Breaking News

মন নিয়ে কাছাকাছি | পর্ব - ২৪



ইভা, মুবিন জীবনের প্রথম এমন দু'জন মেয়েকে দেখল যারা ফুচকা পছন্দ করে না। ওরা অবাকও হলো। মেয়ে মানেই তো ফুচকা পাগল। টয়লেটের পানি দিয়ে টক বানানো হয় বললেও এরা ফুচকা খাওয়ার লোভ সামলাতে পারে না। কিন্তু এরা দু'জন পুরাই ভিন্ন। জায়িন সময় দেখছে। আরও কতক্ষণ লাগবে কে জানে। ইভা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,

"এই মেয়েরা, তোমরা সত্যিই ফুচকা পছন্দ করো না?"
দু'জনই একসাথে উত্তর দিল,
"নাহ।"
ইভা বিস্ময় ধরে রাখতে পারলো না। তার কাছাকাছি এটা অবিশ্বাস্য ঘটনা বলেই মনে হচ্ছে।
"সত্যি!"
"ইয়েস।"

পরিবারের সবাই এই কথাটা জানে মীরা মাহিমা কেন ফুচকা পছন্দ করে না।
এদের এই ফুচকা পছন্দ না করার পেছনের অনেক বড় ইতিহাস আছে।
ইতিহাসটা সংক্ষেপে বলা যাক। স্কুল শেষে প্রতিদিন ওরা ফুচকা খেয়ে বাড়ি ফিরত।
এমন কত দিন গেছে যে বাড়ি ফিরে আর ভাত খেতে পারেনি।
তো একদিন মীরার প্লেটে ফুচকায় ভীষণ খারাপ একটা জিনিস পেয়েছিল। যা খাওয়া যায় না।
তা দেখেই যে এই জিনিসের উপরে ঘৃণা বসেছে।
ওই ঘটনার পর বাড়ি ফিরে দু'জনেই পেট খারাপ করেছিল।
এবং ওই পেট খারাপ সিরিয়াস অবস্থায় পৌঁছে গিয়ে মীরাকে হাসপাতাল পর্যন্ত টেনে নিয়েছিল।
দুই তিনটা সপ্তাহ যেভাবে ভুগিয়েছে তা ভুলবার মতো নয়।
বাড়ির সবাই এই কথা জানে। ইভা ওসব ঘটনা জানে না বলেই এমন অবাক হচ্ছে।
"মানে তোমরা মেয়ে মানুষ হয়ে ফুচকা পছন্দ করো না! এরকমটা কিন্তু খুব কমই দেখা যায়।"
"ফুচকা কী দিয়ে বানা... বলতে বলতে থেমে গেল মীরা। কারণ ফুচকা ওয়ালা
লোকটা যেন কেমন চোখে তাকে দেখছে। লোকটার সামনে তো আর বদনাম করা যায় না।
মীরা চোখ ইশারা করে ইভাকে কাছে ডাকলো। ইভার কানে কানে বলল,

" ফুচকা কীভাবে বানায় জানলে তুমিও ফুচকা খাওয়া ছেড়ে দিবে। দুই হাতে, দুই পায়ে, টয়লেট থেকে এসে হাত না ধুয়ে, নাক পরিষ্কার করে আরও কতভাবে...
"ইইউ! আর বলো না। থামো থামো।"
মীরা মাহিমা শব্দ করে হাসছে। ইভার সত্যিই এখন আর ফুচকা খেতে ইচ্ছে করছে না। জায়িন অদ্ভুত চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। যেন চিরিয়াখানায় নতুন কোন প্রাণী দেখছে। এরা তো সাঙ্ঘাতিক মেয়ে! মীরা মাহিমাকে হাসতে দেখে তনি বুঝে গেল। তনি ধমকে উঠে বলল,
"খচ্চরের বাচ্চারা আজ ওসব কথা বললে সত্যি সত্যিই কিন্তু লাথি খাবি। তোরা খাস না বলে কি বাকিদের খাওয়া দেখতে পারবি না।"
মারী দাঁত কেলিয়ে হাসতে হাসতে বলল,
"আমি কী বলেছি? কিছুই তো বলিনি।"
মাহিমা হেসে কুটিকুটি। তার ভাইয়ের চোখ রাঙানো পাত্তাই দিচ্ছে না।
"মীরা তোর মনে আছে ওইদিন আমরা কী দেখেছিলাম? মনে নেই?"
"একশোবার মনে আছে। ওই জিনিস দেখার পর থেকেই তো আমরা ফুচকা খাওয়া ছেড়েছি।"
"তনি আপুকে বলব কী দেখেছিলাম? বলে দেই হ্যাঁ।"

