Breaking News

ধনীর মেয়ে বস্তির ছেলে । পর্ব - ০৩



আমিঃ আচ্ছা তুষার তুই আমাকে কিছু প্রশ্নের জবাব দে তো?

তুষারঃ হুম বল?
আমিঃ যে মেয়ে নিজের হাতে কফি বানিয়ে খায় না সে নাকি আবার আমাদের সংসারের সব কাজ করবে? এটা কখনো সম্ভব না? আর আমাদের এত টাকা নেই যে ওর জন্য আমি কাজের বুয়া রাখবো?
তুষার এবার চুপ হয়ে গেলো? আর আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে? এভাবে শুরু হয় আমাদের বন্ধুত্ব থেকে ভালোবাসা।
আমিঃ শুন আবেগটা থাকে কিছুদিন! তারপর সবকিছু শেষ হয়ে যায়! থাক তোকে এসব বলেও লাভ নেই? তুই কি কখনো বুঝবি না! চল এবার ক্লাসে যাই?
তুষারঃ একটু পড়ে যাবো? চল আগে!
তুষারঃ ক্লাসে পড়ে যাবো চল আগে মায়ার সাথে দেখা করে আসি?
আমিঃ তুই যা আমি গেলাম ক্লাসে! নাহলে আবার আমাকে দেখলেই শুরু হয়ে যাবে ওর সেই পাগলামিটা
তুষারঃ তুই আয় আমি আছি না!
আমিঃ ওকে চল।

(বলেই দুজনে চলে গেলাম বাগানে! কারণ মন খারাপের সময় মায়া এখানেই এসে বসে থাকে? গিয়ে দেখি ওও পুকিরের দিকে মুখ করে বসে আছে? তাই পিছন থেকে তুষার ডাকলো মায়া কে?)
তুষারঃ কিরে মায়া তুই এখনো এখানে বসে আছিস? দেখ কে এসেছে?
আমাদের কথা শুনে মায়া তাড়াতাড়ি চোখগুলো মুছে ফেললো? তারপর আমাদের দিকে ফিরে তাকালো?
তুষারঃ কিরে মায়া তুই কান্না করতেছিলি নাকি?
মায়াঃ আরে না আয় বস?
তুষারঃ হুম! আমাদের আর মিথ্যা বলিস না আমি সবই জানি?
মায়াঃ আরে না! হুসাইন আয় বস?
আমি গিয়ে একটু দুরুত্ব রেখে বসলাম! আর তুষার এসে আমাদের মাঝ খানে বসে গেলো?
তুষারঃ বল এখন কি নিয়ে গল্প করা যায়?
মায়াঃ জানি না!

তুষারঃ ওও! আচ্ছা তোদের দুজনকে এখানে আসার আসল কারণ কি জানিস?
তুষারের মুখে এমন কথা শুনে আমি অবাক হলাম? তাই ওর দিকে ঘাড় বাকা করে তাকালাম?
তুষারঃ শুন তোরা দুজন মিলে মুজিব নগর পার্কে যা! তাহলে ভালো হবে? নাহলে এভাবে চুপচাপ আর দুজনকে থাকতে হবে না!
আমিঃ দেখ ওও যেই কথা বলতেছে সেটা কখনোই সম্ভব না!
মায়াঃ আমি জানতে চাই কেনো সম্ভব না?
আমিঃ কারণ আমি তোর যোগ্য না।
মায়াঃ কেনো তোর কিসের অভাব? পড়ালেখায় ভালো? স্মার্ট! আর মনের দিক থেকে তে তুই বেষ্ট? আর ভবিষ্যৎ তে তুই তোর টেলেন্ট দিয়ে যে কোনো বড় চাকরি পেতে পারিস! তাহলে আর সমস্যা কোথায়?
আমিঃ হা হা হা! তুই আমার বড় চাকরি পাওয়ার কথা বলতেছিস! সেটা পাওয়ার জন্য যে ঘুষ লাগে তা কি তুই জানিস? আর যদিও ভাগ্যক্রমে পেয়েও যাই? তাহলে সেলারি কতে হবে? বেশি হলে এক লক্ষ টাকা? তাতে তা একদিনের মার্কেটের টাকা? আর সারামাস কি তুই না খেয়ে থাকবি? তোর মেকাপ আরো অনান্য খরচগুলো নাহয় বাদ ই দিলাম!

মায়াঃ দেখ আমি একদম ভালো হয়ে যাবো? আমার এতকিছু লাগবে না! শুধু তুই হলেই চলবে।
আমিঃ দেখ মায়া আবেগ দিয়ে দুনিয়া চলে না! আমি জানি তুই আবেগের বসে অনেককিছু করতে পারিস! কিন্তু যখন বাস্তবতা সামনে এসে দাড়ায় না তখন আবেগ পালিয়ে যায়! তাই বলছি পাগলামি করিস না!
মায়াঃ দেখ আমাকে এতো বুঝাতে আসবি না! আমার তোকে চাই ব্যস?
আমিঃ দেখ একটু বুঝার চেষ্টা কর? তুই মধ্যবিত্ত দের মতো করে বাচতে পারবি না! তুই পারবি না শুধু ভাত, মাছ, আর ডাল দিয়ে বেলা পাড় করতে, তুই পারবি না ৩০০-৪০০ টাকা হাত খরচ নিয়ে দিন পাড় করতে?
এই হাত খরচ থেকে টাকা বাচিয়ে আব্বু-আম্মুর জন্য কিছু গিফট দেওয়া! তুই পারবি না দুই -তিনটা শাড়ী দিয়ে মাস পাড় করতে?

