিকে রাগি চোখে তাকালো। দুর্জয় এর এই রাগ অভিমানের রাগ নাকি অভিনয় আমি সত্যি বুঝতে পারছি না।
দুর্জয়: বাব্বাহ্ ভালোই তো প্রেম জমেছে দুজনের মধ্যে।
আমি: দুর্জয় আসলে…
দুর্জয়: অর্পিতা এই অর্পিতা… (দুর্জয় এর চিৎকারে অর্পি হকচকিয়ে উঠলো, নিজেকে আমার কাঁধে মাথা রাখা অবস্থায় দেখে অর্পি বোকার মতো ড্যাবড্যাব করে দুর্জয় এর দিকে তাকিয়ে রইলো)
অর্পি: দুর্জয় আসলে…
দুর্জয়: নেমে আয়।
অর্পি: হুম।
অর্পি আমাকে রেখেই হন্তদন্ত হয়ে ঘরের ভিতর চলে গেলো।
ড্রাইভারকে পাঠিয়ে দিয়ে আমি উঠোনে দাঁড়িয়ে আছি, অর্পি ভিতরে চলে গেছে আমি এখন একা একা কি করবো?
মামা: আরে আয়াস বাবা এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছ কেন? ভিতরে চলো।
আমি: না আসলে…
মামা: অর্পিতার কথা ভাবছ? ও আসলে মা পাগলী তাইতো তোমাকে রেখেই মায়ের কাছে ছুটে চলে গেছে।
আমি: হুম।
মামা: ভিতরে চলো। (মামার পিছুপিছু এসে ঘরে ঢুকলাম। অর্পির মা বিছানায় শুয়ে আছেন, আমাকে দেখে উনি হাসার চেষ্টা করলেন)
মামা: আমার বোনের পাশে গিয়ে একটু বসো ওর ভালো লাগবে। (চুপচাপ এসে অর্পির মায়ের মাথার কাছে বসলাম)
–কেমন আছ বাবা?
আমি: জ্বী ভালো।
–আমার সাথে কথা বলতে ইতস্তত বোধ করছ? আমিতো তোমার মায়ের মতোই। অর্পির মা যখন তখন তো শাশুড়ি হই তোমার আর শাশুড়িকে মা ডাকতে হয়। (উনার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি, উনি এতো সুন্দর করে কথা বলেন কিভাবে?)
দুর্জয়: একদম চুপ, তোকে বারবার বলেছিলাম ঐ ছেলের দ্বারেকাছে যাবি না। (হঠাৎ পাশের রুম থেকে দুর্জয় এর চিৎকার শুনা গেল সাথে অর্পির কান্নার শব্দ। আমি কিছুটা অবাক হয়ে অর্পির মায়ের দিকে তাকালাম)
–এসব কিছুনা, এইটা আমার মেয়ের ভাগ্য। ছেলেটা সবসময় মেয়েটাকে বকাবকি করে। বিয়ের পরও মেয়েটার শান্তি নেই।
আমি: বকাবকি করে কেন?
–ভালোবাসে নাকি আমার মেয়েকে। ভালোবাসা এমন হয়? শুধু শাসন করাটাকেই ভালোবাসা বলে?
আমি: (নিশ্চুপ)
–একটা কথা বলব বাবা?
আমি: বলুন।
–কি করে বলব তুমি তো এখনো আমার সাথে কথা বলতে ইতস্তত বোধ করছ। মা বলে মেনে নিতে পারছ না? আরে শাশুড়ি তো মায়ের মতোই হয়।
আমি: ঠিক তা না আসলে…
–একবার মা বলে ডাকো দেখবে সব ভয় লজ্জা কেটে গেছে। (উনার চোখের দিকে তাকালাম, উনার দুচোখে পানি টলমল করছে। উনার মুখের দিকে তাকালে এতো মায়া লাগে কেন?)
–কি হলো?
