Breaking News

রুপের তরী । পর্ব - ০৩



জমকালো সাজে সাজানো একটি আলীশান রাজপ্রাসাদের মত বাড়ির সামনে এসে গাড়িটি থামে। সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির বাইরে থাকা সিকিউরিটি এসে গাড়ির দুপাশের দরজা খুলে দেয়।

একপাশ থেকে সেই মধ্যবয়সী লোকটি বেরিয়ে আসে।
গাড়ি থেকে নেমে অন্যপাশের দরজার কাছে গিয়ে হাত বাড়িয়ে দেন উনি।
হাতটাকে পাশ কাটিয়ে গাড়ির ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে তরী।
এতে লোকটির কিঞ্চিৎ খারাপ লাগলেও কিছু বলেন না।
এমন হওয়াটা স্বাভাবিক ছিল।
বাড়ির কয়েকজন কাজের লোককে গাড়িতে থাকা ব্যাগ নিয়ে আসতে বললে তরী বারন করে,
--আমি আমার ব্যাগ নিজেই উঠাতে পারবো। আমার কারও সাহায্যের প্রয়োজন নেই।
বাড়িটা বাইরে থেকে যতটা সুন্দর ভেতর থেকে আরও বেশি সুন্দর।
বিভিন্ন রকম শো পিস,আসবাবপত্র যার বেশির ভাগই অ্যান্টিক এর।
সবকিছু অনেক সুন্দর ভাবে গোছানো। হবেই না কেন?
যেখানে বাড়ির একেক রকমের কাজের জন্য একেকটা করে কাজের লোক রাখা।
বাড়ির ভেতরে যাওয়ার পর লোকটি একজন মহিলাকে বললেন তরীর রুমটি দেখিয়ে দিতে।
মহিলাটি ওনার কতামতো তরীকে নিয়ে দোতলার একটি রুমে নিয়ে গেলেন।

রুমটা দেখে তরী অনেকটা অবাক। এত্ত বড় রুম এর আগে কখনো দেখেনি সে।
মনে হচ্ছে যেন ওদের বাড়ির সমান জায়গাও কম পড়বে এই রুমের সমান হতে গেলে।
একটা ফুটবল গ্রাউন্ডের মত। তবে এসবকিছু দেখার পরও তরী অনেকটা উদাসীন।
মনের মাঝে ঝড় বইছে ওর। কি করে আজ কি হয়ে গেল?
এক মূহুর্তে ওর পুরো পৃথিবীটাই পাল্টে গেল। অভাগী হলেও কেউ এমন অভাগী হয়?
নিজের বাবার বাড়ী ছেড়ে আসার সময় একটা কথাও বলেনি সে।
শুধু চোখের জল ভাসিয়েছে।আসার পথে লোকটি কে,কি তার পরিচয়?
কিছুই জানা হয়নি তরীর। তরীর একটা কথা মাথায় ঘুরছিল, জীবনে একটা কাছের বন্ধুই ছিল যেটা বই।
তার সাথেও সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেল আজ থেকে।
তরী জানেনা এরপর কি হতে চলেছে তার জীবনে।
অবশ্য জীবন নিয়ে ভাবনা তরী অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছে কারন ওর জীবনের তরী যে,
আগে থেকেই ডুবে রয়েছে।

তরীর রুমের বিছানা পুরোটা গোলাপ ও গাজরা ফুলে সাজানো।
সমস্ত রুমের দেয়ালে গোলাপ ফুল লাগানো।
জায়গায় জায়গায় চৌবাচ্চা রেখে তার মাঝে ছোট ছোট মোমবাতি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে।
ককথায় রুমটা দেখতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।
সাথে আসা মহিলাটি তরীকে বাথরুম দেখিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিতে বলে।
এবং আলমারী খুলে একটা গোলাপি রংয়ের শারি এনে তরীর হাতে ধরিয়ে দেয়।
--হাত মুখ ধুয়ে এটা পড়ে নিন ম্যাডাম,আমি আপনার খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি।
বলে মহিলাটি চলে যান।তরীরও বেশ খারাপই লাগছিল। তাই বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে শাড়ীটা পড়ে নেয়। মাথার চুলগুলো না থাকার পরও তরীকে দেখতে মাশাআল্লাহ লাগছে।
কারন এমনিতেও সে প্রচুর সুন্দরী।বলা চলে রূপের তরী..।
তবে নিজেকে কখনো সুন্দরীর তালিকায় রাখতে চায় না সে।
যতটা পারে নিজেকে সবার থেকে গুটিয়ে রাখার চেষ্টা করে।

