Breaking News

এক্স গার্লফ্রেন্ড যখন ভাবি । পর্ব - ০১

বড় ভাইয়ের বউকে দেখতে গিয়ে চোখ কপালে উঠে গেলো।


এটা কে??
সেই নিলিমা। যাকে হারাইছি ৪ বছর আগে।
কিন্তু নিলিমার সাথে আমার ভাইয়ের বিয়ে কিভাবে??
মেয়েটা আমাকে দেখে রীতিমতো চমকে গেছে।
মেয়েটা ঘামতে শুরু করছে সাথে আমিও।
কারন দুজন দুজনকে এখনো ভালোবাসি শুধু রিলেশনটাই নাই।

ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি সে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে।
থাকারই কথা।
কারন নিলিমাকে যে দেখবে তারই পছন্দ হবে।
ভদ্র চুপচাপ ও নিরব প্রকৃতির মেয়ে। সেই সাথে রূপবতী তো আছেই।।
কলেজে ফার্স্ট ইয়ারে উঠেই তার উপর ক্রাশ খাইছিলাম।
কিন্তু সমস্যা ছিলো সে আমার সিনিয়র পুরা এক ইয়ারের।
তখন সে সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে।
তার পেছনে ঘুরঘুর করতাম যেটা তার মোটেও ভালো লাগতো না।তবে আমিও হাল ছেড়ে দেইনি।
প্রতিদিন তার জন্য অপেক্ষায় থাকতাম রাস্তার পাশে।
কিন্তু সে ফিরেও দেখতোনা।
আচ্ছা চলুন অতীতে ফিরি নইলে বুঝবেন না।

রাস্তার পাশে প্রতিদিন অপেক্ষায় থাকার পরও তার সাথে কথা বলতে পারতাম না।
মেয়েটা কলেজে এসে মাঝে মাঝে আমার দিকে রাগি লুক নিয়ে তাকিয়ে থাকতো তবে বুঝতাম না কেনো তাকাতো।
আমি আমার মতো তার জন্য অপেক্ষা করতাম।
কলেজেও নজরে রাখতাম কখন কি করে।

কিন্তু এভাবে আর কতদিন।
বুঝে গেছিলাম মেয়েটির সাথে আমার আর কথা বলা হবেনা।
তাই ভাবলাম মেয়েটাকে একবার বলেই দেখি কি হয়।

সেদিন সকাল সকাল বের হয়ে রাস্তার পাশে অপেক্ষা করছিলাম। যেহেতু সে আমার সিনিয়র তাই কলেজে বলার কোনো উপায় ছিলোনা বড় ভাইয়েরা তো আছেই।

মেয়েটা ধীর পায়ে এগুতে লাগলো।
আমার হার্টবিট বাড়তে লাগলো।
মেয়েটা কাছে আসতেই বলে দিলাম,
- apu i love you...
বিশ্বাস করুন মেয়েটা এমন ভাবে তাকাইছিলো সেদিন যে আমি প্রথমবার সরাসরি তার চোখের দিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে গেছিলাম।
আর কোনো কিছু শোনার অপেক্ষা না করেই দৌড়।
কিন্তু বেশিক্ষন দৌড়াতে পারিনি।
আনমনে দৌড়ানোর সময় একটা বাইক এসে মেরে দিয়ে যায় আমাকে। রাস্তার মাঝখানে পড়ে ব্যাথায় কোকাচ্ছি।
অনেকটা কেটে গেছে। মাথাও ফেটে গেছে। উঠতে পারতেছিনা।
চোখ বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত শুধু নিলিমাকেই দেখেছিলাম আর চোখ খোলার পরও তাকেই দেখলাম।
মেয়েটা হাসপাতালে নিয়ে আসছে।
আমার মাথার পাশে বসে বসে কাদতেছে।
মেয়েটারর মায়াবি মুখটা এখনো আমার চোখে ভাসে।
সেদিন কিছু বলতে পারিনি তবে বুঝে গেছিলাম মেয়েটও আমাকে ভালোবাসে।
যাওয়ার আগে নিলিমা একটা কথাই বলে গেছিলো সেদিন।
এরপর থেকে সাবধানে চলবা আর আপু বলছো কেনো?
তাইতো ওভাবে তাকাইছিলাম।
আর আমি তার চাহনী দেখে সোজা হাসপাতালে।

