Breaking News

গল্পঃ ভাবির অহংকারী বোন । পর্ব - ৬



আমরা তিনজন তিনটা চেয়ারে বসে ফুচকা খাচ্ছি..

হঠাৎ
মিথিলা চেয়ার থেকে উঠে এসে
মিথিলাঃ হা কর.. (তাকিয়ে দেখি মিথিলা ফুচকা হাতে দাঁড়িয়ে আছে)
মিথিলাঃ হা কর না..
আমিঃ( হা করতেই মিথিলা একটা ফুচকা আমার গালে পুরে দিল)
মারিয়াঃ আপু আমাকেও একটা খাইয়ে দাও।
মিথিলাঃ তোর হাত নেই? নিজে খেতে পারিস না..?
মারিয়াঃ ভাইয়ারও তো হাত আছে তাহলে তুমি খাইয়ে দিলে কেন..?
মিথিলাঃ সেটা আমার ইচ্ছা।
মারিয়াঃ একটা খাইয়ে দাও না..
মিথিলাঃ আমি পারবো না। পারলে তুই নিজে নিয়ে খা।
আমিঃ দে আমি খাইয়ে দিচ্ছি
মারিয়াঃ আচ্ছা দাও।
আমার প্লেট থেকে একটা ফুচকা নিয়ে মারিয়াকে খাইয়ে দিলাম। ফুচকার বিল মিটিয়ে নদীর একেবারে কিনারে চলে গেলাম। মিথিলা কয়েকটা পিক তুলল এবং ভিডিও করলো। আরও কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে বাসার দিকে রওনা দিলাম।
আমিঃ মারিয়া, দুপুর হয়ে গেছে প্রায় তোরা একা বাসায় যেতে পারবি..?
মিথিলাঃ কেন..?
আমিঃ আমি বন্ধুর থেকে নোট গুলো নিয়ে যেতে পারতাম।
মিথিলাঃ নোট গুলো কি খুব বেশি দরকার..?
আমিঃ হ্যাঁ, আজকে না আনতে পারলে আর আনা হবে না।
মিথিলাঃ আচ্ছা তাহলে যা, আমরা চলে যেতে পারবো।
আমিঃ আচ্ছা,,
মিথিলাঃ তাড়াতাড়ি চলে আসিস।
আমিঃ ওকে,,
মারিয়া আর মিথিলা চলে যাবার পর আমিও বন্ধুর বাসার দিকে রওনা দিলাম। আপনাদের তো বলাই হয়নি এখানে এসেও বেশ কিছু ভালো বন্ধু হয়েছে। এইজন্য কলেজে না গেলেও কোন সমস্যা হয় না পড়ালেখা নিয়ে।
বন্ধুর বাসায় গিয়ে নোটগুলো নিয়ে কলেজের খোঁজ-খবর নিয়ে বাসায় এলাম। বাসায় এসে দেখি মিথিলা মারিয়া আর আন্টি একসাথে বসে টিভি দেখছে। ওদের সাথে কথা বলে চলে এলাম আমার রুমে। এসে নোটগুলো টেবিলে রেখে গোসল সেরে বিছানার উপর বসলাম।
মারিয়াঃ ভাইয়া তোমাকে খেতে ডেকেছে।
আমিঃ আচ্ছা তুই যা আমি আসছি
মারিয়া চলে গেল আমিও খাবার যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছি তখনই দেখি মিথিলা
আমিঃ তুই আবার আসলি কেন..?
মিথিলাঃ তোকে খাবার জন্য ডাকছে
আমিঃ মাত্রই তো মারিয়া বলে গেল, আমিও যাচ্ছিলাম
মিথিলাঃ ও আচ্ছা আয় তাহলে।
আমিঃ আচ্ছা যা।
মিথিলাঃ রাতে কিছু বই দিস পড়বো।
আমিঃ ওকে তুই এসে যেটা ভালো লাগে নিয়ে যাস।
মিথিলাঃ আচ্ছা
আমিঃ চল এখন।
দুজনে একসাথেই এলাম নীচে। এসে দেখি মারিয়া আর আন্টি বসে আছে। আমি আর মিথিলা গিয়ে পাশাপাশি বসলাম। আন্টি উঠে সবাইকে খাবার বেড়ে দিল।
সবাই বসে খাচ্ছি..
