Breaking News

আপু যখন বউ । পর্ব - ০৮



সবাইকে নিয়ে আড্ডা দিতেছিলাম তখনই জান্নাত এসে সামনে দাড়ালো! তাকিয়ে দেখি রাগে চোখ-মুখ লাল হয়ে আছে!

আমিঃ রেগে আছেন কেনো? কিছু বলবেন নাকি?
জান্নাতের মুখে কোনো কথা নেই! হঠ্যাৎ ঠাসসসস করে গালে একটা চড় বসিয়ে দিলো! আমি গালে হাত দিয়ে অবাক হয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে রইলাম!
জান্নাতঃ তুই নিলাকে কি বলেছিস!
আমিঃ নিলা টা কে?
জান্নাতঃ ওও একটু আগে রোমান্সের কথা বলে এখন ভুলে গেছিস নিলা কে?
আমিঃ সরি কার সাথে রোমান্টিক কথা বললাম!
জান্নাতঃ এই যে এই মেয়েটার সাথে? (জান্নাত রাগি চোখে তাকিয়ে রইলো)
আমিঃ ওহহ ওর নাম নিলা নাইস নেইম!
নাইস নেইম কথাটা বলার সাথে-সাথেই জান্নাত আরেকটা চড় গালে বসিয়ে দিলো!
গালে হাত দিয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে দেখি রাগটা বেড়ে আছে! কিন্তু সবার সামনে এভাবে চড় মারাই আমার কেমন যেনো লেগে উঠলো!

জান্নাতঃ বাসায় বউ থাকতে অন্য মেয়ের সাথে রোমান্স করতে লজ্জা করে না তোর?
আমিঃ বাসায় বউ আছে মানে আপনি বউ পেলেন কোথায় বাসায়?
জান্নাতঃ কেনো আমি তোর কি হই!
আমিঃ আপনি বলেন তো আজ পর্যন্ত বউ হওয়ার মতো কোনো কাজ করেছেন! এই পর্যন্ত আমাকে শান্তিতে একটা মিনিট থাকতে দিয়েছেন! আপনার থেকে ইন্ডিয়া-পাকিস্তান এর শত্রুতাও ভালো!
কথাগুলো শুনে জান্নাত স্থির হয়ে দড়িয়ে রইলো! আমি উঠে চলে যাওয়ার ভাব করে জান্নাতের পিছনে গিয়ে মেহেদী ভাইকে চোখ টিপ দিয়ে ইশারায় বুঝালাম আগুনে পেট্রোল দিতে!
তারপর সেখান থেকে চলে গেলাম আর ভাবলাম! জান্নাত তুমি নিজেও জানো না তোমাকে ভবিষ্যৎতে কত টা জ্বালাবো আমি! আপাতত মায়ায় ফেলবো তারপর বাকিটা দেখবে তুমি!
তারপর ক্লাস না করে বাসায় চলে আসলাম! শরীরটা বেশি ভালো না তাই দুপুরে খাওয়া-দাওয়া করে দিলাম এক ঘুম!

সন্ধ্যায় জান্নাতের ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো!
আমিঃ কি হলো ডাকতেছেন কেনো?)
জান্নাতঃ বাহিরে আকাশ খারাপ হইতেছে রাতে খাবার জন্য কিছু গিয়ে নিয়ে আয়!
আমিঃ ঘুম না ভাঙ্গিয়ে অনলাইনে অর্ডার করে দিলেওতো পারতেন!
জান্নাতঃ চুপ বেশি কথা বলবি না! যাওয়া লাগবে না তোর!
বলেই মুখ বাকিয়ে রুম থেকে চলে গেলো! ঘুমটা ভেঙ্গে দিয়ে গেছে তাই আর ঘুম ধরলো না!
তাই উঠে ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িংরুমে গেলাম! এসে দেখি মহারাণী টিভি দেখতেছে! পানি খেয়ে আমি রুমে চলে আসলাম!
আকাশের অবস্থা খারাপ হতে চলেছে মনে হয় রাতে ঝুম বৃষ্টি হবে বা তুফান হবে! আমি এসব চিন্তা বাদ দিয়ে পড়তে বসে গেলাম!
কিছুক্ষণ পর শুরু হয়ে গেলো আকাশের গর্জন করা! এখন পড়তে অনেক ভালো লাগতেছে!
হঠ্যাৎ অনুভব করলাম আমার পিছনে কেউ একজন দাড়িয়ে আছে! তাকিয়ে দেখি জান্নাত দাড়িয়ে আছে!
আমিঃ কি হলো এইখানে দাড়িয়ে আছেন কেনো?
জান্নাতঃ আজকে তোর সাথে পড়তে বসবো?

