Breaking News

ভালোবাসি তাই । পর্ব -০৬

যতই সায়ন ভাইয়ার দিকে তাকাবো না ভাবছি ততই ওনার দিকে চোখ চলে যায়। একেই বোধহয় বলে বেহায়া। ওনি বাইরের দিকেই তাকিয়ে ছিলেন। হঠাৎ আমার দিকে তাকিয়ে ফেললেন। আমি যেহেতু ওনার দিকেই তাকিয়ে ছিলাম। দুজনের চোখে চোখ পড়ে গেল। আমি তাড়াতাড়ি করে চোখ নামিয়ে নিলাম। আর ওদিকে তাকানোর সাহস হয়নি। সারা তখন কানে হেডফোন গুঁজে গান শুনছিল। আমার গান শুনতেও ভালো লাগছে না। তাই চুপচাপ বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলাম। এভাবে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি জানি না। ঘুম ভাঙতেই দেখলাম বাস দাঁড়িয়ে আছে। বোধহয় এখন লান্সের ব্রেক। আমি চুপচাপ বসে রইলাম।
.
সবার সাথে নামতে গিয়ে আলুভর্তা হওয়ার কোনো ইচ্ছা আমার নাই। সারাকে আমি নামার জায়গা করে দিয়ে বসে রইলাম সিটে। বাস পুরোপুরি ফাঁকা হতেই আমি উঠে দাঁড়ালাম। এবার আমি নিশ্চিন্তে নেমে যেতে পারবো। তখনি চোখ পরলো সায়ন ভাইয়ার সিটের দিকে। ওনি হাত দুটো বুকের উপর বেঁধে হেলান দিয়ে ঘুমুচ্ছেন। আমি ভাবছি ওনাকে ডাকবো কি না? ডাকলে যদি আবার রেগে যায়। কিন্তু ওনাকে এভাবে রেখে আমরা খেতে চলে যাবো এটা কি ঠিক? ওনার বন্ধুরা ওনাকে না ডেকেই চলে গেল। আজব মানুষ তো। আমি সাহস করে ওনার গায়ে ঠেলা দিয়ে সায়ন ভাইয়া বলে ডাক দিলাম। ওনি চোখ খুললেন আমার দিকে কিছুক্ষণ ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে ছিলেন। তারপর আমার হাত টেনে ওনার পাশের সিটে বসালেন। আমার কাঁধে ওনার মাথা রেখে আবার ঘুমিয়ে পরলেন। ঘুমের মধ্যেই বিরবির করে কিছু বলতে লাগলেন। আমি শোনার চেষ্টা করতেই শুনলাম ওনি বলছেন,
“মালিহা তুমি এমন কেন বলো তো? আমি বললাম আর তুমি আমায় ছেড়ে চলে গেলে। আমিও তো এটাই চাইতাম। কিন্তু আজ যখন তুমি আর আগের মত আমার সাথে পাগলামি করো না। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে কেন বলতে পারো? তোমার আজগুবি কবিতা, আজগুবি লজিকগুলোকে আমি খুব মিস করি। তোমাকেও খুব মিস করছি। “
এগুলো বলে ওনি চুপ করে গেলেন। আমার মুখ হা হয়ে গেছে। ওনি আমাকে তুমি করে বলছে? ওনি আমাকে মিস করছে? কিন্তু ওনার ব্যবহারে তো সেটা মনে হয় না। হয়তো আপুকে মিস করছে তাই মাথা খারাপ হয়ে গেছে। সেজন্য ঘুমের ঘোরে আবোল- তাবোল বকছে। ঘুমের ঘোরে হোক আর সজ্ঞানে হোক ওনি আমাকে তুমি করে বলেছে এর থেকে খুশীর বিষয় আর কি আছে। আমার ইচ্ছে করছে এভাবেই বসে থাকি।কিন্তু এভাবে বসে থাকলে আজকে আর লান্স করতে হবে না। খিদে আমার পেট চোঁ চোঁ করছে । তাই ওনাকে ঠেলতে ঠেলতে ডাক দিলাম। ওনি এবার লাফ দিয়ে ঘুম থেকে উঠলেন। আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললেন,
– তুই এখানে কি করছিস? আমার পাশে কখন এসে বসলি?