আমি: বলুন মা। (আমার মুখে মা ডাক শুনে উনার মুখটা কেমন যেন খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠলো, উনার চোখে টলমল করা পানি গুলো গাল বেয়ে বালিশে পড়ছে, উনি ম্লান হেসে চোখের পানি মুছে নিলেন)
মা: দুর্জয় ছেলেটা মানুষ হিসেবে খুব একটা ভালো না। আর আমার মেয়েকে ভালোবাসে যে ওইটা আমার কাছে মিথ্যা মনে হয়। জানি অর্পিতা তোমাকে মেনে নিতে চাইবে না কিন্তু তুমি ওকে ভালোবাসা দিয়ে তোমার করে নিও।
আমি: (নিশ্চুপ)
মা: ভাবছ কি করবে? ভালোবাসা জাত ধর্মকেও হার মানায় এইটা জানো তো? আর রইলো অর্পিতা আর দুর্জয় এর সম্পর্ক, একটা খারাপ সম্পর্ক থেকে কাউকে বের করে আনার জন্য তো তাকে একটু কষ্ট দিতেই হবে তাই না?
আমি: আপনার শেষ কথাটা বুঝলাম না।
মা: অর্পিতা দুর্জয়কে ভালোবাসলেও দুর্জয় বাসে না, আর দুর্জয় এর থেকে অর্পিতাকে দূরে সরাতে হলে অর্পিতাকে তো একটু কষ্ট দিতেই হবে। তুমি পারবে না ওকে দুর্জয় এর থেকে দূরে সরিয়ে নিতে? পারবে না ওকে তোমার করে নিতে? তোমারও হয়তো মেনে নিতে কষ্ট হবে কিন্তু অর্পিতার ভালো ভেবে আমার কথা ভেবে পারবে না এইটুকু কষ্ট সহ্য করতে?
আমি: কিন্তু মা অর্পিতা তো ডিভোর্স… (এ আমি কি করছিলাম উনাকে তো বলে দিচ্ছিলাম ডিভোর্স এর কথা, উনি তো অসুস্থ)
মা: কি বললে?
আমি: না কিছুনা, অর্পি কোথায় দেখে আসছি আমি।
মা: দাঁড়াও। (উঠে চলে আসছিলাম উনার ডাকে আবার বসলাম)
মা: কি লুকাচ্ছ আমার থেকে? আমি আগেই জানতাম অর্পিতা ডিভোর্স চাইবে। কিন্তু আমি চাই না তুমি ওকে ডিভোর্স দাও। তুমি ডিভোর্স দেওয়া মানে ওর জীবনটা নষ্ট হয়ে যাওয়া। এখন তো অর্পিতার সব দায়িত্ব তোমার আর এইটা ভাবতেও আমার শান্তি লাগে। কিন্তু ডিভোর্স দিলে আমি মারা গেলে পর ওকে কে দেখবে? দুর্জয় তো আমার মেয়েটাকে… (উনি ঢুকরে কেঁদে উঠলেন, কি করবো আমি? এমন দুটানায় থেকে বাঁচা যায়? উনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম)
আমি: আপনি কাঁদবেন না আমি ভেবে দেখছি। আসলে অর্পিতা তো হিন্দু তাছাড়া আমারো একটু ব্যক্তিগত সমস্যা আছে।
মা: অন্য কাউকে ভালোবাস? (উনার এমন প্রশ্নে কিছুটা বিব্রত হলাম কিন্তু বলে দেওয়া ভালো)
আমি: হুম বাসতাম আর এখনো বাসি কিন্তু সে এখন আর আমার জীবনে নেই। আর আমি চাই না তার জায়গায় অন্য কেউ…
মা: অন্য কেউ আসলে সমস্যা কি? যদি তার শূন্যতা অর্পিতা পূরণ করতে পারে তাহলে পূরণ করতে দাও, এতে তুমিও ভালো থাকবে আর অর্পিতাও।
আমি: ভেবে দে… (ঠাস করে একটা থাপ্পড়ের শব্দ ভেসে আসলো পাশের রুম থেকে, আমি বোকার মতো চারপাশে তাকাচ্ছি)
মা: এই ছেলে আমার মেয়েটাকে মেরেই ফেলবে।
উনি কাঁদছেন, এখন আর চোখের পানি মুছে দিলাম না, সোজা উঠে পাশের রুমের দিকে এগিয়ে গেলাম।
অর্পি গালে হাত দিয়ে কাঁদছে, পাশে দুর্জয় আর একজন মহিলা দাঁড়ানো। দুর্জয় এর পায়ে ব্যান্ডেজ আর কপালে ব্যান্ডেজ, তাহলে কি সত্যি ওর এক্সিডেন্ট হয়েছিল? অর্পির নজর আমার দিকে পড়তেই তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে নিলো।
অর্পি: দেখুন আমি কত বোকা আপনাকে রেখেই চলে এসেছিলাম। (অর্পি আমার কাছে আসতেই ওর গালের দিকে নজর পড়লো, পাঁচ আঙ্গুলের দাগ বসে গেছে গালে, ইচ্ছে হচ্ছে দুর্জয়কে…)
অর্পি: চলুন।
আমি: তোমার গালে দাগ কিসের?