"বল।"
দু'জন দুষ্টুমি করছে এটা বোঝাই যাচ্ছে। কিন্তু তনি, প্রিয়া চেতে যাচ্ছে। প্রিয়া রেগেমেগে বলল,
"ইভান ভাই তুমি তোমার আদরের বোনদের কিছু বলবে? ওরা কিন্তু আমার হাতে চড় খাবে।"
ইভান মিছেমিছি ওদের বকে দিল। কিন্তু তাতেও দু'জনের কারোরই তেমন ফারাক পড়ল না। মুবিন অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে সব দেখছে। কী বিচ্ছু মেয়ের দল! প্রিয়া, তনি ফুচকা খাওয়ার সময় ওরা চুপ থাকলো। মজা করার সীমাও ওরা জানে। কারো পছন্দের জিনিস নিয়ে অতিরিক্ত মজা করা ঠিক না। মীরা মাহিমা কিছু খায়নি। ইভান ফুচকার বিল দিয়ে ওদেরকে এখানে দাঁড় করিয়ে রেখে কোথায় যেন গেল। প্রায় সাথে সাথেই হাতে পাঁচ ছয়টা হাওয়াই মিঠাই নিয়ে ফিরে এলো। মীরা মাহিমার কাছে এসে বলল,
"ধর।"
ওরা খুশি হয়ে সবগুলোই নিয়ে নিল। মীরা আহ্লাদে গলে নিয়ে ন্যাকামির লিমিট পার করে বলল,
"অউওও! ইভান ভাই তুমি কত ভালো। তুমিই আমার একমাত্র ভাই। এজন্যই তো আমি তোমাকে এত পছন্দ করি।"
মাহিমাও পিছিয়ে থাকল না।
"ইভান ভাই আমার নিজের ভাইকেও আমি এতটা ভালোবাসি না যতটা তোমাকে ভালোবাসি।"
আবির মাহিমার মাথায় চাটি মারলো।

"ওরে বাটপার! এই কথা আমাকেও কতবার বলেছিস তুই।"
মাহিমা মাথায় ব্যথা পেয়েছে। সে মাথায় হাত দিয়ে ডলতে ডলতে বলল,
"মন থেকে বলিনি। মুখে মুখে বলেছি।"
ইভা ফোঁস করে হেসে ফেলল। ওদের সাথে থাকলে হাসতে হাসতে ইভার পেট ফেটে যাবে। একটার থেকে আরেকটা বড় ড্রামা বাজ। ইভান বলল,
"তোরা দুইটা করে রাখ। বাকি গুলা তনি, প্রিয়াকে দে।"
মীরা দিবে না। সে সজোরে মাথা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলল,
"জীবনেও না। ওরা ফুচকা খেয়েছে। আমরা কিছুই খাইনি। আমি দিব না।"
মাহিমাও ওর হাতের হাওয়াই মিঠাই পেছনে লুকিয়ে ফেলে বলল,
"আমিও দেব না। একটুও না।"
তনি, প্রিয়া অভিমান করে মুখ ফুলিয়ে বলছে,
"ইভান ভাই তুমি এই দুই শয়তানকেই বেশি আদর করো। সবসময় ওদেরকে সব জিনিস বেশি বেশি দাও। এটা কিন্তু ঠিক না। আমরাও তোমার বোন। সব বোনদের সমান চোখে না দেখলে পাপ হবে।"
এরা কি থ্রি ফোরে পড়া বাচ্চা! কেউ দেখলে বলবে এরা সবাই কলেজ, ভার্সিটিতে পড়ে। ওদের এই খুনসুটির জন্যই ইভার এই পরিবার এত পছন্দ হয়েছে। সে সবটাই এনজয় করছে। কিন্তু মুবিন ভিন্ন গ্রহ থেকে টপকে পড়া এলিয়েনের মতো সবকিছু দেখছে। জায়িনের চেহারার ভাবে তেমন কিছু বোঝা যাচ্ছে না। ইভান ওদেরকে বুঝিয়ে বলল,

"হাওয়াই মিঠাই দিয়ে দে। তোদেরকে আমি আরও অনেককিছু খাওয়াবো।"
মীরা শর্ত রাখল।
"বার্গার।"
"হুম।"
মাহিও ইভানের কথা মেনে নিল। তার থেকে একটা হাওয়াই মিঠাই তনির হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
"বিরিয়ানি।"
মীরা তার থেকে প্রিয়াকে দিল। মীরা প্রথমে বার্গার বললেও বিরিয়ানিও তার ভীষণ পছন্দ। সে মাহিকে বলল,
"তুই আমার থেকে বার্গার খাবি। আমি তোর থেকে বিরিয়ানি। ডান?"
"ওকে ডান।"
ইভান এদের বাচ্চামি দেখে হাসছে। এই দুইটা সত্যিই পাগল। সবাই বড় হয়ে গেলেও এই দুইটা যেন কোনদিনও বড় না হয়। সবসময় এরকমই থাকে। তনি, প্রিয়া জানে এই দুইটা পাগল। তাই তারা আর তর্কাতর্কি করলো না। বাড়ির ছোটরা একটু বেশিই ভালোবাসা পায়। এটাই নিয়ম। রুশমি, মাহা বড় হলে মীরা মাহির জায়গা ওরা নিবে।