.
আমার এবার খুব রাগ লাগলো। নিজেই আমাকে এখানে বসালো। এখন নিজেই বলছে আমি এখানে কি করছি। আজব কাজ কারবার। আমি এবার রেগে বললাম,
– ওমা জানেন না কেন এখানে বসেছি? আপনার সবকিছু লুট করতে এখানে এসে বসেছি। বুঝতে পারেন নি তাই না। এখন বুঝিয়ে বললাম। যত্তসব।
এগুলা বলেই আমি কোনো দিকে না তাকিয়ে সোজা বাস থেকে নেমে গেলাম। আমি জানি সায়ন ভাইয়া এখন আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। ওনিও আমার পেছন পেছন বাস থেকে নেমে এলেন। আমি সামনের রেঁস্তোরায় ঢুকে গেলাম। মাথার উপর ফ্যান গুলো ঝুলছে। দু একটা ফ্যান ছাড়া সবগুলাই নষ্ট। রেঁস্তোরার মালিক বোধহয় এগুলো শো আপ করার জন্য রেখে দিয়েছেন। সব টেবিলেই স্টুডেন্টরা বসে গেছে। আমি সারাকে খুঁজতে লাগলাম। তখনি দেখলাম বেচারি এক কোণায় চুপচাপ বসে আছে।
.
কারণ এদিকে কোনো ফ্যানের বাতাস আসে না। খুব গরম লাগছে এখানে। আমাদের পাশের টেবিলেই সায়ন ভাইয়া আর তার বন্ধুরা বসেছে। আমার মনে হয় আমি আর সারা যেখানেই যাই সায়ন ভাইয়ারা তার পাশেই থাকবে। এটাই বোধহয় ভবিতব্য। খাবার টেবিলে চলে এসেছে। কিন্তু আমি খেতে পারছি না। কারণ ইরাম ভাইয়া পাশের টেবিল থেকে এসে আমার আর সারার পাশেই বসে গেছে। একেবারে আমার সোজাসুজি বসেছে। গালে একহাত ঠেস দিয়ে আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আর মাঝে মাঝে মুচকি হাসছে। ওনার জন্য আমি খেতেই পারছি না। কেউ যদি খাওয়ার সময় সামনে বসে এভাবে তাকিয়ে থাকে তাহলে কি গলা দিয়ে খাবার নামে। আমি প্লেটে খাবার নাড়ছি খেতে পারছি না ঠিকমত। ইচ্ছে করছে ইরাম ভাইয়াকে একটা ধাক্কা দিয়ে পাশের টেবিলে পাঠিয়ে দেই। সায়ন ভাইয়ার দিকে তাকালাম। ওনি রেগে আছেন নাকি খুশি আছেন সেটা ওনার মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে না।।
.
আমার দিকে তাকিয়ে থাকাকালীন ইরাম ভাইয়া এক কান্ড করে বসলেন। আমার মুখের উপর কিছু চুল পড়তেই ওনি চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিলেন। এ ঘটনা সবারই চোখে পরেছে। বিশেষ করে সায়ন ভাইয়া আর তার অন্য বন্ধুদের। সেই সাথে সারারও। সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে আমি এ বিষয়টাতে কেমন রিয়েক্ট করবো হয়তো সেটাই সবাই জানতে চাচ্ছে। ইরাম ভাইয়ার এতক্ষণে বোধহয় হুঁশ এল। ওনি মুখটা ছোট করে বললেন,
– সরি মালিহা। আমার মনে হয়েছে চুলগুলো তোমার মুখের উপর পরায় তোমার অসুবিধা হচ্ছে তাই আমি কাজটা করে ফেলেছি। তুমি কিছু মনে করো না প্লিজ।
.
