Breaking News

অন্নের খোঁটার জবাব

“ইয়েস,প্লিজ,কাম ইন।” চেম্বারের ভিতরে ঢুকেই,হাঁ হয়ে গেলেন ইঞ্জনিয়ারিং গুডসের ব্যবসায়ী মিস্টার রমেন মল্লিক।”আরে,তুই,অশোক না?” উনি এই কথা বলতেই,ওনার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসল অশোক।
“মামা,বোসো।” সামনের সীটে আরাম করে বসে,ওর মামা বললেন,”মানে?তুই এখানে কি করছিস?
“কি করছি?এই চেম্বারে ঢোকার আগে,আমার নেমপ্লেটটা কি তুমি একবারও পড়ে দেখোনি,মিস্টার অশোক রায়,অ্যাডমিনিসট্রেটর অফ ফাইনান্স? তুমি নিশ্চয় এই বিভাগের টেন্ডারের অ্যাক্সেপটেন্শ লেটার পেয়ে আমার সাথে দেখা করতে এসেছো? ” হ্যাঁ।” “এখুনি কি এগ্রিমেন্ট লেটার পাবো?”
“না।” কেন? ও তুই কি শোধ তুলতে চাস তোদের বাড়ি থেকে তাড়িয়েছিলাম বলে?
” “তাই যদি হত, তবে,শুধু,আমার পদাধিকারবলে তোমার টেন্ডার পেপার ক্যানসেল করে দিতাম। তোমাকেও চেম্বারে ঢুকতে দিতাম না। মায়ের কাছে সর্বদা গুরুজনদের শ্রদ্ধা করার শিক্ষাই পেয়েছি।
” ” তাহলে এগ্রিমেন্ট লেটার দিচ্ছিস না কেন?” ” কারণটা হল ফাইনান্স বিভাগের নিয়ম অনুযায়ী কোনো সাপ্লায়ার কোম্পানির দেওয়া স্যাম্পল টেস্টে অ্যাপ্রুভড হলে তবেই তার সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়।
এক্ষেত্রেও তাই হবে। তোমার স্যাম্পল দিয়ে যাও। তারপর টেস্ট সার্টিফিকেট পেলে তবে চুক্তি স্বাক্ষর করব।”
অনেক বছর আগে,বাস এক্সিডেন্টে অশোকের বাবা মারা যেতে,পাঁচ বছরের অশোককে সঙ্গে নিয়ে,ওর মা পাপিয়া রায়,বাপের বাড়ি গিয়ে উঠেছিল।বাবার কথা বলতে গিয়ে, ওর মার চোখ দুটো যখন চিক চিক করে উঠেছিল,ছোট্ট অশোক নরম দুটো হাত দিয়ে ওর মার চোখ দুটো মুছিয়ে দিয়েছিল।
ওর একমাত্র মামা অনিচ্ছাসত্ত্বেও ওদের আশ্রয় দিল। ওর মামী বলে উঠেছিল,”
কোথা থেকে এই সব আপদ জোটালে?”
সেদিন থেকে প্রতি মূহূর্তে ওদের বুঝিয়ে দেওয়া হত যে এখানে আশ্রয় নিয়ে ওরা বড় অপরাধ করেছে।
সিঁড়ির নীচে এমন ঘরে তাদের থাকতে দেওয়া হল যেখানে আলো বাতাস খেলেনা।অশোকের মা সকালে ওকে স্কুলের ভ্যানে তুলে দিয়ে এসে,
সারাদিন ধরে,ওর দাদা বৌদির ফাই ফরমাস খাটত।স্কুল থেকে ফিরেই,মায়ের জন্যে অশোকের মন আকুপাকু করত।কিন্তু মাকে পাবে কখন?সে তো কাজে ব্যস্ত। তাই অশোক বইয়ের স্তুপের মধ্যেই মুখ গুঁজে পড়ে থাকত।
মাঝে মাঝে অশোকের মামী ওর চুলের ঝুঁটি ধরে নেড়ে দিত।
বলতো,”বিদ্যের জাহাজ হবি?
তোদের খাওয়ানোর জন্যে এমনিতেই অনেক টাকা খরচ হচ্ছে।
আবার পড়াশোনার খরচ?এর চেয়ে কুলিগিরিও তো করতে পারতিস।
তাহলে তোর মামার কিছু আর্থিক সাশ্রয় হত।