আমিঃ কেনো?
জান্নাতঃ এমনি! বেশি কথা না বলে নিজের কাজ কর!
তারপর আমি নিজের পড়ার মন দিলাম! জান্নাত আমার উল্টো পাশের চেয়ারটায় বসলো!
কিছুক্ষণ পর হঠ্যাৎ খেয়াল করলাম আকাশ গর্জন দিলে জান্নাত কেপে উঠে বুঝে গেলাম জান্নাত আকাশের গর্জনগুলো খুব ভয় পায়! তাই আমার পাশে পড়তে বসেছে!
জান্নাত বড়ো হয়ে গেছে ঠিকই কিন্তু মনটা এখনো বাচ্চাই রয়ে গেলো! এসব ভেবে মনে মনে হালকা হেসে আমি আবার পড়ায় মন দিলাম! হঠ্যাৎ জান্নাত বলে উঠলো!
জান্নাতঃ তোর হাতটা একটু ধরতে পারি!
আমিঃ কিহহহ!
জান্নাতঃ তোর হাতটা একটু ধরতে দিবি!

আমিঃ হাত ধরবেন কেনো?
জান্নাতঃ এমনি! ধরতে দিবি কি না তাই বল!
আমিঃ খারাপ মতলব না থাকলে ধরতে পারেন!
জান্নাতঃ তোর প্রতি খারাপ মতলব কোনোদিন হবেও না আমার! (জান্নাত বলেই আমার হাতটা ধরলো)
এই প্রথম আমার হাতে তার হাত রেখেছে! এটার ফিলিংসটাই আলাদা যা ভাষায় বুঝানো যাবে না!
পড়তেছিলাম আর খেয়াল করতে লাগলাম! আকাশ যখনই গর্জন দেয় জান্নাত তখনই আমার হাতটাকে জুড়ে আকড়ে ধরে! তারপর আবার নরমাল ভাবে ধরে থাকে! জান্নাত হয়তো মেঘের গর্জনকে অনেক ভয় পায়!
পড়া শেষ করে গিয়ে দুজনে খেয়ে নিলাম! তারপর রুমে এসে শুয়ে গেলাম! কিছুক্ষন পর জান্নাত এসে আমার পাশে শুয়ে পড়লো!
আমিঃ কি হলো আপনি এখানে এভাবে শুয়ে পড়লেন কেনো?
জান্নাতঃ এমনি বেশি কথা না বলে ঘুমা!
আমিঃ আপনি এখানে থাকেন আমি সোফায় গিয়ে ঘুমাই!
জান্নাতঃ তোকে সোফায় যেতে বলেছি আমি! চুপচাপ যেখানে আছিস সেখানে ঘুমা! আর মাঝে এই কোলবালিশটা থাকবে!

আমিঃ ওকে! (বলেই বলেই শুয়ে পড়লাম)
জান্নাত কি করতে চাইতেছে দেখা দরকার! তাই চুপ করে ঘুমের ভান ধরে শুয়ে রইলাম! এভাবে প্রায় আধাঘন্টা শুয়ে থাকার পর হঠ্যাৎ জান্নাত বলে উঠলো!
জান্নাতঃ হুসাইন তোকে একটা কথা বলার ছিলো!
আমি কোনো উত্তর না দিয়ে চুপ করে রইলাম!
জান্নাতঃ কিরে তুই কি ঘুমিয়ে গেছিস!
তাও কোনো উত্তর দিলাম না!
তারপর জান্নাত আর কোনোকিছু না বলে আস্তে করে আমাকে জড়িয়ে ধরলো! আমি অবাক হয়ে গেলাম ওনার এমন কান্ড দেখে!

চুপচাপ কিছুক্ষণ শুয়ে রইলাম! জান্নাতও আমাকে জুড়ে চেপে ধরে আছে! প্রায় ১০ মিনিট পরে মনে হলো ওর হাত – পা একটু লুস হয়েছে! মানে জান্নাত ঘুমিয়ে পড়েছে!
আমি সিওর হওয়ার জন্য আস্তে করে জান্নাত বললাম!
আমিঃ ঐ আপনি এভাবে জড়িয়ে ধরেছেন কেনো?
জান্নাতের কোণো সাড়া শব্দ নেই! বুঝলাম পাগলিটা ঘুমিয়েছে!
আস্তে করে চোখ খুলে জান্নাতের দিকে তাকালাম! রুমের ভিতরের হালকায় আলোয় জান্নাত কে যা লাগছে না একটা পরিকেও সে হার মানিয়ে দিবে!
আমি ওনার দিকে হা করে তাকিয়ে রইলাম! ওনার এভাবে জড়িয়ে ধরা দেখে আমার নিয়ত উল্টাতে লাগলো!
পড়ে ভাবলাম! কারো সুযোগ নেওয়াটা ঠিক না তাই সব চিন্তা বাদ দিয়ে জান্নাতের নিষ্পাপ মুখটা দেখতে!