এবার সবাই আমার উত্তরের অপেক্ষা করতে লাগলেন। সেটা সবার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে। আমি একটু হেসে বললাম,
– ইটস ওকে আমি কিছু মনে করিনি ।
আমার এ উত্তরে ইরাম ভাইয়া খুব খুশি হলেন। আমাকে বলতে লাগলেন,
– আমি জানতাম তুমি ঐধরণের মেয়েই না যে এ বিষয়ে মাইন্ড করে বসবে। এজন্যই তো তোমাকে আমার এত ভালো লাগে।
ওনার কথা শেষ হতেই পাশের টেবিলে খুব আওয়াজ হলো। ঐ দিকে তাকিয়ে দেখি সায়ন ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে। তার বসার চেয়ারটা নিচে পড়ে আছে। ওনার চোখ -মুখ সব লাল হয়ে গেছে। বুঝতে পারছি ওনি কোনো কারণে রেগে গেছেন। কিন্তু কি কারণ সেটাই বুঝলাম। সিনান ভাইয়া বলে উঠলেন,
– তোর আবার কি হলো? দাঁড়িয়ে পড়লি যে।
– আমার খিদে নেই আমি আসছি।
– খিদে নাই মানে? একটু আগেই তো বললি খিদেয় নাকি পেট চোঁ চোঁ করছে। এখন আবার কি হলো?
– বললাম তো খিদে নেই। তোরা খেয়ে আয়।
এটা বলেই সায়ন ভাইয়া বেরিয়ে গেলেন। ওনি খেলেন না দেখে আমারও আর খেতে ইচ্ছে করছিল না। আমিও দাঁড়িয়ে গেলাম। ইরাম ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
– তোমার কি হলো? খাবে না তুমি?
– না আসলে খেতে ভালো লাগছে না।
– আজ কারোরই খেতে ভালো লাগছে না। আজ কি ভালো না লাগার কোনো দিবস আছে নাকি?
– জানি না। আপনি খেয়ে নেন। আমি আসছি সারা তুই তাড়াতাড়ি আয়।
আর কেউ না খাওয়ার কারণটা না জানলেও সারা খুব ভালো করেই জানে। তাই আমাকে আটকায় নি। আমি সোজা বাসে উঠে নিজের সিটে বসে পরলাম। সায়ন ভাইয়াও বাসেই আছেন। ওনার সিটে ওনি বসে আছেন চোখ বন্ধ করে। কি মনে হতেই আমি ওনার পাশের সিটে বসলাম। অন্যদিকে তাকিয়ে বললাম,
– আপনি কি কারণে এত রেগে গেছেন আমাকে একটু বলবেন?
ওনি আমার গলা শুনে হকচকিয়ে উঠে বসলেন। হয়তো ভেবেছেন আমি কোথা থেকে আসলাম? আমি ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– আপনি কি আমার উপরেই রেগে আছেন?
– আমি তোকে কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নই।
– হুমম জানি ।
– কি জানিস?
– আপনি আমাকে কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নন। আমি তো আপনার কাছে কৈফিয়ত চাই নি।জাস্ট খালাতো বোন হিসেবে তো জিজ্ঞেস করতেই পারি তাই না?
– খেতে ইচ্ছে করেনি তাই খাইনি। এটা নিয়ে তুই এত ভাবছিস কেন?
– না এমনিই জিজ্ঞেস করলাম।
– তুই কেন খেলি না?
– আপনি খাননি তাই।
– মানে আমার খাওয়ার সাথে তোর কি?