আমিঃ আজকের খাবারটা তো বেশ মজা হয়েছে।
আন্টিঃ কেন আগে কি খারাপ হতো..?
আমিঃ না তেমনটা না, তবে আজকের টা একটু বেশি মজা লাগছে।
মিথিলাঃ আমি এসেছি না, এইজন্য একটু স্পেশাল ভাবেই রান্না হয়েছে।
আন্টিঃ আচ্ছা এখন কথা না বলে খেয়ে নে
সবাই চুপচাপ বসে খাচ্ছি হঠাৎ
মারিয়াঃ আম্মু খাবার বসে অন্য দিকে তাকিয়ে খেলে কি হয়...?
আন্টিঃ অন্যদিকে তাকিয়ে খেতে নেই। খাবারের মধ্যে যদি পোকা পড়ে তাহলে তো অন্য দিকে তাকিয়ে খেলে সেটাও পেটে চলে যাবে
মারিয়াঃ তাহলে মিথিলা আপু শুনলে তো, অন্যদিকে তাকিয়ে খেলে কি হয়..?
মিথিলাঃ আমি কি অন্য দিকে তাকিয়ে আছি নাকি..?
মারিয়াঃ তুমিতো ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে ভাত মুখে দিচ্ছ, প্লেটের দিকে তাকাচ্ছোই না।
মিথিলাঃ একদম বেশি কথা বলবি না। তুই দেখেছিস যে আমি ওর দিকে তাকিয়ে খাচ্ছি..?
মারিয়াঃ আমি না দেখলে এমনিই বলছি। তুমি যে চোখ বাঁকা করে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছো, এভাবে তাকিয়ে থাকলে তো ভাইয়ার পেট খারাপ করবে।
মারিয়ার কথা শুনে বোকা হয়ে গেলাম সাথে একটু লজ্জাও পেলাম। আন্টির সামনে এসব কি বলছে।
আন্টির দিকে তাকিয়ে দেখি মুখ টিপে হাসছে।
আন্টিঃ খাবার সময় এত কথা না বলে চুপচাপ খাবার শেষ কর।
মিথিলা আমার দিকে আর একবার তাকিয়ে মাথা নিচু করে খাবার খেতে লাগলো। আমিও আমার মত খাওয়া শেষ করে উঠে গিয়ে সোফায় বসলাম। ওরা এখনো খাচ্ছে। একটু পর খাবার শেষ করে উঠে এলো।
মারিয়াঃ ভাইয়া তুমি কি করবে এখন..?
আমিঃ কি আর করব, রুমে গিয়ে ঘুমাবো।
মিথিলাঃ এখন আবার কিসের ঘুম..?
আমিঃ শান্তির ঘুম..
মিথিলাঃ শান্তির ঘুম ঘুমোতে হবে না
আমিঃ হবে।
মিথিলাঃ এখন বসে গল্প করবো..
আমিঃ এখন কি গল্প করার সময়..? বিকালে গল্প করবো।
মিথিলাঃ না এখন কোন ঘুম হবে না।
আমিঃ কারো কোন কথাই শুনব না আমি ঘুমাবো
আর দেরি না করে ওখান থেকে উঠে চলে এলাম। এখন দুপুরে নাকি আড্ডা দেওয়ার সময়।
রুমে এসেই ধপাস করে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। বিকালে ঘুম ভাঙলো মারিয়ার ডাকে উঠে দেখি মারিয়া মুখ চেপে হাসছে
আমিঃ এভাবে হাসছিস কেন পাগলের মত..?
মারিয়াঃ এমনি..
(দরজার দিক থেকে আওয়াজ আসাতে তাকিয়ে দেখি ওখানে মিথিলা দাঁড়িয়ে হাসছে)
আমিঃ হয়েছে কি তোদের..? সবাই এরকম ভাবে হাসছিস কেন..?
মারিয়াঃ এমনি হাসছি...
আমিঃ পাগল হয়ে গেল নাকি...