রিলেশন ছিলো এক বছর।
তার বাবার ট্রান্সফার আর তার পরিক্ষার পর অন্য যায়গায় চলে যাওয়া এই দুটা কারনেই ব্রেকআপ হয়েছিলো আমাদের?
এটাই ভাবছেন??
না আসলে এসবের কিছুই না।
সে আরেকটা ছেলের সাথে মেলামেশা করতো যেটা আমার মোটেও ভালো লাগতো না।
অনেকবার মানা করার পরও সে শুনেনি।
একদিন বলেই দিয়েছিলাম কি এমন রিলেশন তোমাদের যার জন্য সেদিন একটা থাপ্পড় মেরে ব্রেকআপ করে দিছিলো।

অনেক কষ্ট পাইছিলাম সেদিন।
তার কিছুদিন পর দেখলাম সত্তিই ছেলেটার সাথে রিলেশন আছে তার। আর কি আমি ছেড়ে দিলাম এই শহড়।
চলে আসলাম ঢাকা।।
তারপর কেটে গেছে ৪ বছর।
নিলিমার সাথে আর দেখাও হয়নি কথাও হয়নি।
তবে ফেসবুক আইডিটা ছিলো।
প্রতিদিন তার টাইমলাইন ঘুরে আসতাম। আর দেখতাম মেয়েটা ছবি আপলোড দিছে সেই ছেলেটাকে সাথে নিয়ে।

চলুন বাস্তবে ফিরি। অতিত খুবই বোরিং বাস্তবটা উত্তেজনায় ভরপুর।
আব্বু
- সানভি কেমন লেগেছে তোর??
আমি,,,,,
- আব্বু বিয়েটা ভাইয়ার তাকে জিজ্ঞেস করলেই পারো।
ভাইয়া আমার দিকে রাগি লুক নিয়ে তাকালো।
আমি আপন মনে হাসতে লাগলাম।
আমার আর নিলিমার সম্পর্কটা ক্রস কানেকশন.
প্রথমে বড় আপু তারপর গার্লফ্রেন্ড। তারপর এক্স গার্লফ্রেন্ড আর আজকে ভাবি।
হিহিহি।
ভাবি কেনো বললাম জানেন?
কারন মেয়েটাকে সবারই পছন্দ হয়েছে।
হঠাৎ আমি তাকালাম নিলিমার ঠিক পেছনে তার ছোট বোন নিলা। অনেক বড় হয়ে গেছে আর নিলিমার মতোই সুন্দরি।

মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমিও একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ভাবছি দুই ভাই এক বাড়িতেই বিয়ে করবো।
তবে নিলিমার দিকে তাকিয়ে আরেকটা জিনিস ভাবিয়ে তুললো
- ছেলেটার কি হলো? তাহলে কি ব্রেকআপ হইছে।
কাজের চাপে লাস্ট ২ মাস নিলিমার প্রোফাইল চেক ই করা হয়নি।
সে যাই হোক।
আব্বু রাফিকে বললো,
- তোরা যা কথা বল আলাদা রুমে।
রাফি আবার আমাকে নিয়ে গেলো।
বলেনতো কেমন লাগে,
আমি রুমের সামনে দাড়িয়ে আছি হঠাৎ নিলা আসলো,
- ভাইয়া একা দাড়িয়ে যে??(নিলা)
- কি করবো বলো তাদের সাথে তো আর যেতে পারবোনা।(আমি)
- আচ্ছা চলুন আপনাকে পুরো বাড়িটা ঘুরিয়ে দেখাই।(নিলা)
- আচ্ছা চলো।
.
মেয়েটার পেছন পেছন হাটতে লাগলাম।
মেয়েটা সবকিছু দেখাতে লাগলো।
সবশেষে গেলাম ছাদে।
- আচ্ছা তোমার নামটা কি??(আমি)
- নিলা।
- ভালো নামতো।(আমি)
- জ্বি ভাইয়া আপনার নামটা কি??(নিলা)
- সানভি।(আমি)
- কি বললেন?(নিলা)
- সানভি।(আমি)
- কঠিন নাম সহজে উচ্চারন করা যায়না। তবে আপনার নামটা কিউট আছে।(নিলা)
- আচ্ছা তুমি কোন ক্লাসে পড়ো??(আমি)
- ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার।(নিলা)
- আচ্ছা তোমার নাম্বারটা দাওতো। (আমি)
- কেনো??(নিলা)