তুই পারবি না বাসে সবার সাথে চাপাচাপি করে ভার্সিটিতে আসতে? তুই পারবি না ভোর বেলায় উঠে বাসায় সবার জন্য নাস্তা রেডি করা? আর সারাদিন গাধার মতো খাটা?
তুই পারবি না! সবার মুখের দিকে তাকিয়ে নিজের সপ্নগুলো কুরবানি দিতে?
তাই বলতেছি তোর জন্য ভালো হবে তুই নিজের লেভেলের একটা ছেলেকে বিয়ে করে নিজের সব সপ্ন পূরণ কর! লাইফটা আরামে পাড় করে দিতে পারবি? আর আমাকে বিয়ে করলে তুই জিন্দালাশ হয়ে যাবি? তখন আপসোস হবে?

কারণ বাস্তবতা মৃত্যুর চেয়েও কঠিন! যার সামনা তুই এখনো করিস নি? (একবারে সব বলে দিলাম)
মায়াঃ আমি সব করতে পারবো তোর জন্য?
এবার রাগটা আমার মাথার উপর উঠে গেলো? তাই নিজেকে আর সামলাতে পারলাম না ঠাসসস করে একটা চড় বসিয়ে দিলাম ওর গালে?
মায়া চড় খেয়ে অবাক হয়ে গেলো? আর এতক্ষণআমাদের কথা শুনতেছিলো তুষার ওও চমকে উঠলো?
আমিঃ ঐ পাগল তোকে বুঝাই তোর মাথায় ঢুকে না! যে আবেগ দিয়ে সব হয় না? বাস্বতায় নিজেকে সামলাতে পারবি না তুই? যা বলতেছি তাই কর? (আমি রাগে চিল্লিয়ে কথাগুলো বললাম)
মায়ার চোখদিয়ে সমানে পানি পড়তে লাগলো? আর তখনই তুষার সেখান থেকে আমাকে টেনে নিয়ে আসলো? আর মায়াকে বললো?

তুষারঃ মায়া তুই দাড়া আমি আসতেছি? (তুষার বলেই আমাকে বাহিরে নিয়ে আসলো)
আমিঃ ছাড় আমাকে? পাগলাটাকে বুঝাই একফোটা যদি বুঝতো? নিজেকে শেষ করার ফন্দি আটতেছে ওও! আর কিছুই না?
তুষারঃ আচ্ছা তুই ঠান্ডা হো আমি দেখতেছি কি করা যায়?
আমিঃ হুম বুঝা ওকে নাহলে পরে ওর গলা টিপে মেরে ফেলবো বলে দিলাম?
তুষারঃ ঐ তুই গাড়িতে বস আমি মায়া বুঝিয়ে আসতেছি? (বলেই তুষার চলে গেলো ভিতরে)
ভিতরে গিয়ে তুষার দেখলো মায়া এখনো কাদতেছে?
তুষারঃ মায়া কাদিস না!
মায়াঃ দেখলি তো ওও কেমনটা করলো? কি হয় আমাকে একটু ভালোবাসে?
তুষারঃ দোষ তোর না দোষ হলো সুমাইয়ার?

মায়া এবার কান্না থামিয়ে তুষারের দিকে তাকালো!
মায়াঃ সুমাইয়া কে?
তুষারঃ হুসাইন তোকে কখনো সুমাইয়ার কথা বলে নি?
মায়াঃ না! কে সুমাইয়া!
তুষারঃ তাহলে শুন!
আমরা দুজন তখন ক্লাস 10 এ পড়তাম! হুসাইন ক্লাসের ভালো ছাত্র ছিলো! এবং খুব ভালো গল্প লিখতো অনেক মেয়ে ওই গল্প পড়ে প্রেমে পরে যাইতো!
তার মধ্যে হঠাৎ একটি আইডি থেকে এস এম এস আছে হুসাইনের গল্প লেখা পেজে
মায়াঃ কি ছিলো সেই এস এম এসে?
তুষারঃ তুই চুপ করে শুন। কেনো কথা বলবি না।
মায়াঃ হুম বল!
হুসাইন প্রতি গল্পের শুরুতে লিখে দিত। অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ। তাই সুমাইয়া এস এম এস দেয়
সুমাইয়াঃ লেখক সাহেব আপনার একটি গল্প কপি করবো যদি অনুমতি দেন! (মেসেজে মাধ্যমে)
হুসাইনঃ অবশ্যই গল্প কপি করতে পারেন. কিন্তু কিছু শর্ত আছে
সুমাইয়াঃ কি শর্ত বলেন