– সেটা বলতে পারবো না। আপনি খান নাই তাই আমারও খেতে ইচ্ছে করেনি। সেজন্য চলে এসেছি।
– হুমম।
– শুনুন খাবারের সাথে কখনো রাগ করবেন না। না হয় শরীর খারাপ হয়ে যাবে।
– আমাকে নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না।
– হুমম আপনাকে নিয়ে ভাবার মানুষ তো আছে। সেজন্য আমায় ভাবতে নিষেধ করছেন। ঠিক আছে চেষ্টা করবো না ভাবার। ওকে আমি আমার সিটে চলে যাচ্ছি।
.
আমি উঠে আমার সিটে এসে বসে পরলাম। আবার সে খারাপ লাগাটা ঘিরে ধরেছে।
কিছুই ভালো লাগছে না। খুব কান্না আসছে। কেন ওনি বুঝেন না আমি ওনাকে ছাড়া কিছুই ভাবতে পারি না।
নীরবে কিছুক্ষণ কেঁদে মনটা হালকা করে নিলাম। সবাই একে একে বাসে উঠে পরেছে।
এবার স্পিকারে গান লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাসও ছেড়ে দিয়েছে।
গানের সাথে তাল মিলিয়ে জুনিয়র, সিনিয়র সবাই মজা করতে লাগলো।
সিনিয়রদের সাথে কোথাও গেলে মজা করা যায় না এ ধারনাটা তখনি আমার পাল্টে গেল।
গানের সাথে সবাই গলা মেলাচ্ছে। কারো গানের গলা সুন্দর।
কারো গানের গলা শুনে মনে হয় একঝাঁক কাক ডাকাডাকি করছে।
আমার মাথায় এসব ঘুরছে। এসব ভেবে আমি মনে মনেই হেসে উঠি।
সারা কোনো কারণে আমার উপর রেগে আছে সেটা আমি বুঝতে পেরেছি।
লান্সের পর আর কোনো কথাই বলেনি আমার সাথে। চুপচাপ বসে আছে।
আমিও কম না। আমিও কোনো কথা বলার চেষ্টা করিনি।।
বিকেল চারটায় আমার কক্সবাজার নামলাম। কক্সবাজার আসতেই মনটা খুশিতে ভরে উঠলো।
চারিদিকে সমুদ্রের গর্জন শোনা যাচ্ছে। আমি আর সারা হোটেলের দিকে যেতে লাগলাম।
রুম আগে থেকেই বুক করা আছে। তখনি মনে পড়লো আমার মোবাইলে রিচার্জ করতে হবে।
তাই আমি সারাকে বললাম,
– তুই রুমে যা। আমার মোবাইলে রিচার্জ করতে হবে। আমি রিচার্জ করেই আসছি।
– তুই পারবি?
– হুমম পারবো না কেন? তুই যা আমি রিচার্জ করেই আসছি। আমি তোকে কল করে জেনে নেব কত নাম্বার রুমে আছি আমরা ওকে?
– আচ্ছা তাড়াতাড়ি আসিস।
– হুমমম।
আমি এবার রিচার্জ করার দোকান খুঁজে বের করলাম। কিন্তু দোকানদার আঞ্চলিক ভাষায় কি যে বলল আমার মাথায় কিছুই ঢুকলো না। উল্টো মাথা পুরোই ঘেটে গেল। কেন যে বাংলাদেশের সরকার এতগুলো আঞ্চলিক ভাষা রেখেছে কে জানে? আগে যদি জানতাম এ সমস্যায় পড়তে হবে তাহলে আসার আগেই এ ভাষা রপ্ত করে আসতাম। এখন রিচার্জ তো করা হলোই না উল্টো মাথাটাই কেমন ওলোট -পালোট হয়ে গেছে। হোটেলে ফিরে এসে সারাকে কল করবো তখনি মনে পরলো মোবাইলে টাকা নেই। এবার কিভাবে সারার সাথে যোগাযোগ করবো? মাথায় বুদ্ধি এল রিসেপশন থেকেই তো কল করতে পারবো। আমি রিসেপশন থেকে সারাকে কল দিলাম। সারা কল ধরে বলতে লাগলো,
– কে বলছেন?