(অর্পি দুর্জয় এর দিকে একবার তাকিয়ে মাথা নিচু করে ফেললো)
অর্পি: ও কিছুনা চলুন আপনি।
আমি: অর্পিকে আমি বিয়ে করেছি আমার ধর্ম অনুযায়ী এবং আইন এর নিয়ম অনুযায়ী,
অর্পি এখন আমার স্ত্রী। আজকে যে ভুল করেছ ভবিষ্যৎ এ এই ভুল করতে গেলে
তোমার হাত ভেঙ্গে গলায় ঝুলিয়ে দিবো। কথাটা মাথায় রেখে অর্পির গায়ে হাত তুলতে এসো।
(দুর্জয় এর সামনে দাঁড়িয়ে কথা গুলো বলে চলে আসছিলাম তখনি পাশ থেকে মহিলাটি
আমার হাত ধরে আমাকে দাঁড় করিয়ে দিলো)
–আমি কে ছিনো?
আমি: উঁহু বিয়ের দিন দেখিনি।
–অর্পিতার মামি, দুর্জয় এর মা।
আমি: ওহ তাহলে আমারো মামি।
মামি: না, তুমি দুদিনের মেহমান আমাদের জন্য। তোমাদের ডিভোর্স এর পর তোমার সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক থাকবে না। একটা কথা বলি মেহমান হিসেবে থাকো আমাদের পারিবারিক বিষয় নিয়ে ভাবতে এসো না।
আমি: ওহ যেমন মা তেমনই তো ছেলে হবে।
মামি: কিছু বললে?
আমি: বলবো। অর্পি আমি কিন্তু খিধা সহ্য করতে পারিনা কিছু কি খেতে দিবে?
অর্পি: হ্যাঁ যাচ্ছি। (অর্পি চলে যেতেই দুর্জয় আর ওর মায়ের একদম সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম)
আমি: অর্পির গায়ে হাত তুলেছে আপনার ছেলে, আর আপনাদের দুজনের কথাবার্তা আমাকে খুব ভাবাচ্ছে, ভাবছি অর্পিকে ডিভোর্সটা দিবো কিনা।
দুর্জয়: আয়াস এমন কিন্তু কথা ছিলনা।
আমি: অর্পির গায়ে হাত তুলবে, অর্পিকে রেখে অন্য মেয়ের কোমর জড়িয়ে ধরে রাস্তার পাশে হাটবে এসবও কিন্তু কথা ছিলনা।
দুর্জয়: ও আমার গার্লফ্রেন্ড…
আমি: ছিল কিন্তু এখন আমার বউ কথাটা মাথায় রেখো।
দুর্জয়: আমি ওর সাথে যা খুশি করবো তাতে তোর কি? (চলে আসছিলাম দুর্জয় এর চিৎকার শুনে পিছন ফিরে তাকালাম)
আমি: আমার বউয়ের সাথে যে যা খুশি করবে তাতো হতে পারে না, আমার বউয়ের সম্মান রক্ষা করা আমার দায়িত্ব।
মৃদু হেসে চলে আসলাম ওদের সামনে থেকে।
অর্পি টেবিলে খাবার সাজাচ্ছে দেখে ওর পাশে এসে দাঁড়ালাম, ফর্সা গালে দাগ গুলো স্পষ্ট ভাবে ফুঁটে উঠেছে।
অর্পি: সরি আমি এসেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম, আপনার কথা…
আমি: যার জন্য তাড়াহুড়ো করে এলে সে কি দিলো তোমায়? থাপ্পড়? গালে যে দাগ গুলো পড়েছে এগুলো তোমার মা দেখলে কষ্ট পাবে না?