- এমনি দাও।(আমি)
- সরি ভাইয়া নাম্বার দিতে পারবোনা।(নিলা)
- আচ্ছা সমস্যা নাই।(আমি)
- তবে ফেসবুক আইডি পেতে পারেন।(নিলা)
এতো মেঘ না চাইতেই জল।
কথা বলা শেষ করে নিচে নামতেই ধাক্বা খেলাম নিলিমার সাথে।
- সরি আমি আসলে দেখিনাই।(আমি)
- ইটস ওকে।(নিলিমা)
তার হাতের আলতো স্পর্শ মনটাকে আবারো আঘাত করলো।শুকিয়ে যাওয়া ক্ষতটা আবারো ভিজে উঠলো।
চোখ জলে ভিজে উঠার আগেই চলে আসলাম।
বাসা থেকে বের হয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলাম ।
সবাই কথা বলতেছে ভিতরে।
আব্বু কিছুক্ষন তাকিয়ে ছিলো আমার দিকে তবে কিছু বুঝতে পারেনি তার আগেই চলে এসেছি ।

লাস্ট যেদিন তার হাত ধরে হাটছিলাম সেদিন খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছিলো আর বলেছিলো ভালোবাসি। কখনো ছেড়ে যাবোনা।
অথচ সেই আজ কত দুরে।
আজ অনেক দিন পর সেই আলতো স্পর্শে অনেক সৃতি মনে পড়ে গেলো।
চোখটা ভিজে গেছে।
হাহাহা ৪ বছরেও নিজেকে বদলাতে পারিনি।
এখনো বাচ্চাদের মতো কান্না করি। ইমোশনালগুলা আর গেলো না। গাড়িতে বসে ভাবছি নিলিমার কথা।
কিছুদিন পরই সে আমার ভাবি হয়ে যাবে ।
তখন সামলাবো কিভাবে নিজেকে?
বাসায়ই থাকবোনা তখনই ভালো হবে।

বসে বসে অতীত আর ভবিষ্যত নিয়ে ভাবতেছি হঠাৎ নিলা মেয়েটা এসে ডাক দিলো,
- ভাইয়া?(নিলা)
কোনমতে চোখটা মুছে উত্তর দিলাম,
- হ্যা বলো।(,আমি)
- নাম্বারটা ……(নিলা)
- ০১৭২৫৫**১১(আমি)
- আমি কল দিবো রাতে।(নিলা)
- আচ্ছা দিয়ো।(আমি)

মেয়েটা চলে গেলো। নিলিমার তো বিয়ে হয়ে যাবে।
আমাকেও বিয়ে করতে হবে।
বিয়ে তো নিলাকেই করবো আর সেটা একসাথেই।
তারপর রোমান্স করবো নিলিমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে ।

আমি কেনো একা থাকবো।
সে তো কখনো কষ্ট পায়নি আমি কেনো পাবো?
আমাকে ছেড়ে দেওয়ার পর তার জিবনে অন্যকেউ ছিলো।
আর তাকে ছেড়ে দেওয়ার পর এখন তার বিয়ে।
খারাপ থাকার তো কোনো কারনই নাই।
তার একাকীত্ব দুর করার জন্য সবসময় কেউ না কেউ ছিলোই।।তবে আমি কেনো আজো একা আছি।।কেনো নিজে নিজেই কষ্ট পাচ্ছি।

সে পারলে আমি কেনো পারবোনা।
আর সবচেয়ে বড় কথা হলো নিলাকে ভালো লাগছে।
মেয়েটাও আমাকে পছন্দ করে মনে হয়।।
এই সুযোগে বিয়েটাও সেরে ফেলা যাবে।
একাও থাকতে হবেনা কষ্টও পেতে হবেনা।।