ভূত দেখার মত দেখছে আমাকে। মনে একটু খটকা লাগল, দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম। আয়নার সামনে দাঁড়াতেই আমার চোখ দুটো খুলে হাতে চলে এলো। আমাকে পুরা মেয়েদের মত লাগছে। ঠোটে লিপিস্টিক চোখে কাজল মুখে মেকআপ ওহ নো তাহলে ওই দুই শাকচুন্নি মিলে এসব করেছে...
দাঁড়া দেখাচ্ছি মজা আমি দ্রুত মুখ ধুয়ে নিলাম। আমার এরকম অবস্থা করেছে এইজন্য এতো হাসাহাসি। দারা তোদের হাসা বের করছি। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে দেখি মিথিলা আন্টিকে ফোন থেকে কি যেন দেখাচ্ছে আর হাসছে। আমি ওদের কাছে যেতেই মিথিলা ফোনটা সামলে নিল।
আমিঃ দেখি তোর ফোনটা।
মিথিলাঃ কেন..
আমিঃ একটু দরকার আছে।
মিথিলাঃ না, আমার ফোনে তোর কি দরকার..?
আমিঃ দে একটু..
মিথিলাঃ আমার ফোন তোর কাছে দিতে যাব কেন..?
আমিঃ একটু দে আমি এখনই দিয়ে দেব।
মিথিলাঃ না..
আমিঃ তোকে এভাবে বললে হবে না,, দ্বারা...
এটা বলেই মিথিলার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে দিলাম এক দৌড়। মিথিলাও আমার পিছনে পিছনে দৌড়ে আসছে..
মিথিলাঃ আমার ফোন দিতে বলছি..
আমিঃ আগে আমার কাজটা সেরে নেই।
মিথিলাঃ আমার ফোনে তোর কিসের কাজ?
আমিঃ তুই যে আমাকে সাজিয়ে পিক তুলেছিস, সেগুলো ডিলিট করে নেই তারপর দিচ্ছি।
মিথিলাঃ আমার ফোন ফেরত দে বলছি,,
আমি ফোনটা না দিয়ে দৌড়ে ছাদে চলে এলাম মিথিলা ও দৌড়াতে দৌড়াতে ছাদে চলে এসেছে। পুরোটা ছাদ জুড়ে আমাকে ধরার জন্য ধাওয়া করছে মিথিলা।
মিথিলাকে পাশ কাটিয়ে ওকে ছাদে রেখেই সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে নিচে নেমে এলাম।
হঠাৎ,,, উপর থেকে মিথিলার চিৎকারে ওর কাছে গিয়ে দেখি মিথিলা পায়ে পায়ে হাত দিয়ে বসে আছে।
আমিঃ কি হয়েছে?
মিথিলাঃ সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে নামতে গিয়ে পায়ে ব্যথা পেয়েছি।
( আন্টি ও মিথিলার চিৎকার শুনে উপরে উঠে)
আন্টিঃ কি হয়েছে এখানে...?
আমিঃ সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে পা মচকে গেছে।
আন্টিঃ এভাবে লাফালাফি করলে তো মচকাবেই।
মিথিলাঃ আমি কোথায় লাফালাফি করলাম?
আন্টিঃ হয়েছে আর বড় বড় কথা বলতে হবেনা। নিচে চল বরফ লাগিয়ে দেই।
মিথিলাঃ না ঠিক আছে।
আন্টিঃ চল বলছি।
মিথিলাঃ আমিতো হেঁটে যেতে পারবো না। পায়ে অনেক ব্যথা।
আন্টিঃ তাহলে কিভাবে যাবি?
মিথিলাঃ তুমি কোলে করে নিয়ে যাও।
আন্টিঃ আমি নিজেই হাটতে পারি না আর তোকে কোলে করে নিয়ে যাব,, শোনো মেয়ের কথা।
মিথিলাঃ তাহলে আমি কি করবো, হেঁটে যেতে পারবো না তো..