নিজের ক্রাশ যখন জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে থাকে তখন অনুভূতিটাই আলাদা কাজ করে! এমন লাগে যেনো পৃথিবীটা হুমড়ি খেয়ে আমার বুকে শুয়ে আছে!
এরকম নানা রকম কথা ভাবছিলাম আর জান্নাত কে দেখতেছিলাম! কতক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম তা মনে নেই! সকালে একটু তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙ্গে গেলো!
শরীর কেনো জানি মনে হলো নাড়াতে পাড়তেছি না! মনে হচ্ছে কেউ আমার হাতগুলো বেধে রেখেছে!
তাই নিজের অবস্থান দেখার জন্য নিজের শরীরের দিকে তাকালাম! তাকিয়ে বড়-সড় একটা ধাক্কা খেলাম!
কারণ জান্নাতের কোলবালিশটা নিচে পড়ে আছে! জান্নাত আমাকে কোলবালিশ ভেবে আমার গায়ের নিচে একটা হাত এবং উপরে আরেকটা হাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে। আর এক পা আমার উপরে তুলে দিয়ে ঘুমিয়ে আছে!
মাথার চুলগুলো এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে তাই ফু দিলাম সেগুলো ঠিক হওয়ার জন্য,! আর তখনই জান্নাত সজাক হয়ে গেলো!

আমিঃ আপনার কোলবালিশ আমি না আপনার কোলবালিশ নিচে পড়ে আছে!
জান্নাত নিজের দিকে খেয়াল করে আহহহ করে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো!
জান্নাতঃ তুই আমার কাছে আসলি কেনো?
আমিঃ সরি! কাছে আমি না আপনি এসেছেন! এই পাশে আমি শুয়েছিলাম আর আপনিই রাতের অন্ধকারে একটা ছেলেকে একা পেয়ে সুযেগ নিয়েছেন!
জান্নাত কিছুই বললো না!
আমিঃ সত্যি করে বলেন কি কি করেছেন আমার সাথে!
জান্নাতঃ কি কি করেছি মানে? তোর কি মনে হয় তোর মতো খারাপ ছেলের সুযোগ নিবো আমি!
আমিঃ সেটাতো ঘুম থেকে উঠেই দেখতে পেলাম!
জান্নাতঃ চুপ বেশি কথা বলবি না। যা এখন গিয়ে কফি বানিয়ে নিয়ে আয়!
আমিঃ যাচ্ছি! (বলেই উঠে কফি বানাতে চলে গেলাম)
বাহিরে হালকা বৃষ্টি আছে তাই কফি হলে সেই লাগবে! এই ভেবে কফি বানিয়ে নিলাম!
কফি নিয়ে এসে দেখি জান্নাত আবার ঘুমিয়ে গিয়েছে! তাই ডাক দিলাম উঠার জন্য!
জান্নাতঃ কি হলো ডাকতেছিস কেনো?

আমিঃ কফি নিয়ে এসেছি! রেখে গেলাম মনে চাইলে খেয়ে নিয়েন!
ভার্সিটিতে আজকে যেতে ভালো লাগতেছে না তাই কফিটা খেয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম! ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি জান্নাত কফি খাচ্ছে!
তারপর জান্নাত গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে নিজের মতো করে গল্পের বই পড়তে লাগলো! আর আমি অনলাইনে খাবার অর্ডার করে দিলাম!
যেহেতু বৃষ্টির কারণে আর ভার্সিটিতে যাওয়া হয় নি! তাই দিনটা বারান্দায় গিয়ে বসে-বসেই পাড় করতে লাগলাম! তখনই মোবাইলে একটা আননোন নাম্বার থেকে কল আসলো!
তাই রিসিভ করলাম কে সেটা জানার জন্য!
আমিঃ আস্সালামুআলাইকুম!
অলাইকুমআস্সালাম,কেমন আছেন? (মেয়েলি কন্ঠে)
আমিঃ আলহামদুলিল্লাহ! আপনি কে?
মেয়েটাঃ কালকে প্রপোজ করলাম আর আজকেই ভুলে গেলেন!
আমিঃ ওহ নিলা!

নিলাঃ হুম! সরি কালকে জান্নাত আপু কার থেকে যেনো আপনাকে প্রপোজ করার কথাটা শুনে আমাকে নিয়ে যায় আপনার কাছে! তারপর আপনার সাথে এসব সিনক্রিয়েট করে!
আমিঃ জান্নাত তো একটা পাগলি ওর কথায় আমার খারাপ লাগে না! জান্নাতের তো বুদ্ধি একটু কম!
নিলাঃ কালকে বিকেলে কফি খেতে আসলেন না কেনো?
আমিঃ আরে কালকে জান্নাত অনেক প্রেশারে রেখেছিলো তাই আসতে পারি নি?
নিলাঃ কি বলেন আপনি ঠিক আছেন তো?
আমিঃ আরে হ্যা ঐ ডাইনিটা আমার কিছুই করতে পারে নি?
নিলাঃ নিজের বউকে কেউ ডাইনি বলে নাকি?
আমিঃ ঐটা বউ নাকি রাক্ষসী…… (বলেই……..

চলবে...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com