- কিরে চলে আসলি কেনো??(আব্বু)
- এমনি।(আমি)
সবাই গাড়িতে উঠলো। ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট করলো।
অথৈ_আমার_বোন
- ভাইয়া মেয়ে পছন্দ হইছে তো?
- আমি কি বলবো তোদের পছন্দ হইছে নাকি সেটা বললেই হয়।(রাফি)
- আমাদের তো অনেক পছন্দ হইছে। কিরে সানভি তোর কেমন লাগছে মেয়েটাকে??(আম্মু)
হিহিহি যে মেয়ের ভালোবাসার জন্য আজো চোখের পানি ফেলি। আর আমাকে বলতেছে মেয়েকে কেমন লাগছে।😂
- মেয়ে তো দেখতে সুন্দর আছে আর ভাইয়ার সাথে মানাবেও ভালো।(আমি)
- তাহলে হয়েই গেলো। রাতে ওদের ফোন দিয়ে জানাবো বিয়ের কথা।(আব্বু)
- সেটাই ভালো হবে। আমিও একটা ভাবি পাবো।(অথৈ)
- কিরে তুই কবে বিয়ে করবি??(অথৈ)
- করবো করবো কিছুদিন পর।সবকিছু গুছিয়ে নেই তারপর। কিন্তু তার আগে তোকে বিয়ে দিয়ে দিবো।😬(আমি)
- আম্মু দেখো কি বলে।(অথৈ)
- হাহাহা।

ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলাম মিটি মিটি হাসতেছে।।
সবারই পছন্দ হইছে অনেক। কোনো ঝামেলা করে লাভ নাই।।ভাইয়ার সাথে বিয়ে হচ্ছে হোক।।
আর এমনিতেও আমি আর ওকে বিশ্বাস করতে পারবোনা।
যতই ভালোবাসি বিশ্বাস একবার ভেঙে গেলে আর জোড়ক লাগেনা।
তবে মেয়েটার ছলছল চোখের চাহনী আমাকে কষ্ট কেনো দিতেছে।।

বাসায় এসে রুমে গিয়ে ফোনটা রেখে গোসল করতে গেলাম।
নিজেকে সামলাতে হবে। এতো ইমোশনাল হলে চলবেনা।।
একটা মায়াজাল আমাকে জড়িয়ে রেখেছে।
না পারি ভুলে থাকতে না পারি ফিরতে।
সব রাস্তা যে বন্ধ।
নিরব অনুভূতিই বেশি কষ্ট দেয়।

গোসল শেষ করে বাইরে আসলাম।
অনেক বার ভাবলাম আর ভাববোনা তার কথা তারপরও পারলাম না। কেনো জানি তার কথাই ভাবতে ইচ্ছা করছে।
কেনো যে দেখা হইছে আল্লাহই জানে।
কখনো ভাবিনি এভাবে দেখা হয়ে যাবে।
যাই হোক দেখা হইছে এরপর কথা হবে।
আরো অনেক কিছুই হয়তো হবে।।তবে তার আগেই নিলাকে নিযের করে নিবো।
যাতে কষ্টটা কমে যায়। আর নিলাকে ভালোবাসতে পারলে তো কথাই নাই। তখন আর মনে পরবেনা নিলিমার কথা।

রাতে খাওয়া শেষ করে ছাদে দাড়িয়ে আছি।।
সিগারেট জিনিসটা ছাড়া আমি আর আমার গল্প দুইটাই অসম্পূর্ণ।

প্যাকেট থেকে সিগারেট বের করে কেবল ধরাইছি।
সেই সময় ফোন আসলো,
- হ্যালো।☺(আমি)
- আসসালামু আলাইকুম।(ওপাশ থেকে)
- ওয়ালাইকুম আসসালাম।(আমি)
- জ্বী চিনতে পারছেন আমাকে?? (ওপাশ থেকে)
- সরি কে আপনি?(আমি)
- নিলা.………😒
- ওহ সরি তুমি?(আমি)
- হুমম।(নিলা)
- তো কেমন আছো বলো।(আমি)
- জ্বি ভালো আপনি?(নিলা)
- হুমম ভালো।(আমি)
- আপনি কি ফ্রি আছেন??(নিলা)
- হ্যা কেনো?(আমি)
- না মানে কালকে দেখা করতাম একটু। সময় হবে??(নিলা)
- জ্বি কোথায় দেখা করবা বলো।(আমি)
- আচ্ছা সকালে ***** এই যায়গায় আইসেন।(নিলা)
- ঠিক আছে।(আমি)
তারপর আরো কিছুক্ষণ কথা বলে কল কেটেদিলাম।
কিন্তু বুঝতে পারতেছিনা নিলা কেনো কালকে ডাকলো,
সে কি একা আসবে নাকি নিলিমা ও সাথে আসবে?,,,,,
কিছুক্ষন ভাবলাম তারপরেই...

চলবে....

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com