কিছুক্ষন পর একজন সার্ভেন্ট এসে তরীর রুমে খাবার দিয়ে যায়।
খাবারের প্রতি বেশ একটা ঝোক নেই ওর। তাই কিছু না খেয়েই বিছানায় গিয়ে বসে পড়লো সে।
আজ হয়তো তাকে অত টাকা দিয়ে বিক্রি হওয়ার মূল্য চোকাতে হবে। নিজের শরীর দিয়ে। ...
রুমের মাঝেই একটা বড় শেলফে থাকা বিভিন্ন মনীষীদের বইয়ের মাঝে ডেল কার্নেগির লেখা একটা বই পরছিল তরী। সে সময়ই একজন দরজায় নক করে বলে,
--আমি কি ভেতরে আসতে পারি?
তরী কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।কারন এ বাড়ির কোন কিছুর ডিসিশন নেওয়ার বিষয়ে অজ্ঞাত সে।
আবারও দরজায় কড়া নাড়ার আওয়াজ আসে,,
--আসতে পারি?
কিছুটা ভেবেই তরী উত্তর দেয়,
--জ্বি আসুন

দরজার দিকে চোখ পড়ে তরীর।
সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট,বা হাতের ওপর গুছিয়ে রাখা সাদা অ্যাপ্রোন ও গলায় ঝুলানো
স্ট্যাথোস্কোপ সহ একজন সূদর্শন যুবক রুমে প্রবেশ করল।
চুলগুলো অগোছালো হয়ে আছে।মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি থাকায় ছেলেটির সৌন্দর্য আরও বেশি
প্রকাশ পেয়েছে। হাসি দেওয়ায় গজ দাতটা বেরিয়ে এল।
যেটা ছেলেটির সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিল।তরী নিজের চোখ নামিয়ে নেয়।
হালকা ভায়ার্ত সুরে বলে,
--আ আ আপনি?কে?
ছেলেটি হেসে দিয়ে বলে,
--কেন দেখতে পাচ্ছেন না?আর যাই হোক আমি কিন্তু ভুত নই.এ ব্যাপারে নিশ্চিত থাকতে পারেন।
আপনার ঘাড় মটকাবো না।

আরেকবার ছেলেটির দিকে তাকিয়ে দেখে তরী। ছেলেটি সেখানে দাড়িয়ে মৃদু স্বরে হেসেই চলেছে।
কিছুটা ভয় কন্ট্রোল করে ছেলেটিকে উদ্দেশ্য করে বলল,
--আপনি আমাকে চেনেন?
তরীর এমন প্রশ্নে ছেলেটি আবারও হেসে দেয়। এবার হেসে দিয়ে বলে,
--বাবা ঠিকই খোজ নিয়েছিল আপনার ব্যাপারে৷ আপনি তো দেখছি আসলেই অনেক বোকা।
আচ্ছা আপনাকে চিনবোনা তো কি অন্য কোন মেয়েকে চিনবো?
--বাবা?মানে ঠিক বুঝলাম না?
--আমার মনে হয় আপনি ঠিকভাবে কিছু জানেন না তাইনা?অবশ্য বাবা বলেছিল পরে জানাবে।
তবে একটু অপেক্ষা করুন,আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।এসেই আপনাকে সব বলবো। ওকে?
বলে ছেলেটি একটা মুগ্ধ করা হাসি দিয়ে আলমারী থেকে পরনের জামাকাপড় ও টাওয়াল হাতে ওয়াশরগমে চলে গেল।
এদিকে তরী হা করে বসে আছে।