কাল হলুদ আজ মীরা মাহিমা বাড়িতে কাউকে না জানিয়েছে ইভা আপুদের বাসায় চলে এসেছে। আসলে ওরা দেখতে এসেছে ইভা আপুদের বাড়ি কীভাবে সাজাচ্ছে। ওদের পেয়ে ইভা ভীষণ খুশি।ছাঁদে হলুদের স্টেজ বেঁধেছে শুনে দু'জনই দৌড়ে চলে এলো। মীরা আগে আগে ছুটছে। মাহিমা ওকে ধরতে পারছে না। দু'জন প্রতিযোগিতা করে ছাঁদে আসতে গিয়ে মীরা সিঁড়ি মাথায় কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে হুড়মুড়িয়ে পড়ে গেল। পেছনে মাহিমা ছিল। মীরা মাহিমার উপরে পড়ে ওকে নিয়ে গড়িয়ে পড়ছে। থমকে দাঁড়িয়ে এই দৃশ্য জায়িন হতবুদ্ধি হয়ে চেয়ে দেখছে। এরা এখানে কোত্থেকে এসেছে? পড়ে গিয়ে দু'জনই ওরে বাবাগো, ওরে মাগো করছে। চার পাঁচটা সিঁড়ি গড়িয়ে পড়েছে। ব্যথা পেয়েছে এটাই স্বাভাবিক। মীরা কোমর ধরে ব্যথায় মুখ কুঁচকিয়ে বলে উঠল,
"ও আল্লার, এই বয়সেই আমার কোমর গেল রে।কোন কানার বাচ্চা হ্যাঁ! চোখে দেখতে পাস না? ও বাবা, আমি এখন হাঁটব কীভাবে? বাড়ি ফিরব কীভাবে?"
মীরা তার উপর পড়েছে। তাই মাহিমার সব রাগ মীরার উপরে। সে-ও ব্যথায় কাতরাতে কাতরাতে বলল,
"হারামির বাচ্চা। মোটির ছাও। তুই আমার উপর পড়লি কোন দুঃখে? তোর নায়কের উপরে পড়ার শখ আমাকে দিয়ে মিটালি কেন? ও আল্লাহ, আমার ঠ্যাং মনে হয় ভেঙে গেছে। আমার বিয়েতে নাচা চাঙ্গে উঠেছে।"

"ভাঙা ঠ্যাং নিয়েও ন্যাংড়াতে পারবি। কিন্তু আমি ভাঙা কোমর নিয়ে উঠে দাঁড়াব কীভাবে?"
পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়েও এদের মাথায় আজেবাজে খেয়ালই আসছে। এমন না যে আমাদের সাথে আরও খারাপ কিছু হতে পারতো। হাত পা ভাঙতে পারতো। জায়িন দীর্ঘশ্বাস ফেলল। কী দরকারে নিচে আসছিল ওটাই ভুলে গেল। জায়িন গটগট করে আবার উপরে চলে যাচ্ছে শব্দ পেয়ে মীরা খেঁকিয়ে উঠল,
"কেমন মানুষ রে! মানবতা নেই? দুইটা মেয়েকে আজীবনের জন্য পঙ্গু করে দিয়েও একটু অপরাধবোধ হচ্ছে না। আমাদের হাসপাতালে নিয়ে যাবে তো দূরের কথা। আমরা ঠিক আছি কি-না এই কথাটাও জিজ্ঞেস করলো না। মানুষ না অন্য কিছু?"
জায়িন থেমে গেল। মীরা কথাগুলো বেশ রেগেই ঝাঝের সাথে বলেছে। কারণ সে এখনও জানে না মানুষটা কে? জায়িন ফের একবার লম্বা করে শ্বাস টেনে উপরে না গিয়ে নিচে নামতে লাগলো। মীরা এখনও কোমর ডলছে। মাহিমা অল্প ব্যথা পেয়েছে। সে জিজ্ঞেস করল,
"তুই ঠিক আছিস মীরা?"
"জানি না রে। উঠে দাঁড়ালে বলতে পারবো।"
মীরার কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই কারো গম্ভীর গলা শোনা গেল।
"ওঠো দেখি। হাড়গোড় ভেঙে থাকলে হাসপাতালে নিয়ে যাই।"

চলবে....

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com