Breaking News

মন নিয়ে কাছাকাছি | পর্ব - ২৬



অবশেষে রাগ, অভিমান মানিয়ে সবাইকে নিয়ে বের হতে পেরেছে। ওরা ইভাদের বাসায় গিয়ে ইভাকে হলুদ দিয়ে আসবে। কিন্তু ওখান থেকে কেউ ইভানদের বাসায় আসবে না।

কারণ মানুষই নেই। ইভা আপুকে হলুদ লাগিয়ে বাড়ি এসে ইভান ভাইকেও লাগাতে হবে। রুশমির কান্নার চোটে ওকেও সাথে নিতে হলো। ইভাদের বাড়িতে পৌঁছে সবাই একটা একটা করে হলুদের ডালা হাতে অন্যান্য ত্বত্ত্ব নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াল।

রিমু সহ আরও কয়েকটা মেয়ে ওদের উপর ফুল ছিটিয়ে পার্টি স্প্রে লাগিয়ে ভূত বানিয়ে স্বাগত জানালো। রিমু মীরা মাহিমাকে দেখে বলল,

"আসুন বিয়াইন আসুন। সুন্দরী বিয়াইন দুইটারে কালি দিয়ে নজর টিকা লাগিয়ে দিই।"
এমনিতেই স্প্রে ছিটিয়ে মাথা ভরে ফেলছে। মীরা মাহিমা রিমুর দুই পাশে গিয়ে দাঁড়াল। ওর কাঁধ চেপে ধরে বলল,
"বেশি লাফাবেন না বিয়াইন। আপনি একা। আমরা দু'জন। তার উপর গায়ে পিঁপড়ার মাংস নিয়ে ঘুরেন। বুঝেশুনে লাগতে আইসেন।"
রিমু সারেন্ডার করে নিল। দুই হাত মেলে বান্ধবীর কাঁধ ধরে বলল,
"দূর কিসের বিয়াইন! আমরা বান্ধবী। চল চল। ছাঁদে অনেক মজা হবে।"
ছাদে এসেই সবার আগে মুবিনের সাথে দেখা হলো। মুবিন সাদা পাঞ্জাবি পরেছে। মাহিমা মীরার পেটে খোঁচা দিয়ে বলল,
"আজ প্রপোজ করে ফেললেও অবাক হবো না। আগুন লাগছে তোকে।"
"এখন পানি ঢেলে দে। আগুন নিবে যাবে।"
দু'জন ফিসফাস করতে করতে ছাঁদে জায়িনকে আসতে দেখা গেল। সবাই পরেছে সাদা হলুদ এই লোক পরেছে কালো। কেন এটা কি শোক সভা পালন করা হচ্ছে। মীরা মুখ মোচড়াল। মাহিমা জায়িনকে দেখে চাপা গলায় চিৎকার করে উঠে বলল,
"আল্লাহ, জায়িন ভাইকে দেখেছিস মীরা! হায়! কত্ত হ্যান্ডসাম লাগছে। আজ থেকে আমার পছন্দের রঙ কালো।"
মীরা অস্বীকার করছে না। মানছে জায়িন ভাইকে হ্যান্ডসাম লাগছে। কিন্তু তাই বলে এত ওভার এক্সাইটেড হওয়ার মানে কি?
"তুই কি হ্যাংলা নাকি? এমন করছিস যেন জীবনে ছেলে দেখিসনি।"
জায়িন পাঞ্জাবির হাতা গোটাতে গোটাতে একপলক ওদের দিকে তাকিয়ে সামনে দিয়ে হেঁটে চলে গেল। কী সুন্দর পারফিউমের ঘ্রাণ! ব্যান্ডটা জেনে রাখা উচিত ছিল। মুবিন দূর থেকে ওদের দেখছিল। আজ যেভাবেই হোক পিছিয়ে যাবে না সে। নিজেকে সে ভীতু মনে না করলেও এই কাজটা করতে সাহসের অভাববোধ হচ্ছে। মুবিন মীরা মাহিমার দিকে এগিয়ে আসছে। বুক ধুকপুক করছে। তবুও মুবিন মনে মনে নিজেকে সাহস দিচ্ছে।
"তোকে পারতেই হবে মুবিন। আজ না পারলে আর কোনদিন পারবি না। আজই সুযোগ। পিছিয়ে যাস না।"
মুবিনকে এদিকে আসতে দেখে মাহিমা মীরাকে ইশারা দিয়ে দেখাল,
"তোর রোমিও আসছে।"
মাহিমা যতই ক্ষেপাক কিন্তু মীরা মুবিন ভাইকে নিয়ে ওরকম কিছুই অনুভব করে না।
এই ভালো লাগাটা হয়তো সাধারণ ভালোলাগা। ভালোবাসা টাইপ ভালো লাগা না।
মুবিনকে দেখে মীরার বুক ধুকপুক করে না। বাতাসে চুল উড়ে না। এমনকি মীরা নার্ভাস ফিলও করে না।
ওর কাজকর্মে গণ্ডগোল বাঁধে না।
যত রোমান্টিক মুভি আর ড্রামা দেখেছে তাতে প্রেমে পড়লে নায়ককে দেখে নায়িকার সাথে এসবই ঘটে। কিন্তু মুনিন ভাইকে দেখে মীরার সাথে এসবের একটাও ঘটেনি।
তার মানে মুবিন ভাইকে সে ভালোবাসে না।
মীরা যেদিন প্রেমে পড়বে সেদিন তার মনই বলে দিবে, মীরা তুই প্রেমে পড়েছিস।
আর যতদিন না মীরা হাত-পা ভেঙে ল্যাংড়া হয়ে প্রেমে না পড়বে ততদিন ছোটখাটো এসব ভালোলাগাকে পাত্তা দিবে না।
মাহিমা মীরার আগে বলে উঠল,
"মুবিন ভাই কেমন আছেন? "