আন্টিঃ শাকিব একটু নিচে নিয়ে আয় তো।
আমিঃ আমি পারবোনা।
মিথিলাঃ পারবি না মানে, তোর জন্যই হয়েছে তোকে নিয়ে যেতে হবে।
আন্টিঃ নিয়ে আয় একা আসতে পারবে না।
কি আর করার ওকে কোলে করে নিয়ে আসতে হল। রুমের কাছে এসেই আন্টি বলল রুমের ভেতর নিয়ে শুয়ে দিতে। আর আন্টি চলে গেল বরফ আনতে। মিথিলাকে নিয়ে ওর রুমে চলে এলাম। এসেই বিছানার উপর ধপাস করে দিলাম ফেলে।
মিথিলাঃ ওই হারামি ব্যথা লাগেনা বুঝি?
আমিঃ আমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল এরকম মটকু কে কোলে করে আনা যায়?
মিথিলাঃ আমি মটকু তাই না, দাড়া দেখাচ্ছি,,
আন্টিঃ আবার কি হলো?
আমিঃ কিছু না।
আন্টিঃ দে বরফ লাগিয়ে দিচ্ছি।
মিথিলাঃ আমার কাছে দাও আমি লাগিয়ে নিচ্ছি।
আন্টিঃ পারলে নে আমি রান্নাঘরে গেলাম।
( আন্টি চলে গেল)
মিথিলাঃ দেখি ফোনটা একটু দে তো।
আমিঃ কি করবি?
মিথিলাঃ দরকার আছে একটু ফোন করবো।
আমিঃ কার কাছে?
মিথিলাঃ বাসায় ফোন করবো।
আমিঃ আমার কাছে আবার দিবিতো?
মিথিলাঃ দেব ফোনটা করে দিয়ে দেব
আমি পকেট থেকে ফোনটা বের করে ওর কাছে দিয়ে দিলাম। মিথিলা ফোনটা হাতে পেতেই এক লাফে বিছানার একপাশে চলে গেল।
আমিঃ এটা কি হলো?
মিথিলাঃ কই?
আমিঃ এভাবে লাফ মেরে সরে গেলি কেন?
মিথিলাঃ তুই ফোন আর পাবি না।
আমিঃ মানে,,
মিথিলাঃ মানে এটা তোর থেকে ফোন নেওয়ার বাহানা ছিলো।
আমিঃ তার মানে তুই মিথ্যা বলেছিস যে তোর বাসায় ফোন দিবি?
মিথিলাঃ হ্যাঁ.. হি হি হি
আমিঃ মিথ্যাবাদী,,,
( মিথিলা হাসতে শুরু করলো)
আমিঃ মেরে দাঁত ভেঙে দেবো। পা মচকে গিয়েছেনা, ঠিক হয়েছে। এটাই তোর শাস্তি।
মিথিলাঃ কোথায় পা মচকেছে? কিচ্ছু হয়নি,,(পা নাড়িয়ে দেখালো)
আমিঃ এটাও মিথ্যা?
মিথিলাঃ হ্যাঁ এটাতো তোকে ধরার জন্য।
আমিঃ হারামি, কুত্তি, শিয়ালের নানি...
মিথিলাঃ এবার পিকটা ফেসবুকে ছেড়ে দিবো।
আমিঃ একদম এটা করবিনা।
মিথিলাঃ তুই শুধু দেখ আমি কি করি।
আমিঃ কাজটা কিন্তু একদমই ঠিক হচ্ছে না। ফটোগুলো ডিলিট কর।
মিথিলাঃ পারবোনা।
আমিঃ ডিলিট করবিনা তো?
মিথিলাঃ না..
আমিঃ দেখি ফোনটাতে দে( হাত বারিয়ে)
মিথিলাঃ দেবনা দেবনা দেবনা..
আমিঃ দাঁড়া দেখাচ্ছি..
আমি বিছানায় হামাগুড়ি দিয়ে মিথিলার পা ধরে টেনে কাছে নিয়ে এলাম।
আমাকে ফোনটা নিতেই হবে কিন্তু মিথিলা ফোন দিতে নারাজ।
মন খারাপ। গল্প আজ দিতে চাইছিলাম না। তবুও দিলাম...
পরবর্তি পর্ব কাল রাত ৮:০০ টায় দেবো..
.
চলবে...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com