– আমি মালিহা।
– অহহ তুই। এটা আবার কার নাম্বার?
– আমি তোকে রিসেপশন থেকে কল করেছি। আমার মোবাইলে রিচার্জ করতে পারি নি তাই। এখন বল আমাদের রুম কোথায়?
– ঐ তো তিনতলায় ডান পাশের তিন নম্বর রুম।
– ওকে আমি আসছি। দরজা খুলে রাখিস।
– ওকে।
আমি এবার তিন তলায় এসে পৌঁছালাম। ছেলেরা তিন তলায় এ থাকবে। তবে ডান পাশে মেয়েরা। আর বাম পাশে ছেলেরা। তিনতলায় এসে দেখলাম ডান পাশে অনেকগুলো রুম। তেমনি বাম পাশেও। আমি ডান পাশের তিন নাম্বার রুমের সামনে গেলাম। রুমের দরজাটা খোলাই ছিল। হয়তো আমি সারাকে বলেছি সেজন্য। রুমে ঢুকে দেখলাম অনেকেই রুমে নেই। তারমানে আমি ছাড়াও অনেকেই এখনো আসেনি। একটা খাটে কেউ কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে। আমার মনে হচ্ছে এটা সারা। কারণ সারার এ ধরণের অভ্যেস আছে। তাই বলে কেউ ফ্রেশ না হয়ে এভাবে শুয়ে শুয়ে ঘুমোবে? দেখাচ্ছি তোকে মজা। আমি এবার সারার পাশে শুয়ে পরলাম। তারপর কাঁথার উপর দিয়ে সারাকে সুড়সুড়ি দিতে লাগলাম। কিন্তু সারার এমন গন্ডারের চামড়া ওর একটুও সুড়সুড়ি লাগছে না। ওয়াশরুম থেকে পানি পড়ার আওয়াজ আসছে তারমানে কেউ ওয়াশরুমে আছে। আমি শুয়ে শুয়ে মোবাইল টিপতে লাগলাম। ওয়াশরুমে যে আছে সে বেরুলেই আমি ওয়াশরুমে ঢুকবো।।
.
ওয়াশরুমের দরজা খোলার আওয়াজে সেদিকে তাকালাম। যা দেখলাম তাতে আমার পুরো পৃথিবীই ঘুরছে। আমি তাড়াতাড়ি উঠে বসলাম। সায়ন ভাইয়া ওয়াশরুম থেকে বের হয়েছে। তার পরনে শুধু এটা তোয়ালে আছে। আর পুরো শরীরে কিছুই নেই। ওনি কি পাগল হয়ে গেলেন নাকি। ছেলেদের ওয়াশরুমে কেউ আছে। তাই বলে দরজা খোলা পেয়ে একেবারে মেয়েদের ওয়াশরুমে চলে আসবেন? আমি কিছুই বলতে পারলাম না। সায়ন ভাইয়াও আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছেন। মনে হয় যেন আমি ভুল করে এই রুমে চলে এসেছি। কিন্তু আমি তো ভুল করিনি। তবে ওনি এভাবে কেন তাকিয়ে আছেন?
সায়ন ভাইয়া হঠাৎ চিৎকার করে বলে উঠলেন,,
– তুই আমাদের রুমে কি করছিস?
.