সহজ একটা প্রশ্নের উত্তর দিতেও মুবিনের জিহবা প্যাঁচ লেগে গেল।
ভালো আছি কথাটা বলতেই পারলো না।
মুবিন ভাই কিছু বলছে না দেখে মাহিমা চোখ ছোট ছোট করে ওকে দেখছে।
মাহিমাকে এভাবে তাকাতে দেখে মুবিনের ঘাম হচ্ছে। সে সবকিছু গুলিয়ে ফেলছে।
ছাদে বাতাস আছে। আবার পাশে থেকে বড় বড় দুইটা ফ্যানও ঘুরছে।
তবুও তার গরম লাগছে। মাহিমা মুবিনের অবস্থা দেখে মুচকি হাসছে।
মীরা পরিস্থিতি সহজ করতে বলল,
"ইভা আপুর কি সাজা শেষ মুবিন ভাই? আমরা গিয়ে ইভা আপুকে নিয়ে আসি।"
মীরা মাহিমার হাত টেনে নিয়ে যেতে লাগলে মাহিমা বলল,
"শিওর আজ তোকে প্রপোজ করবে। হাবভাব দেখেই বোঝা যাচ্ছে।"
মীরা পাত্তা দিল না। মনে মনে খুব করে চাইল মুবিন ভাই যেন এরকম কিছু না করে।
তাহলে মুবিন ভাইকে ফিরিয়ে দিতে হবে তার।
মুবিন ভাই কষ্ট পাবে। সাথে ওদের সম্পর্কটাও আর আগের মতো থাকবে না।
মুবিন ভাইয়ের কাছে হয়তো সে আর পড়তেও আসবে না।