অর্পি: (নিশ্চুপ)
আমি: দুর্জয় তোমাকে থাপ্পড় মেরেছে কেন? (আমার প্রশ্ন শুনে অর্পি মৃদু হাসলো)
অর্পি: অভিমানে।
আমি: মানে?
অর্পি: আমি আপনার কাঁধে মাথা রেখেছিলাম তাই।
আমি: এইটা অভিমান? আরে টায়ার্ড লাগলে তো যে কারো কাঁধে মাথা রাখা যায় আর আমিতো তোমার হাজবেন্ড। (হাজবেন্ড কথাটা শুনে অর্পি কেমন করে যেন আমার দিকে তাকালো, তাড়াতাড়ি চেয়ার টেনে বসে পড়লাম)
আমি: অর্পি ভালোবাসা ভালো কিন্তু কাউকে অন্ধের মতো ভালোবাসাটা ভালো না। (অর্পি আমার কথার কোনো উত্তর দিলো না, হয়তো বুঝতে পেরেছে ও যতোটা ভালোবাসে দুর্জয় ততোটা বাসে না)
আমি: খাবে বসো।
অর্পি: উঁহু পরে।
আমি: কেন দুর্জয় এর সাথে খাবে? (অর্পি রেগে গিয়ে চেয়ার টেনে বসলো আর খেতে শুরু করলো)
আমি: বাহ্ রাগলে তো তোমায় দারুণ লাগে।
অর্পি: বিড়বিড় করে কি বলছেন? খাবার খারাপ?
আমি: না না তা বলিনি।
অর্পি: স্বাভাবিক। আমি হিন্দু বলে আপনি আমাকে বিয়ে করতে চাননি আর এখন হিন্দুদের ঘরে খাবার খাচ্ছেন, আপনার খারাপ লাগাটা কিন্তু অস্বাভাবিক নয়।
আমি: অর্পি এবার কিন্তু বেশি হচ্ছে। হিন্দু বলে বিয়ে করতে চাইনি কারণ আমার ধর্মে নিষেধ আছে মুসলিম হয়ে একজন হিন্দুকে বিয়ে করা যাবে না। কিন্তু আমার ধর্মে এইটা কোথাও লেখা নেই যে অন্য ধর্মের মানুষদের ঘৃণা করবো। তাছাড়া এখানে আমাদের জন্য হারাম কোনো খাবারই রান্না করা হয়নি। (অর্পি একদম চুপসে গেছে, আমি আর কিছু না বলে চুপচাপ খেতে শুরু করলাম। খাবার মুখে দিতেই কেমন যেন এক ভালো লাগা কাজ করলো আমার মধ্যে। আমিতো রোজ এসব খাই কিন্তু আজকের খাবার এতো ভালো লাগছে কেন আমার?)
অর্পি: খাবার কি…
আমি: আবার বলবে খাবার খারাপ হয়েছে?
অর্পি: না না, আপনি খুব তৃপ্তি সহকারে খাচ্ছেন তো তা…
আমি: হুম মনে হচ্ছে এই খাবার যদি আমি সারাজীবন খেতে পারতাম। আচ্ছা এসব কে রান্না করেছে?
অর্পি: মা।
আমি: এই অসুস্থ শরীর নিয়ে?
অর্পি: হুম, জানিনা কেন এত কষ্ট করে এতকিছু রান্না করেছেন।
আমি: এখানের বেশিরভাগ খাবারই কিন্তু আমার পছন্দের।
অর্পি: তাই?