আমি তো পুরোই অবাক এটা তো আমাদের রুম। ওনাদের রুম হলো কিভাবে? আমি অবাক হয়ে বললাম,
– আপনাদের রুম মানে এটা তো আমাদের রুম। আপনি ভুল করে বোধহয় এ রুমে এসে পড়েছেন।
– আমি কোনো ভুল করিনি। তুই ভুলে এই রুমে চলে এসেছিস।
– এটা কি করে হতে পারে? সারা তো আমাকে এ রুমের কথাই বলল।
– এ রুমের কথা বলেনি। অন্য রুমের কথা বলেছে । গিয়ে সারাকে জিজ্ঞেস কর।
– তাহলে এটা কে? আমি তো এতক্ষণ এখানেই শুয়ে ছিলাম।
তখনি কাঁথা মুড়িয়ে ঘুমানো ব্যাক্তি উঠে বসলো। তাকে দেখে আমি পুরোই অবাক। এটা তো ইরাম ভাইয়া। আমি চিৎকার দিয়ে বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলাম। ছিঃ ছিঃ তারমানে আমি এতক্ষণ ধরে ইরাম ভাইয়ার সাথে শুয়ে ছিলাম। এ তো লজ্জা বোধহয় আমি জীবনে এর আগে কখনো পাইনি। সব ঐ সারার জন্য। উল্টোপাল্টা ঠিকানা দিয়ে আমাকে এতবড় একটা লজ্জার মধ্যে ফেলে দিল।
– কিরে এবার বের হ রুম থেকে। সারার থেকে ঠিক ঠিকানা নিয়ে নিজের রুমে যা।
সায়ন ভাইয়ার কথা শেষ হতে দেরি আমার দৌড় দিতে দেরি হয়নি।
লজ্জায় এখন আমার ইচ্ছে করছে মাটি খুঁড়ে মাটির নিচে ঢুকে যাই।
কিন্তু আমি টাইলসের উপর দাঁড়িয়ে আছি। টাইলস খুঁড়া তো আর সম্ভব না।
সায়ন ভাইয়াদের রুম থেকে বেরিয়ে আর পেছনের দিকে তাকাইনি।
ইরাম ভাইয়া আমার অবস্থা দেখে মুচকি মুচকি হাসছিলেন।
সেটা আমার চোখ এড়ায়নি। ছিঃ সায়ন ভাইয়া কি মনে করবে আমাকে?
সব সারার জন্য হয়েছে। তোর আজকে খবর আছে। দাঁড়া তোকে খুঁজে বের করি আগে।
মনে মনে এসব বলছিলাম আর চারিদিকে সারাকে খুঁজছি।
তখনি চোখে পরলো বেয়াদপটা মোবাইল টিপছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে।
বাম পাশের তিন নাম্বার রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখেই বলে উঠলো,
– তোর এতক্ষণ লাগে তিনতলায় আসতে।
আমি দরজা খুলে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে আছি খবর আছে তোর।
– তুই আমাকে কোন রুমের ঠিকানা দিয়েছিস মনে করতো।
– কেন ডান পাশের তিন নাম্বার রুম?
– ঐ এটা ডান পাশ? বেয়াদপ কোথাকার তোর জন্য আজ আমাকে কতবড় লজ্জায় পড়তে হয়েছে তুই জানিস। তোর ডানপাশের তিন নাম্বার রুমটা সায়ন ভাইয়াদের ছিল।
আমি এতক্ষণ ওখানেই ছিলাম।
সারা এবার জিভ কেটে বলল,
– সরি দোস্ত তুই তো জানিস আমার ডান আর বামের সমস্যা আছে। এই দুইটা জিনিস আমার মনে থাকে না।
– তো আর তুই ভার্সিটিতে পড়িস কেন? যা ওয়ান -টুতে ভর্তি হয়ে আগে ডান কোনটা?
বাম কোনটা? সেটা শিখ।
রাগে আমার মুখ দিয়ে আর কোনো কথাই বেরুলো না।
সারার ডান -বামের গন্ডোগোলে পড়ে আমাকে কতবড় লজ্জাটাই না পেতে হলো।
আমি সোজা রুমে চলে এলাম। সারাও চুপচাপ আমার পেছন পেছন রুমে ঢুকে গেল।
সারা খুব ভালো করেই জানে আমি কি পরিমাণ রেগে আছি।
তাই ভয়ে আমার সাথে আর কথা বলল না। আমি ওয়াশরুমে চলে গেলাম।।
চলবে,,,

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com