ইভাকে নিয়ে এসে স্টেজে বসিয়ে নিজেরাও ইভার পাশে বসেছে।
জায়িনকে দেখা গেল ছাদের অন্য পাশে। একটা ছেলের সাথে কথা বলছে।
মাহিমাকে জায়িন ভাইয়ের দিকে হাবলার মতো তাকিয়ে থাকতে দেখে মীরা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
রুশমি ভাবীর কোলে বসে আছে। ইভা আপুও ছোট্ট ননদিনীকে মিষ্টি খাওয়াচ্ছে।
আবির তনির সাথে খোঁচাখুঁচি করছে। প্রিয়া সেল্ফি তুলতে ব্যস্ত।
জায়িন ছেলেটার সাথে কথা শেষ করে ওর সাথেই নিচে যেতে নিলে ইভার মা আটকে নিলো।
"কোথায় যাচ্ছিস তুই? উহু, এখন কোথাও যাওয়া চলবে না।
ইভাকে হলুদ না মাখাস এখানে দাঁড়িয়ে দেখবি। দিনদিন অসামাজিক হয়ে যাচ্ছিস।
ডাক্তার মানুষ নিজেই মানুষের থেকে দূরে দূরে থাকলে তাদের সমস্যা বুঝবে কীভাবে?"
খালামনি জায়িনের হাত ধরে ওকেও সবার কাছে নিয়ে এলো।
জায়িনকে দেখেই আবির তনির ঝগড়া শেষ হয়ে গেল। আবির জায়িনের কাঁধে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
"মেয়েটাকে দেখালি না। আজ ইভা ভাবীর সাথেই তাকেও বসিয়ে দিতাম।
বন্ধুর উপর ভরসা করলি না।"
তনি আবিরকে খোঁচা দিয়ে বলল,
"নিজের কথাই পরিবারকে জানাতে পারে না। ভয়ে হাঁটু কাঁপে।
সে আবার অন্যকে ভরসা করতে বলছে। জায়িন তুই একদম এই ভীতুর কথা শুনিস না।
তোকে মাঝ সাগরে নিয়ে একা ছেড়ে দিবে। হাতে একটা বইঠাও দিবে না।"
"আরেকবার আমাকে ভীতু বললে সবার সামনে আই লাবু বলে চুমু খাবো। তখন সামাল দিস।"
জায়িন এদের কথা শুনে হাসছে। পাগল দুইটা এখনও বাচ্চাদের মতো ঝগড়া করে।
জায়িন এদের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকলেও তার চোখ অন্য কাউকে দেখছে।
আবির তনি নিজেদের খুনসুটি থেকে বেরুলে দেখতে পেত জায়িন কতটা মুগ্ধতা নিয়ে সামনের
মানুষটাকে দেখছে। এই চোখে শুধু মুগ্ধতা না ভালোবাসাও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
যেই ভালোবাসা জায়িন ভীষণ যত্ন করে বুকের ভেতর লুকিয়ে রেখেছে।
মীরা দুই হাতের মুঠো ভরে হলুদ নিয়ে ইভার পুরো মুখে মাখিয়ে ওকে ভূত বানিয়ে দিল।
ইভাকে এই অবস্থায় দেখে খিলখিল করে হাসছে।
ইভা আপুকে হলুদ মাখানো শেষ হলে মীরা মাহিমা নিজেদের গালে হলুদ লাগানোর চেষ্টা করছে।
মুবিন চোখ বন্ধ করে বড় বড় করে দম নিল। বিড়বিড় করে বলল,
"আজ আমাকে পারতেই হবে। পারতেই হবে।"
যে যাকে যেমন পারল হলুদ মাখাল। আবির প্রথমে তনিকে হলুদ মাখিয়ে ভূত বানাল।
তনি প্রতিশোধ নিতে মুঠো ভর্তি হলুদ নিয়ে আবিরের পেছনে ছুটছে।
কিন্তু আবিরকে ও ধরতে পারলে তো! আবির এর ওর মাঝখান দিয়ে পুরো ছাদ জুড়ে ছোটাছুটি করছে।
তনি কিছুতেই আবিরের সাথে পারছে না।
শেষে সে হঠাৎ চিৎকার করে পা ধরে নিচে বসে পড়ল। বোঝাই যাচ্ছে দৌড়াতে গিয়ে ব্যথা পেয়েছে।
গুরুতর ব্যথা পায়নি তো? সবাই চিন্তিত হয়ে তনির কাছে আসার
আগে আবির এসে তনির পায়ের কাছে বসে পড়ল। তনির পা ধরে অস্থির গলায় বলতে লাগল,
"কোথায় লেগেছে? লাগল কীভাবে? দেখে চলতে পারিস না?"

আবির বেচারা তনির মনের শয়তানি বুদ্ধি জানলে জীবনেও এভাবে ধরা দিত না।
কিন্তু এখন যখন ধরা দিয়েই ফেলেছে তাহলে তনিও কেন ছেড়ে দিবে?
তনি সুযোগের সদ্ব্যবহার করে আবিরের মুখে হলুদ মাখিয়ে সমানে হাসতে লাগল।
ততক্ষণে বাকিরাও তনির প্ল্যান ভালো ভাবেই বুঝে গেছে। ব্যথা পায়নি তনি।
আবিরকে ধরার জন্য ছোট্ট একটা নাটক করেছে।
আবির বোকার মতো তনির দিকে তাকিয়ে আছে। বাকি সবাই হেসে গড়িয়ে পড়ছে।
এরপর আবির তার আসল রুপে ফিরে এলো।
প্রিয়া, মীরা, মাহিমা ওদের সব কয়টাকে হলুদ মাখিয়ে গোসল করিয়ে ফেলল।
একেক জন আবিরের হাত থেকে বাঁচতে ছাদ জুড়ে এদিক ওদিক ছুটছে।
ইভা এদের ছেলেমানুষী দেখে রুশমিকে কোলে নিয়েই হেসে গড়িয়ে পড়ছে।
মীরা আবিরের হাত থেকে বাঁচতে চিৎকার করতে করতে ছুটছে।

"না, না আবির ভাই! আবির ভাই, ভালো হবে না কিন্তু। আমি কি তোমাকে হলুদ মাখিয়েছি? তনি আপু মাখিয়েছে। তুমি ওকে মাখাও। আমাদের পেছনে কেন ছুটছো?"
"তোরা তনিকে বাধা দিলি না কেন? এখন তনির কাজের শাস্তি তোদেরও পেতে হবে। একটাও বাঁচতে পারবি না।"
মাহিমা ভাইয়ের উপর রাগ করলেও তার রাগ এখন কে দেখছে?
"ভাইয়া আমি তোমার বোন। চাচাতো মামাতো খালাতো ফুপাতো না। মায়ের পেটের আপন ছোট বোন। আমার সাথেও তুমি এমন করছো? নিজের বোনের প্রতি একটুও দয়ামায়া নেই?"
"আমার চোখে সবাই সমান। বোনদের মাঝে দোচোখা গিরি করে আমি পাপ কমাই করি, না?"
আবির মীরার দিকে ধাওয়া করলে মীরা ছুটে জায়িনের পেছনে গিয়ে লুকালো।

চলবে...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com