খাচ্ছি আর মনে মনে ভাবছি উনি অসুস্থ শরীর নিয়ে এতকিছু রান্না করলেন কেন আমার জন্য? আর আমার পছন্দ গুলো উনি জানলেন কিভাবে? তবে কি উনি আমার মন জয় করার জন্য এতসব করছেন? আমি যেন উনার মেয়েকে মেনে নেই এজন্য? ভেবে কোনো উত্তর পাচ্ছি না এসব প্রশ্নের।
উঠোনে বসে ফোন টিপছি হঠাৎ আব্বুর কল আসলো, আবারো সেই আগের কথা গুলোই বলবে তাই ইচ্ছে হচ্ছে না রিসিভ করার। কিন্তু তবুও রিসিভ করতে হলো।
আমি: হ্যালো।
আব্বু: ওখানে খারাপ লাগছে নাতো?
আমি: একটু তো লাগবেই।
আব্বু: ওখানে গিয়ে কি চিন্তাভাবনা কিছু পাল্টেছে? নাকি আগের মতোই ডিভোর্স এর কথা ভাবছ?
আমি: সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না।
আব্বু: কেন?
আমি: অন্য সবকিছু নাহয় বাদ দিলাম কিন্তু আব্বু ও তো হিন্দু।
আব্বু: মন থেকে ভালোবাসলে হিন্দু মেয়েকেও ভালোবাসা যায়। আসলে তুমি মন থেকে চাইছ না কারণ তোমার মনে যে অন্য কারোর বসবাস।
আমি: (নিশ্চুপ)
আব্বু: দুবছর পেরিয়ে গেছে ভুলে যাও তাকে, নতুন করে সবকিছু ভাবো। আর হ্যাঁ খারাপ লাগলে দুদিন থেকে চলে এসো।
আমি: হুম ঠিক আছে। (ফোন রেখে পিছন ফিরতেই দেখি মামা দাঁড়িয়ে আছেন)
আমি: কিছু বলবেন?
মামা: স্যার ফোন করেছিলেন?
আমি: হুম।
মামা: তোমার উপর কি আমরা অর্পিতাকে জোড় করে ছাপিয়ে দিয়েছি বাবা?
আমি: না না তা কেন, অর্পিতা তো আমার স্ত্রী আর আমিতো বিয়েটা নিজের ইচ্ছেতেই করেছি।
মামা: আশা করি এই বিয়েটা তুমি কখনো ভাঙ্গতে দিবে না। রাত হয়েছে ঘুমাবে চলো।
মামার পিছুপিছু যাচ্ছি। হঠাৎ দরজার ফাঁক দিয়ে অর্পির মায়ের রুমের দিকে নজর পড়লো, জড়সড় হয়ে ঘুমিয়ে আছেন উনি। আমি দাঁড়িয়ে পড়লাম, অপলক দৃষ্টিতে দেখছি উনাকে, মুখটা মায়ায় ভরা উনার।
মামা: কি হলো চল।
আমি: হুম।
মামা আমাকে রুমের সামনে দিয়ে চলে গেলেন। রুমে ঢুকে অর্পিকে দেখতে পেলাম, জানালা দিয়ে আনমনা হয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। আমি এসে অর্পির পাশে দাঁড়ালাম।
অর্পি: আজ আমাদের এক রুমেই থাকতে হবে।
আমি: (নিশ্চুপ)
অর্পি: আসলে এখানে তো সবাই জানে আপনি এবং আপনার বাসার সবাই আমাকে মেনে নিয়েছেন।
আমি: সমস্যা নেই।
অর্পি: দুর্জয় আবারো রাগ করবে। (অর্পির কথা শুনে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলাম, এই মেয়েটা সত্যি দুর্জয় এর প্রেমে অন্ধ হয়ে গেছে)
অর্পি: আপনি বিছানায় ঘুমিয়ে পড়ুন।
আমি: তুমি ঘুমুবে না?