কিছুক্ষণ পর ছেলেটি একটা লাল টি-শার্ট ও সাদা ট্রাউজারে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এল।
মাথার চুল মুছতে মুছতে তরীকে উদ্দেশ্য করে বলল,
--রূপের তরী, ওভাবে তাকিয়ে থাকলে যে আমি অনেক লজ্জা পাব,তখন আমার মুখটা যে ঢেকে রাখতে হবে। (বলেই আবারও হেসে দিল)
কথাটি শুনে তরী বেশ লজ্জা পেল৷
চুল মোছা হয়ে গেলে ড্রেসিংটেবিলের সামনে থাকা টুল এনে তরীর সামনে এসে বসে পড়লো।
এবং বলল,
--এবার বলি? যে লোকটি আপনাকে রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করিয়ে নিয়ে এলেন উনি আমার বাবা।
ডা. রিশাদ চৌধুরি। এবং আমি ওনার ছেলে এবং আপনার লিগ্যাল হাসবেন্ড রূপক চৌধুরী ওরফে রূপ।
আমিও অবশ্য ডক্টর। তবে এখন ইন্টার্নি করছি।
ছোট ডক্টর বলা চলে। আপনি এখন আছেন চৌধুরি ম্যানশনে।
আজকে অবশ্য আপনার এবং আমার বিয়ের রেজিস্ট্রি হলো৷ হ্যা আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে
পারে কেন আমি যাইনি,আসলে আজকে অনেক জরুরী একটা সার্জারীর জন্য
ওটিতে থাকতে হয়েছে। নইলে আমার বিয়েতে আমিই নেই এমনটা তো মানতে পারা যায় না
তাই না?(আবারও হেসে দিয়ে)
তরী সবকিছু বোঝার পরও মুখ গোমড়া করে বসে আছে। কারন ও জানে
এত বড় লোক ঘরে বিয়ে হওয়া মানে ওকে নয়, শুধুমাত্র ওর শরীটা ভোগ করতে হয়ত
অত টাকা দিয়ে বিয়ে করে বিয়ে আসা হয়েছে।
দেখুন রূপের তরী (বলেই জিহ্বায় কামড় দেয়)আচ্ছা আপনাকে এ নামে ডাকছি বলে কি রাগ করছেন?
নিশ্চুপ
আমি কিন্তু "রূপ" শব্দটি দিয়ে নিজেকে বোঝাচ্ছি না, রূপটা আপনার রূপ দেখেই বলছি।
রবীন্দ্রনাথ সোনার তরী লিখেছিলেন,দেখেছিলেন কিনা জানিনা,তবে আমি যে রূপের
তরী দেখেও নিলাম আবার পেয়েও গেলাম।
তরীর আর বুঝতে বাকি নেই যে, ওকে এখানে কেন আনা হয়েছে।
তবে ওকে অবাক করিয়ে দিয়ে রূপ বলে,
--অনেক দূর জার্নি করে এসেছেন, নিশ্চয়ই খুব ক্লান্ত। আপনি শুয়ে পড়ুন।
আমিও শুয়ে পড়ি৷ আর হ্যা চিন্তা করবেন না আপনার আমার মাঝে
ইন্ডিয়া ও পাকিস্তানের মত বর্ডার থাকবে।
(বলে আবারও হেসে দিল)
বিছানার মাঝখানে একগাদা বালিশ দিয়ে দুটো সেকশনে বিছানা ভাগ করে দিল রূপ।
এরপর নিজের জায়গায় গিয়ে শুয়ে পড়ল সে। তরী ছেলেটিকে দেখে ভীষন অবাক হলো।
আসলেই কি সে এতটা ভালো?নাকি কোন ঝড় আসার আভাস মাত্র? এসব চিন্তা
করতে করতে ওভাবেই কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে খেয়াল নেই।
মাঝরাতে হঠাৎ........
.
চলবে...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com