হুসাইনঃ প্রথমত লেখক এর জায়গায় আমার নাম এবং শেষে পেজ লিংক দিতে হবে!
সুমাইয়াঃ আচ্ছা!
হুসাইনঃ কোন গল্প কপি করবেন?
সুমাইয়াঃ সিনিয়র আপুর সাথে প্রেম সিজন ১-২
হুসাইনঃ ওকে, আপনার বাসা কোথায় জানতে পারি।
সুমাইয়াঃ চুয়াডাঙ্গা আপনার!
হুসাইনঃ মেহেরপুর!
এই ভাবে কথা বলতো । বলতে বলতে সুমাইয়ার সাথে ফ্রেন্ডশিপ হয়ে গেলো হুসাইনের।
তারপর একদিন হুসাইন আমাকে এসে বলে, আমি সত্যিই সুমাইয়া কে ভালোবেসে ফেলিছি। তখন আমি হুসাইন কে বললাম প্রোপোজ করতে সুমাইয়া কে যেই ভাবা সেই কাজ হুসাইন গিয়ে প্রোপোজ করে সুমাইয়াও গ্রহণ করে নেয়। আস্তে আস্তে সুমাইয়ার প্রতি ভালোবাসা বেরে যাই। সুমাইয়ার সাথে ভিডিও কলে কথা বলতো।তার পিক সব জায়গায় সেপ করে রাখতো। এককথায় সুমাইয়াকে পাগলের মত ভালো বাস তো। এই ভাবো ২ মাস কেটে গেলে একদিন হুসাইন সুমাইয়া কে বললো,

হুসাইনঃ এই সুমাইয়া তুমি কয়দিন ধরে আমাকে ইগনোর করছো কেনো!
সুমাইয়াঃ আমাকে ভুলে যাও। আম্মু আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে।
হুসাইনঃ কিহ বলছো। তোমার বিয়ে ঠিক হয়েছে তাহলে আমার কি হবে।
সুমাইয়াঃ তুমি প্লিজ আমাকে ভুলে যাও।
হুসাইনঃ আচ্ছা তোমার হুব স্বামী নিয়ে সুখে থাকো।
কিছুক্ষন পরে হুসাইন আমার কাছে আসে।
হুসাইনঃ আমার সাথে এমন হওয়ার ছিলো।
তুষারঃ কি হয়েছে?
হুসাইনঃ সুমাইয়া বললো, (আপনাদের তো বললাম।তাই দ্বিতীয় বার লিখলাম না। আর)
তুষারঃ আচ্ছা তুই সুমাইয়া কে **গুলো বলবি!
হুসাইনঃ পরে যদি ভুল বোঝে।
তুষারঃ পরে দেখা যাবে।

হুসাইন আমার কাছ থেকে বাসায় গিয়ে। সুমাইয়া কে ফোন দেয়। ফোন রিসিভ করার পরে
সুমাইয়াঃ কি হয়েছে তোমাকে। নিষেধ করার পরে কেনো ফোন দাও!
হুসাইনঃ আর ফোন দিবো না। একটি কথা শুনো!
সুমাইয়াঃ কি হয়েছে তাড়াতাড়ি বলো যতসব।
হুসাইনঃ আমাকে বিয়ে করবে।
সুমাইয়াঃ কিভাবে?
হুসাইনঃ পালিয়ে।
সুমাইয়াঃ জীবনেও না।
হুসাইনঃ তুমি যদি আমার সাথে বিয়ে না করলে। তোমার যত পিক আছে ফেবুতে ভাইরাল করবো।
সুমাইয়াঃ এই মানুষ কে আমি ভালোবেসে ছিলাম। আর তোমাকে বিশ্বাস করে। সব করে ছি। পিক দিয়েছি। আর তুমি আমার সাথে বিশ্বাস ঘাতক করলে।
হুসাইনঃ আমি তোমাকে ছাড়া বাচতে পারবো না। প্লিজ এমন করো না।
সুমাইয়াঃ তুমি আমাকে আর ফোন দিবে না। যদি আমাকে সত্যি কারে ভালোবাসে থাকো। আর ফোন দিবে না।

হুসাইনঃ তুমি সুখি হও সেই দোয়া করি।
সেই রাতে হুসাইন আমাদের আড্ডা খানায় এসে বলে।
হুসাইনঃ তোর বৃদ্ধি তে কাজ হলো না
তুষারঃ কি বলেছে।
হুসাইনঃ আমি যদি তাকে ভালোবেসে থাকি।তাহলে তাকে যেনো ফোন না দিয়।
তুষারঃ আচ্ছা। একটি আইডিয়া আছে
হুসাইনঃ থাক তোর আইডিয়া। আমি বাসায় যাচ্ছি
হুসাইন বাসায় যখন যাচ্ছিলো। আমার কেমন সন্দেহ হলো। তাই আমিও তার পিছু নিলাম।
তারপর কিছু দুর যাওয়ার পর হঠাৎ করে।
বিশ্বাস কথাটি ভালোবাসার থেকে বড় কারণ।
বিশ্বাস না থাকলে ভালোবাসা টিকে না।

চলবে...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com