অর্পি: কিছুক্ষণ পর। মেঘলা আকাশ দেখছি, রাতের মেঘলা আকাশ দেখতে আমার খুব ভালো লাগে।
আমি: তাহলে আমিও একটু সঙ্গ দেই তোমাকে মেঘলা আকাশ দেখায়। (অর্পি জানালার গ্রীল ধরে নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, আমি আড়চোখে ওকে দেখছি। মৃদু বাতাসে ওর চুলগুলো আলতোভাবে উড়ছে, ইচ্ছে হচ্ছে একটু ছুঁয়ে দেই ওর এলোমেলো চুলগুলোকে)
অর্পি: আয়াস? (অর্পি আমাকে হালকাভাবে ধাক্কা দিতেই আমার ঘোর কাটলো)
আমি: হুম।
অর্পি: কখন থেকে ডাকছি শুনছেনই না কোথায় হারিয়ে যান মাঝেমাঝে? (অর্পির কথা শুনে মুচকি হাসলাম, এই মায়াবতীটাকে দেখতে দেখতে কখন যে ওর মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলি বুঝতেই পারিনা)
অর্পি: ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হয়েছে ঠান্ডা বাতাসও বইছে, এখানে দাঁড়িয়ে থাকবেন না ঠান্ডা লেগে যাবে, ঘুমান গিয়ে।
আমি: তুমিও তাড়াতাড়ি ঘুমাতে এসো।
অর্পি: হুম।
মাঝরাতে হঠাৎ মেঘের গর্জনে ঘুম ভেঙ্গে গেলো, বিছানায় শুয়ে অর্পিকে দেখতে দেখতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বুঝতেই পারিনি। মেঘের গর্জন সাথে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, ভালো বৃষ্টিই শুরু হয়েছে। মনে হয় কারেন্ট নেই, অন্ধকারে কিছু দেখা যাচ্ছে না। আচ্ছা অর্পি কোথায়?
ফোনের ফ্ল্যাশলাইট জ্বেলে বিছানার অন্যপ্রান্তে তাকালাম উঁহু অর্পি তো নেই। হঠাৎ মাটিতে নজর পড়লো, অর্পি মাটিতে বিছানা করে ঘুমিয়েছে। শীতে মেয়েটা গুটিসুটি হয়ে শুয়ে আছে, এভাবে সারারাত থাকলে তো ওর ঠান্ডা লেগে যাবে, কি করবো এখন? অনেক ভেবে অর্পির কাছে এগিয়ে গেলাম আর ওকে কোলে তুলে বিছানায় এনে শুয়ে দিলাম। আমি নাহয় একটা রাত জেগে থেকেই কাটিয়ে দেই তাতে অন্তত মেয়েটার মাটিতে শুয়ে অসুস্থ হতে হবে না। অর্পির গায়ে বিছানা টেনে দিয়ে ওর মাথার পাশে বসলাম।
ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে সাথে ঠান্ডা বাতাস বইছে, বিছানায় ফোনটা রাখা, ফ্ল্যাশলাইট জ্বলছে। ফোনের ফ্ল্যাশলাইটের আলোতে অর্পির মায়াবী মুখটা আরো বেশি মায়াবী লাগছে। অর্পির গালের দাগ গুলো দেখা যাচ্ছে, দাগ গুলোতে আলতোভাবে হাত বুলিয়ে দিলাম। আচ্ছা অর্পিকে এতো মায়াবী লাগে কেন আমার কাছে? দুর্জয় ওকে থাপ্পড় দেওয়াতে আমার এতো কষ্ট হচ্ছিল কেন? অর্পি আমার আশেপাশে থাকলে সবকিছু এতো ভালো লাগে কেন আমার?
তবে কি আমি অর্পির… না না এসব আমি কি ভাবছি। হঠাৎ দমকা বাতাস শুরু হলো, খুব ঠান্ডা পড়েছে। অর্পি নড়েচড়ে আমার কোলে মাথা রাখলো, জড়সড় হয়ে ঘুমিয়ে আছে। কি করবো সরিয়ে দিবো? কিন্তু যদি ওর ঘুম ভেঙ্গে যায়? থাকুক, অর্পির চুলে বিলি কেটে দিচ্ছি আর মুগ্ধ হয়ে ওর মায়াবী মুখটা দেখছি, মনে হচ্ছে ওর এই মায়াবী মুখ দেখে দেখে অনায়াসে কাটিয়ে দেওয়া যাবে হাজারটা শতাব্দী…
চলবে?

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com