” কথাটা আড়াল থেকে শুনে পাপিয়ার চোখে জল এলেও সে মুখে কিছু বলতে পারত না।
মামা মামী নিজেরা ভালোমন্দ খেলেও জলখাবারে এদের দিত শুকনো মুড়ি আর দুপুরে সামান্য ভাত আর ছিটেফোঁটা মুসুর ডাল।
একদিন হাঁড়িতে অনেকক্ষণ ভাতটা রেখে তবে ওদের দুজনকে খেতে দেওয়া হয়েছিল।
পাপিয়া নিজে কষ্ট করে ভাত মুখে তুললেও,অশোক ঐ নষ্ট হয়ে যাওয়া গলা গলা ভাত
খেতে পারছে না দেখে,খাওয়া ছেড়ে উঠে,হাত ধুয়ে,রান্নাঘরের কড়াই থেকে দুধের সর এক হাতা তুলে অশোকের পাতে দিয়েছিল।আর যায় কোথায়!অশোকের মামী হাঁ হাঁ করে উঠল।
মামাকে ডেকে আনল। দুজনে মিলে মা ছেলেকে মারতে মারতে বাড়ির বাইরে বার করে দিল,”ভিখিরির দল!খাবার চুরি করে খাওয়া!বেরো এক্ষুণি।যেখানে খুশি চলে যা।”
কাঁদতে কাঁদতে সেখান থেকে বেরোনোর পর,পাড়ায় এক ভদ্রলোকের সাথে দেখা।
উনি সব শুনে এক জানাশোনা বাড়িতে ওদের বাড়ি ভাড়া করে থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন।
কয়েক বাড়ি ওর মাকে ঝিয়ের কাজও যোগাড় করে দিয়ে বললেন,”দ্যাখো,মা।
এক বছরের অগ্রিম ভাড়া আমি দিয়ে দিচ্ছি।
তুমি কিন্তু সময় করে শোধ করে দিয়ো।
পাপিয়া শোধ করে দিয়েছিল সেই ঋণ।
শুধু থাকার ব্যবস্থাই নয়। অশোকের জন্যে সুলভে টিউশন পড়ার ব্যবস্থাও উনি করে দিয়েছিলেন।
অশোক আর পাপিয়া দুজনেই ওনাকে খুব মানত এবং ভদ্রলোক অপুত্রক এবং অবিবাহিত ছিলেন বলে মৃত্যুর আগে অশোককেই তাঁর বাড়ি লিখে দিয়ে যান।
মায়ের সেই কষ্টার্জিত টাকায় মানুষ হয়ে অশোক ওনার সেই বাড়িটাকেই সংস্কার করে অভিনব রূপ দিয়েছে।
অর্ডার হাতে পেয়েই মামা মামীকে সব কথা খুলে বলল।
মামীর কথায় ওদের দুজনকে ওনার বাড়িতে খেতে যাবার নিমন্ত্রণও করে গেল।
নিমন্ত্রণ রাখতে অশোক আর পাপিয়া যখন মামার বাড়ি গেল,তখন পাপিয়াকে দেখেই অশোকের মামী বলে উঠল,”বা: চেহারায় তো বেশ চেকনাই এসেছে।
আগে তো দাদার ঘাড় ভাঙছিলে। এখন ছেলের ঘাড় ভাঙছ।
তা গয়নাগাটি কত হল?” ওনার দিকে তীব্র দৃষ্টি হেনে,চকিতে গয়নার বাক্স বার করে দিল পাপিয়া।
দেখে রাখো,সব হলমার্ক দেওয়া গয়না। এই সব তোমায় দিয়ে গেলাম।
এগুলো নামকরা জুয়েলারি শপে বিক্রি করে,আমাদের জন্যে তোমরা যা যা খরচ করেছো,সব উশুল করে নিও।
চলে আয় অশোক।” অশোকের মামা,মামী ভীষণ অপ্রস্তুত।তোদের তো নেমন্তন্ন করে খাওয়াবো বলেই তো ডেকেছিলাম। না খেয়ে চলে যাচ্ছিস যে বড়!” ওদের দিকে না ফিরেই,চলে যেতে যেতে,পাপিয়া বলল,
“সামান্য দুধের সর খাওয়ার জন্যে যারা খাবার চুরির বদনাম দিয়ে বাড়ি থেকে তাড়ায়,সেটা নরকতুল্য।
সেখানে জলস্পর্শ করাও মহাপাপ।”

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com